আইএস থাকবে এক দশক! -এএফপির বিশ্লেষণ
ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্বঘোষিত ‘খিলাফত রাষ্ট্র’ গঠনের এক বছর হয়ে গেল। তবে অস্ত্র ও অর্থের দিক দিয়ে এই জঙ্গিরা এখনো শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক বছর হয়তো এ অবস্থাই দেখতে হবে বিশ্বকে।
গত বছরের জুন মাসে এই খিলাফত রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয় জঙ্গিরা। আবু বকরের নেতৃত্বাধীন এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি এরই মধ্যে তাদের ‘রাষ্ট্র’ সম্প্রসারণ করা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমেইরা দখল।
লন্ডনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা গবেষক হাসান হাসান মনে করেন, আরও কয়েক বছর টিকে থাকার জন্য যেসব উপকরণ দরকার, তার সবই আছে আইএস এবং এর খিলাফত রাষ্ট্রের হাতে। তিনি বলেন, ‘এই জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তৎপরতা চালিয়ে থাকে। তারা কোথাও হারছে, কোথাও জিতছে, এটা ঠিক। কিন্তু নিকট ভবিষ্যৎ পর্যন্ত তারা আমাদের সামনেই থাকবে। আমি দেখতে পাচ্ছি, অন্তত আগামী এক দশক তারা সক্রিয় থাকছে।’
অন্য বিশ্লেষকেরাও এ বিষয়ে একমত। তাঁদের মতে, আইএসের বর্তমান সীমান্তগুলোতে হেরফের ঘটতে পারে। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে এই জঙ্গি-রাজত্বের শেষ দেখার চিন্তা করা অবান্তর। ব্রকিংস দোহা সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, ‘এই খিলাফতের ধারণা বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনের সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে বেঁচে থাকবে, এটা নিশ্চিত।’
অর্থ ও অস্ত্রে সুসজ্জিত: আইএস জঙ্গিরা এখন পর্যন্ত যে সফলতা পেয়েছে, তার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্থান, লড়াইয়ের মাঠে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ও জনবল এবং সিরিয়া ও ইরাকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সরকারবিরোধী ক্ষোভকে কাজে লাগানোর সুনিপুণ দক্ষতা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক নীতিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশনের রাজনীতি বিজ্ঞানী প্যাট্রিক জনস্টন বলেন, আইএস সপ্তাহে প্রায় ২০ লাখ মার্কিন ডলারের (১৭ লাখ ইউরো) রাজস্ব আয় করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদা ও কর আদায় থেকে পাওয়া অর্থের পাশাপাশি নিজেদের দখলে থাকা সব এলাকা থেকে লুট করা সামগ্রী বিক্রির অর্থ। সব মিলিয়ে বিশ্বে আইএসই এখন সবচেয়ে ধনী জঙ্গি গোষ্ঠী।
তবে এসবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এই জঙ্গি গোষ্ঠীর পরিচালনা-ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম। দলের সদস্য সংগ্রহ করতে কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। বিশেষ করে বিদেশি যোদ্ধারা আসছেই। আর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাহিনী ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জব্দ করা অস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে আইএসের।
আইএস যোদ্ধারা যেমন বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র হাতে পেয়েছে, তেমনি তাদের কামান, ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের পাশাপাশি পিকআপ ট্রাক ও সাজোয়া যানের ‘দৃশ্যত অফুরন্ত সরবরাহ’ রয়েছে বলে মনে করেন গবেষক লিস্টার। পাশাপাশি আইএস কালোবাজার থেকেও অস্ত্র কিনছে। সব মিলিয়ে তারা ইরাক এবং সিরিয়ায় অস্ত্র ও সরঞ্জামের দিক দিয়ে সবচেয়ে সজ্জিত গ্রুপগুলোর একটি বলে জানান গবেষক হাসান। আইএসের ওপরে একটি বইয়ের এই লেখক বলেন, ‘একটি ছোটখাট সেনাবাহিনী চালানোর জন্য যে পরিমাণে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিষয়ের দরকার হয়, তার সবই আছে আইএসের।’
বিকল্পের অভাব: আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের বিমান হামলার কমবেশি সফলতা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লড়াইয়ের মাঠে বিশ্বাসযোগ্য স্থলবাহিনীর অভাব এবং তুলনামূলক দুর্বল গোয়েন্দা তথ্যের কারণে সেই সফলতা মার খেয়ে যাচ্ছে।
এর বিপরীতে আইএস কৌশলগতভাবে সেসব এলাকায় তাদের সম্প্রসারণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে স্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। আর কোনো এলাকা করতলগত করতে পারলেই, দখলদারি পাকা করতে সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের আমলা ও পুলিশের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা চালু করছে।
কার্যত, উপযুক্ত বিকল্প না থাকার কারণেই আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় এতটা সফলতা পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুটি দেশেরই সুন্নি সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করে থাকেন, তাঁরা দেশের ক্ষমতাসীন শিয়াপন্থী নেতাদের কাছে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা।
গত বছরের জুন মাসে এই খিলাফত রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয় জঙ্গিরা। আবু বকরের নেতৃত্বাধীন এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি এরই মধ্যে তাদের ‘রাষ্ট্র’ সম্প্রসারণ করা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমেইরা দখল।
লন্ডনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা গবেষক হাসান হাসান মনে করেন, আরও কয়েক বছর টিকে থাকার জন্য যেসব উপকরণ দরকার, তার সবই আছে আইএস এবং এর খিলাফত রাষ্ট্রের হাতে। তিনি বলেন, ‘এই জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তৎপরতা চালিয়ে থাকে। তারা কোথাও হারছে, কোথাও জিতছে, এটা ঠিক। কিন্তু নিকট ভবিষ্যৎ পর্যন্ত তারা আমাদের সামনেই থাকবে। আমি দেখতে পাচ্ছি, অন্তত আগামী এক দশক তারা সক্রিয় থাকছে।’
অন্য বিশ্লেষকেরাও এ বিষয়ে একমত। তাঁদের মতে, আইএসের বর্তমান সীমান্তগুলোতে হেরফের ঘটতে পারে। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে এই জঙ্গি-রাজত্বের শেষ দেখার চিন্তা করা অবান্তর। ব্রকিংস দোহা সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, ‘এই খিলাফতের ধারণা বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনের সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে বেঁচে থাকবে, এটা নিশ্চিত।’
অর্থ ও অস্ত্রে সুসজ্জিত: আইএস জঙ্গিরা এখন পর্যন্ত যে সফলতা পেয়েছে, তার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্থান, লড়াইয়ের মাঠে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ও জনবল এবং সিরিয়া ও ইরাকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সরকারবিরোধী ক্ষোভকে কাজে লাগানোর সুনিপুণ দক্ষতা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক নীতিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যান্ড করপোরেশনের রাজনীতি বিজ্ঞানী প্যাট্রিক জনস্টন বলেন, আইএস সপ্তাহে প্রায় ২০ লাখ মার্কিন ডলারের (১৭ লাখ ইউরো) রাজস্ব আয় করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদা ও কর আদায় থেকে পাওয়া অর্থের পাশাপাশি নিজেদের দখলে থাকা সব এলাকা থেকে লুট করা সামগ্রী বিক্রির অর্থ। সব মিলিয়ে বিশ্বে আইএসই এখন সবচেয়ে ধনী জঙ্গি গোষ্ঠী।
তবে এসবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এই জঙ্গি গোষ্ঠীর পরিচালনা-ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম। দলের সদস্য সংগ্রহ করতে কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। বিশেষ করে বিদেশি যোদ্ধারা আসছেই। আর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাহিনী ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জব্দ করা অস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে আইএসের।
আইএস যোদ্ধারা যেমন বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র হাতে পেয়েছে, তেমনি তাদের কামান, ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের পাশাপাশি পিকআপ ট্রাক ও সাজোয়া যানের ‘দৃশ্যত অফুরন্ত সরবরাহ’ রয়েছে বলে মনে করেন গবেষক লিস্টার। পাশাপাশি আইএস কালোবাজার থেকেও অস্ত্র কিনছে। সব মিলিয়ে তারা ইরাক এবং সিরিয়ায় অস্ত্র ও সরঞ্জামের দিক দিয়ে সবচেয়ে সজ্জিত গ্রুপগুলোর একটি বলে জানান গবেষক হাসান। আইএসের ওপরে একটি বইয়ের এই লেখক বলেন, ‘একটি ছোটখাট সেনাবাহিনী চালানোর জন্য যে পরিমাণে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিষয়ের দরকার হয়, তার সবই আছে আইএসের।’
বিকল্পের অভাব: আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের বিমান হামলার কমবেশি সফলতা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লড়াইয়ের মাঠে বিশ্বাসযোগ্য স্থলবাহিনীর অভাব এবং তুলনামূলক দুর্বল গোয়েন্দা তথ্যের কারণে সেই সফলতা মার খেয়ে যাচ্ছে।
এর বিপরীতে আইএস কৌশলগতভাবে সেসব এলাকায় তাদের সম্প্রসারণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে স্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। আর কোনো এলাকা করতলগত করতে পারলেই, দখলদারি পাকা করতে সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের আমলা ও পুলিশের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা চালু করছে।
কার্যত, উপযুক্ত বিকল্প না থাকার কারণেই আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় এতটা সফলতা পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুটি দেশেরই সুন্নি সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করে থাকেন, তাঁরা দেশের ক্ষমতাসীন শিয়াপন্থী নেতাদের কাছে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা।
No comments