কি সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা by কাফি কামাল
একের
পর এক আঘাত। বিপর্যস্ত বিএনপি। নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ আত্মগোপনে। বড় একটি
অংশ কারাগারে। মামলা নেই এমন কোন নেতা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থাতেও
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বারবার। বলা হয়েছে,
তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায়। যদিও বিএনপি চলছে
আসলে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। দলটির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছরের কমিটির বয়স এখন সাড়ে চার বছর। গঠনতন্ত্র
অনুযায়ী ছয় মাস পরপর দলের নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও
সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে তিন বছর আগে। মহাসচিবের মৃত্যুর পর ২০১১ সালের এপ্রিল
থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নেতৃত্বে চলছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। বয়সজনিত
অসুস্থতায় কাবু দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যরা। সাংগঠনিক
কর্মকাণ্ড বা আন্দোলন দূরে থাকুক তাদের অনেকে নীতিনির্ধারণী বৈঠকে পর্যন্ত
অংশ নিতে পারেন না। কয়েক দফা কারাভোগের পর কেউ কেউ সীমিত পরিসরে সক্রিয়
থাকলেও অনেকেই এখন নিষ্ক্রিয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ
তারা সরকারের সঙ্গে সমঝে চলে নিজেদের নিরাপদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা করছেন।
একই পরিস্থিতি দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম
মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির। সর্বশেষ ২০১৩ সালের
সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত কাউন্সিল
আয়োজনের সময় চেয়েছিল বিএনপি। এদিকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৫ সালের প্রথম
তিন মাসের আন্দোলনে বিশাল বহরের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ভূমিকা
নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার সরকারের দমন-পীড়ন ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দল
পুনর্গঠনে কাউন্সিল বা নির্বাহী কমিটির সভা করতে পারছে না বিএনপি। দলের
স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সারা দেশে অন্তত শতাধিক কাউন্সিলর বর্তমানে
কারাবন্দি। এমন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নেবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়া?
দলের একটি পদের জন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। দলীয় পদ না থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা। কিন্তু মৃত্যুসহ নানা কারণে নির্বাহী কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তা পূরণের উদ্যোগ নেই বিএনপির। সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে বিএনপির। মূলধারা ও সংস্কারপন্থি বলে দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে দুইটি গ্রুপ। ফলে সে সময় নির্বাহী কমিটিতে এমন অনেকেই জায়গা পেয়েছিলেন পরবর্তী সময়ে নানা কর্মকাণ্ড ও ভূমিকায় তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে অযোগ্যতা, সুবিধাবাদী ও সরকারের সঙ্গে সমঝে চলাসহ নানা অভিযোগ। সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সক্রিয়দের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের একটি প্রস্তাব উঠেছিল। চেয়ারপারসন আশ্বাসও দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া নিষ্ক্রিয় নেতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, যারা পদ নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন না তাদের সরে যেতে হবে। পার্টটাইম রাজনীতি চলবে না। যোগ্য নেতাদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। খালেদা জিয়ার নির্দেশের পর নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও অজানা কারণে একপর্যায়ে তা স্থগিত হয়ে যায়। ফলে পুনর্গঠন দূরে থাক শূন্য পদগুলো পূরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি নীতিনির্ধারক নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দল গোছানো এবং আন্দোলন চলবে পাশাপাশি। কিন্তু বাস্তবে তার কোনটিই ঠিক মতো হয়নি। না সাংগঠনিকভাবে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে পেরেছে বিএনপি। না গ্রহণযোগ্য একটি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছে। এটাও সত্য যে, ২০০৯ সালের পর কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা জানান, দল পুনর্গঠনে জোর দিলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাদের। ৭ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এমন নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে এবং এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে দল গোছানো পরের কথা রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে স্বাভাবিকভাবে অবস্থানই করতে দেয়া হয়নি। সরকারের সঙ্গে নীতিগত লড়াই ও শীর্ষপর্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলার জট কাউন্সিল আয়োজনের সামনে তৈরি করে রেখেছে প্রতিবন্ধকতা। দল পুনর্গঠনের চেয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বিএনপি নেতাদের। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর বিএনপির ৫ম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছরের জন্য ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১০ সালের ৩১শে জুলাই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে, ২০১১ সালের ২৩শে এপ্রিল মহানগর নাট্যমঞ্চ ও ২০১২ সালের ৮ই এপ্রিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তিনটি সভা হয়। ওদিকে ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের জন্য ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধান করে সমন্বয় কমিটি গঠন ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের প্রধান করে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ড্রাফটিং সাব-কমিটির একটি বৈঠকও হয়। তারপর থেমে যায় সে প্রক্রিয়া। বিগত দুই বছর ধরে কয়েকবার কাউন্সিলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বিএনপি।
জাতীয় স্থায়ী কমিটি: বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি পরিধি বাড়িয়ে বিগত কাউন্সিলে পদের সংখ্যা ১৯টিতে উন্নীত করা হয়। ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখের সংখ্যা ছিল ১৩। কিন্তু বাস্তবে দলের নীতিনির্ধারণ, সাংগঠনিক ও আন্দোলন কর্মসূচিতে তাদের ভূমিকা ছিল অনুজ্জ্বল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া বয়সজনিত নানা অসুস্থতায় ভোগছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বেশির ভাগ। খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই ২০১৪ সালের শেষদিকে অনুষ্ঠিত একাধিক সভায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন কয়েক বছর আগেই। তার পদ যেমন পূরণ করা হয়নি, তেমনি তার মহাসচিব পদেও পদোন্নতি দেয়া হয়নি কাউকে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত রেখে ওই পদের কর্মকাণ্ড পরিচলনা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মির্জা আলমগীরকে মহাসচিব করা হলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেয়া বা স্থায়ী কমিটিতে নতুন একজনকে পদোন্নতি দেয়া যেতো। কিন্তু সেটা না করায় তিনি একাই এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. আরএ গণি ও এম শামসুল ইসলাম দুই জনই অসুস্থ। আরএ গণি মাঝে মধ্যে বৈঠকে অংশ নিলেও শামসুল ইসলাম কমিটি গঠনের দ্বিতীয় বছর থেকে কোন বৈঠকেই অংশ নেননি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ভূমিকা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে দলীয় ফোরামে। বর্তমান সরকারের সময়ে দফায় দফায় কারাভোগ করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তাদের কেউ কেউ সীমিত পরিসরে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিলেও অন্যরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। নীতি নির্ধারণে তরিকুল ইসলামের একটি ভূমিকা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি বেশির ভাগ সময় যশোরে অবস্থান করেন। বর্তমানে একাধিক মামলায় আত্মগোপনে রয়েছেন। দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই কারাভোগ করছেন। অন্যদের মধ্যে- লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান সভা সেমিনার, ড. আবদুল মঈন খান কূটনীতিক তৎপরতা এবং ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ভূমিকা আদালত অঙ্গনে সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় কোন ইস্যুর সময় হয় হাসপাতালে নয় বিদেশে অবস্থান করেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। একমাত্র মহিলা প্রতিনিধি বেগম সারওয়ারী রহমানও বয়সজনিত কারণে অসুস্থ এবং নিষ্ক্রিয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যের মর্যাদাধারী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। জাতীয় নির্বাহী কমিটি: ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের পর নির্বাহী কমিটির বর্ধিত বহর ছিল ৩৮২ জনের। কমিটি গঠনের পর যা পরিচিতি পেয়েছিল হস্তি কমিটি নামে। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ১৮ জন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৩৬ জন, ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ২২৫ জন। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর ধরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় দেখা গেছে হাতেগোনা অর্ধশতাধিক নেতাকে। কমিটি ঘোষণার পর অনেককে কালেভদ্রেও দলীয় ও সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কমিটি ঘোষণার পর বিগত সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার, মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমরউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক, প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জাহেদ আলী চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বি এম বাকির হোসেন, হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ, দস্তগীর চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন শাহজাহান। এছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী দলত্যাগ করে বর্তমানে সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ। সম্প্রতি সিটি নির্বাচনের দিনে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলম। এ ছাড়া যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে পদোন্নতি দেয়া হয়। যেমন অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সালামকে অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক, গ্রামবিষয়ক আসাদুল হাবিব দুলুকে সাংগঠনিক সম্পাদক, সদস্য থেকে মিজানুর রহমান সিনহাকে কোষাধ্যক্ষ ও নাজিম উদ্দিন আলমকে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। তবে তাদের আগের পদগুলো পূরণ করা হয়নি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে- হারুনার রশিদ খান মুন্নু, মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান, উকিল আবদুস সাত্তার, ফজলুর রহমান পটল, মুশফিকুর রহমান, নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে- বিচারপতি টি এইচ খান, এম মোরশেদ খান, হারুন আল রশিদ, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে- এ এস এম আবদুল হালিম, জহুরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, খন্দকার শহীদুল আলম, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাউদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, হারুনুর রশিদ, আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক লুৎফর রহমান খান আজাদ, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, নজরুল ইসলাম রাজন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ শিল্পবিষয়ক সম্পাদক, অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পাদক, শ্রমিকবিষয়ক, কৃষিবিষয়ক, বন ও পরিবেশ, পরিবার কল্যাণ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক, তাঁতি বিষয়ক, শিশুবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক, মৎস্যজীবীবিষয়ক, সহ-শিক্ষাবিষয়ক, সহ-সমাজকল্যাণ, সহ-ক্রীড়া, সহ-যুববিষয়ক, সহ-শ্রমবিষয়ক, সহ-কৃষিবিষয়ক, সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সহ-গ্রাম সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদকীয় পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক ও আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির ২৬৫ জন সদস্যের দলীয় কর্মকাণ্ড ও আন্দোলন কর্মসূচিতে ভূমিকাও অনেকটাই অনুজ্জ্বল। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা কমিটিতে পদ পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দু-একবার ঢুঁ মারলেও একবারের জন্য নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়মুখী হননি। এদিকে বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিলুপ্ত করা হয়েছিল সারা দেশের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি। পরে বেশির ভাগই জেলায় সম্মেলন ও মনোনয়নের মাধ্যমে গঠন করা হয় কমিটি। বগুড়ায় ২০০৫ সালে, ফেনীতে ২০০৯ সালে, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০০৯ সালে। এদিকে মৌলভীবাজারে ১৯৮০ সাল ও কুমিল্লা উত্তরে ১৯৯৯ সালের পর কোন কাউন্সিলই হয়নি। নেতারা বলছেন, দলের মধ্যে ঐক্য ও গতিশীলতার লক্ষ্যে নিয়মিত নির্বাহী কমিটির সভা ও সেখানে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত। কিন্তু গত তিনটি বৈঠকে নেয়া একটি সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক নেতাই মনে করেন, নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করলে তা কার্যকর এবং বাস্তবায়ন সহজ হতো।
দলের একটি পদের জন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। দলীয় পদ না থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা। কিন্তু মৃত্যুসহ নানা কারণে নির্বাহী কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তা পূরণের উদ্যোগ নেই বিএনপির। সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে বিএনপির। মূলধারা ও সংস্কারপন্থি বলে দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে দুইটি গ্রুপ। ফলে সে সময় নির্বাহী কমিটিতে এমন অনেকেই জায়গা পেয়েছিলেন পরবর্তী সময়ে নানা কর্মকাণ্ড ও ভূমিকায় তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে অযোগ্যতা, সুবিধাবাদী ও সরকারের সঙ্গে সমঝে চলাসহ নানা অভিযোগ। সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সক্রিয়দের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের একটি প্রস্তাব উঠেছিল। চেয়ারপারসন আশ্বাসও দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া নিষ্ক্রিয় নেতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, যারা পদ নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন না তাদের সরে যেতে হবে। পার্টটাইম রাজনীতি চলবে না। যোগ্য নেতাদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। খালেদা জিয়ার নির্দেশের পর নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও অজানা কারণে একপর্যায়ে তা স্থগিত হয়ে যায়। ফলে পুনর্গঠন দূরে থাক শূন্য পদগুলো পূরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি নীতিনির্ধারক নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দল গোছানো এবং আন্দোলন চলবে পাশাপাশি। কিন্তু বাস্তবে তার কোনটিই ঠিক মতো হয়নি। না সাংগঠনিকভাবে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে পেরেছে বিএনপি। না গ্রহণযোগ্য একটি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছে। এটাও সত্য যে, ২০০৯ সালের পর কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা জানান, দল পুনর্গঠনে জোর দিলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাদের। ৭ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এমন নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে এবং এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে দল গোছানো পরের কথা রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে স্বাভাবিকভাবে অবস্থানই করতে দেয়া হয়নি। সরকারের সঙ্গে নীতিগত লড়াই ও শীর্ষপর্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলার জট কাউন্সিল আয়োজনের সামনে তৈরি করে রেখেছে প্রতিবন্ধকতা। দল পুনর্গঠনের চেয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বিএনপি নেতাদের। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর বিএনপির ৫ম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছরের জন্য ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১০ সালের ৩১শে জুলাই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে, ২০১১ সালের ২৩শে এপ্রিল মহানগর নাট্যমঞ্চ ও ২০১২ সালের ৮ই এপ্রিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তিনটি সভা হয়। ওদিকে ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের জন্য ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধান করে সমন্বয় কমিটি গঠন ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের প্রধান করে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ড্রাফটিং সাব-কমিটির একটি বৈঠকও হয়। তারপর থেমে যায় সে প্রক্রিয়া। বিগত দুই বছর ধরে কয়েকবার কাউন্সিলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বিএনপি।
জাতীয় স্থায়ী কমিটি: বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি পরিধি বাড়িয়ে বিগত কাউন্সিলে পদের সংখ্যা ১৯টিতে উন্নীত করা হয়। ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখের সংখ্যা ছিল ১৩। কিন্তু বাস্তবে দলের নীতিনির্ধারণ, সাংগঠনিক ও আন্দোলন কর্মসূচিতে তাদের ভূমিকা ছিল অনুজ্জ্বল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া বয়সজনিত নানা অসুস্থতায় ভোগছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বেশির ভাগ। খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই ২০১৪ সালের শেষদিকে অনুষ্ঠিত একাধিক সভায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন কয়েক বছর আগেই। তার পদ যেমন পূরণ করা হয়নি, তেমনি তার মহাসচিব পদেও পদোন্নতি দেয়া হয়নি কাউকে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত রেখে ওই পদের কর্মকাণ্ড পরিচলনা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মির্জা আলমগীরকে মহাসচিব করা হলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেয়া বা স্থায়ী কমিটিতে নতুন একজনকে পদোন্নতি দেয়া যেতো। কিন্তু সেটা না করায় তিনি একাই এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. আরএ গণি ও এম শামসুল ইসলাম দুই জনই অসুস্থ। আরএ গণি মাঝে মধ্যে বৈঠকে অংশ নিলেও শামসুল ইসলাম কমিটি গঠনের দ্বিতীয় বছর থেকে কোন বৈঠকেই অংশ নেননি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ভূমিকা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে দলীয় ফোরামে। বর্তমান সরকারের সময়ে দফায় দফায় কারাভোগ করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তাদের কেউ কেউ সীমিত পরিসরে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিলেও অন্যরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। নীতি নির্ধারণে তরিকুল ইসলামের একটি ভূমিকা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি বেশির ভাগ সময় যশোরে অবস্থান করেন। বর্তমানে একাধিক মামলায় আত্মগোপনে রয়েছেন। দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই কারাভোগ করছেন। অন্যদের মধ্যে- লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান সভা সেমিনার, ড. আবদুল মঈন খান কূটনীতিক তৎপরতা এবং ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ভূমিকা আদালত অঙ্গনে সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় কোন ইস্যুর সময় হয় হাসপাতালে নয় বিদেশে অবস্থান করেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। একমাত্র মহিলা প্রতিনিধি বেগম সারওয়ারী রহমানও বয়সজনিত কারণে অসুস্থ এবং নিষ্ক্রিয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যের মর্যাদাধারী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। জাতীয় নির্বাহী কমিটি: ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের পর নির্বাহী কমিটির বর্ধিত বহর ছিল ৩৮২ জনের। কমিটি গঠনের পর যা পরিচিতি পেয়েছিল হস্তি কমিটি নামে। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ১৮ জন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৩৬ জন, ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ২২৫ জন। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর ধরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় দেখা গেছে হাতেগোনা অর্ধশতাধিক নেতাকে। কমিটি ঘোষণার পর অনেককে কালেভদ্রেও দলীয় ও সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কমিটি ঘোষণার পর বিগত সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার, মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমরউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক, প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জাহেদ আলী চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বি এম বাকির হোসেন, হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ, দস্তগীর চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন শাহজাহান। এছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী দলত্যাগ করে বর্তমানে সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ। সম্প্রতি সিটি নির্বাচনের দিনে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলম। এ ছাড়া যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে পদোন্নতি দেয়া হয়। যেমন অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সালামকে অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক, গ্রামবিষয়ক আসাদুল হাবিব দুলুকে সাংগঠনিক সম্পাদক, সদস্য থেকে মিজানুর রহমান সিনহাকে কোষাধ্যক্ষ ও নাজিম উদ্দিন আলমকে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। তবে তাদের আগের পদগুলো পূরণ করা হয়নি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে- হারুনার রশিদ খান মুন্নু, মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান, উকিল আবদুস সাত্তার, ফজলুর রহমান পটল, মুশফিকুর রহমান, নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে- বিচারপতি টি এইচ খান, এম মোরশেদ খান, হারুন আল রশিদ, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে- এ এস এম আবদুল হালিম, জহুরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, খন্দকার শহীদুল আলম, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাউদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, হারুনুর রশিদ, আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক লুৎফর রহমান খান আজাদ, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, নজরুল ইসলাম রাজন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ শিল্পবিষয়ক সম্পাদক, অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পাদক, শ্রমিকবিষয়ক, কৃষিবিষয়ক, বন ও পরিবেশ, পরিবার কল্যাণ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক, তাঁতি বিষয়ক, শিশুবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক, মৎস্যজীবীবিষয়ক, সহ-শিক্ষাবিষয়ক, সহ-সমাজকল্যাণ, সহ-ক্রীড়া, সহ-যুববিষয়ক, সহ-শ্রমবিষয়ক, সহ-কৃষিবিষয়ক, সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সহ-গ্রাম সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদকীয় পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক ও আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির ২৬৫ জন সদস্যের দলীয় কর্মকাণ্ড ও আন্দোলন কর্মসূচিতে ভূমিকাও অনেকটাই অনুজ্জ্বল। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা কমিটিতে পদ পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দু-একবার ঢুঁ মারলেও একবারের জন্য নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়মুখী হননি। এদিকে বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিলুপ্ত করা হয়েছিল সারা দেশের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি। পরে বেশির ভাগই জেলায় সম্মেলন ও মনোনয়নের মাধ্যমে গঠন করা হয় কমিটি। বগুড়ায় ২০০৫ সালে, ফেনীতে ২০০৯ সালে, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০০৯ সালে। এদিকে মৌলভীবাজারে ১৯৮০ সাল ও কুমিল্লা উত্তরে ১৯৯৯ সালের পর কোন কাউন্সিলই হয়নি। নেতারা বলছেন, দলের মধ্যে ঐক্য ও গতিশীলতার লক্ষ্যে নিয়মিত নির্বাহী কমিটির সভা ও সেখানে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত। কিন্তু গত তিনটি বৈঠকে নেয়া একটি সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক নেতাই মনে করেন, নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করলে তা কার্যকর এবং বাস্তবায়ন সহজ হতো।
No comments