৬ই জুন ঢাকা আসতে আগ্রহী মোদি
ভারতের
রাজ্য ও লোকসভায় সীমান্ত চুক্তি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদনের পর এবার দেশটির
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী ৬-৭ই জুন
সফরটি হতে পারে বলে দিল্লির তরফে এরই মধ্যে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ৬ই
মে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে ঢাকা। ওইদিন বিকালে ঢাকায় নিযুক্ত
ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হকের সঙ্গে তার
দপ্তরে গিয়ে দেখা করেন। সেখানে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টা
আলোচনা হয়। যার মধ্যে সফর প্রস্তুতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে
ধারণা করা হচ্ছে। তবে পররাষ্ট্র সচিব হাই প্রোফাইল ওই সফর নিয়ে এখনই মুখ
খুলতে রাজি নন। আগামী ৬-৭ই জুন মোদির সফরটি হতে পারে মর্মে ভারত যে
প্রস্তাব করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর বেরিয়েছে তার সত্যতা জানতে গতকাল
সন্ধ্যায়ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। টেলিফোন আলাপে সচিব
মানবজমিন-এর পক্ষ থেকে করা প্রশ্নটি গ্রহণ করলেও উত্তরে তিনি বলেন, সফরের
দিন-তারিখ চূড়ান্ত করতে আমরা কাজ করছি। এটি এখনও ঠিক হয়নি। ‘এ নিয়ে এই
মুহূর্তে আর কিছু বলার নেই বলে’ কথা বড়াতে চাননি পররাষ্ট্র সচিব। তার
অধস্তন কর্মকর্তারাও সফরটির দিনক্ষণ নিয়ে আগবাড়িয়ে কিছু বলতে রাজি নন। তবে
বিভিন্ন সূত্রে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা
সফরের সম্ভাব্য সময়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা তার আগ্রহ এবং সম্মতি নিয়েই
করা হয়েছে। ঢাকা সেই প্রস্তাবের সঙ্গে সমন্বয়ের সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাচ্ছে।
আপাতত সে মতেই প্রস্তুতি কর্ম এগিয়ে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
ও পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা মানবজমিনকে বলেন- গত বুধ ও
বৃহস্পতিবার ভারতের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের সরকার প্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ে
সরাসরি টেলিফোনে কথা বলেছেন। ওই টেলিফোন আলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেসের সভানেত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এবং লোকসভার সদস্যসহ স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের প্রক্রিয়ায় যুক্ত
নেতাদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, ৪১ বছর আগে সই হওয়া স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতের সংসদে
সর্বসম্মতভাবে অনুমোদনসহ সামপ্রতিক বছরগুলোতে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক বিশেষ
পর্যায়ে পৌঁছেছে। মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে উষ্ণতা আরও
বাড়বে বলে এমন আশা প্রকাশ করে তারা জানান, আসন্ন সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ
কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সহযোগিতাকে আরও
নিবিড় করতে এবার প্রথমবারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হবে। বিশেষ
করে নেপাল ও ভুটানে যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, এবার
বাংলাদেশেও এ ধরনের কাজ শুরু করবে ভারত। কুমুদিনী ট্রাস্টের একটি পানি
প্রকল্পের মাধ্যমে এর সূচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপকূলীয়
জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ
প্রটোকল নবায়ন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা,
শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক
(এমওইউ) চূড়ান্ত করারও প্রস্তুতি রয়েছে। নতুন একটি ঋণচুক্তি সইয়ের
কথাবার্তা চলছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা
গেছে।
No comments