সবচেয়ে কম বয়সী এমপি মাইরি ব্লাক
সবচেয়ে
কম বয়সী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মাইরি ব্লাক। তার বয়স মাত্র ২০ বছর। তিনি
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটিপড়ুয়া এক ছাত্রী। ৩০০ বছর আগে এমন রেকর্ড
গড়েছিলেন দ্বিতীয় ডিউক অব আলবেমারলে ক্রিস্টোফার মঙ্ক। ১৬৬৭ সালে মঙ্ক যখন
ডেভন থেকে এমপি নির্বাচিত হন তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর। ১৬৬৭ সালের পর এই
প্রথম মাইরি ব্লাক এত কম বয়সে এমপি নির্বাচিত হলেন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত
ভোটের পর গতকাল যখন ফল ঘোষণা শুরু হয় তখন প্রথমদিকেই ব্লাককে বিজয়ী ঘোষণা
করা হয়। এ ঘোষণার পর তার শিবিরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এমন ঘোষণার পর
মঙ্ক ঝানু রাজনীতিবিদদের মতোই বলে ফেলেছেন- আপনারা স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
নিয়ে যা-ই ভাবুন বা যে দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করুন না কেন, আমি আমার সাধ্য দিয়ে
সামর্থ্য দিয়ে আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করে যাব। মাইরি ব্লাক শুধু কম বয়সী
এমপিই নির্বাচিত হননি, সেই সঙ্গে গড়েছেন আরেকটি রেকর্ড। তাহলে তিনি ধরাশায়ী
করেছেন লেবার দলের সাবেক ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস আলেক্সান্দারকে।
তারা দুজনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্কটল্যান্ডের পাইসলে ও রেনফ্রেশায়ার
দক্ষিণ আসন থেকে। এ আসনে একটানা ৭০ বছর ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে লেবার পার্টি।
সেই শক্ত ঘাঁটিতে এবার আঘাত করে মসনদ পাতলেন মাইরি ব্লাক। গত কয়েক সপ্তাহে
তাকে নিয়ে প্রচুর কথা বলা হয়েছে। কেউ বলেছেন তিনি পরিচ্ছন্ন মুখের একজন
প্রার্থী। কেউ বলেছেন তিনি হৃদয়গ্রাহী। কেউ বলেছেন, তিনি স্পষ্ট কথা বলেন।
বিবিসি বলেছে, তিনি হয়তো এগুলোর সবই। তবে তার সঙ্গে আরও একটি গুণ আছে। তা
হলো তিনি ভীষণ সংগীতপ্রেমী। তিনি ড্রাম ও পিয়ানো বাজাতে পারেন খুব ভালভাবে।
তার প্রিয় গান বব ডিলনের দ্য টাইমস দে আর এ চেঞ্জিং। সত্যি তিনি এরই মধ্যে
পরিবর্তনের প্রমাণ দিয়েছেন। ছেড়ে দিয়েছেন জিন্সের পোশাক পরা। তার বদলে
গায়ে উঠেছে ট্রাউজার, শার্ট আর জাম্পার। রাজনৈতিক নেতাদের যা মানায় আর কি।
তার পিতার নাম অ্যালন। তিনি ছিলেন তার নির্বাচনী প্রচারণার ম্যানেজার।
স্কটল্যান্ডের গণভোট তাকে পাল্টে দিয়েছে। মাইরি ব্লাক বলেন, যখন গণভোটের
কথা এলো তখন আমরা মনে করলাম এটাই পরিবর্তনের উত্তম সুযোগ। মিস মাইরি
ব্লাকের জন্ম ১৯৯৪ সালে। ওই সময় সাবেক এমপি ডগলাস আলেক্সান্দার, যাকে তিনি
হারিয়েছেন, তিনি লেবার দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের পক্ষে কাজ
করছিলেন। ডগলাস যখন হাউজ অব কমন্সে এমপি হয়ে প্রবেশ করেন তখন মাইরি ব্লাকের
বয়স মাত্র তিন বছর। মাইরি ব্লাকের বয়স এ বছরের শেষের দিকে ২১ বছর হবে।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরীক্ষাও দিতে হবে ইউনিভার্সিটির। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি
বয়সে ছোট হতে পারি। কিন্তু আমি তো সব মানুষের পক্ষ হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি।
বন্ধুরা তার এ বিজয়কে কিভাবে দেখছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হাসেন। বলেন,
তারা মনে করে আমি মানসিক কারণে নির্বাচন করছি। কিন্তু তারা ঠিকই জানে আমি
কতটা সিরিয়াস হয়ে নির্বাচনে নেমেছি। পরিবর্তনের ধারা দেখে বন্ধুরা অভিভূত।
বন্ধুরা আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে এটা আমার জন্য একটি বোনাস পাওয়া হবে।
তিনি গ্লাসগো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। সামনে তার ফাইনাল পরীক্ষা। এরই
মধ্যে স্বাধীনতাকামী স্কটিশ পার্টির এমপি নির্বাচিত হলেন। স্বর্ণকেশী মাইরি
ব্লাক নিজের নামের প্রথম অংশকে অর্থাৎ মেরি হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দেন।
তার জন্ম লেবার পার্টিকে সমর্থন করে এমন একটি পরিবারে। তবে তার পরিবার
ভালবাসে স্কটল্যান্ডকে। মাইরি ব্লাক বলেন, স্কটল্যান্ড দশকের পর দশক
অবহেলার শিকার। পাইসলের প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে একজন বসবাস করছেন
দারিদ্র্যে। তাদের জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে চান তিনি। মাইরি ব্লাক বেড়ে
উঠেছেন পাইসলিতে। এটি স্কটল্যান্ডের পশ্চিমাংশে একটি শ্রমজীবী মানুষের
এলাকা। শৈশব পেরোনোর পর পরই তিনি স্কটিশ পার্লামেন্টের সমর্থক হয়ে যান।
বিরোধিতা করেন ইরাক যুদ্ধের। গত বছর স্কটল্যান্ডকে স্বাধীনতার প্রশ্নে যখন
গণভোট হয় তখন তিনি এই স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন সোচ্চার। কিন্তু ওই সময়ে
স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে নি।
No comments