সারিয়াকান্দিতে যমুনায় বিকল্প বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প- পাউবোর জবরদস্তি, দিশেহারা মানুষ by আনোয়ার পারভেজ
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার রৌহগ্রামে উচ্ছেদ অভিযানের একটি দৃশ্য। প্রথম আলো |
প্রমত্তা
যমুনা ফকির মোহাম্মদের পৈতৃক ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে অনেক আগেই। গত
বর্ষায় বাঁধ ভেঙে কোমর ভেঙেছে আরেক দফা। যমুনার পানিতে ভেসে যায় তাঁর
বসতঘর, আসবাব। অবলম্বন বলতে বাকি ছিল ১৮ শতকের বসতভিটা। সেখানে নতুন করে ঘর
তুলে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তানসহ আটজনকে নিয়ে ছিল অসহায় মানুষটির বসবাস।
কিন্তু জোরজবরদস্তি করে গত রোববার তাঁর বসতঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। বসতভিটা
হারিয়ে তিনি এখন পরিবার নিয়ে দিশেহারা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ গ্রামের বাসিন্দা ফকির মোহাম্মদ। গ্রামে গ্রামে ছোলা ও পেঁয়াজু বিক্রি করাই তাঁর পেশা।
শুধু ফকির মোহাম্মদ নন, তাঁর মতো দিশেহারা সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা, কামালপুর ও কুতুবপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের বহু লোক। যমুনার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য বিনা নোটিশে তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে ও বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুমদখল শাখা থেকে এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি। চূড়ান্ত হয়নি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ। অথচ প্রায় দেড় মাস আগেই যমুনার ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে পাউবো। জমি অধিগ্রহণের আগে বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে জবরদস্তি করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বসতভিটা। বিনা নোটিশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঘরবাড়ি। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা। খননযন্ত্র দিয়ে আবাদি জমিতে মাটি ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে ফসল।
পাউবো সূত্র জানায়, সম্প্রতি ওই প্রকল্প সংশোধন করে শুধু নদীর তীর সংরক্ষণের জন্যই ৩০১ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় পাউবো। আর আট কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩০ ফুট চওড়া ও আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধের জন্য পাউবো থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে ৩১ দশমিক ৭০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। অধিগ্রহণ করা জমির দাম ধরা হয় ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করার কথা একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ৩০১ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ হায়াতুদ্দৌলা খান জানান, জমির মূল্য নির্ধারণসহ অধিগ্রহণ-প্রক্রিয়াই এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। অথচ ২৫ মার্চ থেকে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন।
চন্দনবাইশার রোহদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের বাড়িঘর ভেঙে, কৃষকের ফসল নষ্ট করে বাঁধের কাজ চলছে। যমুনা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে পাইপের মাধ্যমে তা ফেলা হচ্ছে বাঁধের দুই পাড়ের মাঝখানে। ফকির মোহাম্মদের বসতবাড়ি ভেঙে সেখানে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি তুলছেন ঠিকাদারের লোকজন।
রোহদহ নতুনপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঠিকাদারের লোকজন খননযন্ত্র দিয়ে তাজা পাটখেত মাড়িয়ে বাঁধের পাড়ে মাটি ফেলছেন। কোনো প্রকার অধিগ্রহণ না করেই এভাবে ফসল মাড়িয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ কৃষকেরা। কৃষক ফরহাদ হোসেন জানান, তাঁর ৩০ শতক জমিতে বোরো ধান ছিল। এখন সেই খেত মাড়িয়েই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঁধ নির্মাণের কারণে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া, ঘুঘুমারি ও শেখপাড়া; কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ, ফকিরপাড়া, অকন্দপাড়া, ইছামারা, গোয়ালখালী ও হাওড়াখালী এবং কুতুবপুরের কর্নিবাড়ি, কুতুবপুর ও বানিযান গ্রাম এখন হুমকির মুখে। এসব গ্রামের হাজারো মানুষের দিন কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়। বাঁধ নির্মাণের কারণে চন্দনবাইশার দুটি উচ্চবিদ্যালয় ও আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও হুমকির মুখে পড়েছে।
পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, অধিগ্রহণ শেষ করে বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে বর্ষার আগে বাঁধ করা যেত না। এ জন্য অধিগ্রহণের আগেই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আর নৌবাহিনী বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পেলেও তারা শুধু কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। কাজ করছেন একজন ঠিকাদার।
বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনের সাংসদ আবদুল মান্নান বলেন, সারিয়াকান্দিকে যমুনার হাত থেকে রক্ষার জন্য ওই বাঁধটা হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের হাতে দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দেওয়াটাও জরুরি।
নদীর পাড়ের মানুষের উৎকণ্ঠার বিষয়ে সাংসদ বললেন, পাউবো বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে জরিপ করে নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করছে। এখানে কারও কোনো হাত নেই।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ গ্রামের বাসিন্দা ফকির মোহাম্মদ। গ্রামে গ্রামে ছোলা ও পেঁয়াজু বিক্রি করাই তাঁর পেশা।
শুধু ফকির মোহাম্মদ নন, তাঁর মতো দিশেহারা সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা, কামালপুর ও কুতুবপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের বহু লোক। যমুনার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য বিনা নোটিশে তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে ও বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুমদখল শাখা থেকে এখনো জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি। চূড়ান্ত হয়নি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ। অথচ প্রায় দেড় মাস আগেই যমুনার ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে পাউবো। জমি অধিগ্রহণের আগে বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে জবরদস্তি করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বসতভিটা। বিনা নোটিশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঘরবাড়ি। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা। খননযন্ত্র দিয়ে আবাদি জমিতে মাটি ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে ফসল।
পাউবো সূত্র জানায়, সম্প্রতি ওই প্রকল্প সংশোধন করে শুধু নদীর তীর সংরক্ষণের জন্যই ৩০১ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় পাউবো। আর আট কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩০ ফুট চওড়া ও আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধের জন্য পাউবো থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে ৩১ দশমিক ৭০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। অধিগ্রহণ করা জমির দাম ধরা হয় ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করার কথা একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ৩০১ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ হায়াতুদ্দৌলা খান জানান, জমির মূল্য নির্ধারণসহ অধিগ্রহণ-প্রক্রিয়াই এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। অথচ ২৫ মার্চ থেকে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন।
চন্দনবাইশার রোহদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের বাড়িঘর ভেঙে, কৃষকের ফসল নষ্ট করে বাঁধের কাজ চলছে। যমুনা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে পাইপের মাধ্যমে তা ফেলা হচ্ছে বাঁধের দুই পাড়ের মাঝখানে। ফকির মোহাম্মদের বসতবাড়ি ভেঙে সেখানে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি তুলছেন ঠিকাদারের লোকজন।
রোহদহ নতুনপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঠিকাদারের লোকজন খননযন্ত্র দিয়ে তাজা পাটখেত মাড়িয়ে বাঁধের পাড়ে মাটি ফেলছেন। কোনো প্রকার অধিগ্রহণ না করেই এভাবে ফসল মাড়িয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ কৃষকেরা। কৃষক ফরহাদ হোসেন জানান, তাঁর ৩০ শতক জমিতে বোরো ধান ছিল। এখন সেই খেত মাড়িয়েই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঁধ নির্মাণের কারণে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া, ঘুঘুমারি ও শেখপাড়া; কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ, ফকিরপাড়া, অকন্দপাড়া, ইছামারা, গোয়ালখালী ও হাওড়াখালী এবং কুতুবপুরের কর্নিবাড়ি, কুতুবপুর ও বানিযান গ্রাম এখন হুমকির মুখে। এসব গ্রামের হাজারো মানুষের দিন কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়। বাঁধ নির্মাণের কারণে চন্দনবাইশার দুটি উচ্চবিদ্যালয় ও আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও হুমকির মুখে পড়েছে।
পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, অধিগ্রহণ শেষ করে বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে বর্ষার আগে বাঁধ করা যেত না। এ জন্য অধিগ্রহণের আগেই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আর নৌবাহিনী বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পেলেও তারা শুধু কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। কাজ করছেন একজন ঠিকাদার।
বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনের সাংসদ আবদুল মান্নান বলেন, সারিয়াকান্দিকে যমুনার হাত থেকে রক্ষার জন্য ওই বাঁধটা হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের হাতে দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দেওয়াটাও জরুরি।
নদীর পাড়ের মানুষের উৎকণ্ঠার বিষয়ে সাংসদ বললেন, পাউবো বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে জরিপ করে নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করছে। এখানে কারও কোনো হাত নেই।
No comments