রুশনারার জয় সিলেটে উচ্ছ্বাস by ওয়েছ খছরু
ভোটের
পর তখনও ফলাফল ঘোষণা হয়নি। বড় মামা মাস্টার আবদুর রউফকে লন্ডন থেকে ফোন
দিলেন রুশনারা। অনেকটা আবেগাপ্লুত ছিলেন তিনি। ফোনে বললেন, ‘দোয়া করো মামা।
আমি জয়ের পথে।’ বিশ্বনাথের ভুরকি গ্রামের দুরন্ত মেয়ে রুশনারা। বৃটেনে
হচ্ছে নির্বাচন। সেখানে তিনি প্রার্থী। কিন্তু দেশের স্বজনদের দোয়া নিতে
ভুলেননি একটুও। রুশনারার ফোন আসবেই। সব কিছুতে তার দেশের প্রতি টান রয়েছে-
এমনটি জানালেন স্বজনরা। রুশনারা আলীর ফোনের দিকে তাকিয়ে নয়, বৃহস্পতিবার
শুধু ভুরকিই নয় গোটা বিশ্বনাথের মানুষের একটাই ছিল প্রার্থনা- ‘রুশনারা
আলীর জয়’। এ ভোট যেন বৃটেনে নয় হয়ে গেলো বিশ্বনাথে। গতকাল সকালে যখন ফলাফল
ঘোষণায় খবর এলো রুশনারার বিজয়ের তখন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়লো ভুরকি
গ্রামে। এর মাত্রা ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বনাথের গ্রামে-গ্রামে। ভুরকির গ্রামের
রুশনারা স্বজনরা সবাই মিলিত হন এক সঙ্গে। করেন আনন্দ উল্লাস। গ্রামের সব
বয়সী মানুষ রুশনারা আলীর বাড়িতে এসে ভিড় করেন। মিডিয়া কর্মীদেরও ভিড় বাড়ে
সেখানে। এরই মধ্যে এলো মিষ্টি। রুশনারার আরেক মামা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান
কবির হোসেন ধলা মিয়া গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানালেন, রুশনারা বিজয়ের পর
‘এক মণ’ মিষ্টি নিয়ে আসা হয় গ্রামে। সেখানে প্রতিটি মানুষ রোশনারার বিজয়ে
মিষ্টি মুখ করেন। শুধু ভুরকি গ্রামের নয় বিশ্বনাথ শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে
লোকজনও আসেন ভুরকি গ্রামে। তাদেরও মিষ্টি মুখ করা হয়। গ্রামের লোকজন
জানিয়েছেন, রুশনারা আলী বৃটেনের বেথনাল গ্রিন ও বো নির্বাচনী এলাকার এমপি
হলেও গ্রামে এলে একজন সাধারণ মহিলা। গ্রামের স্বজনদের বুকে জড়িয়ে নেন সহজে।
তার হাসিমাখা মুখ গোটা মানুষের দুঃখকে ভুলিয়ে দেয়। গত বছরের শেষের দিকে
নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে সিলেটে এসেছিলেন রোশনারা। খুব ব্যস্ত সময়।
ব্যস্ত শিডিউল। সময় নেই হাতে। এরপরও রুশনারা আলী ভুরকি গ্রামে ছুটে গেছেন
এক বিকালে। গ্রামের খালা, চাচী, ফুফুদের নিয়ে আড্ডা দিয়েছেন। তাদের কাছে
দোয়া চেয়েছেন। এরপর মামাদের বাড়ি গিয়েছেন। নিজের বাড়িও গিয়েছেন। মামা কবির
হোসেন ধলা মিয়া জানিয়েছেন, রুশনারা আলীর বিজয়ের জন্য বিশ্বনাথের ঘরে ঘরে
প্রার্থনা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া হয়েছে। এখন বিজয়ের পর শোকরানা
আদায় করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রোশনারা আলী সিলেটের বিশ্বনাথের
ভুরকি গ্রামের মেয়ে। জন্ম বিশ্বনাথেই। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা সময় পড়ালেখা
করেছেন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে। এরপর বাবা আপ্তাব আলীর সঙ্গে পরিবার নিয়ে
চলে যান বৃটেনে। বসবাস শুরু করেন বেথনাল গ্রিন এলাকায়। চার ভাই বোনের মধ্য
রুশনারা সবার বড়। ১৯৮৫ সালের দিকে বৃটেনে গেলেও তিনি বিশ্বনাথকে ভুলেননি।
পরিবারের সঙ্গে প্রতি বছর স্বজনদের টানে বাড়ি আসেন। রোশানারা বিজয়ে খুশির
ঢেউ লেগেছে বিশ্বনাথ শহরে। গতকাল বিকালে বিশ্বনাথ শহর ছিল আনন্দমুখর। লোকজন
আনন্দে মিষ্টি মুখ করেছেন। এদিকে, বৃটেনের নির্বাচনে বৃহস্পতিবার অনেকটা
নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সিলেটবাসী। রোশনারা আলী সহ সিলেটের ৯ জন প্রার্থী
এবার বৃটেন পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত
১২ প্রার্থীর বিজয়ের জন্য মুখিয়ে ছিলেন সিলেটের মানুষ। রাতে টিভি স্ক্রিনে
চোখ রাখার পাশাপাশি মোবাইল, হোয়াটসআপ, ভাইভার, আইএমও’র মাধ্যমে সরাসরি খবর
নিয়েছেন। সিলেটের স্থানীয় ও লন্ডনে বসবাসকারী সিলেটীরাও ফেসবুক দুনিয়ায়
সিলেটের প্রার্থীদের নিয়ে ঝড় তোলেছেন। শেষে রুশনারা আলীর বিজয়ে আনন্দ
পেয়েছেন। রুশনারার বিজয়ে আনন্দ বার্তায় ছেয়ে গেছে ফেসবুক পেইজও। বৃটেনের
সিলেটীদের সঙ্গে এই নির্বাচনে সমানভাবে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন সিলেটের
স্বজনরাও।
No comments