দুই কূটনীতিককে নিয়ে বেকায়দায় পররাষ্ট্র দপ্তর
দুই
কূটনীতিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে অস্থির পররাষ্ট্র দপ্তর। করণীয়
নির্ধারণে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। তদবিরও চলছে পক্ষে-বিপক্ষে।
নীতিনির্ধারকরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে। সহযোগী-সহকর্মীরা বিব্রত। অভিযোগ আমলে
নিয়ে কাতারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আর শিক্ষানবিশ
এক কূটনীতিককে চাকরি স্থায়ী না করার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে সরকারকে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, জুনিয়র ওই কূটনীতিকের গুরুতর
অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশের ইমেজ। নেদারল্যান্ডস-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়
সম্পর্কেও এটি মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, একটি ইলেক্ট্রনিক পণ্য চুরির অভিযোগে
দু’মাস আগে হেগে আটক হয়েছিলেন প্রশিক্ষণে যাওয়া কূটনীতিক শিশির মাহবুব
শহিদ। সেখানে ৩৫০ ইউরো জরিমানাও হয় তার। কূটনীতিক হওয়ায় ডাচ্ পুলিশ তাকে
জেলে না পাঠিয়ে দূতাবাসের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে
সে জন্য ট্রেনিং শেষে দেশে ফেরার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
গ্রহণের কথা বলা হয়। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কি
ব্যবস্থা নেয় তা নেদারল্যান্ডসকে জানানোর শর্তও ছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে এ
ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু এতদিনেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে বিরক্তি
প্রকাশ করে নেদারল্যান্ডস। এক কূটনৈতিক পত্রে (নোট ভারবাল) ডাচ্ সরকার
ঢাকাকে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানায়। সেখানে কেবল শিশিরের ঘটনাই নয়, আটক অবস্থায়
ডাচ্ পুলিশকে দেয়া তার জবানবন্দির স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও অবহিত করা হয়।
ডাচ্ নোট ভারবালে দেয়া তথ্যমতে, জিজ্ঞাসাবাদ কালে শিশির পুলিশকে জানান,
কেবল তিনি নন, তার আগেও কয়েকজন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এতে তিনি উৎসাহিত
হয়েছেন বলেও দাবি করেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত দু’মাস
ধরে বিষয়টি ছাইচাপা দেয়ার চেষ্টাতেই লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। ঘটনার চেয়ে
পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বিলম্বকেও গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটি। এ
নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জানিয়ে
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, দেরিতে হলেও তার বিরুদ্ধে
প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৯ সহকর্মীসহ শিশিরের
আগামী ৯ই এপ্রিল ট্রেনিং সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করার কথা। তিনি
যোগদানের সুযোগ পেলেও আপাতত তার চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না। পরবর্তী ফর্মে আরও
কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আভাস দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, তাকে চাকরিচ্যুত করার
চাপ রয়েছে। তবে ওই প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। এদিকে মন্ত্রণালয়ের অপর এক
কর্মকর্তা বলেন, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ
খন্দকারকে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য এরই মধ্যে
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১লা এপ্রিল
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম আদিষ্ট হয়ে পররাষ্ট্র
সচিব মো. শহীদুল হককে চিঠি দিয়ে ওই নির্দেশ জারি করেন জানিয়ে এক
কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দুই লাইনের ওই চিঠিতে কোন
ধরনের কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত আনার নির্দেশনা দেয়া
হয়েছে। রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ বা ঠিক কী কারণে তাকে প্রত্যাহারের
নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে তার উল্লেখ না থাকলেও একাধিক সূত্র জানায়, তার
বিরুদ্ধে কাতারস্থ বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ করা
হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার পর ওই সংগঠনের সভাপতি পররাষ্ট্র
মন্ত্রী ও সচিবের কাছে অভিযোগ করেছিলেন জানিয়ে একটি সূত্র জানায়,
রাষ্ট্রদূতের উসকানিতে কাতার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে
সন্ত্রাসী হামলার গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে। কাতারের ইস্ট-ওয়েস্ট রেস্টুরেন্টের
ওই সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ কাতার শাখার সভাপতি সফিকুল ইসলাম
প্রধান আহত হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়। গত বছরের ২১শে অক্টোবর একটি
অনুষ্ঠানের জন্য দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখাসহ উপযুক্ত সেবা না দেয়া,
অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনারও অভিযোগ আনা হয় দূতাবাস প্রধানের বিরুদ্ধে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে উত্থাপিত
অভিযোগের বিষয়ে দূতাবাস থেকে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেলেও প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে পররাষ্ট্র দপ্তর। দ্রুততম সময়ের মধ্যে
তাকে ঢাকায় রিপোর্ট করতে এরই মধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
No comments