সাহারার মৃত্যুফাঁদে অভুক্ত ১৮ দিন by রোকনুজ্জামান পিয়াস
সে
সময়ের কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি। এ কষ্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো
না। একদিকে খাবার কষ্ট, অন্যদিকে মৃত্যু ভয়। এমনও সময় গেছে এক নাগাড়ে ৩-৪
দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এ অবস্থা থেকে কখনও মুক্তি পাবো ভাবতেই পারিনি।
লিবিয়ার আল ঘানি নামে একটি তেলক্ষেত্র থেকে অপহরণের শিকার বাংলাদেশী
নোয়াখালীর আনোয়ার হোসেন গতকাল দেশে ফিরে এভাবেই বর্ণনা করেন সাহারা মরভূমির
দীর্ঘ ১৮ দিনের বন্দি জীবনের কাহিনী। গতকাল আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি
বিমানে করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি ও তার সঙ্গে
অপহরণ হওয়া জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার হেলাল উদ্দিন। বিমানটি মাল্টা
থেকে রওনা দিয়ে দুবাইয়ে যাত্রা বিরতি করে বিকালে ঢাকা পৌঁছায়। গত ৬ই মার্চ
লিবিয়ার আল ঘানি তেলক্ষেত্র থেকে অস্ত্রধারী আইএস’র হাতে অপহৃত হন তারা।
এরপর দীর্ঘ ১৮ দিন তাদের সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না তাদের। তবে অপহরণকারীরা
সব সময়ই তাদের বলতো, তোরা মুসলিম, তোদের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু তাদের এ
অভয়বাণী কখনও আশ্বস্ত করতে পারেনি হেলাল ও আনোয়ারকে। তাদের ভয় ছিল- তারা
যেহেতু লিবিয়ান সরকারের অধীনে কাজ করে তাই সরকার যদি ওই আইএসের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেয় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওই সময়টাতে ওইসব অপহরণকারীদের মধ্যে
এক ধরনের অস্থিরতাও লক্ষ্য করেছেন তারা। এজন্য বারবার তাদের স্থান পরিবর্তন
করতে হয়েছে।
ফিরে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৬ই মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে ৪ ফিলিপাইন, ২ জন অস্ট্রিয়া ও ১ জন ঘানার নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। কিন্তু সে সময় তারা বুঝতে পারেননি কারা কেন তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওই দিনই সোজা তাদেরকে সাহারা মরুভূমিতে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এ সময় তারা বলেছিল তোরা মুসলমান হলে ছেড়ে দেবো। ওই দিন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটে তাদের। জনমানবহীন মরুভূমির বালুর ওপর কম্বল বিছিয়ে থাকতে দেয়া হয় বাংলাদেশী ২ জনকে। আটক অন্য বিদেশীদের সার্বক্ষণিক পাহারায় তাদের গাড়িতে আটকে রাখা হয়। পরের দিন ৭ই মার্চ সকালে মরভূমির আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন মরভূমির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয়। ওই দিন শুধুমাত্র জুস খেতে দেয়া হয়। কিন্তু মৃত্যুর ভয়ে তারা কিছুই খেতে পারেনি। সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় (তাদের ধারণা)। সেখানে দুটি ভবন ছিল। এর একটির এক কক্ষে তাদের ২ জনকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ওই কক্ষের দরজা জানালা সব সময় বন্ধ থাকতো। এভাবে ৪-৫ দিন রাতদিন অন্ধকারেই কাটে তাদের। এই সময়ে তাদের সামান্য কিছু খাবার দেয়া হতো। আনোয়ার বলেন, তারা যা খেতো আমাদেরকেও তাই দিতো। কিন্তু ওদের দেয়া ওই সব খাবার আমরা খেতে পারতাম না। ফলে না খেয়েই থাকতে হতো। ওই সময়টা সবচেয়ে বেশি কষ্টকর ছিলো তাদের জন্য। শুধুমাত্র অজু এবং প্রাকৃতিক কাজ সারতে দরজার তালা খুলে দেয়া হতো। ৪-৫ দিন পর তাদেরকে আবারও বাইরে বের করা হয়। আবারও মরুভূমির বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ঘুরানো হয়। এরপর থেকে ২৩শে মার্চ পর্যন্ত তারা কখনও এক জায়গাই স্থির হননি। সব সময় এদিক-ওদিক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একেক দিন একেক জায়গায় রাত কেটেছে তাদের। আনোয়ার বলেন, ওই সময় মনে হয়েছে আটককারী জঙ্গিরাও বেশ বিপদে আছে। এজন্য কোন এক জায়গায় স্থির হতে পারছে না। জনমানবহীন মরুভূমির ওই সব এলাকায় যেমন ছিল খাবারের সমস্যা, তেমন ছিল পানির সংকট। আনোয়ার বলেন, পানির তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত। পরে ২৩শে মার্চ ঘানার একজনসহ তাদের দুজনকে সিরত শহরের একটা স্কুলে তাদের রেখে আসে অপহরণকারীরা। তার বর্ণনা মতে স্কুলের ভবন নতুন ছিল। পরে অসুস্থ থাকায় সেখান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে তাদের পরিচয় জানতে পারেননি। উদ্ধারকারীরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিচয় নিয়েছে। এদিকে অপহৃত বাকিদের আগেই আলাদা করে ফেলেছিল জঙ্গিরা। তাই তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে তা জানতে পারেননি। তাদেরকে জেলে পাঠানো হবে বলে শুনেছেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা আসলে কি করতো তা তাদের কাছে সব সময় অস্পষ্টই থেকেছে। তিনি বলেন, তারা আগেই বলেছিল আমাদেরকে মারবে না, কিন্তু একটা ভয় সব সময় ছিল যে, তারা বিপদে পড়লেই আমরাও বিপদে পড়বো। কারণ আমরা সরকারের অধীনে কাজ করেছি, আমাদেরকে উদ্ধারের জন্য যদি তাদের কোন সমস্যা করে তাহলে মেরে ফেলবে।
উল্লেখ্য, ৬ই মার্চ অপহরণ হওয়ার পর থেকে ১৮ দিন নিখোঁজ ছিল তারা। পরে ২৩শে মার্চ অজ্ঞাতস্থান থেকে পরিবারের কাছে ফোন করেন ময়মনসিংহের হেলাল উদ্দিন। ত্রিপোলিস্থ দূতাবাস ওই দিনই জানায়, তারা সিরতের একটি হাসপাতালে আছে। গত বৃস্পতিবার তারা যে কোম্পানিতে কাজ করতো সেই কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ত্রিপোলিতে পৌঁছান আনোয়ার, হেলাল ও ঘানার এক মুসলিম নাগরিক।
ফিরে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৬ই মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে ৪ ফিলিপাইন, ২ জন অস্ট্রিয়া ও ১ জন ঘানার নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। কিন্তু সে সময় তারা বুঝতে পারেননি কারা কেন তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওই দিনই সোজা তাদেরকে সাহারা মরুভূমিতে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এ সময় তারা বলেছিল তোরা মুসলমান হলে ছেড়ে দেবো। ওই দিন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটে তাদের। জনমানবহীন মরুভূমির বালুর ওপর কম্বল বিছিয়ে থাকতে দেয়া হয় বাংলাদেশী ২ জনকে। আটক অন্য বিদেশীদের সার্বক্ষণিক পাহারায় তাদের গাড়িতে আটকে রাখা হয়। পরের দিন ৭ই মার্চ সকালে মরভূমির আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন মরভূমির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয়। ওই দিন শুধুমাত্র জুস খেতে দেয়া হয়। কিন্তু মৃত্যুর ভয়ে তারা কিছুই খেতে পারেনি। সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় (তাদের ধারণা)। সেখানে দুটি ভবন ছিল। এর একটির এক কক্ষে তাদের ২ জনকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ওই কক্ষের দরজা জানালা সব সময় বন্ধ থাকতো। এভাবে ৪-৫ দিন রাতদিন অন্ধকারেই কাটে তাদের। এই সময়ে তাদের সামান্য কিছু খাবার দেয়া হতো। আনোয়ার বলেন, তারা যা খেতো আমাদেরকেও তাই দিতো। কিন্তু ওদের দেয়া ওই সব খাবার আমরা খেতে পারতাম না। ফলে না খেয়েই থাকতে হতো। ওই সময়টা সবচেয়ে বেশি কষ্টকর ছিলো তাদের জন্য। শুধুমাত্র অজু এবং প্রাকৃতিক কাজ সারতে দরজার তালা খুলে দেয়া হতো। ৪-৫ দিন পর তাদেরকে আবারও বাইরে বের করা হয়। আবারও মরুভূমির বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ঘুরানো হয়। এরপর থেকে ২৩শে মার্চ পর্যন্ত তারা কখনও এক জায়গাই স্থির হননি। সব সময় এদিক-ওদিক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একেক দিন একেক জায়গায় রাত কেটেছে তাদের। আনোয়ার বলেন, ওই সময় মনে হয়েছে আটককারী জঙ্গিরাও বেশ বিপদে আছে। এজন্য কোন এক জায়গায় স্থির হতে পারছে না। জনমানবহীন মরুভূমির ওই সব এলাকায় যেমন ছিল খাবারের সমস্যা, তেমন ছিল পানির সংকট। আনোয়ার বলেন, পানির তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত। পরে ২৩শে মার্চ ঘানার একজনসহ তাদের দুজনকে সিরত শহরের একটা স্কুলে তাদের রেখে আসে অপহরণকারীরা। তার বর্ণনা মতে স্কুলের ভবন নতুন ছিল। পরে অসুস্থ থাকায় সেখান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে তাদের পরিচয় জানতে পারেননি। উদ্ধারকারীরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিচয় নিয়েছে। এদিকে অপহৃত বাকিদের আগেই আলাদা করে ফেলেছিল জঙ্গিরা। তাই তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে তা জানতে পারেননি। তাদেরকে জেলে পাঠানো হবে বলে শুনেছেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা আসলে কি করতো তা তাদের কাছে সব সময় অস্পষ্টই থেকেছে। তিনি বলেন, তারা আগেই বলেছিল আমাদেরকে মারবে না, কিন্তু একটা ভয় সব সময় ছিল যে, তারা বিপদে পড়লেই আমরাও বিপদে পড়বো। কারণ আমরা সরকারের অধীনে কাজ করেছি, আমাদেরকে উদ্ধারের জন্য যদি তাদের কোন সমস্যা করে তাহলে মেরে ফেলবে।
উল্লেখ্য, ৬ই মার্চ অপহরণ হওয়ার পর থেকে ১৮ দিন নিখোঁজ ছিল তারা। পরে ২৩শে মার্চ অজ্ঞাতস্থান থেকে পরিবারের কাছে ফোন করেন ময়মনসিংহের হেলাল উদ্দিন। ত্রিপোলিস্থ দূতাবাস ওই দিনই জানায়, তারা সিরতের একটি হাসপাতালে আছে। গত বৃস্পতিবার তারা যে কোম্পানিতে কাজ করতো সেই কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ত্রিপোলিতে পৌঁছান আনোয়ার, হেলাল ও ঘানার এক মুসলিম নাগরিক।
No comments