নির্বাচন গণতন্ত্র হত্যার কলকাঠি হতে পারে না by সিরাজুর রহমান

আধুনিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে বহু নিরীক্ষা আর অভিজ্ঞতার ফসল হিসেবে। ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি, হানাহানি এবং মাঝে মধ্যেই গৃহযুদ্ধে মানবসমাজ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। বিকল্প ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর-পদ্ধতির জন্য বহু তল্লাশি করে রাষ্ট্রনীতির পণ্ডিতেরা গণতন্ত্রকে আবিষ্কার করেছিলেন। অবশ্য গণতন্ত্রের ধ্যান-ধারণার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন প্রাচীন গ্রিসে অ্যারিস্টটল। লক্ষ্য ছিল জনগণ নিজেদের অভিপ্রায় অনুযায়ী শাসক নির্বাচন করবে, এতে প্রশাসনে সাধারণ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। অবশ্য এ পদ্ধতি যে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত, সে কথা তারাও হলফ করে বলেননি। আর আজকের বাংলাদেশে আমরা ব্যতিক্রমগুলোর জের হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রথম ও প্রধান অপরিহার্য অঙ্গ। বলা যায়, নির্বাচন গণতন্ত্রের সোপান। ক্ষমতার নেশা কর্তাব্যক্তিদের পেয়ে বসলে বহু ধরনের সমস্যা-সঙ্কট দেখা দেয়। প্রথমে আসে আলস্য এবং এর জের ধরে দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন ও গৃহযুদ্ধ। গণতন্ত্রের গোড়ার দিকে চিন্তাবিদেরা চাইতেন নির্বাচন যাতে ঘন ঘন হয়। দুই নির্বাচনের মাঝে তিন বছরের বেশি মেয়াদ তাদের কেউ কেউ আদর্শস্থানীয় মনে করেননি। একটানা বেশি দিন গদিতে থাকলে শাসকদের গদির মোহে পেয়ে বসতে পারে। জনসাধারণ হতাশ হয়। এরা বিকল্প শাসক নির্বাচিত করতে চায়। সুযোগ না পেলে শক্তি প্রয়োগ করে এরা ক্ষমতা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলো (পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা) ব্যবহার করে গণ-আন্দোলন প্রতিরোধ করা হলে অশান্তি, হানাহানি, রক্তপাত ও শেষতক গৃহযুদ্ধ শুরু হতে বাধ্য। বাংলাদেশে এখন শেষ দুই পর্যায় চলছে। গণতন্ত্র শেকড় গেড়ে বসলে ব্যয়সাকুল্য এবং প্রশাসনিক সুবিধার লক্ষ্যে কোনো কোনো দেশ নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো কোনো দেশে সংসদের মেয়াদ চার বছরে সীমিত করা হয়েছে। পণ্ডিতেরা নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির চাবিকাঠি হিসেবে পরিকল্পনা করেছিলেন। বাংলাদেশের চরম দুর্ভাগ্য, এ দেশে বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে ভণ্ডুল করার কলকাঠি হিসেবেই নির্বাচন পদ্ধতিকে ব্যবহার করতে চায়। সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসন অসম্ভব করে তোলার জন্য ২০০৯ সাল থেকেই প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করে ফেলা হয়। এরপর অত্যন্ত বিতর্কিতভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে সুস্থ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শেষ আশা-ভরসাও মুছে ফেলা হয়েছে। এরই ফসল আমরা দেখতে পেয়েছি, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। দেশের সব বিরোধী দল এবং পণ্ডিত ও শুভেচ্ছাসম্পন্ন মানুষ অজস্রবার সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। হুঁশিয়ার করে দিয়েছে বিশ্ব সমাজও। সবাই একবাক্যে বলেছেন, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে সে নির্বাচনের কোনো বৈধতা থাকবে না। কিন্তু সরকার জাতিসঙ্ঘ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সব মিত্র দেশ এবং সাহায্যদাতা সব রাষ্ট্র ও সংস্থার পরামর্শ অগ্রাহ্য করে এক তরফাভাবে সে তারিখে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়, যদিও জানা ছিল যে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল সে নির্বাচনে অংশ নেবে না। শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর এই বলে বিশ্ব সমাজকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন যে সংবিধানের রীতি রক্ষার্থে তিনি নির্বাচন দিতে বাধ্য হচ্ছেন। একবার সে নির্বাচন হয়ে গেলে এবং সংবিধানের চাহিদা মিটলে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছে নতুন নির্বাচন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের প্রতিশ্রুতি মেনে চলেননি। ঘুমন্ত কর্মচারী আর অলস কুকুর নির্ধারিত তারিখের সপ্তাহখানেক আগেই দলীয়কৃত নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে যে ৩০০ সদস্যের সংসদে আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন সদস্য ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগেই নিজেদের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় গরিষ্ঠতা পাকা করে নিলো। নির্দিষ্ট তারিখে আওয়ামী লীগের ক্যাডার আর র‌্যাব-পুলিশ ছাড়া ভোটকেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি কোনো জনমানুষ দেখা যায়নি। ঘুমন্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং অলস বেওয়ারিশ কুকুর-সর্বস্ব বহু ভোটকেন্দ্রের ছবি বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। শতাধিক ভোটকেন্দ্র তো উত্তেজিত জনতা পুড়িয়েই দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের নতজানু নির্বাচন কমিশন কয়েকজন মন্ত্রীর চাপে ও উপস্থিতিতে রিপোর্ট দেয় যে আওয়ামী লীগ ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। বিশ্ব সমাজ এখনো শেখ হাসিনাকে তার ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সালের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সবার গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন দেয়ার তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু সরকার বলে দিয়েছে যে ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন দিতে তারা রাজি নয়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে সরকার ছয় বছর ধরে গড়িমসি করেছে। মাঝপথে এরা রাজধানী মহানগরীকে দুই ভাগে বিভক্ত করে সে বিতর্ক দিয়ে আরো দীর্ঘ সময় নষ্ট করে। লক্ষণীয় যে বিভক্তি শেখ হাসিনার একটা পরম অভিপ্রেত রাজনৈতিক কৌশল। ১৯৮১ সালের মে মাসে রাজনীতিতে প্রবেশের সময় থেকে তিনি সব সময় জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছেন। জনসাধারণের মুক্ত ভোটে সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে গদিচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ যখন সামরিক স্বৈরতন্ত্র চালু করেন শেখ হাসিনা, তখন বলেছিলেন যে এই পরিবর্তনে তিনি অখুশি হননি। আওয়ামী লীগের মুখপত্র (অধুনালুপ্ত) বাংলার বাণী পত্রিকা সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সাফল্যের জন্য মুনাজাত করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। বিশ্ববাসীকে তার সরকারের বৈধতা দেখানোর প্রয়োজনে এরশাদ ১৯৮৬ সালের মে মাসে সংসদ নির্বাচন ডাকেন। আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল যৌথ বৈঠক করে সে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে মাত্র দুই দিন পর জামায়াতকে দলে টেনে শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে আওয়ামী লীগ ৬ মে তারিখের নির্বাচনে অংশ নেবে। এরশাদের প্রতি আওয়ামী সমর্থন জেনারেল এরশাদ ১৯৯০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তার সামরিক স্বৈরতন্ত্র বহাল রাখতে পেরেছিলেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপস-বিমুখ গণ-আন্দোলনের জোয়ারের মুখে সামরিক স্বৈরতন্ত্র এত দীর্ঘস্থায়ী হতে পেরেছিল হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমর্থনের কারণে। তবে সে সমর্থন সব সময় সরল পথে চলেনি। ‘৮৬ সালের নির্বাচনের পর হাসিনা বেঁকে বসেন। তিনি ঘোষণা করেন যে তামাশার নির্বাচনে গঠিত সংসদে আওয়ামী লীগ যোগ দেবে না। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণ-আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার জন্য আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেও হাসিনার ওপর চাপ আসে। তখন থেকে সর্পিল পথে তিনি কখনো আন্দোলনের আর কখনো এরশাদের পক্ষে থেকেছেন বলে মনে হচ্ছিল। শেষে ছাত্র-জনতার চাপ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার সাথে একযোগে (একত্রে নয়) আন্দোলনে নামেন এবং এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সে সময়ে বাংলাদেশের উল্লসিত, অনুপ্রাণিত মানুষগুলোর চোখ-মুখ আমার আজো মনে আছে। মনে হচ্ছিল গোটা জাতি লৌহ-দৃঢ় একতা গড়ে তুলেছে, তারা স্বৈরতন্ত্রকে বরাবরের জন্য কবর দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্রপ্রধান প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ নিখুঁত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। ভোট দিতে অধীর হয়ে উঠেছে প্রতিটি নরনারী। বাংলাদেশের এই অপূর্ব নির্বাচন দেখতে বিশ্বের সব অংশ থেকে এসেছেন শত শত সংবাদদাতা ও পর্যবেক্ষক। শেষ মুহূর্তে সব কিছু ভণ্ডুল করে দিলেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনের দু’দিন আগে ৪৫ মিনিটের টেলি-ভাষণে তিনি আগাগোড়া খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করলেন। নিখুঁত নির্বাচন আর খালেদা জিয়ার বিজয়ের প্রশংসা করে বিশ্ব পর্যবেক্ষকরা দেশে ফিরে গেলেন। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বর্তমান হানাহানির শুরু সেখানেই। প্রাচীন খনার বচন আবারো সত্যি প্রমাণিত হলো: ‘ভাণ্ড ভরা দুগ্ধ মাঝে বিন্দু পরিমিত/ গোমূত্র পড়িলে তাহা হয় বিদূষিত।’ সিটি নির্বাচন ও পুলিশি বিজয় রাষ্ট্রীয় নির্বাচন দিতে চরম আপত্তির মধ্যে সরকার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন করপোরেশনের নির্বাচন ঘোষণা করেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সরকারের এই চালের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে না। তবে লক্ষণ এখনো খুব ভালো মনে হচ্ছে না। নির্বাচনের মোটামুটি তারিখ স্থির করে সরকার এবং সে অনুযায়ী সঠিক তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশে আজগুবি ব্যতিক্রম দেখা গেল। সরকার ঘোষণা করেছিল যে জুন কিংবা জুলাই মাসে নির্বাচন হবে। কিন্তু পুলিশ-প্রধান ঘোষণা দিলেন যে নির্বাচনের উপযুক্ত তারিখ হবে ২৮ এপ্রিল। সে তারিখটাই মেনে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে প্রথম জয় হলো পুলিশের। কারোরই এখন অজানা নেই, দেশটা এখন পুরোপুরি পুলিশি রাষ্ট্র। শুধু তাই নয়। পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাহিনীর প্রধানেরা এ দেশে দেশপ্রেম ও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ সম্বন্ধে লেকচার দেন, মন্ত্রীদেরও বক্তৃতার অনুপ্রেরণা জোগান এবং পিতৃস্নেহে ক্ষমতাসীনদের সংরক্ষণ দেন বলে মনে হয়। বাংলাদেশে মন্ত্রী আর পুলিশের ব্যবধান এখন ঘুচে গেছে। নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডহীনতার কথা সবাই জানেন। যেসব নির্বাচন বিধি এদের আমানত, সেগুলোও এরা বলবৎ করতে পারেন না। সব দেশেই আইন আছে নির্বাচনের কত দিন আগে থেকে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম কিন্তু নির্বাচন হবে বলে ঘোষণার সময় থেকেই পোস্টার আর হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছিল। সে বাবদ কারো সাজা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। অনেক আগে থেকেই স্থির করা আছে যে এসব পৌর নির্বাচন হবে নির্দলীয়। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সে আইন লঙ্ঘন করেছেন গণভবনে তার প্রিয় প্রার্থীদের প্যারেড করিয়ে। বছরের শুরু থেকে (৬ জানুয়ারি) বিএনপি ও ২০ দলের ঐক্যজোট সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ-হরতাল ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর উল্লেখযোগ্য যেসব নেতাকে পাওয়া গেছে পুলিশ তাদের ধরেছে। এদের অনেককে জেলে পুরে রাখা হয়েছে, সাবেক এমপি ও বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদসহ কেউ কেউ তো গুম হয়ে গেছেন। হাজার হাজার ভুয়া মামলা করা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। নির্বাচিত হলেও গদি পাবেন তো? গ্রেফতার ও গুম হওয়ার ভয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা যে যেখানে পেরেছেন আত্মগোপন করে আছেন। সরকারের হয়তো দ্বিমুখী উদ্দেশ্য ছিল। এরা ভেবেছিল গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপির কেউ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তেমন অবস্থায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের মতো ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে এরা দখলি স্বত্ব দাবি করবে। আর মনোনয়ন জমা দেয়া ও প্রচারের উদ্দেশ্যে এরা বেরিয়ে এলে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ তো প্রস্তুত আছেই। সেটা বিরোধী জোটের, বিশেষ করে বিএনপি নেতাদের জন্য গভীর দুশ্চিন্তার কারণ। নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়ার তাৎপর্যগুলো তাদের পীড়াদায়কভাবে চিন্তা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এরা নির্বাচনে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরা জানেন নির্বাচনে কিছুটাও সততা থাকলে এরা আকাশচুম্বী গরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হবেন এবং আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের দাবির অসত্যতা সারা বিশ্বের কাছেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে বিএনপির প্রার্থীরা গ্রেফতারের ভয়ে নিজেরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে যাননি। আত্মীয় কিংবা আইনজীবীরা তাদের হয়ে সে কাজটি করেছেন। অনেকে সে ক্ষেত্রে নানাধর্মী বাধার মুখে পড়েছেন। আর নির্বাচন হলেই বা কি? গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনাসহ কয়েকটি সিটি করপোরেশনে তো নির্বাচন হয়েছিল এবং বিএনপি প্রার্থীরা সেখানে বিপুল গরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় এখন তারা? চরম অবৈধ ও বিতর্কিতভাবে সরকার জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বসিয়ে দিয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি অবজ্ঞার দৃষ্টান্ত সর্বত্র। সম্প্রতি জেলা আইজীবীদের বারগুলোর নির্বাচন হয়েছে। সর্বত্রই বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক আইনজীবীরাই বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু সরকার সেসব নির্বাচন গ্রাহ্য করতে রাজি নয়। কী অর্থ করা যায় এই মনোভাবের? নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা পরিহাসের ব্যাপারে পরিণত করেছে। নির্বাচনের সত্যিকারের প্রয়োজন যেখানে গণতন্ত্র গঠনে সেখানে গণতন্ত্রের নামে বিবাদ-বিসম্বাদ ও হানাহানি সৃষ্টি করে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংসই করতে চায়। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বাঁদরামি হলে বিশ্ববাসীর মনে সে বিশ্বাস আরো পাকাপাকি গেড়ে বসবে।
(লন্ডন, ৩১.০৩.১৫)   সিরাজুর রহমান: বিবিসিখ্যাত প্রবীণ সাংবাদিক
serajurrahman34@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.