রক্তের দামে কেনা দেশটাকে জেদাজেদি করে ধ্বংস করবেন না by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
(রক্তের দামে কেনা দেশটাকে ‘জেদাজেদি করে’ ধ্বংস না করতে দুই নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তাঁর মতে, আলোচনার মাধ্যমে দেশের সংকট নিরসনে কারও জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন নেই। দেশের শান্তি ও সুস্থিতির জন্য যার সঙ্গে প্রয়োজন তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রোববার মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। পরে তা গণমাধ্যমে লিখিত আকারে পাঠান দলটির যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। কাদের সিদ্দিকী আজ ১৯ দিন অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার ও সংলাপের দাবিতে তাঁর দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করুন, আলোচনায় বসুন। সমস্ত উগ্রতা ঝেড়ে ফেলে মানবতার পথে ফিরে আসুন। মানবতাহীন অসভ্যতায় বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। রক্তের দামে কেনা দেশটাকে জেদাজেদি করে ধ্বংস করবেন না।’ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘কোনো অপরাধী, ফাঁসির আসামিকেও যত্ন করে খাবার দিতে হয়। অথচ বাংলাদেশের একজন প্রধান নেত্রীর সঙ্গে এ রকম অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ এদিকে গত শনিবার রাতে মতিঝিলের দলীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। এর মধ্যে রাত দুইটার পর হঠাৎ বৃষ্টি নামলেও তিনি ফুটপাত ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কর্মীরাও তাঁর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান কর্মসূচি করেন কাদের সিদ্দিকী।)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ছেলেমেয়ে বড় হলে মা-বাবার সাহায্য হয়। গ্রামগঞ্জে বলে, ছেলে হলো বাবার হাতের লাঠি। চরে দেখতাম, সবাই সংসারে অনেক ছেলে চায়- কেউ যাতে তাকে মাড়িয়ে যেতে না পারে। আধুনিক জামানায় সব মা-বাবারই ছেলেমেয়ে কম। আমরা ছিলাম দুই মায়ের ১৫ সন্তান। এখনো তার ১০ জন বহালতবিয়তে বেঁচে আছি। কিন্তু আমার মাত্র তিনটি। তারা আমাদের সাহায্য করবে কী, তাদের সাহায্য করতেই আমরা পেরেশান। পান থেকে চুন খসতেই গাল ফোলে, মুখ ঘুরিয়ে থাকে। ছোটজন তো সবার ওপরে। উঠতে বসতে ভয়ে থাকতে হয়। তবে তারা যে আমাদের আদরযতœ করে না, তা নয়। ছোটজনের নজর মায়ের মতো। আমার ুধা লেগেছে কি না, কোথাও যাওয়ার পথে ড্রাইভার ভালোভাবে গাড়ি চালাচ্ছে কি নাÑ এসব নিয়ে সে সবসময় তৎপর। বড়টা কুঁড়িমণি, নিজেরা সারা দিন কলকল করে, কিন্তু আমার সাথে কথা বলে কম। কিন্তু তারপরও যে ওরা ঘুমিয়ে নেই তা বুঝলাম শনিবার গভীর রাতে ঝড়-বৃষ্টির সময়। দুই-আড়াইটার দিকে কুঁড়িমণি ড্রাইভার হোসেনকে ফোন করেছিল, ‘এই হোসেন, তোমাদের ঐদিকে বৃষ্টি হচ্ছে?’ হোসেন বলছিল, না। কিন্তু তখন মোহাম্মদপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বলতেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু। গুঁড়ি থেকে ভারী। ঘুম ভেঙে দেখি, ২৫-৩০ জন আমার মাথার ওপর কাপড় ঠিক করছে, কেউ ত্রিপল দেয়ার চেষ্টা করছে; সে এক এলাহী কারবার। একসময় মনে হচ্ছিল, অতগুলো কর্মী ৫০-৬০ স্কয়ার ফুট জায়গার মধ্যে ওপরে হাত তুলে রাখলেই বৃষ্টি পড়া বন্ধ হতে পারে। সত্যিই এক মজার ব্যাপার, আশপাশে পড়লেও চার ফুট বাই সাত ফুট লোহার খাটিয়া, তাতে এক ফোঁটা পানি পড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য কর্মী পেয়েছিলাম, যারা আমার গায়ে পায়ে মাছিও বসতে দেয়নি। এবার রাস্তায় অবস্থান নিয়ে জীবনের শেষদিকে তার চেয়েও ভালো একঝাঁক কর্মী পেয়েছি। আর সাধারণ মানুষের কথা কী বলব? যেমন মানুষ নামের কলঙ্ক দেখছি, তেমনি যে কত মহামানবের দেখা পেলাম মতিঝিলের এই মহাস্থানে। আনন্দে গৌরব আর গর্বে হৃদয় ভরে যায়। ঘরে বসেও আমার সন্তানেরা স্বস্তিতে নেই, বাবার জন্য তাদের উৎকণ্ঠা নিশ্চয়ই আল্লাহ দেখবেন। আমি তো জানি, সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া যেমন আল্লাহ মঞ্জুর করেন, তেমনি সন্তানের দোয়াও পিতা-মাতার জন্য মহা মূল্যবান। দেশের জ্ঞানী গুণী যারাই যেখানে কথা বলার চেষ্টা করছে, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব কতজন কতভাবে দাবি-দাওয়া করে চলেছে কিন্তু কেউ শোনার নেই। এভাবে আর যা হোক, কোনো দেশ চলতে পারে না। সেজন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছি। এতকাল শুনে এসেছি, মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নাকি সবার ওপরে। স্বাধীনতার পর আমার কর্মকাণ্ড কারো পছন্দ না হলে সেজন্য নিশ্চয়ই নিন্দা করতে পারেন, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়। তাই আশা নিয়ে বসেছি দেশের মানুষের বিবেক জাগবে।
বেশ কিছু দিন মতিঝিলের ফুটপাথে আছি। এই ক’দিনে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, শত বছর ঘরে থেকে তা পেতাম না। দাবি খুব বেশি নাÑ বিরোধী দলের নিরন্তর অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার, সরকারের দেশে সুস্থ পরিবেশ আনতে আলোচনায় বসা। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না, মনে হয় শুনবেও না। কারণ কারোরই দেশের প্রতি দয়া-মায়া, ভালোবাসা নেই। গত সপ্তাহে কাঁথা-বালিশ, প্রস্রাব-পায়খানার চটের বেড়া চুরি করছিল। ক’দিন হলো বন্ধ হয়েছে। আগের শুক্রবার বায়তুল মোকারম থেকে বেরিয়েই সবকিছু পুলিশে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছিলাম, এবার তেমন হয়নি। মনে হলো কিছুটা সুমতি হয়েছে, হলেই ভালো। চোরের ভয়ে তো আর বউ নেংটা রাখা যায় না। সরকারের কাজ সরকার করবে, আমাদের কাজ আমরা করব। তবে আল্লাহর কী অপার মহিমা, জানি না শুনি না বায়তুল মোকারম থেকে ফিরে দেখলাম কিছু নেই। পাটি বিছিয়ে ফুটপাথে বসেছিলাম, তখনই আল্লাহর ফেরেশতার মতো জয়পুরহাটের রশিদুল এসেছিল। তার মায়ের শত ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে কাঁথা বানিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছে। বুকটা আনন্দে ভরে গিয়েছিল। বছর পঁচিশ আগে রাজশাহীর বাঘার এমপি মো: আলাউদ্দিনের সাথে রাজশাহী সফরে গিয়েছিলাম। রাজ্জাক নামে এক ব্যাংক অফিসার সে যাত্রায় আমার সাথে ছিল। বাঘাতে জনাব মো: আলাউদ্দিনের বাড়িতে এক রাত ছিলাম। সেই সময় হাজার-বারো শ’ টাকায় একটা নকশিকাঁথা কিনেছিলাম। দারুণ সুন্দর ছিল সে কাঁথা। রশিদুলের মায়ের কাঁথা তারচেয়েও সুন্দর। ১০ দিনের বেশি তার মায়ের কাঁথা গায়ে রাত কাটাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আবাবিল পাখির দ্বারা যেভাবে পাথর ছুড়ে পবিত্র কাবার ওপর আবরাহার আক্রমণ ঠেকিয়েছিলেন, কাঁথা গায়ে প্রতি মুহূর্তে তেমনি মনে হচ্ছে রশিদুলের মায়ের কাঁথায় প্রতিটি সূচের ফোঁড় বর্মের মতো আমায় রা করছে। মানুষ আমায় ভালোবাসে এটা জানতাম, কিন্তু এত ভালোবাসে তা জানতাম না। বর্তমান ধনবানেরা অনেকেই ফোন ধরে না। আমাদের খাওয়ার জন্য দু’পয়সা দিতে খুবই কষ্ট। কিন্তু রাস্তার মানুষ অকাতরে ৫-১০ টাকা দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল আমার এক ভাস্তী জামাই অতি সাধারণ চাকরি করে। দানপাত্রে যখন ১০০০ টাকার একটা নোট সন্তর্পণে ফেলে গেল, তখন শরীর শিউরে উঠেছিল। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ধনবানদের কোটি টাকার চেয়ে গরিব ভাস্তী জামাইয়ের হাজার টাকা অনেক বেশি। তাই আল্লাহর ভরসায় বেঁচে আছি।
এর মধ্যে বেগম সাহেব নিজে থেকেই ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কথা বলতে চাচ্ছিলেন, আমি কোনো আপত্তি করিনি। সেদিন কুশিকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর গেটে। ২৫-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন, দেখা হয়নি। আমার স্ত্রী ১০-১২ বছর আগে থাইরয়েড অপারেশন করে অকালেই জীবন নষ্ট করেছেন। এখন খুব বেশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, তেমন পরিশ্রম করতেও পারে না। দু’বছর আগে দু’বার হাসপাতালে গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। আল্লাহ যে তাকে এখনো আমার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন, এইটাই প্রভুর দয়া। তাই আমার স্ত্রীর রাস্তায় ২৫-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা আমার কাছে ২৫ বছরের মতো। শুক্রবার গিয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি। খালেদা জিয়ার সাথেও দেখা হয়নি। এটা যদি এমন হতো ব্যস্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখা দেননিÑ সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু স্বাধীন দেশে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িতেও কেন তার মর্জি চলবে? হ্যাঁ, সেখানে সরকারের বিধিনিষেধ অবশ্যই চলত, যদি তিনি বন্দী থাকতেন কিংবা গৃহবন্দী। তা যদি না হয়ে থাকেন তাহলে কারো সাথে দেখা হওয়া-না-হওয়া বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িতে তার ইচ্ছা অনিচ্ছাতেই হওয়া দরকার। সেখানে তো সরকারি ইচ্ছায় চলতে পারে না। তবে কি বেগম খালেদা জিয়া বন্দী? গৃহবন্দী, নজরবন্দী বা অন্যকিছু যাই হোন, মুক্ত মানুষ হলে সেখানে কোনো সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। অথচ সরকার পদে পদে খেয়ালখুশিমতো যা খুশি তা-ই করছে। তিন-চার দিন ধরে খাবার নিতে বাধা দিচ্ছে। এসব সভ্য সমাজে চলে না। কোনো অপরাধী, ফাঁসির আসামিকেও যতœ করে খাবার দিতে হয়। এখানে তো একজন প্রধান নেত্রী, তার সাথে এতটা অমানবিক আচরণ করা ভালো না। আমাদের বিবাহিত জীবন ৩২ বছর। এই জীবনে আমরা খুব একটা কেউ কারো কাছে লজ্জা পাইনি, কেউ কারো কাছে ছোট হইনি। কিন্তু আমার স্ত্রী হিসেবে শান্তির কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধী দলনেত্রীর সাথে দেখা করতে না পেরে নিজেকে বেশ ছোট মনে করছেন। আমার কাছেও বেশ অসম্মানবোধ হচ্ছে। জীবনে কত কষ্ট করেছি, কিন্তু আমার স্ত্রী কখনো কোথাও কারো সাথে দেখা করতে গিয়ে বিমুখ হয়ে ফিরে আসেনি। সেটা প্রেসিডেন্ট জনাব সাহাবুদ্দীনই হোক অথবা ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতিই হোক। তাই চেষ্টা করেও মনটা হালকা করতে পারছি না। কিছুটা অস্বস্তি অবশ্যই কুরে কুরে খাচ্ছে। তবু বাস্তবকে অস্বীকার করে কোনো পথ নেই। তাই কষ্ট হলেও মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কী?
ভালোবাসা দিবসে দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিধান সভার নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রকাশ্য শপথ নিলেন। রামলীলা ময়দান এক ঐতিহাসিক স্থান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, দেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন থেকে ঢাকার পথে দিল্লির এই রামলীলা ময়দানেই শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীও রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরির সাথে ১০ জানুয়ারি ’৭২ ভারতীয় লাখো জনতার সামনে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল খোলা ময়দানে শপথ নিলেন। গত মঙ্গলবার নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত দিল্লির বিধান সভার ৭০ আসনের ৬৭টি আম আদমি পার্টির ঝাড়– পেয়েছে। এখন কেজরিওয়ালের নোংরা দিল্লি সাফ করার পালা। দেখার বিষয় শত বছরের পুরনো দল, যারা একটানা ১৫ বছর দিল্লি শাসন করেছে, সেই কংগ্রেস দিল্লির বিধান সভায় কোনো সিট পায়নি। শুধু তা-ই নয়, ৬২ আসনে কংগ্রেস জামানত হারিয়েছে, কোনো আসনে দ্বিতীয়ও হতে পারেনি। অথচ বছরও ঘোরেনি, লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির ১০টি আসনের ১০টিই বিজেপি পেয়েছে। এসব দেখেও কি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা কেউ কিছু শিখবেন না বা বুঝবেন না? ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির একমাত্র কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নী এই প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছিল। ছেলেবেলায় তাকে কত গল্প শুনিয়েছি। এখনো মুন্নীর অনেক বই আমার কাছে পড়ে আছে। ভাবছিলাম মেয়েটা বিধান সভায় সদস্য হলে আমার আরো একটা ঠিকানা হবে। কিন্তু তা হয়নি। ঝাড়–র ঢেউয়ে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। মানুষের রোষানল যে কীÑ সেটা যদি কেউ না বোঝে তাকে জোর করে বুঝানো যাবে না। দেশের অবস্থা ভালো নাÑ কেন যেন কাউকে বুঝানো যাচ্ছে না। সরকার এত অসহিষ্ণু, কারো কথা সহ্য করতে চায় না। সরকারের চামড়া হবে গণ্ডারের থেকেও মোটা। কিন্তু এ তো দেখছি রসুনের চোচার চেয়েও পাতলা। যাকে তাকে যখন তখন গালাগাল করছে। এখন শামসুল হুদা সংলাপের জন্য তৎপর হয়েছেন, তাই রাজাকার হয়ে গেছেন। তিনি যেমন পাকিস্তানের চাকরি করেছেন, অনেক রথীরাও তেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চাকরি করেছে- আমি তো তাদের কথাই বলেছি।
নিজের দলের প্রকৃত রাজাকারদেরকেও মুক্তিযোদ্ধা বানানো আর মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার- এমন প্রয়াস মোটেই ভালো না। যে দেশের ভালো মানুষকে সম্মান করা হয় না, সে দেশে ভালো মানুষ জন্মায় না। ঠুনকো অসত্য আর অন্যায়ের ওপর ভর করে কোনো কিছু বেশি দিন চলে না। তাই আবার উভয় নেত্রীর কাছে দেশবাসীর প থেকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, অবরোধ হরতাল প্রত্যাহার করুন। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও সুস্থিতির জন্য যার সাথে প্রয়োজন তার সাথেই আলোচনা করুন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে কারো জয়, পরাজয়ের প্রশ্ন নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি আলোচনা করবেন ততই মঙ্গল। এই সাদামাঠা কথাটা কারো বোঝার অসুবিধা আছে বলে মনে হয় না। সব উগ্রতা ঝেড়ে ফেলে মানবতায় ফিরে আসুন। মানবতাহীন অসভ্যতায় অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে। আমাদের রক্তের দামে কেনা দেশটাকে জেদাজেদি করে ধ্বংস করবেন না।
ছেলেমেয়ে বড় হলে মা-বাবার সাহায্য হয়। গ্রামগঞ্জে বলে, ছেলে হলো বাবার হাতের লাঠি। চরে দেখতাম, সবাই সংসারে অনেক ছেলে চায়- কেউ যাতে তাকে মাড়িয়ে যেতে না পারে। আধুনিক জামানায় সব মা-বাবারই ছেলেমেয়ে কম। আমরা ছিলাম দুই মায়ের ১৫ সন্তান। এখনো তার ১০ জন বহালতবিয়তে বেঁচে আছি। কিন্তু আমার মাত্র তিনটি। তারা আমাদের সাহায্য করবে কী, তাদের সাহায্য করতেই আমরা পেরেশান। পান থেকে চুন খসতেই গাল ফোলে, মুখ ঘুরিয়ে থাকে। ছোটজন তো সবার ওপরে। উঠতে বসতে ভয়ে থাকতে হয়। তবে তারা যে আমাদের আদরযতœ করে না, তা নয়। ছোটজনের নজর মায়ের মতো। আমার ুধা লেগেছে কি না, কোথাও যাওয়ার পথে ড্রাইভার ভালোভাবে গাড়ি চালাচ্ছে কি নাÑ এসব নিয়ে সে সবসময় তৎপর। বড়টা কুঁড়িমণি, নিজেরা সারা দিন কলকল করে, কিন্তু আমার সাথে কথা বলে কম। কিন্তু তারপরও যে ওরা ঘুমিয়ে নেই তা বুঝলাম শনিবার গভীর রাতে ঝড়-বৃষ্টির সময়। দুই-আড়াইটার দিকে কুঁড়িমণি ড্রাইভার হোসেনকে ফোন করেছিল, ‘এই হোসেন, তোমাদের ঐদিকে বৃষ্টি হচ্ছে?’ হোসেন বলছিল, না। কিন্তু তখন মোহাম্মদপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বলতেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু। গুঁড়ি থেকে ভারী। ঘুম ভেঙে দেখি, ২৫-৩০ জন আমার মাথার ওপর কাপড় ঠিক করছে, কেউ ত্রিপল দেয়ার চেষ্টা করছে; সে এক এলাহী কারবার। একসময় মনে হচ্ছিল, অতগুলো কর্মী ৫০-৬০ স্কয়ার ফুট জায়গার মধ্যে ওপরে হাত তুলে রাখলেই বৃষ্টি পড়া বন্ধ হতে পারে। সত্যিই এক মজার ব্যাপার, আশপাশে পড়লেও চার ফুট বাই সাত ফুট লোহার খাটিয়া, তাতে এক ফোঁটা পানি পড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য কর্মী পেয়েছিলাম, যারা আমার গায়ে পায়ে মাছিও বসতে দেয়নি। এবার রাস্তায় অবস্থান নিয়ে জীবনের শেষদিকে তার চেয়েও ভালো একঝাঁক কর্মী পেয়েছি। আর সাধারণ মানুষের কথা কী বলব? যেমন মানুষ নামের কলঙ্ক দেখছি, তেমনি যে কত মহামানবের দেখা পেলাম মতিঝিলের এই মহাস্থানে। আনন্দে গৌরব আর গর্বে হৃদয় ভরে যায়। ঘরে বসেও আমার সন্তানেরা স্বস্তিতে নেই, বাবার জন্য তাদের উৎকণ্ঠা নিশ্চয়ই আল্লাহ দেখবেন। আমি তো জানি, সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া যেমন আল্লাহ মঞ্জুর করেন, তেমনি সন্তানের দোয়াও পিতা-মাতার জন্য মহা মূল্যবান। দেশের জ্ঞানী গুণী যারাই যেখানে কথা বলার চেষ্টা করছে, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব কতজন কতভাবে দাবি-দাওয়া করে চলেছে কিন্তু কেউ শোনার নেই। এভাবে আর যা হোক, কোনো দেশ চলতে পারে না। সেজন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছি। এতকাল শুনে এসেছি, মুক্তিযোদ্ধার সম্মান নাকি সবার ওপরে। স্বাধীনতার পর আমার কর্মকাণ্ড কারো পছন্দ না হলে সেজন্য নিশ্চয়ই নিন্দা করতে পারেন, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়। তাই আশা নিয়ে বসেছি দেশের মানুষের বিবেক জাগবে।
বেশ কিছু দিন মতিঝিলের ফুটপাথে আছি। এই ক’দিনে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, শত বছর ঘরে থেকে তা পেতাম না। দাবি খুব বেশি নাÑ বিরোধী দলের নিরন্তর অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার, সরকারের দেশে সুস্থ পরিবেশ আনতে আলোচনায় বসা। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না, মনে হয় শুনবেও না। কারণ কারোরই দেশের প্রতি দয়া-মায়া, ভালোবাসা নেই। গত সপ্তাহে কাঁথা-বালিশ, প্রস্রাব-পায়খানার চটের বেড়া চুরি করছিল। ক’দিন হলো বন্ধ হয়েছে। আগের শুক্রবার বায়তুল মোকারম থেকে বেরিয়েই সবকিছু পুলিশে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছিলাম, এবার তেমন হয়নি। মনে হলো কিছুটা সুমতি হয়েছে, হলেই ভালো। চোরের ভয়ে তো আর বউ নেংটা রাখা যায় না। সরকারের কাজ সরকার করবে, আমাদের কাজ আমরা করব। তবে আল্লাহর কী অপার মহিমা, জানি না শুনি না বায়তুল মোকারম থেকে ফিরে দেখলাম কিছু নেই। পাটি বিছিয়ে ফুটপাথে বসেছিলাম, তখনই আল্লাহর ফেরেশতার মতো জয়পুরহাটের রশিদুল এসেছিল। তার মায়ের শত ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে কাঁথা বানিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছে। বুকটা আনন্দে ভরে গিয়েছিল। বছর পঁচিশ আগে রাজশাহীর বাঘার এমপি মো: আলাউদ্দিনের সাথে রাজশাহী সফরে গিয়েছিলাম। রাজ্জাক নামে এক ব্যাংক অফিসার সে যাত্রায় আমার সাথে ছিল। বাঘাতে জনাব মো: আলাউদ্দিনের বাড়িতে এক রাত ছিলাম। সেই সময় হাজার-বারো শ’ টাকায় একটা নকশিকাঁথা কিনেছিলাম। দারুণ সুন্দর ছিল সে কাঁথা। রশিদুলের মায়ের কাঁথা তারচেয়েও সুন্দর। ১০ দিনের বেশি তার মায়ের কাঁথা গায়ে রাত কাটাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আবাবিল পাখির দ্বারা যেভাবে পাথর ছুড়ে পবিত্র কাবার ওপর আবরাহার আক্রমণ ঠেকিয়েছিলেন, কাঁথা গায়ে প্রতি মুহূর্তে তেমনি মনে হচ্ছে রশিদুলের মায়ের কাঁথায় প্রতিটি সূচের ফোঁড় বর্মের মতো আমায় রা করছে। মানুষ আমায় ভালোবাসে এটা জানতাম, কিন্তু এত ভালোবাসে তা জানতাম না। বর্তমান ধনবানেরা অনেকেই ফোন ধরে না। আমাদের খাওয়ার জন্য দু’পয়সা দিতে খুবই কষ্ট। কিন্তু রাস্তার মানুষ অকাতরে ৫-১০ টাকা দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল আমার এক ভাস্তী জামাই অতি সাধারণ চাকরি করে। দানপাত্রে যখন ১০০০ টাকার একটা নোট সন্তর্পণে ফেলে গেল, তখন শরীর শিউরে উঠেছিল। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ধনবানদের কোটি টাকার চেয়ে গরিব ভাস্তী জামাইয়ের হাজার টাকা অনেক বেশি। তাই আল্লাহর ভরসায় বেঁচে আছি।
এর মধ্যে বেগম সাহেব নিজে থেকেই ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কথা বলতে চাচ্ছিলেন, আমি কোনো আপত্তি করিনি। সেদিন কুশিকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর গেটে। ২৫-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন, দেখা হয়নি। আমার স্ত্রী ১০-১২ বছর আগে থাইরয়েড অপারেশন করে অকালেই জীবন নষ্ট করেছেন। এখন খুব বেশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, তেমন পরিশ্রম করতেও পারে না। দু’বছর আগে দু’বার হাসপাতালে গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। আল্লাহ যে তাকে এখনো আমার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন, এইটাই প্রভুর দয়া। তাই আমার স্ত্রীর রাস্তায় ২৫-৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা আমার কাছে ২৫ বছরের মতো। শুক্রবার গিয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি। খালেদা জিয়ার সাথেও দেখা হয়নি। এটা যদি এমন হতো ব্যস্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখা দেননিÑ সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু স্বাধীন দেশে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িতেও কেন তার মর্জি চলবে? হ্যাঁ, সেখানে সরকারের বিধিনিষেধ অবশ্যই চলত, যদি তিনি বন্দী থাকতেন কিংবা গৃহবন্দী। তা যদি না হয়ে থাকেন তাহলে কারো সাথে দেখা হওয়া-না-হওয়া বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িতে তার ইচ্ছা অনিচ্ছাতেই হওয়া দরকার। সেখানে তো সরকারি ইচ্ছায় চলতে পারে না। তবে কি বেগম খালেদা জিয়া বন্দী? গৃহবন্দী, নজরবন্দী বা অন্যকিছু যাই হোন, মুক্ত মানুষ হলে সেখানে কোনো সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। অথচ সরকার পদে পদে খেয়ালখুশিমতো যা খুশি তা-ই করছে। তিন-চার দিন ধরে খাবার নিতে বাধা দিচ্ছে। এসব সভ্য সমাজে চলে না। কোনো অপরাধী, ফাঁসির আসামিকেও যতœ করে খাবার দিতে হয়। এখানে তো একজন প্রধান নেত্রী, তার সাথে এতটা অমানবিক আচরণ করা ভালো না। আমাদের বিবাহিত জীবন ৩২ বছর। এই জীবনে আমরা খুব একটা কেউ কারো কাছে লজ্জা পাইনি, কেউ কারো কাছে ছোট হইনি। কিন্তু আমার স্ত্রী হিসেবে শান্তির কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধী দলনেত্রীর সাথে দেখা করতে না পেরে নিজেকে বেশ ছোট মনে করছেন। আমার কাছেও বেশ অসম্মানবোধ হচ্ছে। জীবনে কত কষ্ট করেছি, কিন্তু আমার স্ত্রী কখনো কোথাও কারো সাথে দেখা করতে গিয়ে বিমুখ হয়ে ফিরে আসেনি। সেটা প্রেসিডেন্ট জনাব সাহাবুদ্দীনই হোক অথবা ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতিই হোক। তাই চেষ্টা করেও মনটা হালকা করতে পারছি না। কিছুটা অস্বস্তি অবশ্যই কুরে কুরে খাচ্ছে। তবু বাস্তবকে অস্বীকার করে কোনো পথ নেই। তাই কষ্ট হলেও মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কী?
ভালোবাসা দিবসে দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিধান সভার নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রকাশ্য শপথ নিলেন। রামলীলা ময়দান এক ঐতিহাসিক স্থান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, দেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন থেকে ঢাকার পথে দিল্লির এই রামলীলা ময়দানেই শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীও রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরির সাথে ১০ জানুয়ারি ’৭২ ভারতীয় লাখো জনতার সামনে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল খোলা ময়দানে শপথ নিলেন। গত মঙ্গলবার নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত দিল্লির বিধান সভার ৭০ আসনের ৬৭টি আম আদমি পার্টির ঝাড়– পেয়েছে। এখন কেজরিওয়ালের নোংরা দিল্লি সাফ করার পালা। দেখার বিষয় শত বছরের পুরনো দল, যারা একটানা ১৫ বছর দিল্লি শাসন করেছে, সেই কংগ্রেস দিল্লির বিধান সভায় কোনো সিট পায়নি। শুধু তা-ই নয়, ৬২ আসনে কংগ্রেস জামানত হারিয়েছে, কোনো আসনে দ্বিতীয়ও হতে পারেনি। অথচ বছরও ঘোরেনি, লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির ১০টি আসনের ১০টিই বিজেপি পেয়েছে। এসব দেখেও কি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা কেউ কিছু শিখবেন না বা বুঝবেন না? ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির একমাত্র কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নী এই প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছিল। ছেলেবেলায় তাকে কত গল্প শুনিয়েছি। এখনো মুন্নীর অনেক বই আমার কাছে পড়ে আছে। ভাবছিলাম মেয়েটা বিধান সভায় সদস্য হলে আমার আরো একটা ঠিকানা হবে। কিন্তু তা হয়নি। ঝাড়–র ঢেউয়ে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। মানুষের রোষানল যে কীÑ সেটা যদি কেউ না বোঝে তাকে জোর করে বুঝানো যাবে না। দেশের অবস্থা ভালো নাÑ কেন যেন কাউকে বুঝানো যাচ্ছে না। সরকার এত অসহিষ্ণু, কারো কথা সহ্য করতে চায় না। সরকারের চামড়া হবে গণ্ডারের থেকেও মোটা। কিন্তু এ তো দেখছি রসুনের চোচার চেয়েও পাতলা। যাকে তাকে যখন তখন গালাগাল করছে। এখন শামসুল হুদা সংলাপের জন্য তৎপর হয়েছেন, তাই রাজাকার হয়ে গেছেন। তিনি যেমন পাকিস্তানের চাকরি করেছেন, অনেক রথীরাও তেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চাকরি করেছে- আমি তো তাদের কথাই বলেছি।
নিজের দলের প্রকৃত রাজাকারদেরকেও মুক্তিযোদ্ধা বানানো আর মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার- এমন প্রয়াস মোটেই ভালো না। যে দেশের ভালো মানুষকে সম্মান করা হয় না, সে দেশে ভালো মানুষ জন্মায় না। ঠুনকো অসত্য আর অন্যায়ের ওপর ভর করে কোনো কিছু বেশি দিন চলে না। তাই আবার উভয় নেত্রীর কাছে দেশবাসীর প থেকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, অবরোধ হরতাল প্রত্যাহার করুন। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও সুস্থিতির জন্য যার সাথে প্রয়োজন তার সাথেই আলোচনা করুন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে কারো জয়, পরাজয়ের প্রশ্ন নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি আলোচনা করবেন ততই মঙ্গল। এই সাদামাঠা কথাটা কারো বোঝার অসুবিধা আছে বলে মনে হয় না। সব উগ্রতা ঝেড়ে ফেলে মানবতায় ফিরে আসুন। মানবতাহীন অসভ্যতায় অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে। আমাদের রক্তের দামে কেনা দেশটাকে জেদাজেদি করে ধ্বংস করবেন না।
No comments