রাজশাহীর লালনশাহ পার্ক- ব্লক চুরি, সৌন্দর্য ম্লান by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
(চুরি হয়ে যাচ্ছে রাজশাহী নগরের পদ্মাপাড়ের লালনশাহ পার্কের এ ব্লকগুলো (বাঁয়ে)। পার্কের আশপাশের এলাকার লোকজন এসব ব্লক খুলে নিয়ে কেউ রাস্তায় বসিয়ে সিঁড়ি বানিয়েছেন, কেউবা গরুর পায়ের নিচে বিছিয়েছেন l ছবি: প্রথম আলো) রাজশাহী
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় দুই বছর আগে নির্মাণ
করা লালনশাহ পার্কটি অবহেলায় পড়ে আছে। পার্ক থেকে ব্লক খুলে নিয়ে যাচ্ছে
এলাকার মানুষ। এসব ব্লক তারা নিজেদের কাজেই ব্যবহার করছে। গতকাল রোববার
সরেজমিনে এমন চিত্রই পাওয়া গেল। সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের
সময় নগরের পাঠানপাড়ায় পদ্মা নদীর ধারের পরিত্যক্ত জায়গায় প্রায় দেড়
কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন পার্কটি তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালের ১০
সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী
জাহাঙ্গীর কবির নানক আনুষ্ঠানিকভাবে পার্কটির উদ্বোধন করেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সে সময় এই পার্কে ১ হাজার ১৩২ বর্গমিটার আয়তনের একটি ওপেন থিয়েটার, একটি ফুডকোর্ট, ৮২ দশমিক ৮১ বর্গমিটারের দুটি কফিশপ ও ২৫৫৮ দশমিক ৮৫ বর্গমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ফুডকোর্টের ভেতরে তিন দিকে তিনটি ঘর রয়েছে। দক্ষিণ দিকে ৪৫ দশমিক ৫৭ বর্গমিটার, পশ্চিমে ৮১ দশমিক ১৮ বর্গমিটার ও উত্তর পাশে ৪০ দশমিক ৪ বর্গমিটার আয়তনের ঘর নির্মাণ করা রয়েছে। ফুডকোর্টের ভেতরে ১৭৪ বর্গমিটার এবং বাইরে (পূর্বে) ৬৩ দশমিক ৩৪ বর্গমিটারের দুটি বাঁধানো চত্বর রয়েছে। এগুলো ঘিরে আরও অনেক শৈল্পিক আয়োজন করা হয়েছে।
কফিশপের দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ছোট ছোট যে চৌবাচ্চা করা হয়েছে, তাতে পানি ও ময়লা জমে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দর বাঁধানো জায়গার সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
গতকাল দুপুরে পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, এর দৃষ্টিনন্দন ২৭টি জায়গা থেকে ২০০ শতাধিক ব্লক চুরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে পশ্চিম দিকে খোলা মঞ্চের পেছন দিক দিয়ে নামার প্রথম সিঁড়ির রেলিংয়ের চারটি জায়গা থেকে আটটি ব্লক তুলে নেওয়া হয়েছে। মঞ্চের একটি জায়গা থেকে ১০টি ব্লক এবং অন্য একটি জায়গা থেকে চারটি টাইলস, মঞ্চের পূর্ব দিকের চারটি জায়গা থেকে ১৫টি ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে।
পার্কের পূর্ব দিকে গিয়ে দেখা যায়, গরুকে খাবার দেওয়ার জায়গায় গরুর পায়ের নিচে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু ব্লক; যাতে গরুর পায়ের নিচের জায়গাটুকু কর্দমাক্ত না হয়। কেউ কেউ নিজের সুবিধামতো জায়গা দিয়ে শহররক্ষা বাঁধের ওপরে ওঠার জন্য ওই ব্লক এনে সিঁড়ি বানিয়েছেন। এ ছাড়াও বাঁধের ওপরে ছোট ছোট যে দোকান করা হয়েছে, সেসব দোকানের কাজেও এ ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে।
পূর্ব পাশে চারটি গাছ লাগানো হয়েছিল। তার একটিও বেঁচে নেই। গোড়া বাঁধাই করা ছিল। তা থেকে তিনটি ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফুডকোর্ট, পশ্চিম পাশের কফিশপ ও পূর্ব পাশের কফিশপ এবং পার্কের পূর্ব দিকে ওয়াকওয়ে থেকে আরও অর্ধশতাধিক ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গা থেকে ব্লক ওঠানো হয়েছে, তার পাশেরগুলো নড়বড়ে করে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় এগুলো খুলে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পূর্ব দিকে ওয়াকওয়ের পাশের জায়গা স্থানীয় লোকজন ইচ্ছেমতো গবাদিপশু পালনের কাজে ব্যবহার করছে। সব সময় সেখানে গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হচ্ছে। পূর্ব দিকে একটি ছোট বটগাছের গোড়া সুন্দর করে বাঁধাই করা ছিল। গাছটি বড় হলে সেটি একটি দৃষ্টিনন্দন চত্বর হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে বটগাছটি ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। গোড়ার গোলচত্বর থেকে ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে। মাঝখানে ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। এক পাশে ব্লক দিয়ে বাঁধানো সুন্দর জায়গাটিতে গরুর খাবারের জন্য চাড়ি (খাবারের পাত্র) বসানো হয়েছে। সেখানে গরুর পরিচর্যা করছিলেন গৃহবধূ রীপা খাতুন। তিনি জানান, এখানে জায়গা পড়ে থাকে, তাই তাঁরা ব্যবহার করেন। সরকার থেকে নিষেধ করা হলে তাঁরা অন্যত্র চলে যাবেন।
পার্কের দর্শনার্থী স্কুলশিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘পার্কের কাছে এসে দাঁড়ালে জায়গাটিকে স্বপ্নের জায়গা মনে হয়। দুই বছর আগে যাঁরা রাজশাহীতে এসেছেন, তাঁরা এখন এ জায়গা চিনতে পারবেন না। পরিত্যক্ত স্থানে এমন পরিকল্পিত একটি বিনোদনকেন্দ্র করা যাবে, আমরা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। এর নির্মাণশৈলীই রোজ বিকেলে এখানে হাজারও মানুষকে টেনে আনে। কিন্তু এমন জায়গা অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ব্লক চুরির বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। এ জন্য তাঁরা পার্কের চারদিকে একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কথা ভাবছেন। তিনি আরও বলেন, এর নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এ জন্য আরও দেড় কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে।
সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, ‘বাকি নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য অর্থমন্ত্রীর একটি তহবিল থেকে এখনো আমি টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু সংরক্ষণ করতে না পারলে তো টাকা এনে লাভ হবে না।’
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সে সময় এই পার্কে ১ হাজার ১৩২ বর্গমিটার আয়তনের একটি ওপেন থিয়েটার, একটি ফুডকোর্ট, ৮২ দশমিক ৮১ বর্গমিটারের দুটি কফিশপ ও ২৫৫৮ দশমিক ৮৫ বর্গমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ফুডকোর্টের ভেতরে তিন দিকে তিনটি ঘর রয়েছে। দক্ষিণ দিকে ৪৫ দশমিক ৫৭ বর্গমিটার, পশ্চিমে ৮১ দশমিক ১৮ বর্গমিটার ও উত্তর পাশে ৪০ দশমিক ৪ বর্গমিটার আয়তনের ঘর নির্মাণ করা রয়েছে। ফুডকোর্টের ভেতরে ১৭৪ বর্গমিটার এবং বাইরে (পূর্বে) ৬৩ দশমিক ৩৪ বর্গমিটারের দুটি বাঁধানো চত্বর রয়েছে। এগুলো ঘিরে আরও অনেক শৈল্পিক আয়োজন করা হয়েছে।
কফিশপের দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ছোট ছোট যে চৌবাচ্চা করা হয়েছে, তাতে পানি ও ময়লা জমে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দর বাঁধানো জায়গার সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনায় ভরা।
গতকাল দুপুরে পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, এর দৃষ্টিনন্দন ২৭টি জায়গা থেকে ২০০ শতাধিক ব্লক চুরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে পশ্চিম দিকে খোলা মঞ্চের পেছন দিক দিয়ে নামার প্রথম সিঁড়ির রেলিংয়ের চারটি জায়গা থেকে আটটি ব্লক তুলে নেওয়া হয়েছে। মঞ্চের একটি জায়গা থেকে ১০টি ব্লক এবং অন্য একটি জায়গা থেকে চারটি টাইলস, মঞ্চের পূর্ব দিকের চারটি জায়গা থেকে ১৫টি ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে।
পার্কের পূর্ব দিকে গিয়ে দেখা যায়, গরুকে খাবার দেওয়ার জায়গায় গরুর পায়ের নিচে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু ব্লক; যাতে গরুর পায়ের নিচের জায়গাটুকু কর্দমাক্ত না হয়। কেউ কেউ নিজের সুবিধামতো জায়গা দিয়ে শহররক্ষা বাঁধের ওপরে ওঠার জন্য ওই ব্লক এনে সিঁড়ি বানিয়েছেন। এ ছাড়াও বাঁধের ওপরে ছোট ছোট যে দোকান করা হয়েছে, সেসব দোকানের কাজেও এ ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে।
পূর্ব পাশে চারটি গাছ লাগানো হয়েছিল। তার একটিও বেঁচে নেই। গোড়া বাঁধাই করা ছিল। তা থেকে তিনটি ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফুডকোর্ট, পশ্চিম পাশের কফিশপ ও পূর্ব পাশের কফিশপ এবং পার্কের পূর্ব দিকে ওয়াকওয়ে থেকে আরও অর্ধশতাধিক ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গা থেকে ব্লক ওঠানো হয়েছে, তার পাশেরগুলো নড়বড়ে করে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় এগুলো খুলে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পূর্ব দিকে ওয়াকওয়ের পাশের জায়গা স্থানীয় লোকজন ইচ্ছেমতো গবাদিপশু পালনের কাজে ব্যবহার করছে। সব সময় সেখানে গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হচ্ছে। পূর্ব দিকে একটি ছোট বটগাছের গোড়া সুন্দর করে বাঁধাই করা ছিল। গাছটি বড় হলে সেটি একটি দৃষ্টিনন্দন চত্বর হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে বটগাছটি ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। গোড়ার গোলচত্বর থেকে ব্লক খুলে নেওয়া হয়েছে। মাঝখানে ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। এক পাশে ব্লক দিয়ে বাঁধানো সুন্দর জায়গাটিতে গরুর খাবারের জন্য চাড়ি (খাবারের পাত্র) বসানো হয়েছে। সেখানে গরুর পরিচর্যা করছিলেন গৃহবধূ রীপা খাতুন। তিনি জানান, এখানে জায়গা পড়ে থাকে, তাই তাঁরা ব্যবহার করেন। সরকার থেকে নিষেধ করা হলে তাঁরা অন্যত্র চলে যাবেন।
পার্কের দর্শনার্থী স্কুলশিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘পার্কের কাছে এসে দাঁড়ালে জায়গাটিকে স্বপ্নের জায়গা মনে হয়। দুই বছর আগে যাঁরা রাজশাহীতে এসেছেন, তাঁরা এখন এ জায়গা চিনতে পারবেন না। পরিত্যক্ত স্থানে এমন পরিকল্পিত একটি বিনোদনকেন্দ্র করা যাবে, আমরা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। এর নির্মাণশৈলীই রোজ বিকেলে এখানে হাজারও মানুষকে টেনে আনে। কিন্তু এমন জায়গা অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ব্লক চুরির বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। এ জন্য তাঁরা পার্কের চারদিকে একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কথা ভাবছেন। তিনি আরও বলেন, এর নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এ জন্য আরও দেড় কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে।
সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, ‘বাকি নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য অর্থমন্ত্রীর একটি তহবিল থেকে এখনো আমি টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু সংরক্ষণ করতে না পারলে তো টাকা এনে লাভ হবে না।’
No comments