কার সঙ্গে সংলাপে বসবো? -প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারার মতো হীন ও জঘন্য
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের
জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ ও রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি
নেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বিএনপি
নেত্রী খালেদা জিয়া মানসিক বিকারগ্রস্ত ও উন্মাদ হয়ে গেছেন। এই উন্মাদের
হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে, দেশের শিক্ষার্থীদের জীবনকে রক্ষা করতে
হবে। আন্দোলনের নামে যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য কাজ করছে তাদের
বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে। আর কার সঙ্গে সংলাপ? যার (খালেদা জিয়া)
সঙ্গে বসলে পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে, তাঁর সঙ্গে? স্পিকার ড. শিরীন
শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার রাতে কার্যপ্রণালী বিধির ৬৮ বিধি
অনুসারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এসএসসি পরীক্ষা
শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আনীত জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ গৃহীত
নোটিশের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নোটিশের ওপর
আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দলের আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত
সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুর রহমান, আবদুল মান্নান, আবদুর
রহমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডা. আমানুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান
মেনন, জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ
সেলিম, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান ও মাহজাবিন মোর্শেদ। আলোচনার সময়
ভিভিআইপি গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া
স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর হাত থেকে
নারী-শিশু, নিরীহ মানুষ কেউ-ই রেহাই পাচ্ছে না। আমরা রাজনীতি করি জনগণের
জন্য। সেই জনগণকে যদি পুড়িয়ে মারা হয়, সেটা কী রাজনীতি বলে? বিএনপি নেত্রী
রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) কেন বাড়ি
ছেড়ে অফিসে বসে আছেন? শুনা যাচ্ছে ওই বাড়িতে ৫০/৬০ জন মানুষ আছে। এতো
মানুষ ওই অফিসে কী করছে? উনি কাদের পাহারা দিচ্ছেন? কেউ কেউ বলছেন ওই অফিসে
নাশকতাকারী সন্ত্রাসী-জঙ্গিরাও থাকতে পারে। তাই সেখানে জঙ্গি-সন্ত্রাসী
আছে কিনা তা দেখা উচিত। উনি অফিসে বসে টেলিফোন করে করে মানুষকে পুড়িয়ে
হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন। কারা এসব নাশকতা-সহিংসতার অর্থের যোগান দিচ্ছে তা
খুঁজে বের করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে সংলাপের কথা বলেন। কার
সঙ্গে সংলাপে বসবো? যার (খালেদা জিয়া) হাতে পোড়া মানুষের গন্ধ তাঁর সঙ্গে
বসলে তো বার্ন ইউনিটের পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে। তাদের সঙ্গে সংলাপে
বসা মানে সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করা। এই মহিলা মানুষকে
পুড়িয়ে মারছেন। আর আলোচনা করবো কিভাবে? আর আলোচনা করলেই কি উনি মেনে নেবে?
সে তো মেনে নেবে না। সংসদ নেতা বলেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলা থেকে
নিজেকে এবং অর্থপাচারের মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতেই বিএনপি নেত্রী এসব
জঘন্য কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে না এসে হতাশা থেকে এখন হা-হুতাশ
করছেন। আর হতাশার আগুনেই উনি (খালেদা জিয়া) সবকিছু শেষ করে দিতে চান।
নির্বিচারে মানুষ হত্যা করাচ্ছেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, মানুষের জীবন
কী এতটাই খেলো হয়ে গেছে? তাদের জীবনের কী কোন মূল্য নেই। আমরা কোনভাবেই
মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে দেব না। তাই সব শ্রেণী- পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ
হতে হবে। যারা এ ধরনের হীন কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে
দাঁড়াতে হবে।
এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সেখানে কিভাবে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে পাঠাবো? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সেজন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিএনপির নেত্রীর যদি এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকতো তবে হয়তো একটা রিক্স (ঝুঁকি) নিতে পারতাম। কিন্তু মনে হচ্ছে বিএনপি নেত্রী ও তাঁর দল বিএনপি-জামায়াত সুস্থ অবস্থায় নেই। এদের মানসিক বিকৃতি ঘটেছে বলেই যেকোন কাজ করতে পারে। বিএনপি নেত্রীও এখন উন্মাদের মতো ব্যবহার করছেন। তাই সাধারণ ছাত্রছাত্রীর নিরাপত্তার কথা আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আমাদের শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে আসেননি। তাঁকে নির্বাচনে আনার জন্য নিজে টেলিফোন করেছি। সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। এমনকি সর্বদলীয় সরকার গঠন করে যেকোন মন্ত্রিত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েও তাঁকে নির্বাচনে আনতে পারিনি। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর ছেলে মারা গেলে সমবেদনা জানাতে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর গেটে তালা দিয়ে ঢুকতে না দেয়ার মতো অভদ্র আচরণও আমার সঙ্গে করা হলো। বিএনপি নেত্রীর জনগণের প্রতি এতটুকু দরদ বা ভালবাসা থাকতো তবে পরীক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এমন খেলা খেলতো না। বিকৃত মানসিকতা নিয়েই উনি জনগণের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ কারণে শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেড় মাস ধরে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করতে পারছে না। পড়াশুনার পথ বন্ধ করে দিয়ে খালেদা জিয়া তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। আমরা চাই সকল শ্রেণী- পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এই উন্মাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। পরীক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করতে হবে। দিনের পর দিন হরতালের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজ যারা করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, জাতীয় মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করতে হীন ষড়যন্ত্র করছেন খালেদা জিয়া। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তানের পেতাত্মাদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে তাদের মিশনই বাস্তবায়ন করতে নেমেছেন খালেদা জিয়া। বিদেশী শক্তির প্ররোচনায় ও অর্থে জাতীয় মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করার এই ষড়যন্ত্র কোনদিন জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কোথাও হরতাল-অবরোধ হচ্ছে না, সবকিছু স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোন দেন নাশকতাকারী, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপোষ করেনি। করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান, আইএস, আল-কায়েদাদের সঙ্গে আপোষ করতো। দেশে-বিদেশের কেউ খালেদা জিয়ার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারে না, করেও না। তরুণ-মেধাবীদের জীবন ধ্বংস করতেই পরীক্ষার মধ্যে হরতাল ডেকেছেন খালেদা জিয়া। আমি বিশ্বাস করি, বিজয়ী বীর বাঙালি খালেদা জিয়ার এই ষড়যন্ত্র কোনদিন বাস্তবায়িত হতে দেবে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ-সহিংস রাজনীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ। একই সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আইএস, তালেবান ও পাকিস্তানের মদতে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতা-সহিংসতা চালানো হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও আন্দোলনকারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ করে না। বাংলাদেশেও অতীতে হয়নি। কিন্তু খালেদা জিয়া আজ সেই কাজটি করছেন। অগ্রগামী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশনে নেমেছেন। আমরা সন্ত্রাসী শক্তির কাছে মাথানত করব না, অবশ্যই বাংলার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আন্দোলনে খালেদা জিয়া হেরে গেছেন। রাজনীতিতে হেরে গিয়ে উনি এখন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছেন। দেশে বহু আন্দোলন হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে- কখনো পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ কিংবা আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হয়নি। ঠিক সেই কাজটি করছেন খালেদা জিয়া। একাত্তরে হেরে যাওয়ার মুহূর্তে রাজাকাররা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। তাই পরীক্ষা বন্ধ নয়, সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসের মদতদাতাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ছেলের মৃত্যুর ৪০ দিন না পেরুতে নাতনিদের পরীক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠালেন, আর দেশের ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা বন্ধে হরতাল-অবরোধ করছেন। এর জবাব দেশবাসীকে খালেদা জিয়াকে দিতে হবে। এটা বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। দানবের সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না, বরং দমন করেই শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করবো। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জীবন ধ্বংসে যারা রাজনীতি করে তারা কখনোই দেশপ্রেমিক নয়, বরং দেশের শত্রু। খালেদা জিয়া রাজনীতি নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে খালেদা জিয়া আইএস-তালেবানের রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছেন। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়, বরং দমন করা হবে। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক সঙ্কট নেই, দেশে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসবাদ চলছে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমৃদ্ধি ধ্বংসের জন্যই এমন সহিংসতা-নাশকতা চালানো হচ্ছে। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ পর্যন্ত একশ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুরো দেশটাই যেন মনে হচ্ছে বার্ন ইউনিট। বাংলাদেশ, জনগণের শত্রু হিসেবে কাজ করছেন বিএনপি নেত্রী। নোটিশটি উত্থাপনকারী ডা. রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই পরীক্ষার আগে থেকেই দেশে চলছে অবরোধ, হরতালের নামে চরম নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়ছে ও মরছে। দেশ এক ভয়াবহ সন্ত্রাসের কবলে পড়তে যাচ্ছে। এতে করে পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, চিন্তিত, ভীত ও হতাশ। বিএনপি রাজনীতির নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চালাচ্ছে। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে পরীক্ষার সময় এ ধরনের কর্মসূচি প্রদানের নজির নেই। পৃথিবীর যেখানেই নৈরাজ্য-সন্ত্রাস হয়, সেদেশের সরকার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, সেনাবাহিনী নামিয়েও সন্ত্রাস দমন করেছে। তাই আজ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ দেয়া যাবে না, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা যাবে না। তিনি এক সপ্তাহের সময় নিয়ে দেশের সকল শিক্ষাবিদ, শ্রেণী-পেশা, রাজনীতিবিদসহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে অনুষ্ঠিত করা যায় সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান।
এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সেখানে কিভাবে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে পাঠাবো? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সেজন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিএনপির নেত্রীর যদি এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকতো তবে হয়তো একটা রিক্স (ঝুঁকি) নিতে পারতাম। কিন্তু মনে হচ্ছে বিএনপি নেত্রী ও তাঁর দল বিএনপি-জামায়াত সুস্থ অবস্থায় নেই। এদের মানসিক বিকৃতি ঘটেছে বলেই যেকোন কাজ করতে পারে। বিএনপি নেত্রীও এখন উন্মাদের মতো ব্যবহার করছেন। তাই সাধারণ ছাত্রছাত্রীর নিরাপত্তার কথা আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আমাদের শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে আসেননি। তাঁকে নির্বাচনে আনার জন্য নিজে টেলিফোন করেছি। সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। এমনকি সর্বদলীয় সরকার গঠন করে যেকোন মন্ত্রিত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েও তাঁকে নির্বাচনে আনতে পারিনি। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর ছেলে মারা গেলে সমবেদনা জানাতে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর গেটে তালা দিয়ে ঢুকতে না দেয়ার মতো অভদ্র আচরণও আমার সঙ্গে করা হলো। বিএনপি নেত্রীর জনগণের প্রতি এতটুকু দরদ বা ভালবাসা থাকতো তবে পরীক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এমন খেলা খেলতো না। বিকৃত মানসিকতা নিয়েই উনি জনগণের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ কারণে শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেড় মাস ধরে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করতে পারছে না। পড়াশুনার পথ বন্ধ করে দিয়ে খালেদা জিয়া তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। আমরা চাই সকল শ্রেণী- পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এই উন্মাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। পরীক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করতে হবে। দিনের পর দিন হরতালের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজ যারা করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, জাতীয় মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করতে হীন ষড়যন্ত্র করছেন খালেদা জিয়া। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তানের পেতাত্মাদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে তাদের মিশনই বাস্তবায়ন করতে নেমেছেন খালেদা জিয়া। বিদেশী শক্তির প্ররোচনায় ও অর্থে জাতীয় মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করার এই ষড়যন্ত্র কোনদিন জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কোথাও হরতাল-অবরোধ হচ্ছে না, সবকিছু স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোন দেন নাশকতাকারী, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আপোষ করেনি। করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান, আইএস, আল-কায়েদাদের সঙ্গে আপোষ করতো। দেশে-বিদেশের কেউ খালেদা জিয়ার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারে না, করেও না। তরুণ-মেধাবীদের জীবন ধ্বংস করতেই পরীক্ষার মধ্যে হরতাল ডেকেছেন খালেদা জিয়া। আমি বিশ্বাস করি, বিজয়ী বীর বাঙালি খালেদা জিয়ার এই ষড়যন্ত্র কোনদিন বাস্তবায়িত হতে দেবে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ-সহিংস রাজনীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ। একই সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আইএস, তালেবান ও পাকিস্তানের মদতে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতা-সহিংসতা চালানো হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও আন্দোলনকারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ করে না। বাংলাদেশেও অতীতে হয়নি। কিন্তু খালেদা জিয়া আজ সেই কাজটি করছেন। অগ্রগামী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশনে নেমেছেন। আমরা সন্ত্রাসী শক্তির কাছে মাথানত করব না, অবশ্যই বাংলার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আন্দোলনে খালেদা জিয়া হেরে গেছেন। রাজনীতিতে হেরে গিয়ে উনি এখন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছেন। দেশে বহু আন্দোলন হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে- কখনো পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ কিংবা আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হয়নি। ঠিক সেই কাজটি করছেন খালেদা জিয়া। একাত্তরে হেরে যাওয়ার মুহূর্তে রাজাকাররা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। তাই পরীক্ষা বন্ধ নয়, সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসের মদতদাতাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ছেলের মৃত্যুর ৪০ দিন না পেরুতে নাতনিদের পরীক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠালেন, আর দেশের ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা বন্ধে হরতাল-অবরোধ করছেন। এর জবাব দেশবাসীকে খালেদা জিয়াকে দিতে হবে। এটা বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। দানবের সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না, বরং দমন করেই শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করবো। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জীবন ধ্বংসে যারা রাজনীতি করে তারা কখনোই দেশপ্রেমিক নয়, বরং দেশের শত্রু। খালেদা জিয়া রাজনীতি নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে খালেদা জিয়া আইএস-তালেবানের রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছেন। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়, বরং দমন করা হবে। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক সঙ্কট নেই, দেশে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসবাদ চলছে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমৃদ্ধি ধ্বংসের জন্যই এমন সহিংসতা-নাশকতা চালানো হচ্ছে। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ পর্যন্ত একশ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুরো দেশটাই যেন মনে হচ্ছে বার্ন ইউনিট। বাংলাদেশ, জনগণের শত্রু হিসেবে কাজ করছেন বিএনপি নেত্রী। নোটিশটি উত্থাপনকারী ডা. রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই পরীক্ষার আগে থেকেই দেশে চলছে অবরোধ, হরতালের নামে চরম নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়ছে ও মরছে। দেশ এক ভয়াবহ সন্ত্রাসের কবলে পড়তে যাচ্ছে। এতে করে পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, চিন্তিত, ভীত ও হতাশ। বিএনপি রাজনীতির নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চালাচ্ছে। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে পরীক্ষার সময় এ ধরনের কর্মসূচি প্রদানের নজির নেই। পৃথিবীর যেখানেই নৈরাজ্য-সন্ত্রাস হয়, সেদেশের সরকার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, সেনাবাহিনী নামিয়েও সন্ত্রাস দমন করেছে। তাই আজ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ দেয়া যাবে না, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা যাবে না। তিনি এক সপ্তাহের সময় নিয়ে দেশের সকল শিক্ষাবিদ, শ্রেণী-পেশা, রাজনীতিবিদসহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে অনুষ্ঠিত করা যায় সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান।
No comments