ভোটার হালনাগাদ- নির্ভুল তালিকার দাবি পূরণ হয়নি
নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন নিয়ে বরাবরের মতো বিতর্ক রয়ে গেছে বাংলাদেশে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া সবার অভিযোগ রয়েছে। সংবিধান থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগের বদলে তারা ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বেশি আগ্রহী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে বিভিন্ন বিষয়ে। সর্বশেষ ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে দলীয় সরকারের সাথে গাঁটছড়া বাধায় তাদের প্রতি আরো বেশি আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে গিয়েও এ অভিযোগ উতরে উঠতে পারেনি কমিশন। তালিকা প্রণয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণের চেয়ে এ তালিকা প্রণয়নে দলীয় প্রভাব অনেক বেশি সক্রিয় ছিল বলে জানা যায়। গত বছরের ১৫ মে থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তিন ধাপে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। কমিশনের দেয়া তথ্য মতে, এই সময়ে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন ৫১ লাখ পাঁচ হাজার ৭১১ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হন ৪৭ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৩ জন। কমিশনের ভাষ্য মতে, ছবি তুলতে না আসায় তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ জনকে ভোটার করা যায়নি। হালনাগাদ শেষে, চূড়ান্ত তালিকায় ৪৬ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫০ জন নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হলেন। নতুন বছরের প্রথম দিন খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দাবি, আপত্তি, সংশোধন ও স্থানান্তরের সুযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সারা দেশ থেকে ৮৯ হাজার ৮৭৮ জন আবেদন করার পর ১২ হাজার ৫০৫ জনের আবেদন নাকচ হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে প্রধান কাজ, নিবন্ধনকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য-উপাত্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। নির্বাচন কমিশন এ কাজে সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাজে লাগায়। বিশেষ করে, সরকারি প্রাইমারি স্কুল এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আন্তরিকতা নিয়ে কাজটি করে থাকেন। এবার কমিশন প্রধানত নির্ভর করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর। অভিযোগ রয়েছে, এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজটি করা হয়নি। ১৮ বছর বয়স হয়েছে যাদের আর যাদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে, সেই বিষয় নিশ্চিত করার কথা। আর যারা মারা গেছেন সতর্কতার সাথে তাদের নাম বাদ দিতে হয়। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের অনুগত লোকেরা নিজেদের মনমতো এক জায়গায় বসেই এ কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ কাজ মানুষের সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যেক বারই ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বিরোধ দেখা যায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দলীয় আনুগত্যের জোর অভিযোগ থাকার পরও তাদের দিয়েই সংশোধনের কাজটি হয়েছে। এ অবস্থায় তারা স্বচ্ছভাবে তালিকা প্রণয়নে সতর্ক না হয়ে বরং আরো বেশি দলীয় প্রভাবে থেকে কাজ করেছেন। দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি ভোটার তালিকা প্রণয়নে নাগরিকদের দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেল। আমরা আশা করি, সরকার জনগণের দ্বিধা-সন্দেহ দূর করার ব্যবস্থা করবে।
No comments