‘উন্নতি’বাদীদের চুক্তির মাশুল by মিনা ফারাহ
চুক্তির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার শোধ করতে যে ধরনের জিডিপির প্রয়োজন, সে জন্য ১৫০ বিলিয়নকে টেনে তুলতে নিরবচ্ছিন্ন গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। কিন্তু গণতন্ত্রের সব পথ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বিশাল ঋণ শোধ করতে হয়তো এমন অনেক কিছুই দিতে হতে পারে, যা দেশের জন্য ভালো হবে না। সবাই গভীর সমুদ্রবন্দর বানাতে চাইছে কেন? সুতরাং গভীর সমুদ্রবন্দর, তেল-গ্যাস, এশিয়ান করিডোর... উন্নতিবাদীদের পুঙ্খানুপুঙ্খ জনগণকেই জানতে হবে। উন্নতির টোপ গেলা সরকার জড়িয়ে গেছে ডিপ্লোমেসির জালে, ফেঁসে যেতে পারে বাংলাদেশ। ক্রিমিয়া দখলের বিরুদ্ধে পুতিনকে শাস্তি দিতে রুবলের মূল্য কমানো হয়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। বাংলাদেশের টানাটানিতে ক্রিমিয়ার কথাই মনে পড়ছে কিন্তু জোটনেতারা যেন অন্ধকারে। দল-মত নির্বিশেষে এখনই এক না হলে গণতান্ত্রিক সরকার অধরাই থেকে যাবে।
মিডিয়ায় উন্নতি
মানবজমিন ৩ জানুয়ারি ২০১৫, ‘হিন্দুদের সর্বশক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার আহ্বান বিজেপি নেতার।’ বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তথাগত রায় বলেন, ‘আমরা একটি দেশের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি। তবে বাংলাদেশের বিষয়টা ভিন্ন, আপনাদের বোঝার জন্য বলছি, ভারত সরকার আওয়ামী লীগ সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে, ভারত সরকার উপলব্ধি করছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো কোনো সরকার হতে পারে না। আপনারা কি মনে করেন, এ দেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকারের ওপর ভরসা করা যায়?’ (বিজেপি একেবারেই উলঙ্গ)।
চায়না ডেইলি ডট কম, ৪/৫/১২ Ñ চায়না সিএনআর স্টক বাংলাদেশী অর্ডারের কারণে দ্রুত বাড়ছে। তৃতীয় বৃহৎ ট্রেন প্রস্তুতকারী এই স্টকের মূল্য ২৫% বৃদ্ধির কারণ, বাংলাদেশের সাথে চুক্তি (যদিও অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, চায়নার বেশির ভাগ প্রডাক্ট ডিফেক্টিভ)।
ওয়াচ ডট কম, ২২/৬/১৩ Ñ বিশটি ত্র“টিসহ ডেমু ক্রয়ের পর ভারত থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন টাকায় আরো ৩০ ইউনিট ডেমু এবং ৭০টি কোচ ক্রয় (এ দেশের অবকাঠামোর জন্য উপযুক্ত নয়)।
ঢাকা ট্রিবিউন, ১২/১১/১৩ Ñ ‘চায়না থেকে অস্ত্র ক্রয়ে গত বছর বাংলাদেশ ২য় স্থানে (৩৪২ মিলিয়ন ডলার)। ইরান ৭৫ এবং সৌদি আরব ১০৭তম স্থানে।’ ইরান ও সৌদি আরবের জিডিপি মাল্টি-ট্রিলিয়নের ঘরে এবং সব সময় সম্ভাব্য যুদ্ধের কিনারায় তারাই। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী, এত শান্তির দেশে হঠাৎ এত অস্ত্র কিনছে কেন, জিজ্ঞেস করেনি বিরোধী জোট।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, ‘বাংলাদেশের কেন সাবমেরিন প্রয়োজন’, প্রশ্ন ভারতীয় ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের। ২০৪ মিলিয়ন ডলারে দু’টি তৃতীয় শ্রেণীর এবং মেয়াদউত্তীর্ণ নকশার সাবমেরিন কেনার অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
ডেইলি স্টার ২৫/১২/১৪, এশিয়া ব্যাংক জাপানের প্রতিনিধিদলের চিফ এক্সিকিউটিভের বক্তব্য, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বড় অর্থনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’ শিল্পমন্ত্রী আমু, ‘২০২১ ও ২০৪১-এর স্বপ্নপূরণে বিদেশী বিনিয়োগকে আমরা লিবারেল এবং বিশাল সুযোগ দিচ্ছি।’
জাপান টাইমস : জাপান-বাংলাদেশের ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন চুক্তি সই। চুক্তির মধ্যে রয়েছে, অবকাঠামো, নিউকিয়ার প্রযুক্তি ইত্যাদি। ওই সূত্র ধরে ২০/১২/১৩তে এনডিটিভি, ‘ঢাকা-জাপান ২.৮ বিলিয়ন ডলারের মেট্রোরেল চুক্তি।’
আসাম ট্রিবিউন, ১৯/৯/১৪Ñ ‘বাংলাদেশ সরকার এইমর্মে রাজি হয়েছে, ফেনী নদীর ওপরে ১১.৫ মিলিয়ন ডলারের ১৫০ মিটার ব্রিজ তৈরি হবে, এখান দিয়ে ত্রিপুরা হয়ে ভারী যন্ত্রপাতি পৌঁছে যাবে চিটাগাং ও অন্যান্য বন্দরে।’
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ৭/১০/১৪Ñ “আশুগঞ্জ বন্দর নির্মাণে অর্থ দেবে ভারত, ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ উপকৃত হবে। ‘ওয়ারকোসিও’ নামের কোম্পানি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।”
বিডি নিউজ ২৪ ডট কম, ১/১১/১৪Ñ ‘চিটাগাং পোর্ট ব্যবহারে অনুমতি চাইবে ভারত। এতে ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা কমে অর্ধেক হবে।’
সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ, ২০১৩।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স বাজেট : ৬০০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ জিডিপির ৩.৭ শতাংশ। চায়না ১২২.২ বিলিয়ন যা জিডিপির ১.২ শতাংশ। রাশিয়া ৬৮.২ যা ৩.১ শতাংশ। ফ্রান্সে ৫২.৪ যা ১.৯ শতাংশ। জাপান ৫১ বিলিয়ন যা যা ৩.১ শতাংশ। ১ শতাংশ। ইন্ডিয়ার ৩৬.৩ যা ১.৮ শতাংশ। ইটালির ২৫ বিলিয়ন যা ১.২ শতাংশ। ইরানের ১.৭ বিলিয়ন
রাশিয়া : জিডিপি ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার, জনসংখ্যা ১৯৪ মিলিয়ন। জাপান : জিডিপি ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, জনসংখ্যা ১২৭ মিলিয়ন। ফ্রান্স : জিডিপি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, জনসংখ্যা ৬৭ মিলিয়ন। অর্থাৎ এই ধরনের জিডিপি-ওয়ালাদের সঙ্গে এক পাল্লায় হাঁটার আগে ঝুঁকির কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। কিন্তু সরকারের ব্যয়ের হাত দেখে কোনোভাবেই মনে হয় না, দেশটি অনুন্নত এবং এশিয়ার মধ্যে মাথাপিছু আয় সর্বনি¤œ ২ নম্বরে।
সিকিউরিটি রিস্ক ডট কম, ১৩/৬/১৪Ñ ‘নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে চীনের সাথে সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে বিলম্ব করছে বাংলাদেশ। সম্ভবত অন্যান্য দেশের মতো আরব আমিরাত এবং ভারতও বাদ সেধেছে। চীনের অর্থসাহায্য থেকে বঞ্চিত না হতে এটি শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তিও বড় ফ্যাক্টর। এশিয়ান হাইওয়ে এবং সোনাদিয়া বন্দর নিয়ে জাপানের সাথেও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল।’
গালফ নিউজ, ১৯/৩/১৪Ñ ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশের কাছে ৮২ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করেছে চীন, এত অস্ত্র ক্রয়ে অসুখী ভারত।’
ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স রিভিউ, ৫/৬/১৪Ñ ‘প্রতিরা খাতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি অর্থাৎ বাজেটের ৬ শতাংশ, ৫.৬৫ শতাংশ স্থানীয় সরকার এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন খাতে, ২.১ শতাংশ শিা খাতে।’
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ডট কম, ৩/১/১৫Ñ ‘বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশকে সমুদ্রপথ খুলতে বলেছে ভারত।’ প্রথম আলো, ৩০/১২/১৪Ñ ‘ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে চীনের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ২০১০ সনে ২৯০ ভাগ বনাম বর্তমানে ৫৫৮ ভাগ।’
সিপিডি ১/৩/১৫Ñ ‘এক বছরে ভারত নিয়ে গেছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।’ পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ শিা কিংবা স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে অধিক।
ওয়ার্ল্ড নিউকিয়ার রিভিউ, ২১/১১/১৪Ñ ‘রূপপুর দুইটি প্লান্টের জন্য যে চড়া সুদে ঋণ দিয়েছে রাশিয়া, এর ৫০০ মিলিয়ন শোধ হবে ১২ বছরে এবং ৫ বছর অতিরিক্ত সময়, বাকিটা শোধ হবে ২৮ বছরে এবং অতিরিক্ত ১০ বছর সময়। জাপানকে আরেকটি ২ হাজার মেগাওয়াটের পারমাণবিক চুল্লী তৈরির অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।’
১৭/৯/১৪ তারিখে শিামন্ত্রীর বরাত দিয়ে নিউএজ : ২০১০-এর তুলনায় ছাত্রসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে কিন্তু বাজেট নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। এশিয়ার মধ্যে শিা খাতে সর্বনি¤œ বাজেট বাংলাদেশে। ইপসার দাবি, শিা খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত অন্তত ২০ শতাংশ। অভিযোগ, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বাজেটের আয়তন বেড়েছে ২৮.৭ ভাগ, কমেছে গুরুত্বপূর্ণ খাতে।
ক্ষদ্র জিডিপির অর্থনীতিতে বড় দেশগুলো বিনিয়োগ করতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় যা হচ্ছে, তা স্বাভাবিক নয়। বিগ-বেল্টের সাথে অন্ধকারের যুদ্ধে অনেক কিছুই হারাতে পারে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিককালে যে চুক্তিগুলো হলো, এর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ‘কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় বরং বন্ধুত্বে’র দেশে হঠাৎ এত শত্র“র খবর থাকলে, গোপন না রেখে দ্রুত জানানো হোক। পাশ্চাত্যকে এড়িয়ে কেউই উন্নতি করতে পারে না এ যুগে। কারো কারো মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবের অন্যতম দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু। প্রায় বিনা টেন্ডারেই এত চুক্তি, এত লাভ, কেন এবং কিভাবে পাচ্ছে, বিরোধী জোটের রাডারে তা নেই। বরং বিশ্বব্যাংক তাড়াতে কয়েকটি দেশের ষড়যন্ত্রও আমলে নেয়া উচিত ছিল। উন্নতির ম্যারাথনে কত দ্রুত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলবে, সেটিই ল্য। কিন্তু দুর্বল যমুনা সেতুর পরেও শতভাগ সুস্থ অবকাঠামো নিশ্চিত করা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় সরকার। দুর্ঘটনা ঘটলে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেমন পাওয়া যায়নি যমুনা সেতুর কোরিয়ান কোম্পানিকে, সেখানেও অর্থ গচ্চা দিচ্ছে সরকার। সুতরাং চীন-জাপান-রাশিয়া সফরে প্রাধান্য পাওয়া ২০২১ ও ২০৪১-এর গোমর, অবশ্যই আলোচনায় থাকা উচিত। মাত্র ১৫০ বিলিয়ন জিডিপির ওপর অতিরিক্ত ঋণের বোঝায় চরম আকার ধারণ করছে বাণিজ্য ঘাটতি; ভবিষ্যতে তা বাড়তে পারে। অনেক অর্থ কোথায় যাচ্ছে, কেউই জানে না। গণতন্ত্রকে বাদ দিলে বোঝা বইতে পারবে না জিডিপি, এর প্রমাণ ব্যাপক হারে মুদ্রাপাচার। সোনাদিয়া বন্দর, পদ্মা সেতু এবং পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ শেষ হলে জিডিপিতে যোগ হতে পারে ৮-১০ শতাংশ। অর্থাৎ লিং-পুতিনদের জন্য ৫ জানুয়ারি অনিবার্য ছিল। কিন্তু গণতন্ত্রের কী অবস্থা হলো, ৫ জানুয়ারি নিয়ে এইচ টি ইমামের স্বীকারোক্তির পরেও সরাসরি জানতে চাননি বিরোধী জোট নেত্রী। অসম চুক্তির কারণে প্রাপ্তির চেয়ে হারানোর ভয় কত বেশি, আলোচনায় নেই।
৫ জানুয়ারি কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত রুশ-মার্কিন ব্লক। চীন-রাশিয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট-প্রধান শক্তির অভ্যুত্থান; আওয়ামী লীগ কতটা সচেতনভাবে ‘বিগ-বি-বেল্ট’ টোপ গিলেছে, সন্দেহ আছে। মার্কিন অর্থনীতিতে যতবার ধস নেমেছে, প্রতিবারই হোঁচট খেয়েছে ইউরোপ-এশিয়া। এশিয়া ও ইউরোপের মন্দা কখনোই আমেরিকার অর্থনীতিকে ফাঁদে ফেলে না বরং বর্তমান এবং গত শতাব্দীতে যতগুলো ধস নেমেছেÑ প্রতিবার আমেরিকার অর্থনীতিই ইউরোপ-এশিয়াকে টেনে তুলেছে। যে কারণেই হোক, মার্কিন অর্থনীতি এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিষ্ঠান, এর সঙ্গে তামাশা করা বিপজ্জনক, তাই কঠিন মূল্য দিচ্ছে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত দেশগুলো। জিএসপি গেছে, কমছে গার্মেন্ট। লাঠি আর ভীতিনির্ভর রাজনীতিতে সেরা, এমন দলের একগুঁয়েমির মাশুল বাংলাদেশ দেবে কেন? চায়নার অর্থনীতির আকার বড় হতে পারে। কিন্তু ৭৫ ভাগই মার্কিন অর্থনীতি নির্ভরশীল। আমেরিকার বিকল্প আমেরিকা যেমন, গণতন্ত্রের বিকল্প গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের অভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ থেকেই মুদ্রা পাচারের বাস্তবতা। এভাবে চলতে থাকলে তা বাড়বে। মধ্যম আর উন্নত দেশের টোপ গেলা সরকার এমন লেজেগোবরে, না পারছে গিলতে না উগরাতে। ফলে চীনা স্টাইলে ভিন্ন মত নির্মূল অব্যাহত থাকবেই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতোই মানুষ হাওয়া হয়ে যায় কোনো কোনো দেশে।
মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসির দিন আওয়ামী লীগ আবারো প্রমাণ করল, সংলাপের জন্য ফোনটি ছিল ১০০ ভাগ ভুয়া। ৫ জানুয়ারির ফাঁদে পা না দেয়াটাও খালেদার সঠিক সিদ্ধান্ত। বরং দিলেই অবৈধ সরকার বৈধতার লকেট নিয়ে হাজির হয়ে যেত ওয়াশিংটনে।
আসল খেলাটা উন্নতি নয়, বরং জিডিপি, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ধুন্ধুমার। অর্থনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষ সচেতন নয় বলেই যা খুশি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আইনের শাসন থাকলে অনেক ভিআইপিকেই জেলের ভাত খেতে হতো। দেশটকে কেউ যদি ক্যাস্ট্রো বা মাওয়ের দেশের মতো ভাবে, মারাত্মক ভুল। কারণ মানুষ একবার গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে।
উন্নতি সিরিয়ালের ২ পর্ব
প্রথম পর্ব : বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে চুক্তিগুলো কেমন? বিনিয়োগের প্রথম শর্ত, গ্রহীতার অর্থনৈতিক সমতা বনাম ঝুঁকি। সুদে-আসলে ফেরত দিতে পারবে কি না! সচ্ছল ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে সমস্যা নেই। তবে যারাই ১৫০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঝুঁকি নিয়েছে, সময়মতো তাদেরকেই স্পষ্ট করতে হবে উদ্দেশ্য। অপর দিকে এনজিওর ঋণগুলো মূলত বুঝেশুনে এবং সর্বনি¤œ সুদে।
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতাদের বেলায় বিধিনিষেধ ও শর্ত অনেক বেশি। সুদে-আসলে ফেরত পেতে পাওনাদারেরা এমন সব ‘কোলেটারেল’ যুক্ত করে, ব্যর্থ হলে যা গ্রহীতার বিরুদ্ধেই যায়। তাই সচেতন গ্রহীতারা বুঝেশুনে ঝুঁকি নেয়। বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দ্রুত ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে আসা। সুতরাং চুক্তিপত্রে স্বচ্ছতা খুবই জরুরি। একটি অরের ভুলের জন্যও সর্বনাশ হতে পারে ঋণগ্রহীতার। টাকা ফেরত না পেলে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রপর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহীতাদের সর্বনাশের দৃষ্টান্ত বহু। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ২০০৭-এর ধস।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে চীন-রাশিয়া-জাপান, এ ক্ষেত্রে শর্ত, অবকাঠামো, নিরাপত্তা, ইত্যাদি কোনো কিছুই নাগরিকদের কাছে স্বচ্ছ নয়। জানতে চাইলে সরকার হামলা-মামলা করে। যেমনÑ তেল-গ্যাস রা কমিটি বা সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন। এভাবেই নতুন বন্ধুদের ১০০ ভাগ বিনিয়োগই জি-টু-জির বদলে ব্যক্তি-টু-ব্যক্তি। এ দিকে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধানও বাতিল করা শেষ। যেকোনো ‘ব্যক্তি-টু-ব্যক্তি’ চুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি।
পুতিন-আবে-লিং-মোদি জেনেশুনে করছেন না, তা বলা যাবে না। তাদের সহায়তায় একটি চুক্তিও ব্যক্তি-টু-ব্যক্তির বাইরে যেতে পারেনি। সরকার বদল হলে চুক্তিগুলো কেন চ্যালেঞ্জ হতে পারে, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মিগ-২৯ দুর্নীতির মামলার এ অভিজ্ঞতা দুই পরেই। সুতরাং ৫ জানুয়ারি যেকোনো মূল্যে কায়েম করতে হয়েছে। উন্নতিবাদীদের মনের ভাষা জানি। বিনিয়োগের অর্থ কিছু ছাড় হয়েছে, অধিকাংশই পাইপলাইনে, বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। তবে নেতিবাচক কিছু ঘটলে সম্পদ ছাড়া ফেরত দেয়ারও তেমন কিছু নেই। তখন তাদের চোখে হয়তো তেল-গ্যাসসহ সব খনিজসম্পদই ‘কোলেটারেল’!
ভুল করছেন পুতিনরা। বাংলাদেশ চীন বা রাশিয়া নয় যে, শাসক বললেইÑ বেদবাক্য। মতায় না থাকলে বিনিয়োগের ভরাডুবি হবে, এই ভয়েই হয়তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দিচ্ছে না বিগ-বি-বেল্টের সদস্যারা। এ জন্যই জিডিপি, প্রবৃদ্ধি এবং ২০২১-২০৪১ সালের খেলা। ড. কাস্টারের সন্দেহ, ওরা তেল-গ্যাস নেবে। একমাত্র আওয়ামী লীগ মতায় থাকলে সুদে-আসলে কিংবা যেভাবেই হোক, ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা। রাশিয়ার সুদের হার পিলে চমকে দেয়ার মতো, অর্থাৎ ৪.৫%-এর কম নয়। প্রথম ৫০০ মিলিয়ন শোধ হবে ১২ বছরে, অন্যথায় অতিরিক্ত পাঁচ বছর। দেড় বিলিয়ন ডলার শোধ হবে ২৪ বছরে, অন্যথায় অতিরিক্ত ১০ বছর... ইত্যাদি। চুক্তির মেয়াদ ২০১৩-২০৪১-এর সঙ্গে মধ্যম ও উন্নত বাংলাদেশের সময়সীমাÑ হুবহু।
দ্বিতীয় পর্ব : মিগ-২৯ খেয়ে মুখ পুড়েছে পুতিনের। অপর দিকে দরবেশ, ডেসটিনি, হলমার্ক, সাগর-রুনির খুনি...। কর্মিবাহিনীর একটাই কাজ, যেকোনো মূল্যে দলকে মতায় রাখা। এদের খরচ সঙ্কুলানের জন্য সৃষ্টি হয় হলমার্ক, ডেসটিনি, পুঁজিবাজার, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক লুটপাট। অতএব, কিসের নির্বাচন?
সারমর্ম : সরকারকে বলা মানে সময় নষ্ট করা। কারো কথাই শুনতে বাধ্য নয়। জোটের বাইরের সব দলকেও খালেদার নেতৃত্বে একজোট হতে হবে। অন্যথায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সময় গণতন্ত্রের বাইরে থাকতে হবে।
লেখক : ওয়ালস্ট্রিট এবং আবাসন বিনিয়োগকারী
ই-মেইল: farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com
মিডিয়ায় উন্নতি
মানবজমিন ৩ জানুয়ারি ২০১৫, ‘হিন্দুদের সর্বশক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার আহ্বান বিজেপি নেতার।’ বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তথাগত রায় বলেন, ‘আমরা একটি দেশের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি। তবে বাংলাদেশের বিষয়টা ভিন্ন, আপনাদের বোঝার জন্য বলছি, ভারত সরকার আওয়ামী লীগ সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে, ভারত সরকার উপলব্ধি করছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো কোনো সরকার হতে পারে না। আপনারা কি মনে করেন, এ দেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকারের ওপর ভরসা করা যায়?’ (বিজেপি একেবারেই উলঙ্গ)।
চায়না ডেইলি ডট কম, ৪/৫/১২ Ñ চায়না সিএনআর স্টক বাংলাদেশী অর্ডারের কারণে দ্রুত বাড়ছে। তৃতীয় বৃহৎ ট্রেন প্রস্তুতকারী এই স্টকের মূল্য ২৫% বৃদ্ধির কারণ, বাংলাদেশের সাথে চুক্তি (যদিও অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, চায়নার বেশির ভাগ প্রডাক্ট ডিফেক্টিভ)।
ওয়াচ ডট কম, ২২/৬/১৩ Ñ বিশটি ত্র“টিসহ ডেমু ক্রয়ের পর ভারত থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন টাকায় আরো ৩০ ইউনিট ডেমু এবং ৭০টি কোচ ক্রয় (এ দেশের অবকাঠামোর জন্য উপযুক্ত নয়)।
ঢাকা ট্রিবিউন, ১২/১১/১৩ Ñ ‘চায়না থেকে অস্ত্র ক্রয়ে গত বছর বাংলাদেশ ২য় স্থানে (৩৪২ মিলিয়ন ডলার)। ইরান ৭৫ এবং সৌদি আরব ১০৭তম স্থানে।’ ইরান ও সৌদি আরবের জিডিপি মাল্টি-ট্রিলিয়নের ঘরে এবং সব সময় সম্ভাব্য যুদ্ধের কিনারায় তারাই। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী, এত শান্তির দেশে হঠাৎ এত অস্ত্র কিনছে কেন, জিজ্ঞেস করেনি বিরোধী জোট।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, ‘বাংলাদেশের কেন সাবমেরিন প্রয়োজন’, প্রশ্ন ভারতীয় ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের। ২০৪ মিলিয়ন ডলারে দু’টি তৃতীয় শ্রেণীর এবং মেয়াদউত্তীর্ণ নকশার সাবমেরিন কেনার অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
ডেইলি স্টার ২৫/১২/১৪, এশিয়া ব্যাংক জাপানের প্রতিনিধিদলের চিফ এক্সিকিউটিভের বক্তব্য, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বড় অর্থনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’ শিল্পমন্ত্রী আমু, ‘২০২১ ও ২০৪১-এর স্বপ্নপূরণে বিদেশী বিনিয়োগকে আমরা লিবারেল এবং বিশাল সুযোগ দিচ্ছি।’
জাপান টাইমস : জাপান-বাংলাদেশের ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন চুক্তি সই। চুক্তির মধ্যে রয়েছে, অবকাঠামো, নিউকিয়ার প্রযুক্তি ইত্যাদি। ওই সূত্র ধরে ২০/১২/১৩তে এনডিটিভি, ‘ঢাকা-জাপান ২.৮ বিলিয়ন ডলারের মেট্রোরেল চুক্তি।’
আসাম ট্রিবিউন, ১৯/৯/১৪Ñ ‘বাংলাদেশ সরকার এইমর্মে রাজি হয়েছে, ফেনী নদীর ওপরে ১১.৫ মিলিয়ন ডলারের ১৫০ মিটার ব্রিজ তৈরি হবে, এখান দিয়ে ত্রিপুরা হয়ে ভারী যন্ত্রপাতি পৌঁছে যাবে চিটাগাং ও অন্যান্য বন্দরে।’
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ৭/১০/১৪Ñ “আশুগঞ্জ বন্দর নির্মাণে অর্থ দেবে ভারত, ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ উপকৃত হবে। ‘ওয়ারকোসিও’ নামের কোম্পানি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।”
বিডি নিউজ ২৪ ডট কম, ১/১১/১৪Ñ ‘চিটাগাং পোর্ট ব্যবহারে অনুমতি চাইবে ভারত। এতে ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা কমে অর্ধেক হবে।’
সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ, ২০১৩।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স বাজেট : ৬০০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ জিডিপির ৩.৭ শতাংশ। চায়না ১২২.২ বিলিয়ন যা জিডিপির ১.২ শতাংশ। রাশিয়া ৬৮.২ যা ৩.১ শতাংশ। ফ্রান্সে ৫২.৪ যা ১.৯ শতাংশ। জাপান ৫১ বিলিয়ন যা যা ৩.১ শতাংশ। ১ শতাংশ। ইন্ডিয়ার ৩৬.৩ যা ১.৮ শতাংশ। ইটালির ২৫ বিলিয়ন যা ১.২ শতাংশ। ইরানের ১.৭ বিলিয়ন
রাশিয়া : জিডিপি ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার, জনসংখ্যা ১৯৪ মিলিয়ন। জাপান : জিডিপি ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, জনসংখ্যা ১২৭ মিলিয়ন। ফ্রান্স : জিডিপি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, জনসংখ্যা ৬৭ মিলিয়ন। অর্থাৎ এই ধরনের জিডিপি-ওয়ালাদের সঙ্গে এক পাল্লায় হাঁটার আগে ঝুঁকির কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। কিন্তু সরকারের ব্যয়ের হাত দেখে কোনোভাবেই মনে হয় না, দেশটি অনুন্নত এবং এশিয়ার মধ্যে মাথাপিছু আয় সর্বনি¤œ ২ নম্বরে।
সিকিউরিটি রিস্ক ডট কম, ১৩/৬/১৪Ñ ‘নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে চীনের সাথে সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে বিলম্ব করছে বাংলাদেশ। সম্ভবত অন্যান্য দেশের মতো আরব আমিরাত এবং ভারতও বাদ সেধেছে। চীনের অর্থসাহায্য থেকে বঞ্চিত না হতে এটি শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তিও বড় ফ্যাক্টর। এশিয়ান হাইওয়ে এবং সোনাদিয়া বন্দর নিয়ে জাপানের সাথেও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল।’
গালফ নিউজ, ১৯/৩/১৪Ñ ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশের কাছে ৮২ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করেছে চীন, এত অস্ত্র ক্রয়ে অসুখী ভারত।’
ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স রিভিউ, ৫/৬/১৪Ñ ‘প্রতিরা খাতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি অর্থাৎ বাজেটের ৬ শতাংশ, ৫.৬৫ শতাংশ স্থানীয় সরকার এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন খাতে, ২.১ শতাংশ শিা খাতে।’
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ডট কম, ৩/১/১৫Ñ ‘বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশকে সমুদ্রপথ খুলতে বলেছে ভারত।’ প্রথম আলো, ৩০/১২/১৪Ñ ‘ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে চীনের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ২০১০ সনে ২৯০ ভাগ বনাম বর্তমানে ৫৫৮ ভাগ।’
সিপিডি ১/৩/১৫Ñ ‘এক বছরে ভারত নিয়ে গেছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।’ পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ শিা কিংবা স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে অধিক।
ওয়ার্ল্ড নিউকিয়ার রিভিউ, ২১/১১/১৪Ñ ‘রূপপুর দুইটি প্লান্টের জন্য যে চড়া সুদে ঋণ দিয়েছে রাশিয়া, এর ৫০০ মিলিয়ন শোধ হবে ১২ বছরে এবং ৫ বছর অতিরিক্ত সময়, বাকিটা শোধ হবে ২৮ বছরে এবং অতিরিক্ত ১০ বছর সময়। জাপানকে আরেকটি ২ হাজার মেগাওয়াটের পারমাণবিক চুল্লী তৈরির অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।’
১৭/৯/১৪ তারিখে শিামন্ত্রীর বরাত দিয়ে নিউএজ : ২০১০-এর তুলনায় ছাত্রসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে কিন্তু বাজেট নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। এশিয়ার মধ্যে শিা খাতে সর্বনি¤œ বাজেট বাংলাদেশে। ইপসার দাবি, শিা খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত অন্তত ২০ শতাংশ। অভিযোগ, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বাজেটের আয়তন বেড়েছে ২৮.৭ ভাগ, কমেছে গুরুত্বপূর্ণ খাতে।
ক্ষদ্র জিডিপির অর্থনীতিতে বড় দেশগুলো বিনিয়োগ করতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় যা হচ্ছে, তা স্বাভাবিক নয়। বিগ-বেল্টের সাথে অন্ধকারের যুদ্ধে অনেক কিছুই হারাতে পারে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিককালে যে চুক্তিগুলো হলো, এর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ‘কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় বরং বন্ধুত্বে’র দেশে হঠাৎ এত শত্র“র খবর থাকলে, গোপন না রেখে দ্রুত জানানো হোক। পাশ্চাত্যকে এড়িয়ে কেউই উন্নতি করতে পারে না এ যুগে। কারো কারো মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবের অন্যতম দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু। প্রায় বিনা টেন্ডারেই এত চুক্তি, এত লাভ, কেন এবং কিভাবে পাচ্ছে, বিরোধী জোটের রাডারে তা নেই। বরং বিশ্বব্যাংক তাড়াতে কয়েকটি দেশের ষড়যন্ত্রও আমলে নেয়া উচিত ছিল। উন্নতির ম্যারাথনে কত দ্রুত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলবে, সেটিই ল্য। কিন্তু দুর্বল যমুনা সেতুর পরেও শতভাগ সুস্থ অবকাঠামো নিশ্চিত করা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় সরকার। দুর্ঘটনা ঘটলে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেমন পাওয়া যায়নি যমুনা সেতুর কোরিয়ান কোম্পানিকে, সেখানেও অর্থ গচ্চা দিচ্ছে সরকার। সুতরাং চীন-জাপান-রাশিয়া সফরে প্রাধান্য পাওয়া ২০২১ ও ২০৪১-এর গোমর, অবশ্যই আলোচনায় থাকা উচিত। মাত্র ১৫০ বিলিয়ন জিডিপির ওপর অতিরিক্ত ঋণের বোঝায় চরম আকার ধারণ করছে বাণিজ্য ঘাটতি; ভবিষ্যতে তা বাড়তে পারে। অনেক অর্থ কোথায় যাচ্ছে, কেউই জানে না। গণতন্ত্রকে বাদ দিলে বোঝা বইতে পারবে না জিডিপি, এর প্রমাণ ব্যাপক হারে মুদ্রাপাচার। সোনাদিয়া বন্দর, পদ্মা সেতু এবং পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ শেষ হলে জিডিপিতে যোগ হতে পারে ৮-১০ শতাংশ। অর্থাৎ লিং-পুতিনদের জন্য ৫ জানুয়ারি অনিবার্য ছিল। কিন্তু গণতন্ত্রের কী অবস্থা হলো, ৫ জানুয়ারি নিয়ে এইচ টি ইমামের স্বীকারোক্তির পরেও সরাসরি জানতে চাননি বিরোধী জোট নেত্রী। অসম চুক্তির কারণে প্রাপ্তির চেয়ে হারানোর ভয় কত বেশি, আলোচনায় নেই।
৫ জানুয়ারি কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত রুশ-মার্কিন ব্লক। চীন-রাশিয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট-প্রধান শক্তির অভ্যুত্থান; আওয়ামী লীগ কতটা সচেতনভাবে ‘বিগ-বি-বেল্ট’ টোপ গিলেছে, সন্দেহ আছে। মার্কিন অর্থনীতিতে যতবার ধস নেমেছে, প্রতিবারই হোঁচট খেয়েছে ইউরোপ-এশিয়া। এশিয়া ও ইউরোপের মন্দা কখনোই আমেরিকার অর্থনীতিকে ফাঁদে ফেলে না বরং বর্তমান এবং গত শতাব্দীতে যতগুলো ধস নেমেছেÑ প্রতিবার আমেরিকার অর্থনীতিই ইউরোপ-এশিয়াকে টেনে তুলেছে। যে কারণেই হোক, মার্কিন অর্থনীতি এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিষ্ঠান, এর সঙ্গে তামাশা করা বিপজ্জনক, তাই কঠিন মূল্য দিচ্ছে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত দেশগুলো। জিএসপি গেছে, কমছে গার্মেন্ট। লাঠি আর ভীতিনির্ভর রাজনীতিতে সেরা, এমন দলের একগুঁয়েমির মাশুল বাংলাদেশ দেবে কেন? চায়নার অর্থনীতির আকার বড় হতে পারে। কিন্তু ৭৫ ভাগই মার্কিন অর্থনীতি নির্ভরশীল। আমেরিকার বিকল্প আমেরিকা যেমন, গণতন্ত্রের বিকল্প গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের অভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ থেকেই মুদ্রা পাচারের বাস্তবতা। এভাবে চলতে থাকলে তা বাড়বে। মধ্যম আর উন্নত দেশের টোপ গেলা সরকার এমন লেজেগোবরে, না পারছে গিলতে না উগরাতে। ফলে চীনা স্টাইলে ভিন্ন মত নির্মূল অব্যাহত থাকবেই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতোই মানুষ হাওয়া হয়ে যায় কোনো কোনো দেশে।
মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসির দিন আওয়ামী লীগ আবারো প্রমাণ করল, সংলাপের জন্য ফোনটি ছিল ১০০ ভাগ ভুয়া। ৫ জানুয়ারির ফাঁদে পা না দেয়াটাও খালেদার সঠিক সিদ্ধান্ত। বরং দিলেই অবৈধ সরকার বৈধতার লকেট নিয়ে হাজির হয়ে যেত ওয়াশিংটনে।
আসল খেলাটা উন্নতি নয়, বরং জিডিপি, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ধুন্ধুমার। অর্থনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষ সচেতন নয় বলেই যা খুশি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আইনের শাসন থাকলে অনেক ভিআইপিকেই জেলের ভাত খেতে হতো। দেশটকে কেউ যদি ক্যাস্ট্রো বা মাওয়ের দেশের মতো ভাবে, মারাত্মক ভুল। কারণ মানুষ একবার গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে।
উন্নতি সিরিয়ালের ২ পর্ব
প্রথম পর্ব : বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে চুক্তিগুলো কেমন? বিনিয়োগের প্রথম শর্ত, গ্রহীতার অর্থনৈতিক সমতা বনাম ঝুঁকি। সুদে-আসলে ফেরত দিতে পারবে কি না! সচ্ছল ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে সমস্যা নেই। তবে যারাই ১৫০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঝুঁকি নিয়েছে, সময়মতো তাদেরকেই স্পষ্ট করতে হবে উদ্দেশ্য। অপর দিকে এনজিওর ঋণগুলো মূলত বুঝেশুনে এবং সর্বনি¤œ সুদে।
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতাদের বেলায় বিধিনিষেধ ও শর্ত অনেক বেশি। সুদে-আসলে ফেরত পেতে পাওনাদারেরা এমন সব ‘কোলেটারেল’ যুক্ত করে, ব্যর্থ হলে যা গ্রহীতার বিরুদ্ধেই যায়। তাই সচেতন গ্রহীতারা বুঝেশুনে ঝুঁকি নেয়। বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দ্রুত ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে আসা। সুতরাং চুক্তিপত্রে স্বচ্ছতা খুবই জরুরি। একটি অরের ভুলের জন্যও সর্বনাশ হতে পারে ঋণগ্রহীতার। টাকা ফেরত না পেলে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রপর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহীতাদের সর্বনাশের দৃষ্টান্ত বহু। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ২০০৭-এর ধস।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে চীন-রাশিয়া-জাপান, এ ক্ষেত্রে শর্ত, অবকাঠামো, নিরাপত্তা, ইত্যাদি কোনো কিছুই নাগরিকদের কাছে স্বচ্ছ নয়। জানতে চাইলে সরকার হামলা-মামলা করে। যেমনÑ তেল-গ্যাস রা কমিটি বা সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন। এভাবেই নতুন বন্ধুদের ১০০ ভাগ বিনিয়োগই জি-টু-জির বদলে ব্যক্তি-টু-ব্যক্তি। এ দিকে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধানও বাতিল করা শেষ। যেকোনো ‘ব্যক্তি-টু-ব্যক্তি’ চুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি।
পুতিন-আবে-লিং-মোদি জেনেশুনে করছেন না, তা বলা যাবে না। তাদের সহায়তায় একটি চুক্তিও ব্যক্তি-টু-ব্যক্তির বাইরে যেতে পারেনি। সরকার বদল হলে চুক্তিগুলো কেন চ্যালেঞ্জ হতে পারে, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মিগ-২৯ দুর্নীতির মামলার এ অভিজ্ঞতা দুই পরেই। সুতরাং ৫ জানুয়ারি যেকোনো মূল্যে কায়েম করতে হয়েছে। উন্নতিবাদীদের মনের ভাষা জানি। বিনিয়োগের অর্থ কিছু ছাড় হয়েছে, অধিকাংশই পাইপলাইনে, বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। তবে নেতিবাচক কিছু ঘটলে সম্পদ ছাড়া ফেরত দেয়ারও তেমন কিছু নেই। তখন তাদের চোখে হয়তো তেল-গ্যাসসহ সব খনিজসম্পদই ‘কোলেটারেল’!
ভুল করছেন পুতিনরা। বাংলাদেশ চীন বা রাশিয়া নয় যে, শাসক বললেইÑ বেদবাক্য। মতায় না থাকলে বিনিয়োগের ভরাডুবি হবে, এই ভয়েই হয়তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দিচ্ছে না বিগ-বি-বেল্টের সদস্যারা। এ জন্যই জিডিপি, প্রবৃদ্ধি এবং ২০২১-২০৪১ সালের খেলা। ড. কাস্টারের সন্দেহ, ওরা তেল-গ্যাস নেবে। একমাত্র আওয়ামী লীগ মতায় থাকলে সুদে-আসলে কিংবা যেভাবেই হোক, ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা। রাশিয়ার সুদের হার পিলে চমকে দেয়ার মতো, অর্থাৎ ৪.৫%-এর কম নয়। প্রথম ৫০০ মিলিয়ন শোধ হবে ১২ বছরে, অন্যথায় অতিরিক্ত পাঁচ বছর। দেড় বিলিয়ন ডলার শোধ হবে ২৪ বছরে, অন্যথায় অতিরিক্ত ১০ বছর... ইত্যাদি। চুক্তির মেয়াদ ২০১৩-২০৪১-এর সঙ্গে মধ্যম ও উন্নত বাংলাদেশের সময়সীমাÑ হুবহু।
দ্বিতীয় পর্ব : মিগ-২৯ খেয়ে মুখ পুড়েছে পুতিনের। অপর দিকে দরবেশ, ডেসটিনি, হলমার্ক, সাগর-রুনির খুনি...। কর্মিবাহিনীর একটাই কাজ, যেকোনো মূল্যে দলকে মতায় রাখা। এদের খরচ সঙ্কুলানের জন্য সৃষ্টি হয় হলমার্ক, ডেসটিনি, পুঁজিবাজার, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক লুটপাট। অতএব, কিসের নির্বাচন?
সারমর্ম : সরকারকে বলা মানে সময় নষ্ট করা। কারো কথাই শুনতে বাধ্য নয়। জোটের বাইরের সব দলকেও খালেদার নেতৃত্বে একজোট হতে হবে। অন্যথায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সময় গণতন্ত্রের বাইরে থাকতে হবে।
লেখক : ওয়ালস্ট্রিট এবং আবাসন বিনিয়োগকারী
ই-মেইল: farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com
No comments