অচল মহাসড়ক, পুড়ছে মানুষ- ব্লেইম গেইম এর সমাধান নয়
বিশ
দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও থেমে থেমে হরতালে বিপর্যস্ত দেশের
যোগাযোগব্যবস্থা। বিপর্যস্ত অর্থনীতি। তারচেয়েও মর্মান্তিক হলোÑ একের পর এক
পেট্রলবোমা হামলায় বাসযাত্রীরা পুড়ে মারা যাচ্ছেন, পঙ্গু হচ্ছেন। এ ধরনের
সর্বশেষ ঘটনা হচ্ছে কুমিল্লায় বাসে পেট্রলবোমায় সাতজন নিহত ও ২০ জনের মতো
দগ্ধ হওয়া। এ ঘটনা যেমন মর্মান্তিক, তেমনি বর্বরোচিত। এ ধরনের ঘটনা কিছুতেই
মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। কোনো
বিবেকবান মানুষই এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা মেনে নিতে পারে না। সবার
প্রত্যাশা, অবিলম্বে এর অবসান হওয়া দরকার। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো,
এর অবসানের কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, বিষয়টি নিয়ে চলছে
একধরনের রাজনৈতিক ব্লেইম গেইম। সরকারপক্ষ জোর প্রচারণায় ব্যস্ত ২০ দলীয় জোট
মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। অপর দিকে, ২০ দলীয় জোটের কথা হচ্ছে, সরকার বিরোধী
জোটের চলমান ভোটের অধিকার আন্দোলনকে স্তিমিত করতে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা
ঘটিয়ে বিরোধী জোটের ওপর দোষ চাপানোর অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের
পারস্পরিক বিপ্রতীপ দাবির মধ্যে অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে দেশের মানুষ। মানুষ
জানতে পারছে না আসলে এর পেছনে সত্যিকার অর্থে কারা। কারা এর জন্য দায়ী। তবে
জনগণের প্রত্যাশা, এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক। এ জন্য
প্রকৃতপক্ষে যারা দায়ী, তাদের আইনের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
দেয়া হোক। কিন্তু দেশের মানুষ দেখছে, যারা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে, তাদের
কাউকে হাতেনাতে ধরে বিচারের মুখোমুখি করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন।
অপর দিকে, শুধু সন্দেহের বশে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী জোটের হাজার
হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটক করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এ পথ সমাধানের পথ নয়। রাজনৈতিক কারণে নিরপরাধ মানুষ যেমন
হয়রানির শিকার হতে পারে না, তেমনি প্রকৃত দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করাও
জরুরি। কুমিল্লায় সর্বসাম্প্রতিক পেট্রলবোমায় সাতজন পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ২০
দলীয় জোট দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। অপর দিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে
বেগম খালেদা জিয়াকে দায়ী করেছেন বর্তমান সরকারের এমপিরা। একই সাথে তাকে
গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে প্রয়োজনে ভারতের
বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনে প্রণীত ‘টাডা’ আইনের মতো কঠোর নতুন আইন প্রণয়নের
জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। এই ব্লেইম গেইমে এ সমস্যা সমাধান নয়। এমনি
পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ সংলাপ-সমঝোতার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। কারণ,
মানুষ আজ কাটাচ্ছে দুঃসহ এক সময়। অব্যাহত হরতাল-অবরোধ, ভাঙচুর,
অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা, ক্রসফায়ার কিছুই থামছে না। মরছে মানুষ; কেউ বোমা,
কেউ গুলিতে। বার্ন ইউনিটে আর্তনাদ। আহাজারি ক্রসফায়ারে নিহত স্বজনদের। অচল
অর্থনীতির চাকা। চলছে ব্লেইম গেইম। এমনি পরিস্থিতিতে ব্লেইম গেইম ছেড়ে
সংলাপ-সমঝোতায় বসতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের এটাই শান্তিপূর্ণ পথ।
আরেকটি প্রশ্ন, কুমিল্লায় পেট্রলবোমা হামলার শিকার ‘আইকন পরিবহন’ নামে বাসগুলোর কক্সবাজার রুটে চলাচলের অনুমোদন নেই। এ ছাড়া কক্সবাজারে পর্যটক পরিবহনে পুলিশ-বিজিবির নিরাপত্তাব্যবস্থার বাইরেই চলাচল করছিল এ পরিবহন। কক্সবাজারে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো কাউন্টার নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট বুকিংম্যানও। কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলার শিকার হওয়ার পর এই পরিবহন নিয়ে আজ কক্সবাজারের সর্বত্র দিনভর আলোচনা চলে। ঘটনা ঘটার আগে কক্সবাজারের কেউ এ পরিবহনের নামও শোনেনি। এ ছাড়া পর্যটক পরিবহনে প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থার বাইরে গিয়ে আইকন পরিবহন কেন চলাচল করছিল, তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এটাকে রহস্যজনকও বলছেন।
আরেকটি প্রশ্ন, কুমিল্লায় পেট্রলবোমা হামলার শিকার ‘আইকন পরিবহন’ নামে বাসগুলোর কক্সবাজার রুটে চলাচলের অনুমোদন নেই। এ ছাড়া কক্সবাজারে পর্যটক পরিবহনে পুলিশ-বিজিবির নিরাপত্তাব্যবস্থার বাইরেই চলাচল করছিল এ পরিবহন। কক্সবাজারে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো কাউন্টার নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট বুকিংম্যানও। কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলার শিকার হওয়ার পর এই পরিবহন নিয়ে আজ কক্সবাজারের সর্বত্র দিনভর আলোচনা চলে। ঘটনা ঘটার আগে কক্সবাজারের কেউ এ পরিবহনের নামও শোনেনি। এ ছাড়া পর্যটক পরিবহনে প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থার বাইরে গিয়ে আইকন পরিবহন কেন চলাচল করছিল, তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এটাকে রহস্যজনকও বলছেন।
No comments