চোখের জলে চিরবিদায়- পেট্রলবোমায় নিহত সাতজনের দাফন, রাজনৈতিক সন্ত্রাস থেকে মুক্তি কামনা
(কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রলবোমায় নিহত রহমান খান ওরফে ওয়াসিমের লাশ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে পৌঁছার পর স্বজনদের আহাজারি। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা l ছবি: প্রথম আলো) পেট্রলবোমার
নৃশংসতায় প্রাণ হারানো সাতজনকে চোখের জলে চিরবিদায় জানিয়েছেন স্বজন,
বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সন্ত্রাস থেকে মুক্তি
চেয়েছেন তাঁরা। বিচার চেয়েছেন এ নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গত সোমবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমার
দাউ দাউ আগুনে ঘটনাস্থলেই পুড়ে অঙ্গার হন বাবা-মেয়ে ও মা-ছেলেসহ সাতজন।
গতকাল তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়। গুরুতর দগ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার
লড়াইয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে হেরে গেছেন ওই সাতজনের সহযাত্রী কক্সবাজারের
চকরিয়ার রাশিদুল ইসলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ছিলেন
তিনি। যশোরে বাবা নুরুজ্জামান পপলু ও মেয়ে মাইশা তাসনিমকে বিদায় জানাতে
তাঁদের জানাজায় মানুষের ঢল নামে। যশোর শহরের ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে
তাঁদের ঘোপ সেন্ট্রাল সড়কের সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জীবনসায়াহ্নে এসে ছেলে আর দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাতনিকে বিদায় জানানোটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না রোকন উদ্দীন। জানাজা শেষে দাফনের জন্য কফিন বাড়ির সামেন দিয়ে কবরস্থানে নেওয়ার সময় অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বিদায় জানাতে আসা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সবার মুখে ছিল একটাই কথা, ‘আমরা এ ধরনের রাজনৈতিক সন্ত্রাস চাই না। এ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়।’
যশোরে বাবা-মেয়ের মতো নরসিংদীর ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বালুচরপাড়ার মা আসমা আক্তার ও ছেলে শান্ত মিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন স্বজন, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মেয়ে ও নাতির এমন বিদায় মেনে নিতে ভেঙে পড়েছেন আরমান মিয়া। ‘মা-বাবা বেঁচে থাকতে কেন যে সন্তানগো খোদায় নিয়া যায়। কী পাপ করছিলাম যে বুড়া হইয়া মেয়ে ও নাতির লাশ কান্ধে (কাঁধে) নিয়া ঘুরতে হয়।’ অস্পষ্ট কণ্ঠে এভাবে বিলাপ করছিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বালুচরপাড়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। স্ত্রী ও ছেলেকে হারিয়ে যেন নির্বাক মানিক মিয়া। আসমার বোন হোসনা আক্তার বলেন, ‘ভাইয়া (মানিক) ভোর থেকেই প্রায় সারা দিনই প্রিয় ছেলে আর স্ত্রীর কবরের পাশে থাকছেন।’
বাবা-মেয়ে ও মা-ছেলের সহযাত্রী কক্সবাজারের চকরিয়ার মো. ইউছুফকে গতকাল ও আবু তাহেরকে গত মঙ্গলবার দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় চকরিয়ার পহরচাঁদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ইউসুফের জানাজায় বাবা সালেহ আহমেদের বক্তৃতায় যেন চলমান রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের রাগ-ক্ষোভ বেরিয়ে আসে। ছেলে হারানো এই বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে তো রাজনীতি করে না, রাজনীতি বোঝেও না, খেটে খাওয়া মানুষ। কেন তাকে পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে মরতে হলো। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’ পরে স্থানীয় গোবিন্দপুর কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হারবাং ইউনিয়নের গাইনাকাটা গ্রামে আবু তাহেরের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কাল শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা আবদুর রহমান খান ওরফে ওয়াসিমের (৩৮) বড় মেয়ে কেয়ার। কিন্তু বাবার হাত ধরে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া হবে না তার। রাজনৈতিক নৃশংসতার বলি বাবা ওয়াসিমকে গতকাল শরীয়তপুরের গোসাইর হাটে দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
ঢাকার কাপ্তান বাজারে পাখি বিক্রির ব্যবসা করে সংসার চালাতেন ওয়াসিম। রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন।
গতকাল গজারিয়া গ্রামে ওয়াসিমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মরদেহ ঘিরে বিলাপ করছেন স্বজনেরা। স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। একবার বিলাপ করে কোহিনুর বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না, তাহলে আমার স্বামীকে কেন রাজনীতির এমন নিষ্ঠুর বলি হতে হলো। এর বিচার আমি কার কাছে চাইব?’
দাফন অনুষ্ঠানে গিয়ে শরীতপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস কোহিনুর আক্তারের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন।
স্থানীয় নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত করিম বলেন, ‘এমন নৃশংসতা আমরা কেউ মানতে পারছি না। আর যাতে কোনো মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে মারা না হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এ আহ্বান জানাই।’
জীবনসায়াহ্নে এসে ছেলে আর দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাতনিকে বিদায় জানানোটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না রোকন উদ্দীন। জানাজা শেষে দাফনের জন্য কফিন বাড়ির সামেন দিয়ে কবরস্থানে নেওয়ার সময় অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বিদায় জানাতে আসা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সবার মুখে ছিল একটাই কথা, ‘আমরা এ ধরনের রাজনৈতিক সন্ত্রাস চাই না। এ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়।’
যশোরে বাবা-মেয়ের মতো নরসিংদীর ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বালুচরপাড়ার মা আসমা আক্তার ও ছেলে শান্ত মিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন স্বজন, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মেয়ে ও নাতির এমন বিদায় মেনে নিতে ভেঙে পড়েছেন আরমান মিয়া। ‘মা-বাবা বেঁচে থাকতে কেন যে সন্তানগো খোদায় নিয়া যায়। কী পাপ করছিলাম যে বুড়া হইয়া মেয়ে ও নাতির লাশ কান্ধে (কাঁধে) নিয়া ঘুরতে হয়।’ অস্পষ্ট কণ্ঠে এভাবে বিলাপ করছিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বালুচরপাড়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। স্ত্রী ও ছেলেকে হারিয়ে যেন নির্বাক মানিক মিয়া। আসমার বোন হোসনা আক্তার বলেন, ‘ভাইয়া (মানিক) ভোর থেকেই প্রায় সারা দিনই প্রিয় ছেলে আর স্ত্রীর কবরের পাশে থাকছেন।’
বাবা-মেয়ে ও মা-ছেলের সহযাত্রী কক্সবাজারের চকরিয়ার মো. ইউছুফকে গতকাল ও আবু তাহেরকে গত মঙ্গলবার দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় চকরিয়ার পহরচাঁদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ইউসুফের জানাজায় বাবা সালেহ আহমেদের বক্তৃতায় যেন চলমান রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের রাগ-ক্ষোভ বেরিয়ে আসে। ছেলে হারানো এই বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে তো রাজনীতি করে না, রাজনীতি বোঝেও না, খেটে খাওয়া মানুষ। কেন তাকে পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে মরতে হলো। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’ পরে স্থানীয় গোবিন্দপুর কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হারবাং ইউনিয়নের গাইনাকাটা গ্রামে আবু তাহেরের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কাল শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা আবদুর রহমান খান ওরফে ওয়াসিমের (৩৮) বড় মেয়ে কেয়ার। কিন্তু বাবার হাত ধরে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া হবে না তার। রাজনৈতিক নৃশংসতার বলি বাবা ওয়াসিমকে গতকাল শরীয়তপুরের গোসাইর হাটে দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
ঢাকার কাপ্তান বাজারে পাখি বিক্রির ব্যবসা করে সংসার চালাতেন ওয়াসিম। রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন।
গতকাল গজারিয়া গ্রামে ওয়াসিমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মরদেহ ঘিরে বিলাপ করছেন স্বজনেরা। স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। একবার বিলাপ করে কোহিনুর বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না, তাহলে আমার স্বামীকে কেন রাজনীতির এমন নিষ্ঠুর বলি হতে হলো। এর বিচার আমি কার কাছে চাইব?’
দাফন অনুষ্ঠানে গিয়ে শরীতপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস কোহিনুর আক্তারের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন।
স্থানীয় নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত করিম বলেন, ‘এমন নৃশংসতা আমরা কেউ মানতে পারছি না। আর যাতে কোনো মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে মারা না হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এ আহ্বান জানাই।’
No comments