নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেল ফুফাতো ভাইয়ের ঘরে
মামাতো
ভাই মিছলু (৪২)-কে হত্যা করে নিজ ঘরে মাটির নিচে পুঁতে রাখে ফুফাতো ভাই
শফিক মিয়া (৪৫)। নিখোঁজ হওয়ার কথা জানাজানির পর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে খুঁজতে
বের হয় হত্যাকারী নিজেও। নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর বাড়িতেও লোকজন নিয়ে খুঁজতে
যায় সে। কেউ বুঝতে পারেনি ঘটনার মূলহোতা শফিকই। ঘটনার ১৬ দিন পর গতকাল
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজারের গুরারাই গ্রামের শফিক মিয়ার ঘরের মাটির
নিচ থেকে। মৌলভীবাজার কাজিরগাঁও এলাকার নেছা মঞ্জিলের আহসান হাবিব ছুফির
ছোট ভাই মশিউর রহমান মিছলু গত ১৪ই ডিসেম্বর তার স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে
নিয়ে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের কেশবচর গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে
যান। পরের দিন ১৫ই ডিসেম্বর মশিউর রহমান ব্যক্তিগত প্রয়োজনে শহরের
কাজিরগাঁওয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বেলা ২টায় বের হন। এরপর থেকে তিনি
নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ মশিউর রহমানের স্ত্রী মায়া বেগম এ মর্মে মৌলভীবাজার
মডেল থানায় গত ১৮ই ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (ডায়েরি নং-৭৪২)।
পুলিশ তদন্তে নেমে একে একে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের এক সূত্র জানায়,
নিখোঁজ ব্যক্তির মোবাইলের সূত্রে হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার তিনজনকে
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে নিখোঁজ ব্যক্তির মোবাইল সিম পাল্টিয়ে
ব্যবহার করছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের ছায়ারুন নামের এক
মহিলা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মডেল থানার এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, এ
মহিলাকে গ্রেপ্তারের পর সে জানায়, এ ফোনটি তাকে দিয়েছে তারই গ্রামের ফারুক
মিয়া নামের এক ব্যক্তি। ফারুক মিয়ার তথ্যে পুলিশ গুরারাই গ্রামের নিখোঁজ
মিছলুর ফুফাতো ভাই শফিক মিয়াকে বৃহস্পতিবার রাত ১টায় তার বাড়ি থেকে
গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কাথে
স্বীকার করে এবং লাশ পুঁতে রাখার স্থান দেখিয়ে দেয়। রাতে পুলিশ মাটি খুঁড়ে
লাশের পায়ের আঙুলের সন্ধান পায়। পরে গতকাল দুপুর ১২টায় মৌলভীবাজার মডেল
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস ছালেকের নেতৃত্বে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শফিক গত ১৫ই ডিসেম্বর মোবাইল ফোনে ডেকে নেয় মশিউর
রহমান মিছলুকে তার ঘরে। তারপর বিকাল সাড়ে তিনটায় ঘরেই গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে
হত্যা করে। এ সময় সাহায্য করে সাধুহাটি গ্রামের ফারুক। পরে রাতে দু’জনে
মিলে লাকড়ির ঘরে মাটির নিচে পুঁতে মাটিচাপা দিয়ে লাকড়ি দিয়ে ঢেকে দেয়।
গতকাল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সীমান্ত নবীগঞ্জ উপজেলার নিকটবর্তী গ্রাম
গুরারাই গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার লোক উপস্থিত গুরারাই বাজারের লাগোয়া
শফিক মিয়ার দেয়ালঘেরা বিশাল বাড়িতে। সবার চোখে-মুখে বিস্ময়। লোকজন জানান,
শফিক মিয়ার মূল বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার উমরপুর গ্রামে। এখানে বাড়ি কিনে বসত
গড়েছে। একসময় মা, স্ত্রীসহ থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে একা থাকে সে। স্ত্রীর
সঙ্গে বনিবনা নেই তার। তার মা থাকেন উমরপুরের বাড়িতে। কথা হয় নিহত মিছলুর
দূরসম্পর্কীয় চাচা প্রবাসী আনছার আহমদের সঙ্গে। জানান, ঘটনার পর থেকে তাকে
বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা হয়। কিন্তু কেউ ধারণা করতে পারেনি এই শফিক মিয়া
মিছলুকে হত্যা করে তারই লাকড়ির ঘরে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে। তা ছাড়া ঘটনার পর
শফিকই লোকজন নিয়ে মিছলুর শ্বশুরবাড়ি খুঁজতে যায় বলে জানান কেশবচর গ্রামের
জুবায়ের (৩০)। এ সময় সে মিছলুর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার
করে। মিছলুর স্ত্রীর বড় ভাই কেশবচর গ্রামের ওয়ারিছ মিয়া অভিযোগ করে বলেন,
নিখোঁজের পর সবাই সন্দেহ করছেন তাদের পরিবার ও তার বোনকে। পুলিশ তার বোনকে
গ্রেপ্তার করেছে। এখন সে জেলে আছে। অথচ মূল আসামি সবার সঙ্গে ঘুরছে। কেউ
তাকে সন্দেহ করেননি। নিহত মশিউর রহমান মিছলুর বড় ভাই মৌলভীবাজার শহরের ওষুধ
ব্যবসায়ী আহসান হাবিব ছুফি গতকাল জানান, তার ভাই খুবই সরল-সহজ প্রকৃতির।
শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার ৪ দিন পর তার ভাইয়ের স্ত্রীর ফোন পেয়ে প্রথম
জানতে পারেন নিখোঁজের কথা। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সূত্রে জানতে পারেন তারই
ফুফাতো ভাই শফিক তাকে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রেখেছে বাড়ির এক ঘরে।
প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি কেউ। এখন লাশ দেখে হতবাক। মৌলভীবাজার মডেল
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুছ ছালেক গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এখনও
হত্যার মূল রহস্য জানা যায়নি। ঘটনার পেছনে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ, পরকীয়া না
অন্য কিছু আছে তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তার কথা শুধু শফিক ও ফারুক নয় আরও
কেউ এর পেছনে আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
No comments