সরকারের মানসিক ও কানের চিকিৎসা দরকার -ড. কামাল হোসেন
গণফোরামের
সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাস প্রমাণ
করে যে, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে কোন শাসকগোষ্ঠী জনগণের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারেনি। সময়ের ব্যবধানে নিপীড়িত জনতার পিট যখন দেয়ালে
ঠেকে গেছে তখন তারা ওই অত্যাচারী শাসকদের লজ্জাজনকভাবে বিদায় দিয়ে ইতিহাসের
আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করেছে। বর্তমান সরকার যেসব কর্মকাণ্ড করছে মনে হচ্ছে
তাদের মানসিক ও কানের চিকিৎসা করাতে হবে। এদের মানবতাবোধ হারিয়ে গেছে।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদ
আয়োজিত ‘৪৩তম বিজয় দিবস এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক’ এক
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. কামাল বলেন, ৫ই
জানুয়ারির একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার মনে করে,
যে কোন মূল্যেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে। নইলে শেয়ার বাজার লুটপাট করা যাবে
না। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা ডাকাতি করা যাবে না।
সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করে দখলদারিত্ব ও মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। তবে
সরকারকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে যে, একদিন তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।
এটাই নিয়ম। যদি ভেবে থাকে যে তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে তবে তারা পাগলের
স্বর্গে বাসবাস করছে। তিনি বলেন, সংবিধানের মৌলিক অধিকার হচ্ছে বাক ও
ব্যক্তির স্বাধীনতা। সরকারকে দেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা শুনতে হবে। কিন্তু,
তারা কথা শোনার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণের সবার কথা শুনতে হবে। তিনি
বলেন, কিছু দিন আগে শাহজাহানপুরে একটি পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের করুণ মৃত্যুর
পর তার বাবাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে মানসিক নির্যাতন করলো। রাষ্ট্র
কতো নিষ্ঠুর হলে এ কাজ করে। এ বিষয়ে আদালতে মানবাধিকার অবমাননার একটি আবেদন
করা হবে। আমি ওই অবমাননার শুনানিতে অংশ নেব। শুধু এটা না আরও যত অবমাননার
শুনানি হবে আমি সবগুলোতে যাবো। যারা এই অবমাননাকারীদের আশ্রয় দিয়েছে
তাদেরও বিচারের জন্য আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতার মালিক জনগণ। মালিক
এমনিতেই হয়নি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই মালিকানা পেয়েছে। তাদের অধিকার
প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের কাজ। রাষ্ট্র যদি এখানে ব্যর্থ হয় তাহলে ’৭১-র
মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি অবমাননা করা হবে। ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন
দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রের মালিকানা রক্ষার জন্য তিনি দেশের জনগণের প্রতি
আহ্বান জানান। সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,
রাষ্ট্র আজ অমানবিক হয়ে গেছে। একজন পিতা তার ছেলে হারিয়ে যখন পাগলপ্রায় তখন
তাকে ধরে নিয়ে ১২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে। থানা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার
গায়ে প্রহারের দাগ দেখিয়েছে। মানসিক নির্যাতনের কথা জানিয়েছে। কত বড়
অমানবিক হলে এটা সম্ভব! তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র তার সমস্ত মেধা খাটিয়ে ওই
শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। সেখানে গিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন
যে, এখানে টিকটিকি এবং পলিথিন ছাড়া কিছুই নেই। পরে কিছু উদ্যমী যুবক তাদের
মেধা খাটিয়ে ওই পাইপ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করলো। মান্না বলেন, এ মর্মান্তিক
ঘটনায় জিহাদের বাবা যখন থানায় মামলা করতে গিয়েছেন তখন কার কার নামে মামলা
হয়েছে তা তিনি জানেন না। পুলিশ তাদের ইচ্ছামতো মামলার এজাহারে আসামিদের নাম
দিয়েছে। এই রাষ্ট্রের কাছে কি আশা করা যায়? রাষ্ট্রতো মানবিকতা হারিয়ে
ফেলেছে। সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা
কর্মীদের কাছে গিয়ে নিরাপত্তা চাইতে জনগণ শঙ্কা প্রকাশ করছে। বিপদকে নিজের
মধ্যে চেপে রাখার চেষ্টা করছে। যাদের কাছে নিরাপত্তা চাইতে যাবে তাদের
দিয়েইতো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাই কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তার
বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি। আলোচনা সভায়
সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের সভাপতি নুরুল হুদা মিলু। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে
বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদের উপদেষ্টা কাজী সিরাজ, বিএইচ
আরএমসির পরিচালক মেজর (অব.) সরোয়ার হোসেন, নির্বাহী পরিচালক তালুকদার
মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
No comments