দলপতি ও রাজনৈতিক নেতা এক নয়
আমাদের রাষ্ট্রীয় নেতারা জানেন শুধু
ক্ষমতা ভোগ করতে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য যাদের খুশি রাখা দরকার তাদের খুশি
রাখতেও তাদের আগ্রহের শেষ নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থের
অপচয় করতে হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন নেই। জনসম্পদের কতটা জনগণ পেল তা কোনো
বিবেচনার বিষয় নয়। যত অসুবিধা নির্বাচনের প্রশ্নে। শিশু জিহাদের নির্মম
মৃত্যু থেকে যাদের শেখার, তারা কিছুই শিখলেন না। সরকারি অব্যবস্থাপনার চরম
মূল্য জনগণকে বিভিন্ন পর্যায়ে এভাবেই দিতে হচ্ছে। পুলিশকে ব্যস্ত হতে দেখা
গেল শিশুটির পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মিথ্যা ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করার
কাজে।
গণতান্ত্রিক সুশাসন বা জনস্বার্থের বিষয় নিয়ে
সরকারকে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। তারা এখন উন্নয়নের রাজনীতির কথা জনগণকে শোনাচ্ছেন। কিন্তু উন্নয়ন দেখতে হলে তো জানতে হবে কারা কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে রাজকীয় হালে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
স্বাভাবিক কারণেই নতুন করে হিংসা, হরতাল ও ক্ষমতার জন্য রক্তক্ষয়ী লড়াই এ দেশের অসহায় জনগণকে দেখতে হচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের কোনো চিন্তা সরকারের মধ্যে নেই। কারণ ক্ষমতার দুর্ভেদ্য দুর্গে তারা নিজেদের বেশ নিরাপদ মনে করছেন। জনমতের ভিত্তিতে ক্ষমতায় থাকার অথবা সরে দাঁড়ানোর চিন্তা তাদের মধ্যে নেই। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে সবাই, এমনকি আমাদের বিদেশী বন্ধুরাও এটা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছেন যে, জনবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারের ভবিষ্যৎ কত অনিশ্চিত। সরকারের গণতান্ত্রিক বৈধতার কথা কেউ ভুলে থাকলেও তারা দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না।
যে বিষয়টিতে উপলব্ধির ঘাটতি রয়েছে তা হল, যে সরকার শাসন পরিচালনায় পুলিশের শক্তির ওপর নির্ভরশীল, সেই সরকার আত্মরক্ষায়ও সক্ষম নয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে এই শিক্ষা আমাদের হয়েছে। তবে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের সে শিক্ষা জানা না থাকারই কথা।
বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র চীন পর্যন্ত এখন অস্বস্তিতে ভুগছে এবং আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান সংকট সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছে। চীনের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘যদি কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়ে থাকে, চীন আশা করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথে তার সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়।’ এটা পরিষ্কার যে, চীনও বাংলাদেশে বিনিয়োগ ঝুঁকির ব্যাপারে খুবই সতর্ক। যাতে গণ্ডগোল, বিশৃংখলার মধ্যে তার আর্থিক স্বার্থ বিপন্ন না হয়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার মতো অনুকূল অবস্থা বাংলাদেশে অনুপস্থিত। কারণ, রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়টি সরকারের কাছে খুবই স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে সরকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কি-না সেটাই হবে দেখার বিষয়। আগে দেখেছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো উপদেশ সরকার সহজভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। আওয়ামী লীগ যেহেতু প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে সমস্যার সমাধান করতে চায়, সে কারণে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা বা সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ফলপ্রসূ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সরকার যদি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সম্মত থাকে, তাহলে তো বিরোধী দলের আর রাস্তায় লড়াই করার কোনো যুক্তি থাকে না।
যদিও আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত না করে কেবল নির্বাচন অনুষ্ঠান গণতন্ত্রকে কার্যকর করে তুলতে কোনো ভূমিকা রাখবে না। একই ধরনের লুটপাটের দুঃশাসন চলবে এবং তা আমাদের জীবনকে একইভাবে দুর্বিষহ করে তুলবে।
রাজনৈতিক নেতারা যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাসুলভ আচরণ করতে না শিখবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান নিজেদের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ কথার অর্থ এই নয় যে, সমস্যাটির যুক্তিসঙ্গত সমাধান নেই।
এটা সহজেই বোধগম্য যে, সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখতে পুলিশসহ সমগ্র প্রশাসনকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। সেই প্রশাসনের পক্ষে জনস্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে সময় দেয়া বা আগ্রহ দেখানোর কিছু থাকতে পারে না। সরকারি প্রশাসন জনপ্রশাসন হতে পারছে না। সরকারি স্বার্থ রক্ষায় পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারীও ব্যস্ত থাকছেন। আর যারা বিবেকের তাড়নায় তা পারছেন না তারা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। জনগণের অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতিপরায়ণরাও বসে নেই। বস্তুত এ কারণেই আমরা একটা সম্ভাব্য ধ্বংসের ছবি দেখছি।
অস্ত্র যে অনেকের হাতেই আছে তা তো সবাই দেখতে পাচ্ছি। হিংসা, হানাহানির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি উভয় পক্ষেরই রয়েছে। ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের জন্য যে লড়াই, সেখানে বিচার-বিবেচনা ও সংযম থাকতে পারে না।
আমাদের গভীর সংকটের সমাধান আসতে পারে কেবল সময়ের সাহসী ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে। জনপ্রিয় ইচ্ছার ভিত্তিতে একটা সমাধান আমাদের পেতেই হবে। রাজনৈতিক নেতারা যখন কোনো সমাধান দিতে পারেন না, তখন শুধু নির্বাচনের কথা বলাই যথেষ্ট নয়। শুধুই একজনের পর অপরজনকে ক্ষমতায় বসানো কোনো রাজনীতি হতে পারে না। তাই এক ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা অপরিহার্য। সরকার যেহেতু জনগণের ভোটের নয়, তেমনি যে কোনো ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাই গ্রহণীয় হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে দলীয় রাজনীতির পুনর্গঠন দরকার হবে যাতে নির্বাচন হতে পারে শাসনতন্ত্রসম্মতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। অতীতে অর্থবহ নির্বাচন হতে পারেনি বলেই নির্বাচনের মৃত্যু ঘটানো সহজ হয়েছে। রাজনৈতিক জোটগুলোর দিকনির্দেশনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। আন্দোলনের জন্য বিএনপি জোটই যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নেতৃত্বের কথা গুরুত্বসহ ভাবতে হবে। একই নেতৃত্ব, একই চিন্তাভাবনা বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনতে পারে না। সেটা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথও দেখাতে পারে না।
একটি স্বাধীন দেশকে স্বাধীন রাখার জন্য সত্যিকারের দেশপ্রেমী সাহসী লোকদের ভূমিকা থাকতেই হবে। পাকিস্তান আমলে আমাদের যখন রাজনৈতিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনার অবসানকল্পে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল, তখন সাহসী ব্যক্তির কোনো অভাব ছিল না। সব শ্রেণীর লাখ লাখ মানুষ আপস না করে সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম করে জীবন দিয়েছিলেন এই আশায় যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সেখানে কেবল সুবিধাভোগীরা নয়, সবাই গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার সুযোগ এবং আইনের সুরক্ষা ভোগ করতে পারবেন। তাই সৎ ও সাহসী লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমলাতান্ত্রিক রাজনীতি দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণে আসতে পারে না।
দুর্জনের কাছ থেকে ধার করা জ্ঞান রাজনৈতিক নেতার বিজ্ঞতা বলে বিবেচিত হতে পারে না। রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক জ্ঞান আসতে হবে জনগণের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস থেকে। দলপতি আর রাজনৈতিক নেতা এক নয়। বর্তমানে রাজনীতির নামে দলীয় লোকদের স্বার্থে একেকজন দলপতি হয়ে বসে আছেন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
গণতান্ত্রিক সুশাসন বা জনস্বার্থের বিষয় নিয়ে
সরকারকে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। তারা এখন উন্নয়নের রাজনীতির কথা জনগণকে শোনাচ্ছেন। কিন্তু উন্নয়ন দেখতে হলে তো জানতে হবে কারা কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে রাজকীয় হালে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
স্বাভাবিক কারণেই নতুন করে হিংসা, হরতাল ও ক্ষমতার জন্য রক্তক্ষয়ী লড়াই এ দেশের অসহায় জনগণকে দেখতে হচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের কোনো চিন্তা সরকারের মধ্যে নেই। কারণ ক্ষমতার দুর্ভেদ্য দুর্গে তারা নিজেদের বেশ নিরাপদ মনে করছেন। জনমতের ভিত্তিতে ক্ষমতায় থাকার অথবা সরে দাঁড়ানোর চিন্তা তাদের মধ্যে নেই। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে সবাই, এমনকি আমাদের বিদেশী বন্ধুরাও এটা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছেন যে, জনবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারের ভবিষ্যৎ কত অনিশ্চিত। সরকারের গণতান্ত্রিক বৈধতার কথা কেউ ভুলে থাকলেও তারা দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না।
যে বিষয়টিতে উপলব্ধির ঘাটতি রয়েছে তা হল, যে সরকার শাসন পরিচালনায় পুলিশের শক্তির ওপর নির্ভরশীল, সেই সরকার আত্মরক্ষায়ও সক্ষম নয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে এই শিক্ষা আমাদের হয়েছে। তবে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের সে শিক্ষা জানা না থাকারই কথা।
বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র চীন পর্যন্ত এখন অস্বস্তিতে ভুগছে এবং আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান সংকট সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছে। চীনের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘যদি কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়ে থাকে, চীন আশা করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথে তার সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়।’ এটা পরিষ্কার যে, চীনও বাংলাদেশে বিনিয়োগ ঝুঁকির ব্যাপারে খুবই সতর্ক। যাতে গণ্ডগোল, বিশৃংখলার মধ্যে তার আর্থিক স্বার্থ বিপন্ন না হয়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার মতো অনুকূল অবস্থা বাংলাদেশে অনুপস্থিত। কারণ, রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়টি সরকারের কাছে খুবই স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে সরকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কি-না সেটাই হবে দেখার বিষয়। আগে দেখেছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো উপদেশ সরকার সহজভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। আওয়ামী লীগ যেহেতু প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে সমস্যার সমাধান করতে চায়, সে কারণে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা বা সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ফলপ্রসূ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সরকার যদি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সম্মত থাকে, তাহলে তো বিরোধী দলের আর রাস্তায় লড়াই করার কোনো যুক্তি থাকে না।
যদিও আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত না করে কেবল নির্বাচন অনুষ্ঠান গণতন্ত্রকে কার্যকর করে তুলতে কোনো ভূমিকা রাখবে না। একই ধরনের লুটপাটের দুঃশাসন চলবে এবং তা আমাদের জীবনকে একইভাবে দুর্বিষহ করে তুলবে।
রাজনৈতিক নেতারা যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাসুলভ আচরণ করতে না শিখবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান নিজেদের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ কথার অর্থ এই নয় যে, সমস্যাটির যুক্তিসঙ্গত সমাধান নেই।
এটা সহজেই বোধগম্য যে, সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখতে পুলিশসহ সমগ্র প্রশাসনকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। সেই প্রশাসনের পক্ষে জনস্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে সময় দেয়া বা আগ্রহ দেখানোর কিছু থাকতে পারে না। সরকারি প্রশাসন জনপ্রশাসন হতে পারছে না। সরকারি স্বার্থ রক্ষায় পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারীও ব্যস্ত থাকছেন। আর যারা বিবেকের তাড়নায় তা পারছেন না তারা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। জনগণের অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতিপরায়ণরাও বসে নেই। বস্তুত এ কারণেই আমরা একটা সম্ভাব্য ধ্বংসের ছবি দেখছি।
অস্ত্র যে অনেকের হাতেই আছে তা তো সবাই দেখতে পাচ্ছি। হিংসা, হানাহানির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি উভয় পক্ষেরই রয়েছে। ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের জন্য যে লড়াই, সেখানে বিচার-বিবেচনা ও সংযম থাকতে পারে না।
আমাদের গভীর সংকটের সমাধান আসতে পারে কেবল সময়ের সাহসী ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে। জনপ্রিয় ইচ্ছার ভিত্তিতে একটা সমাধান আমাদের পেতেই হবে। রাজনৈতিক নেতারা যখন কোনো সমাধান দিতে পারেন না, তখন শুধু নির্বাচনের কথা বলাই যথেষ্ট নয়। শুধুই একজনের পর অপরজনকে ক্ষমতায় বসানো কোনো রাজনীতি হতে পারে না। তাই এক ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা অপরিহার্য। সরকার যেহেতু জনগণের ভোটের নয়, তেমনি যে কোনো ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাই গ্রহণীয় হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে দলীয় রাজনীতির পুনর্গঠন দরকার হবে যাতে নির্বাচন হতে পারে শাসনতন্ত্রসম্মতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। অতীতে অর্থবহ নির্বাচন হতে পারেনি বলেই নির্বাচনের মৃত্যু ঘটানো সহজ হয়েছে। রাজনৈতিক জোটগুলোর দিকনির্দেশনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। আন্দোলনের জন্য বিএনপি জোটই যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নেতৃত্বের কথা গুরুত্বসহ ভাবতে হবে। একই নেতৃত্ব, একই চিন্তাভাবনা বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনতে পারে না। সেটা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথও দেখাতে পারে না।
একটি স্বাধীন দেশকে স্বাধীন রাখার জন্য সত্যিকারের দেশপ্রেমী সাহসী লোকদের ভূমিকা থাকতেই হবে। পাকিস্তান আমলে আমাদের যখন রাজনৈতিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনার অবসানকল্পে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল, তখন সাহসী ব্যক্তির কোনো অভাব ছিল না। সব শ্রেণীর লাখ লাখ মানুষ আপস না করে সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম করে জীবন দিয়েছিলেন এই আশায় যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সেখানে কেবল সুবিধাভোগীরা নয়, সবাই গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার সুযোগ এবং আইনের সুরক্ষা ভোগ করতে পারবেন। তাই সৎ ও সাহসী লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমলাতান্ত্রিক রাজনীতি দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণে আসতে পারে না।
দুর্জনের কাছ থেকে ধার করা জ্ঞান রাজনৈতিক নেতার বিজ্ঞতা বলে বিবেচিত হতে পারে না। রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক জ্ঞান আসতে হবে জনগণের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস থেকে। দলপতি আর রাজনৈতিক নেতা এক নয়। বর্তমানে রাজনীতির নামে দলীয় লোকদের স্বার্থে একেকজন দলপতি হয়ে বসে আছেন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
No comments