মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রসঙ্গে by বদরুদ্দীন উমর
১৯৭১ সালে জনগণের ওপর পাকিস্তান সরকারের
সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ ২৫ মার্চ শুরু হয়েছিল অন্যদের সঙ্গে
বুদ্ধিজীবীদের ওপর আক্রমণ দিয়ে। সেই আক্রমণ নয় মাস ধরে চলার পর চূড়ান্ত
পর্যায় অতিক্রম করে ১৪ ডিসেম্বর শেষ হয়েছিল পরিকল্পনামাফিক দ্বিতীয় দফা
বুদ্ধিজীবীদের ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ
যেভাবে হয়েছিল, দুনিয়ার ইতিহাসে তার ব্যাপকতার অন্য কোনো উদাহরণ নেই।
জগন্নাথ হলের ছাত্রদের ঘেরাও করে শত শত ছাত্রকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা
হয়েছিল এবং একই নিষ্ঠুরতার সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল ডক্টর জিসি দেব,
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মনিরুজ্জামান, সন্তোষ ভট্টাচার্যসহ অনেক শিক্ষককে।
এ দুই তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে যে বুদ্ধিজীবী হত্যা বন্ধ ছিল এমন নয়। নয় মাস ধরে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তাতে নিহত হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদসহ অন্য অনেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে সেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইউমসহ অন্যরা। তারা সবাই ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহকর্মী।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকদের অপহরণ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, গিয়াসুদ্দীন আহমদ, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা। এছাড়া একই দিনে অপহরণ করা হয়েছিল শহীদুল্লাহ কায়সার, ডাক্তার ফজলে রাব্বী, ডাক্তার আবদুল আলীম, সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ অন্য অনেককে। তাদের সবাইকেই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল রায়েরবাজারের ইটখোলায়। এদের সবার সঙ্গেই ছিল আমার পরিচয়। কারও কারও সঙ্গে ছিল কিছুটা ঘনিষ্ঠতা। সেই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী, ডাক্তার রাব্বী। একমাত্র ডাক্তার রাব্বী ছাড়া তাদের অন্য কারও সঙ্গে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় আমার দেখা হয়নি।
শহীদুল্লাহ কায়সারের অপহৃত হওয়ার কথা মনে হলে আমার অবাক লাগে। কারণ তিনি ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সেই হিসেবে পরিচিত। তাদের পার্টির অন্য লোকরা ভারতে চলে গেলেও তিনি ঢাকায় থাকছিলেন প্রকাশ্যে। ডিসেম্বর মাসের দিকে পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ করে নিজেদের পার্টির কিছু লোককে প্রকাশ্য থেকে গোপন আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে নিরাপদ মনে করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা মনে করলেও জামায়াতে ইসলামীর আলবদর বাহিনী সেটা মনে করেনি। কাজেই তারা তাকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে পরে হত্যা করে।
মুনীর চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে পঞ্চাশের দশকের পর আর যুক্ত থাকেননি। কিন্তু তিনি যে এককালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এটা আলবদর বাহিনীর পরিচালকরা ভোলেনি। কাজেই তিনি নিজেকে যতই নিরাপদ মনে করুন, বুদ্ধিজীবী হিসেবে তারা তাকে শত্রু বিবেচনা করত। কাজেই তাকেও তারা ১৪ তারিখে অপহরণ করেছিল।
ডাক্তার রাব্বী বামপন্থী কোনো পার্টির সদস্য না হলেও বামপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তিনি তাদের অনেকের চিকিৎসাও করতেন। আমিও চিকিৎসার জন্য তার কাছে যেতাম। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের কোনো একদিন আমি সিদ্ধেশ্বরীতে তার চেম্বারে গিয়েছিলাম। সেই অবস্থায় হঠাৎ করে কারও পক্ষে আমাকে চেনার উপায় ছিল না। আমি তার সঙ্গে তার চেম্বারে বসে থাকার সময় তিনি উচ্চকণ্ঠেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে এবং সাধারণভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলছিলেন। তাকে সেটা করতে আমি নিষেধ করেছিলাম। কত ধরনের লোক তার কাছে আসে চিকিৎসার জন্য। সেই অবস্থায় তার কথাবার্তা যদি কোনো জামায়াতপন্থী বা পাকিস্তানপন্থী শোনে তাহলে বিপদ হতে পারে এটা বলে তাকে আমি সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু তিনি ওইভাবে তার কথাবার্তা পরে বন্ধ করেছিলেন বলে মনে হয় না। কাজেই যা হওয়ার তাই হয়েছিল। তাকে আলবদর বাহিনী অপহরণ করেছিল ১৪ তারিখে।
ডাক্তার আলীম কথাবার্তা সেভাবে না বললেও তারা তাকে শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করেছিল। কাজেই তাকে তারা ওইদিন রেহাই দেয়নি। অধ্যাপক গিয়াসুদ্দিন আহমদ মুক্তিবাহিনীর লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এদিক দিয়ে অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে একেবারে সম্পর্কহীন। তাকেও তারা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল চোখ বেঁধে, যেমন তারা করেছিল অন্যদের ক্ষেত্রে।
১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের এভাবে তারা যখন অপহরণ করছিল, তখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের একেবারে শেষ অবস্থা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন আত্মসমর্পণ করার পর্যায়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও সেই অবস্থায় এভাবে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যা করা ছিল এক ধরনের প্রতিশোধের ব্যাপার। তাছাড়া তারা মনে করেছিল, এভাবে কিছু বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করবে। এই চিন্তা যে নির্বোধ ছিল এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা তখন পরাজয়ের মুখে ছিল মরিয়া এবং তাদের সেই মরিয়া অবস্থায় তাদের নির্দেশ অনুযায়ী আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ঠ্যাঙ্গাররা বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যা করেছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যা কোনো পর্যায়েই বন্ধ থাকেনি। কারণ এভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা জনগণের ওপর সাধারণ সামরিক হামলা থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার ছিল না। কাজেই এই হত্যাকাণ্ডকে সাধারণভাবে যে হত্যাকাণ্ড তারা করেছিল তার থেকে আলাদাভাবে দেখার কোনো সুযোগ অথবা যথার্থতা নেই। যে গণহত্যা তারা করেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই হত্যাকাণ্ডকে বিবেচনা করতে হবে। নয় মাস ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়ে চললেও ১৪ ডিসেম্বরের এই হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস হিসেবে ১৯৭২ সাল থেকেই পালন করে আসা হয়। এভাবে এই দিবসটি পালনের দ্বারা সাধারণভাবে অনেকের মধ্যে এই ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, শুধু এই দিনেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। ইতিহাসের সঙ্গে অপরিচিত লোকদের মধ্যে এ ধারণা স্বাভাবিক। কাজেই এই দিবসটি পালনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল তা মনে রাখা দরকার। শুধু ঢাকাতেই নয়, সমগ্র দেশব্যাপী ১৯৭১ সালের নয় মাসে এমন অসংখ্য বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল যার খবর এখনও জানা নেই। কাজেই বুদ্ধিজীবী হত্যা যে ১৪ ডিসেম্বরেই প্রথম হয়নি অথবা ওইদিনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এ বিষয়টি এই দিবস পালনের সময় মনে রাখা দরকার।
এ দুই তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে যে বুদ্ধিজীবী হত্যা বন্ধ ছিল এমন নয়। নয় মাস ধরে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তাতে নিহত হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদসহ অন্য অনেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে সেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইউমসহ অন্যরা। তারা সবাই ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহকর্মী।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকদের অপহরণ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, গিয়াসুদ্দীন আহমদ, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা। এছাড়া একই দিনে অপহরণ করা হয়েছিল শহীদুল্লাহ কায়সার, ডাক্তার ফজলে রাব্বী, ডাক্তার আবদুল আলীম, সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ অন্য অনেককে। তাদের সবাইকেই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল রায়েরবাজারের ইটখোলায়। এদের সবার সঙ্গেই ছিল আমার পরিচয়। কারও কারও সঙ্গে ছিল কিছুটা ঘনিষ্ঠতা। সেই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী, ডাক্তার রাব্বী। একমাত্র ডাক্তার রাব্বী ছাড়া তাদের অন্য কারও সঙ্গে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় আমার দেখা হয়নি।
শহীদুল্লাহ কায়সারের অপহৃত হওয়ার কথা মনে হলে আমার অবাক লাগে। কারণ তিনি ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সেই হিসেবে পরিচিত। তাদের পার্টির অন্য লোকরা ভারতে চলে গেলেও তিনি ঢাকায় থাকছিলেন প্রকাশ্যে। ডিসেম্বর মাসের দিকে পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ করে নিজেদের পার্টির কিছু লোককে প্রকাশ্য থেকে গোপন আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে নিরাপদ মনে করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা মনে করলেও জামায়াতে ইসলামীর আলবদর বাহিনী সেটা মনে করেনি। কাজেই তারা তাকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে পরে হত্যা করে।
মুনীর চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে পঞ্চাশের দশকের পর আর যুক্ত থাকেননি। কিন্তু তিনি যে এককালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এটা আলবদর বাহিনীর পরিচালকরা ভোলেনি। কাজেই তিনি নিজেকে যতই নিরাপদ মনে করুন, বুদ্ধিজীবী হিসেবে তারা তাকে শত্রু বিবেচনা করত। কাজেই তাকেও তারা ১৪ তারিখে অপহরণ করেছিল।
ডাক্তার রাব্বী বামপন্থী কোনো পার্টির সদস্য না হলেও বামপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তিনি তাদের অনেকের চিকিৎসাও করতেন। আমিও চিকিৎসার জন্য তার কাছে যেতাম। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের কোনো একদিন আমি সিদ্ধেশ্বরীতে তার চেম্বারে গিয়েছিলাম। সেই অবস্থায় হঠাৎ করে কারও পক্ষে আমাকে চেনার উপায় ছিল না। আমি তার সঙ্গে তার চেম্বারে বসে থাকার সময় তিনি উচ্চকণ্ঠেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে এবং সাধারণভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলছিলেন। তাকে সেটা করতে আমি নিষেধ করেছিলাম। কত ধরনের লোক তার কাছে আসে চিকিৎসার জন্য। সেই অবস্থায় তার কথাবার্তা যদি কোনো জামায়াতপন্থী বা পাকিস্তানপন্থী শোনে তাহলে বিপদ হতে পারে এটা বলে তাকে আমি সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু তিনি ওইভাবে তার কথাবার্তা পরে বন্ধ করেছিলেন বলে মনে হয় না। কাজেই যা হওয়ার তাই হয়েছিল। তাকে আলবদর বাহিনী অপহরণ করেছিল ১৪ তারিখে।
ডাক্তার আলীম কথাবার্তা সেভাবে না বললেও তারা তাকে শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করেছিল। কাজেই তাকে তারা ওইদিন রেহাই দেয়নি। অধ্যাপক গিয়াসুদ্দিন আহমদ মুক্তিবাহিনীর লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এদিক দিয়ে অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে একেবারে সম্পর্কহীন। তাকেও তারা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল চোখ বেঁধে, যেমন তারা করেছিল অন্যদের ক্ষেত্রে।
১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের এভাবে তারা যখন অপহরণ করছিল, তখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের একেবারে শেষ অবস্থা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন আত্মসমর্পণ করার পর্যায়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও সেই অবস্থায় এভাবে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যা করা ছিল এক ধরনের প্রতিশোধের ব্যাপার। তাছাড়া তারা মনে করেছিল, এভাবে কিছু বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করবে। এই চিন্তা যে নির্বোধ ছিল এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা তখন পরাজয়ের মুখে ছিল মরিয়া এবং তাদের সেই মরিয়া অবস্থায় তাদের নির্দেশ অনুযায়ী আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ঠ্যাঙ্গাররা বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যা করেছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যা কোনো পর্যায়েই বন্ধ থাকেনি। কারণ এভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা জনগণের ওপর সাধারণ সামরিক হামলা থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার ছিল না। কাজেই এই হত্যাকাণ্ডকে সাধারণভাবে যে হত্যাকাণ্ড তারা করেছিল তার থেকে আলাদাভাবে দেখার কোনো সুযোগ অথবা যথার্থতা নেই। যে গণহত্যা তারা করেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই হত্যাকাণ্ডকে বিবেচনা করতে হবে। নয় মাস ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়ে চললেও ১৪ ডিসেম্বরের এই হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস হিসেবে ১৯৭২ সাল থেকেই পালন করে আসা হয়। এভাবে এই দিবসটি পালনের দ্বারা সাধারণভাবে অনেকের মধ্যে এই ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, শুধু এই দিনেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। ইতিহাসের সঙ্গে অপরিচিত লোকদের মধ্যে এ ধারণা স্বাভাবিক। কাজেই এই দিবসটি পালনের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল তা মনে রাখা দরকার। শুধু ঢাকাতেই নয়, সমগ্র দেশব্যাপী ১৯৭১ সালের নয় মাসে এমন অসংখ্য বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল যার খবর এখনও জানা নেই। কাজেই বুদ্ধিজীবী হত্যা যে ১৪ ডিসেম্বরেই প্রথম হয়নি অথবা ওইদিনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এ বিষয়টি এই দিবস পালনের সময় মনে রাখা দরকার।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments