পুতিনের ভারত সফরে ‘নাখোশ’ যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরে যুক্তরাষ্ট্র ‘নাখোশ’। তবে দেশটি এই অসন্তুষ্টির কথা স্পষ্ট করে জানালেও বলেছে, ভারতে আগামী জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারত এখনো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ। গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেন সাকি তাঁর দেশের এ মনোভাবের কথা বলেন। খবর এনডিটিভির। ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র জেন সাকি জানান, ওবামার পরিকল্পিত ভারত সফর বাতিলের কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ২৬ জানুয়ারি দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ওবামা প্রধান অতিথি থাকবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামাই প্রথম এ ধরনের সম্মান পেলেন।
মার্কিন মুখপাত্র সাকি জানান, পুতিনের সফরে তেলক্ষেত্র আবিষ্কার, অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা এবং পরমাণু জ্বালানি খাতে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে। আগামী দুই দশকে ভারতে রাশিয়ার ১২টি পরমাণু চুল্লি তৈরির পরিকল্পনার বিষয়টিও তাদের জানা আছে। এ প্রসঙ্গে সাকি বলেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই এসব চুক্তির একেবারে খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে এগুলোর বিষয়ে আমরা খোঁজ রাখছি।’ মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সব দেশকেই আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক যেন কিছুই হয়নি সে রকম রাখার অবস্থা নেই।’ ওবামার ভারত সফর বাতিল হয়ে যাবে কি না, এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আবার জিজ্ঞেস করলে সাকি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘না, না, না।’ ভ্লাদিমির পুতিন গত বুধবার এক দিনের শীর্ষ বৈঠকের জন্য ভারত সফরে আসেন। এই সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের বর্তমান অবস্থানের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক নেই— ‘সহযোগী দেশগুলোকে’ এ মনোভাবও জানিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে আর যাই হোক, ওবামার ভারত সফরের ওপর প্রভাব পড়বে না বলেই জানানো হয়েছিল। পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহে কথিত হস্তক্ষেপ ও মালয়েশীয় এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভূপাতিত করায় সম্ভাব্য ভূমিকাসহ বিভিন্ন কারণে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে শীতল সম্পর্ক চলছে।
নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকদের মত ছিল, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত রাশিয়ার জন্য বন্ধুর খোঁজে ভারত সফরে আসেন পুতিন। মনে করা হচ্ছে, পশ্চিমের দুয়ার বন্ধ হওয়ায় বিশেষ করে জ্বালানির নতুন বাজার খোঁজা পুতিনের এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। রাশিয়ার সঙ্গে আশু সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ নেই বলেই শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেন সাকি। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর এটা আমরা বজায় রাখতে চাই।’ পুতিনের সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা ভারতকে জানিয়েছিল কি না, এই প্রশ্নের জবাবে সাকি বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।...আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইউক্রেনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ভারত সমর্থন করেনি। তারা এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে।’ পুতিনের ভারত সফরের সময় তাঁর সঙ্গে ক্রিমিয়ার প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসিয়েনভের উপস্থিতির বিষয়টি ওয়াশিংটনকে হতাশ করেছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।’ প্রতিবেশী ইউক্রেনে সম্প্রতি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হওয়ার পর দেশটির ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নেয় রাশিয়া।
No comments