আবেগে শুরু রোমাঞ্চে শেষ
আবেগে শুরু ও রোমাঞ্চে শেষ হলো অ্যাডিলেড টেস্ট। খেলার মাঠের ঘটনায় অসি ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজের মৃত্যুতে তার স্মৃতি নিয়ে আবেগঘন আবহ দেখা যায় এবারের অ্যাডিলেড ম্যাচ জুড়ে। আর ম্যাচের শেষ দিন টেস্ট ক্রিকেটের আসল রূপ-রস দেখলেন ভক্ত-সমর্থকরা। নাটকীয়তায় ভরপুর শেষ দিনে আদতে জয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয় উভয় দলের। এতে কৃতিত্ব দিতে হবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। গতকাল ম্যাচের সম্ভাবনা ছিল ড্র’তে সমাপ্তিরও। তবে অসি স্পিনার নাথান লায়নের ম্যাজিক নৈপুণ্যে জয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত হাসিমুখ স্বাগতিকদেরই। চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতকে ৪৮ রানে হারিয়ে ১-০তে এগিয়ে রইলো অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডিলেড টেস্টের পঞ্চমদিন ভারত তারকাদের ব্যাটিং নৈপুণ্যের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক নাথান লায়ন। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে লায়নের শিকার ৭ উইকেট। এতে লায়নের ম্যাচ ফিগার রেকর্ড ১২/২৮৬। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলিং ফিগার এটি। আগের রেকর্ডটি অসি অপর স্পিনার জেসন ক্রেইজার ১২/৩৫৮। ২০০৮’র ভারত সফরে এ রেকর্ড গড়েন ক্রেইজা। আগের দিনের ২৯০/৫ সংগ্রহ নিয়ে গতকাল সকালে খেলা শুরুর আগে ইনিংস ঘোষণা করেন অসি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। এতে সারাদিনের ৯৮ ওভারে ভারতের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৬৪ রানের। এতে ভক্তরা ভারতের জয়ের সম্ভাবনা হয়তো কমই দেখছিলেন। সমীকরণটা ছিল- জয় পেতে হলে এখানে রেকর্ড ভাঙতে হবে ভারতকে। অ্যাডিলেডের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩০৬ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড একবার। আর ভারতীয়দের দেশের বাইরে টেস্টের পঞ্চম দিনের পুরোটা ব্যাটিংয়ে কাটাতে দেখা গিয়েছিল গত দুই যুগে মাত্র তিনবার। তবে অ্যাডিলেডের মাঠে আরও একবার আলোকিত ব্যাটিং দেখালেন ভারতীয়রা। কঠিন টার্গেটের পেছনে দলীয় ৫৭ রানে ভারত দুই উইকেট খোয়ালেও দিনের পরের দুই ঘণ্টা ভারতীয় ওপেনার মুরলি বিজয় ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি দেখান ব্যাটিংয়ে ঝলক। তৃতীয় উইকেটে ১৮৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুই ভারতীয় টপঅর্ডার। স্বাগতিকদের দুশ্চিন্তায় রেখে ২০৫/২ সংগ্রহ নিয়ে চা বিরতিতে যান কোহলি-মুরলি। ফিরেও এ জুটি অবিচ্ছিন্ন থাকে ৯ ওভার। তবে নার্ভাস নাইনটিতে ৬৯.১তম ওভারে মুরলি বিজয় উইকেট খোয়ান ব্যক্তিগত ৯৯ রানে। একই ওভারের শেষ বলে আজিঙ্কা রাহানের আউটে পথ পিচ্ছিল হয় ভারতীয়দের। দিনের শুরুতে শিখর ধাওয়ান হন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার। আম্পায়ারের ভুলে কাটা পড়ে রাহানের উইকেটটিও। ব্যাট-গ্লাভসে বল না ছুঁলেও উভয়েই হন কট বিহাইন্ড। সদ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ২৫০ রানের অসম্ভব ইনিংস খেলে হৈচৈ ফেলা রোহিত শর্মা ব্যাট হাতে দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন অ্যাডিলেডের দ্বিতীয় ইনিংসেও। ব্যক্তিগত ৬ রানে উইকেট দেন রোহিত। তবে ক্রিজের একপ্রান্তে ভারতীয়দের স্বপ্ন ধরে রেখেছিলেন অধিনায়ক কোহলি। সফল স্পিনার নাথান লায়নের এক ওভারের পর বাউন্ডারি ছক্কা হাঁকিয়ে সামর্থ্য দেখান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রিদ্ধিমান সাহাও। তবে ওই ওভারে ১৫ রান তুলে নেয়ার পরও শেষ বলে ক্রিজ ছেড়ে অহেতুক বড় শট হাঁকাতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে উইকেট বিসর্জন দেন রিদ্ধিমান। জয়ের জন্য তখনও ভারতের দরকার ১৮ ওভারে ৬৫ রান। এতে ক্রিজের অন্যপ্রান্তে লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে চাপ বাড়ে বিরাট কোহলির ওপর। এতে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে উইকেট দেন কোহলিও। পরে ১১ রানে শেষ চার উইকেট খুইয়ে ভারতের ইনিংস থেমে পড়ে ৩১৫ রানে।
No comments