উ. কোরীয় নেতাদের বিচারের সুপারিশ, জাতিসংঘ কমিটির
উত্তর কোরিয়ায় সরকারি নির্দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি। কমিটি গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এর ফলে নিভৃতকামী কমিউনিস্ট দেশটির নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জোরালো হলো। খবর এএফপি, এপি ও বিবিসির। উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আইসিসিতে পাঠাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানানোর বিষয়ে প্রস্তাব মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদে পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১১১ এবং বিপক্ষে ১৯ ভোট পড়ে। ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ৫৫টি সদস্যরাষ্ট্র। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিম জং উনসহ উত্তর কোরিয়ার নেতাদের আদালতে হাজির করার জন্য এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা। প্রস্তাবটি এখন কোনো বাধা ছাড়াই সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির জন্য আগামী মাসে উত্থাপন করা যাবে। জাতিসংঘের একটি কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। সেখানকার ভয়াবহতার মাত্রা অন্য সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
৪০০ পৃষ্ঠার ওই বিশেষ প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই জাতিসংঘে মঙ্গলবার পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। জাতিসংঘের ভোটের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির প্রতিনিধি সিন সো হো জাতিসংঘের এ উদ্যোগের পরিণাম সুদূরপ্রসারী হবে বলে মন্তব্য করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া আরও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার নেতাদের আইসিসিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে বাধার মুখে পড়তে পারে। কারণ, পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান মিত্র হিসেবে পরিচিত চীন এবং আরেক পরাশক্তি রাশিয়া এ ধরনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই দুটি দেশ মঙ্গলবারও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। পাশাপাশি কিউবা, সিরিয়া, ইরান, বেলারুশ, ভেনেজুয়েলা, উজবেকিস্তান ও সুদান প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে। তাদের অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অনায্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ কমিশনের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার নির্বাসিত নির্যাতিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি উল্লেখ করা হয় দেশটির বিভিন্ন নির্যাতনশিবিরে আটক প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষের কথা। এসবের মধ্যে রয়েছে নির্যাতন, সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদণ্ড ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব অভিযোগের দায় উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ওপরই বর্তায় বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ওই তদন্ত দলের প্রধান মাইকেল কারবি।
মঙ্গলবারের ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি মানবাধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কথা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ না করা হলেও এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় দেশটির ‘সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের’ ওপর চাপানো হয়েছে। পিয়ংইয়ংকে আইসিসিতে পাঠানোর প্রস্তাবে ভোটের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সিরিয়ার পরিস্থিতির নিন্দা: সিরিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক অভিমত দিয়ে জাতিসংঘ মঙ্গলবার এর নিন্দা জানিয়েছে। দেশটিতে ‘মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির’ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের মানবাধিকার কমিটিতে উত্থাপন করা হলে পক্ষে ১২৫ এবং বিপক্ষে ১৩টি ভোট পড়ে। আর ৪৭টি সদস্যরাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। একই ধরনের একটি প্রস্তাব ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উত্থাপন করা হলে পক্ষে ৭৮ এবং বিপক্ষে ৩৫ ভোট পড়ে। আর ভোটদানে বিরত থাকে ৬৯টি সদস্যরাষ্ট্র। সিরিয়া ও ইরানের প্রতিনিধিরা ওই ভোটাভুটির সমালোচনা করেছেন।
No comments