নিজেদের কর্মীকে গুলি করে ও কুপিয়ে মারল ছাত্রলীগ
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় প্রতিপক্ষ নেতা-কর্মীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রাণ হারিয়েছেন এক কর্মী। সংঘর্ষকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশ রাবার বুলেটে আহত। সংঘর্ষের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ এ সংঘর্ষ ঘটে।
ছাত্রলীগের নিহত কর্মী হলেন সুমন চন্দ্র দাস (২২)। তিনি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামেরচর গ্রামের হরিধন দাসের ছেলে তিনি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম এ সালাম কুপিয়ে জখম ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সুমনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পরিবারের কোনো সদস্য হাসপাতালে এসে পৌঁছাননি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে ভর্তি ১৮ জনের মধ্যে খলিলুর রহমান নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১২ জন। ছাত্রলীগের কর্মী খলিলুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে সংগঠনটির এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ক্যাম্পাসছাড়া করে। এই পক্ষ অনেক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করছিল। ক্যাম্পাসছাড়া পক্ষটির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী ওরফে পার্থ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দা, রামদা ও অন্য অস্ত্রশস্ত্র উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু ও শাহ পরান হল দখলে যান। এ সময় সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের পক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই তিন পক্ষ একত্র হয়ে হল দুটিতে গিয়ে সেখানে অবস্থানকারী সহসভাপতি অঞ্জন রায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উত্তম কুমার দাসের পক্ষের নেতা-কর্মীদের বের করে দেয়। হল থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।
ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়ার পর অঞ্জন ও উত্তমের পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বহিরাগত সশস্ত্র কর্মীরা যোগ দেন। পৌনে ১১টার দিকে তাঁরা হল দখলকারী পক্ষগুলোকে প্রতিরোধের চেষ্টা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি। এ সময় অঞ্জনের পক্ষের কর্মী সুমন চন্দ্র ও খলিলুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সুমনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোও হয়। আহত হন দুই পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন।
বেলা ১১টার দিকে সুমনকে তাঁর পক্ষের কয়েকজন কর্মী উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ও পরে ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর মারা যান তিনি। সুমনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা পৌনে দুইটার দিকে উত্তম-অঞ্জনের পক্ষ হলে আরেক দফা হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশি বাধায় তারা হলে ঢুকতে পারেনি। বেলা দুইটা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষকালে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ও বেশ কিছু গুলির শব্দ শোনা গেছে।
সংঘর্ষের সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টাকালে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হন প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়, ছাত্রলীগের নেতা অঞ্জন রায়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন আহমদ ওরফে সাগর ও কর্মী রুবেল আহমদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী খলিলুর রহমান, আবদুস সালাম, পিয়ন্ত সরকার, জিয়াউর রহমান, রাজু পাঠান, ইয়াকুব আলী, সাঈদ আহমদ, কয়েস আহমদ, কামরুল ইসলাম, মদন মোহন কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী সুদীপ দাস ও বিজিত কুমার।
সংঘর্ষ চলাকালে ক্যাম্পাসে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ইটপাটকেলে মাথায় জখম হন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুস সালাম।
বিবদমান পক্ষের ভাষ্য: সংঘর্ষে জড়ানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে দুই পক্ষ। অঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার সময় পার্থ ও সাঈদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাধিক পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বহিরাগতদের নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেছে। হামলাকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সুমন।
অভিযোগ অস্বীকার করে পার্থ ও আবু সাঈদ বলেন, ‘বহিরাগতদের সহায়তায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারাই (অঞ্জন-উত্তম পক্ষ) আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের গুলিতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
পুলিশ যা বলছে: সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমতুল্লাহ বলেন, সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। পুলিশ একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। নিহত ব্যক্তির বুকে গুলি লেগেছে এবং গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা: সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য মো. আমিনুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের গতকাল বিকেল চারটার মধ্যে ও ছাত্রীদের আজ শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলবে। রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন। ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের নেপথ্যে কমিটি: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ পরিচালিত হয়ে আসছিল আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে। পরে গত বছরের ৮ মে কেন্দ্র থেকে সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থকে সভাপতি ও ইমরান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন রাতেই প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছিলেন বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সুমন। তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে সংগঠনটির বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই আছে।
নতুন কমিটি গঠনের পর প্রথম হামলার শিকার সামসুজ্জামান সুমন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ওপর কারা হামলা করেছিল, কেন করেছিল, আজও কিছু জানতে পারিনি। তবে হামলাকারীরা শনাক্ত হলে এত সব হামলার ঘটনা ঘটত না।’
ছাত্রলীগের নিহত কর্মী হলেন সুমন চন্দ্র দাস (২২)। তিনি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামেরচর গ্রামের হরিধন দাসের ছেলে তিনি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম এ সালাম কুপিয়ে জখম ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সুমনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পরিবারের কোনো সদস্য হাসপাতালে এসে পৌঁছাননি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে ভর্তি ১৮ জনের মধ্যে খলিলুর রহমান নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১২ জন। ছাত্রলীগের কর্মী খলিলুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে সংগঠনটির এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ক্যাম্পাসছাড়া করে। এই পক্ষ অনেক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করছিল। ক্যাম্পাসছাড়া পক্ষটির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী ওরফে পার্থ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দা, রামদা ও অন্য অস্ত্রশস্ত্র উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু ও শাহ পরান হল দখলে যান। এ সময় সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের পক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই তিন পক্ষ একত্র হয়ে হল দুটিতে গিয়ে সেখানে অবস্থানকারী সহসভাপতি অঞ্জন রায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উত্তম কুমার দাসের পক্ষের নেতা-কর্মীদের বের করে দেয়। হল থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।
ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়ার পর অঞ্জন ও উত্তমের পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বহিরাগত সশস্ত্র কর্মীরা যোগ দেন। পৌনে ১১টার দিকে তাঁরা হল দখলকারী পক্ষগুলোকে প্রতিরোধের চেষ্টা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি। এ সময় অঞ্জনের পক্ষের কর্মী সুমন চন্দ্র ও খলিলুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সুমনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোও হয়। আহত হন দুই পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন।
বেলা ১১টার দিকে সুমনকে তাঁর পক্ষের কয়েকজন কর্মী উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ও পরে ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর মারা যান তিনি। সুমনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা পৌনে দুইটার দিকে উত্তম-অঞ্জনের পক্ষ হলে আরেক দফা হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশি বাধায় তারা হলে ঢুকতে পারেনি। বেলা দুইটা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষকালে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ও বেশ কিছু গুলির শব্দ শোনা গেছে।
সংঘর্ষের সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টাকালে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হন প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায়, ছাত্রলীগের নেতা অঞ্জন রায়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন আহমদ ওরফে সাগর ও কর্মী রুবেল আহমদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী খলিলুর রহমান, আবদুস সালাম, পিয়ন্ত সরকার, জিয়াউর রহমান, রাজু পাঠান, ইয়াকুব আলী, সাঈদ আহমদ, কয়েস আহমদ, কামরুল ইসলাম, মদন মোহন কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী সুদীপ দাস ও বিজিত কুমার।
সংঘর্ষ চলাকালে ক্যাম্পাসে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ইটপাটকেলে মাথায় জখম হন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুস সালাম।
বিবদমান পক্ষের ভাষ্য: সংঘর্ষে জড়ানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে দুই পক্ষ। অঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার সময় পার্থ ও সাঈদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাধিক পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বহিরাগতদের নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেছে। হামলাকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সুমন।
অভিযোগ অস্বীকার করে পার্থ ও আবু সাঈদ বলেন, ‘বহিরাগতদের সহায়তায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারাই (অঞ্জন-উত্তম পক্ষ) আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের গুলিতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
পুলিশ যা বলছে: সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমতুল্লাহ বলেন, সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। পুলিশ একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। নিহত ব্যক্তির বুকে গুলি লেগেছে এবং গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা: সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য মো. আমিনুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের গতকাল বিকেল চারটার মধ্যে ও ছাত্রীদের আজ শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলবে। রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন। ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের নেপথ্যে কমিটি: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ পরিচালিত হয়ে আসছিল আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে। পরে গত বছরের ৮ মে কেন্দ্র থেকে সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থকে সভাপতি ও ইমরান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন রাতেই প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছিলেন বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সুমন। তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে সংগঠনটির বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই আছে।
নতুন কমিটি গঠনের পর প্রথম হামলার শিকার সামসুজ্জামান সুমন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ওপর কারা হামলা করেছিল, কেন করেছিল, আজও কিছু জানতে পারিনি। তবে হামলাকারীরা শনাক্ত হলে এত সব হামলার ঘটনা ঘটত না।’
No comments