নিভে গেল কৃষকের আশার আলো
সুমন দাশ পিতার একমাত্র সন্তান। হাওরপাড়ের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের হরি দাস আর প্রতিভা রানী দাশের অনেক স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলে সুমনকে নিয়ে। একমাত্র ভাই সুমনকে নিয়ে তিন বোনের ছিল আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। বোন কাকলী, পলি আর চম্পা একমাত্র ভাই খুন হওয়ার খবর পেয়ে ক্ষণে ক্ষণে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। শুধু পরিবার নয় আশপাশের লোকজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে হাওরপাড়ের আকাশ-বাতাস। তাদের আশার প্রদীপ নিভে গেছে। পিতা-মাতা, পরিবারের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সহকর্মী, সহযোদ্ধাদের বুলেট। সুমন দাসের মৃত্যু সব স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। ছাত্ররাজনীতির নামে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার সুমন। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন সুমন। এরপর এইচএসসি পাস করেন দিরাই কলেজ থেকে। সুমন দাশ মেধার স্বাক্ষর রাখেন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর সুমন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করলেও ছাত্ররাজনীতির টানে প্রায়ই চলে যেতেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দ্বিধাবিভক্ত শাবি ছাত্রলীগের অঞ্জন গ্রুপের সঙ্গে ছিল তার উঠাবসা। ছাত্রলীগ ছাড়াও আরও কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুমন। ছিলেন জাতীয় যুবজোট সিলেট জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক। নবগঠিত হিন্দু মহাজোটের অঙ্গসংগঠন যুব মহাজোটে সুমনকে অন্তর্ভুক্ত করার পর এই সংগঠনেও তৎপর ছিলেন সুমন। এ ব্যাপারে হিন্দু মহাজোটের বিভাগীয় সম্পাদক রাকেশ রায় বলেন, সুমন অত্যন্ত অমায়িক ছেলে। তার মতো ছেলে আজকাল কমই দেখা যায়। উপকার ছাড়া কারও ক্ষতি করার মানসিকতা তার মধ্যে কোনো দিন দেখিনি। তার বিবেকবোধ, দায়িত্বশীলতা ও সততা অনুসরণীয়। হাওরপাড়ের ছেলে সুমন উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সিলেটে লেখাপড়া করছে এটা এলাকার লোকজনের কাছেও ছিল অনেকটা গর্বের। বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল থেকে শবযাত্রা শুরু হয় গ্রামের বাড়ি দিরাইয়ের উদ্দেশে। নিয়ে যাওয়ার পথে লাশবাহী গাড়ি দাঁড় করতে হয় ঘাটে ঘাটে। এলাকার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ এলাকার মেধাবী ছেলে সুমনের লাশ দেখতে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুমনের লাশবাহী গাড়ি দিরাই অভিমুখে ছিল। যুগান্তরের দিরাই প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান লিটন জানালেন, লাশ বাড়িতে পৌঁছতে অনেক দেরি হবে। কারণ শোকাহত শুভাকাক্সক্ষীরা ঘাটে ঘাটে অপেক্ষায় রয়েছে, সুমনের লাশ শেষ বারের মতো দেখার জন্য। ফলে ঘাটে ঘাটে আটকা পড়ছে লাশবাহী গাড়ি।
No comments