জামিল সাবের মেমোরি by নুসরাত শ্রাবণী
সত্তরোর্ধ্ব জামিল সাহেব রিটায়ার্ড
ব্যাংক অফিসার। দীর্ঘ তিরিশ বছর দাপটের সাথে অ্যাকাউন্ট সেকশনে কাজ করেছেন।
স্মৃতিশক্তি ভীষণ ভালো ছিল। কেউ কোনো দিন তার কাজের ভুল ধরতে পারেনি।
কলিগরা ষড়যন্ত্র করেও পারেনি। এ নিয়ে জামিল সাহেবের মনে খানিকটা অহঙ্কার
বোধ আছে। মাঝে মধ্যে এই নিয়ে আশপাশের মানুষের কথা শোনাতেও ছাড়েন না। এমনকি
তার পঞ্চাশোর্ধ্ব স্ত্রী নাহার বেগমের সাথেও তার লেগে যায়।
কিন্তু এখন বয়স সত্তর। ইদানীং অনেক কিছুই ভুলে যান, কিন্তু মানতে চান না। তার ধারণা স্মৃতিশক্তি আগের মতোই আছে। সবাই তাকে হিংসা করে তো, তাই অপবাদ দেয়। এই তো সেদিন সকালে খবরের কাগজ খুঁজে পাচ্ছেন না, দিলেন এক চিৎকার :
#নাহার বেগম, পত্রিকা কোথায়?
# বারান্দায় তো দিয়ে এলাম, ভালো করে খুঁজে দেখেন।
রুমে এসে দেখলেন পত্রিকা বিছানার ওপর। তার মেজাজ সপ্তমে উঠল।
#মূর্খ মহিলা! হাজারবার বলছি কাজ ঠিকমতো করবা, ঠিকমতো বলবা। রাখো এক জায়গায় বলো এক জায়গায়। আমার চেয়ে বয়স কি বেশি হয়েছে তোমার?
নাহার বেগম রুমে এসে দেখলেন খালি চায়ের কাপ আর পত্রিকা দুটোই শোয়ার ঘরে। তখনই বুঝে গেলেন ঘটনাটা। জামিল সাহেব চায়ের কাপ হাতে পত্রিকা পড়তে পড়তে এই ঘরে এসে দুইটাই রেখে গেছেন। তারপর আবার রুম থেকে বেরিয়ে পত্রিকার কথা ভুলে গেছেন। কিন্তু এ কথা এখন জামিল সাহেবকে বলা যাবে না। তাহলে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠবেন। বলবেন,
#অ্যাঁ, এত বড় কথা! মূর্খ মহিলা!
তাই নাহার বেগম চুপ করে থাকেন। জামিল সাহেবের বড় মেয়ে সুমি এসেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে। বাবার এই অবস্থা দেখে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। জামিল সাহেব তো যাবেনই না। যা হোক, বহু কষ্টে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার চেকআপ করে বললেন, তেমন কিছু না, বয়স হয়েছে তো। একটু লেখালেখি করবেন। যে বিষয়গুলো ভুলে যান সেগুলো লিখে রাখবেন। ঠিক হয়ে যাবে।
#অ্যাঁ! এত্ত সাহস তোমার! সে দিন পাস করে বের হয়েছ আর আসছ আমাকে জ্ঞান দিতে! আমার মেমোরি এখনো তোমার চেয়ে ভালো আছে।
#আঙ্কেল, আপনি একটু শান্ত হোন...
#আমি কি হবো না হবো সেটা তোমার বলা লাগবে না... জামিল সাহেব তেড়ে ওঠেন।
#বাবা চলো তো, চলো এখান থেকে। সুমি অনেক কষ্টে তার বাবাকে সরিয়ে নিয়ে আসে।
বাসায় ফিরে মেয়ের ওপরে আরেক দফা আগুন ঝাড়লেন, তুইÑ তুই প্রমাণ করতে চাস যে তোর বাপের মেমোরি নষ্ট হয়ে গেছে?
#বাবা প্লিজ, একটু শান্ত হও তো। প্লিজ শান্ত হও, আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।
#হুম, চায়ের সাথে টোস্ট আনিস।
রান্নাঘরে বাসনকোসন নাড়াচাড়ার শব্দ শোনা গেল। জামিল সাহেব আর নাহার বেগম চুপচাপ বারান্দায় বসে আছেন। কেউ কারো সাথে কথা বলছেন না।
কিছুক্ষণ পর সুমি এক প্লেট মুড়ি-চানাচুর নিয়ে বারান্দায় এসে তার বাবাকে বলল, নাও তোমার মুড়িমাখা। নাহার বেগম আশ্চর্য হয়ে বললেন- সুমি, তোরও কি তোর বাবার মতো...
গিন্নির কথা শেষ করার আগেই জামিল সাহেব চিৎকার করে উঠলেন, আমার মেমোরি নষ্ট হয়েছে না? তুই এইটা কী আনছিস? আমি কি মুড়িমাখা আনতে বলছি? আমি তো তোকে পাউরুটি আর জেলি আনতে বললাম।
কিন্তু এখন বয়স সত্তর। ইদানীং অনেক কিছুই ভুলে যান, কিন্তু মানতে চান না। তার ধারণা স্মৃতিশক্তি আগের মতোই আছে। সবাই তাকে হিংসা করে তো, তাই অপবাদ দেয়। এই তো সেদিন সকালে খবরের কাগজ খুঁজে পাচ্ছেন না, দিলেন এক চিৎকার :
#নাহার বেগম, পত্রিকা কোথায়?
# বারান্দায় তো দিয়ে এলাম, ভালো করে খুঁজে দেখেন।
রুমে এসে দেখলেন পত্রিকা বিছানার ওপর। তার মেজাজ সপ্তমে উঠল।
#মূর্খ মহিলা! হাজারবার বলছি কাজ ঠিকমতো করবা, ঠিকমতো বলবা। রাখো এক জায়গায় বলো এক জায়গায়। আমার চেয়ে বয়স কি বেশি হয়েছে তোমার?
নাহার বেগম রুমে এসে দেখলেন খালি চায়ের কাপ আর পত্রিকা দুটোই শোয়ার ঘরে। তখনই বুঝে গেলেন ঘটনাটা। জামিল সাহেব চায়ের কাপ হাতে পত্রিকা পড়তে পড়তে এই ঘরে এসে দুইটাই রেখে গেছেন। তারপর আবার রুম থেকে বেরিয়ে পত্রিকার কথা ভুলে গেছেন। কিন্তু এ কথা এখন জামিল সাহেবকে বলা যাবে না। তাহলে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠবেন। বলবেন,
#অ্যাঁ, এত বড় কথা! মূর্খ মহিলা!
তাই নাহার বেগম চুপ করে থাকেন। জামিল সাহেবের বড় মেয়ে সুমি এসেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে। বাবার এই অবস্থা দেখে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। জামিল সাহেব তো যাবেনই না। যা হোক, বহু কষ্টে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার চেকআপ করে বললেন, তেমন কিছু না, বয়স হয়েছে তো। একটু লেখালেখি করবেন। যে বিষয়গুলো ভুলে যান সেগুলো লিখে রাখবেন। ঠিক হয়ে যাবে।
#অ্যাঁ! এত্ত সাহস তোমার! সে দিন পাস করে বের হয়েছ আর আসছ আমাকে জ্ঞান দিতে! আমার মেমোরি এখনো তোমার চেয়ে ভালো আছে।
#আঙ্কেল, আপনি একটু শান্ত হোন...
#আমি কি হবো না হবো সেটা তোমার বলা লাগবে না... জামিল সাহেব তেড়ে ওঠেন।
#বাবা চলো তো, চলো এখান থেকে। সুমি অনেক কষ্টে তার বাবাকে সরিয়ে নিয়ে আসে।
বাসায় ফিরে মেয়ের ওপরে আরেক দফা আগুন ঝাড়লেন, তুইÑ তুই প্রমাণ করতে চাস যে তোর বাপের মেমোরি নষ্ট হয়ে গেছে?
#বাবা প্লিজ, একটু শান্ত হও তো। প্লিজ শান্ত হও, আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি।
#হুম, চায়ের সাথে টোস্ট আনিস।
রান্নাঘরে বাসনকোসন নাড়াচাড়ার শব্দ শোনা গেল। জামিল সাহেব আর নাহার বেগম চুপচাপ বারান্দায় বসে আছেন। কেউ কারো সাথে কথা বলছেন না।
কিছুক্ষণ পর সুমি এক প্লেট মুড়ি-চানাচুর নিয়ে বারান্দায় এসে তার বাবাকে বলল, নাও তোমার মুড়িমাখা। নাহার বেগম আশ্চর্য হয়ে বললেন- সুমি, তোরও কি তোর বাবার মতো...
গিন্নির কথা শেষ করার আগেই জামিল সাহেব চিৎকার করে উঠলেন, আমার মেমোরি নষ্ট হয়েছে না? তুই এইটা কী আনছিস? আমি কি মুড়িমাখা আনতে বলছি? আমি তো তোকে পাউরুটি আর জেলি আনতে বললাম।
No comments