মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় রেকর্ড ভোট
সাতসকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছিলেন। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে আবেদন জানান ভোট দিতে এগিয়ে আসতে। রেকর্ড ভোট পড়ুক, এই তাঁর আশা। সেই রেকর্ড হয়েও গেল। ২০০৯ সালে মহারাষ্ট্রে ভোট পড়েছিল ৬০ শতাংশের সামান্য কম, হরিয়ানায় ৭২ শতাংশের কিছু বেশি। গতকাল বুধবার এই দুই রাজ্যেই ভোট শেষ পর্যন্ত আগেরবারকে টপকে গেল। ভোট পড়ার হার আগেরবারের তুলনায় বেশি হবে না কম, সেই আগ্রহ ছাপিয়ে অবশ্য বড় হয়ে ওঠে বিজেপি সরকার গঠনের কতটা কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে সেই প্রশ্ন। সব সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, দুই রাজ্যে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বিজেপির। সেই লক্ষ্য পূরণে বিজেপি তার প্রচারে নরেন্দ্র মোদিকেই একমাত্র মুখ করেছিল। গতকাল ভোটের দিন রাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতেও বিজেপির পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনে সেই মোদিরই মুখ। জনতাকে অনুরোধ, একটা সৎ ও স্থায়ী সরকার গড়তে তাঁরা যেন বিজেপিকে ভোট দেন। সিকি শতকের বন্ধুতা আচমকাই শত্রুতায় পরিণত হলে যা হয়, এবারের মহারাষ্ট্র নির্বাচনে তা বড়ই প্রকট। ভোটের দিন শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’য় দলীয় প্রধান উদ্ধব ঠাকরের উদ্ধৃতি ক্ষিপ্ত করে তোলে বিজেপির নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অতীত পেশার উল্লেখ করে উদ্ধব বলেছেন, ‘একজন চাওয়ালা যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তাহলে আমিও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারি।’ ভোটের দিন সকালে প্রকাশিত এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়ে যায় শালীন-অশালীন বিতর্ক। বিজেপির নেতা দলের সাবেক সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি এই মন্তব্যকে ‘অশালীন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেককে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু কেউ আমাদের অশ্রদ্ধা করলে তা সহ্য করব না।’ মহারাষ্ট্র বিধানসভার লড়াইয়ে মূল দেখার বিষয় বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে কোন দল বেশি আসন পায় এবং ২৮৮ আসনবিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভায় কারা ১৪৫-এর কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। ৯০ আসনের হরিয়ানাতেও কোনো দলেরই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সেখানেও লড়াই প্রধানত বিজেপির সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় লোকদলের। ১০ বছর ধরে এই রাজ্যে কংগ্রেসের শাসন চলছে। ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আসীন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা। এই ধারাবাহিকতায় এবার ছেদ পড়তে চলেছে—এটাই জনপ্রিয় বিশ্বাস। কিন্তু বিজেপি না লোকদল কারা থাকবে এক নম্বরে, সেটাই দ্রষ্টব্য।
হরিয়ানায় সরকার গঠন করতে দরকার ৪৬। জরিপ অনুযায়ী কোনো দলই ৩০-৩৫-এর বেশি পাচ্ছে না। যদিও ভারতীয় লোকদলের ওমপ্রকাশ চৌতালা ঘোষণা করেছেন, তিহার জেলে বসেই তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্বের শপথ নেবেন। বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহও আশাবাদী। দিল্লিতে তিনি বলেছেন, দুই রাজ্যেই একার ক্ষমতায় সরকার গড়বে বিজেপি। আর কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা ভোট দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে খেলতে বলেছেন, কোনো সন্দেহ নেই, তৃতীয়বারও সরকার গড়বে কংগ্রেস। বিজেপির দৃঢ় বিশ্বাস, এবারের ভোটেও মোদির নামেই তারা বাজিমাত করবে। কিন্তু মুশকিলটা হলো জোট না থাকা। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে। আর, সেখান থেকেই বড় হয়ে উঠছে পনেরো বছরের ধারাবাহিকতায় ছেদ টেনে ক্ষমতা দখল করতে বিজেপি কার সঙ্গে হাত মেলাবে সে প্রশ্নটি। শিব সেনার সঙ্গে শত্রুতা এতটাই বেড়ে গেছে যে, আবার তাদের সঙ্গে জোট বাঁধা (যদিও নিজেদের শর্তে) হয়তো এই মুহূর্তে অসম্ভব। সেই ক্ষেত্রে জনপ্রিয় বিশ্বাস, বিজেপি শেষ পর্যন্ত এনসিপিকে বেছে নিতে পারে। এরই পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে, মারাঠা জাত্যাভিমানে আঘাত লাগা শিব সেনা ও মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা। দুই দল শেষ পর্যন্ত একজোট হলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিও অন্য খাতে বইতে পারে।
No comments