আমরাও পারি by রিজবাহ উদ্দিন রিজবী
আমরা যদি কখনো মুক্ত জ্ঞানচর্চা করতে চাই তবে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই পড়া ছাড়া মুক্ত জ্ঞানচর্চা কখনো সম্ভব নয়। আর আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা যে জ্ঞানার্জন করতেছি তা দিয়ে কখনো উন্নত সভ্যতার ধারে কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। আর গ্রন্থগত এই বিদ্যার দৌড় চাকরি পর্যন্ত। তা আমাদের এনে দিতে পারে না সভ্যতা, আমাদের মাঝে সৃষ্টি করতে ব্যর্থ এক মননশীল পরিবেশ। এই গ্রন্থগত বিদ্যার কাছে আমরা বন্দী একমাত্র জীবিকার নিমিত্তে। তা আমাদের সৃজনীলতাকে বদ্ধ দ্বারে রুদ্ধ করে রাখে। বই তো পড়তেই হবে। মহিলা গণিতবিদ হাইপেশিয়া সমাজের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে নিজেকে উৎসর্গ করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সসম্মানে আজো গণিতবেত্তাদের কাছে স্মরণীয়। এমনকি তাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য চাঁদের একটি অংশের নামকরণ করা হয়েছে হাইপেশিয়া। আমাদের কার্ল মার্কস যে একাধারে দার্শনিক, গণিতবিদ, অর্থনীতিবিদ। তিনি বই পড়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই তার হাতে সৃষ্টি হয়েছে অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক উধং পধঢ়রঃধষ-এর মতো একটি বই যা সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে নাড়া দিয়েছিল। কার্ল মার্কস বই পড়ার জন্য নির্যাতিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে। চরম দরিদ্র ভোগ করতে হয়েছিল তাকে। কারণ সে সূর্য ওঠার সাথে সাথেই লাইব্রেরিতে চলে যেতেন আর ফিরতেন সন্ধ্যায়। ঘরে তো তুমুল কাণ্ড। ছেলেমেয়েদের আহাজারি। চাল নেই, তরকারি নেই।
হাতের কাছে যা আছে বিক্রি করে চাল, ডাল কিনছেন। এভাবে কত দিন পারা যায়? শেষ পর্যায়ে চেনা-জানাদের কাছে ভিক্ষা মাগতেন। কিন্তু তবুও বই পড়া থেকে বিরত থাকেননি। আমাদের অন্যতম গণিতবিদ রামানুজন যে, ম্যাট্রিক পাস করেননি। কিন্তু সেই পেয়েছিল ‘সিনোপসিস অব পিওর ম্যাথম্যাটিক্স’ নামে একটি বইয়ের সন্ধান যার থেকেই খুঁজে পেলেন বই পড়ার প্রেরণা। বই পড়েছিল বলেই তিনি আজ আমাদের শ্রেষ্ঠ ১০ জন গণিতবিদের একজন। মাইকেল ফ্যারাডেকে কে না চিনি!!! আনুষ্ঠানিক পড়ালেখা তো দূরের কথা, কাজ করত এক ছাপাখানায়। বিভিন্ন লেখক বই দিতেন ছাপানোর জন্য। ফ্যারাডে সাহেব তা পড়ে পড়ে হয়ে উঠলেন একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী।
বই আমাদের কী-ই বা দেয় না? দেখা যাচ্ছে বই আমাদের সব কিছুই দেয়। সভ্যতা, মননশীলতা। আমাদের আরো দেয় যশ-অর্থ। আরো কত কী? তাহলে কেন আমরা বই থেকে দূরে থাকি? কেন নিজেকে বিরত রাখি সুন্দর থেকে? কথায় বলে- ‘মানুষ সুন্দরের পূজারী’। কিন্তু কই? বইয়ের মতো সুন্দর তো আমি কিছু দেখি না। অথচ মানুষ কত মাইল দূরে থাকে এই সুন্দর থেকে। যেন পারমাণবিক বোমা! ফাটলেই মরে যাবে। আহা! বই না পড়ে পড়ে তারা যে নিজেরাই এক একটা পারমাণবিক বোমাতে পরিণত হয়েছে তা তারা জানে না। কারণ হাতির শরীর নাকি হাতি দেখে না। তাদের বিস্ফোরণে আজ কলুষিত দেশ। কলুষিত আমাদের সভ্যতা। আজ ম্রিয়মানে আমাদের সংস্কৃতি। বিপর্যস্ত আমাদের চিন্তা-চেতনা। আমরা না পারছি এগোতে, না পারছি নিজেদের বদলাতে। এখন আমাদের অবস্থা খুব সঙ্কটাপন্ন। তার একমাত্র কারণ আমরা বই পড়া থেকে বিরত, মুক্ত জ্ঞানচর্চা থেকে পিছিয়ে। আমাদের এসব কাটিয়ে উঠতে বই পড়া ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ নেই। বই-ই আমাদের উত্তরণের একমাত্র মাধ্যম।
অনেকেই বলে বই পড়ার সময় পায় না। সত্যি তাই! বই পড়ার সময় কেমনেই বা পাবে? আমাদের যে বাজারে বাজারে ঘুরতে হয়, বালিকা বিদ্যালয়ের গেট পাহারা দিতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশি দরদি। একটু বেশি বন্ধুভাবাপন্ন। রাত-দিন ফেসবুকে বন্ধুদের সময় দিতে হয়। তো এখানে আমাদের বই পড়ার সময় কোথায়? আর মেয়েরা? হঠাৎই বলে সমাজ তাদের বাধা দেয়। আমি তো আগেই বলেছি হাইপেশিয়ার কথা। এ রকম আরো আছে সোফিয়া কাভালভসকাইয়া, রোকেয়া, ডরোথি হজকিন। যারা মানেনি সমাজের ফালতু নিয়ম। যারা কাটায়নি সময় বর্তমান মেয়েদের মতো শপিংয়ে, মোবাইলে কথা বলে বলে, অপ্রয়োজনে পার্কে ঘুরে ঘুরে। আমরা বয় ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে পারি, কিন্তু কেন বই পড়ার সময় দিতে পারি না? তারা কি আমাকে মাদামকুরি, হাইপেশিয়ার মতো যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে? কোনো এক মনীষী বলেছেনÑ ‘মদ, রুটি পুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু বই অনন্ত যৌবনা’। পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সব চাওয়া-পাওয়াই হোক বই, বই, বই, বই আর বই। আচ্ছা আমরা কী কখনো সপ্তাহে দুটো করে বই কেনার একটা সংস্কৃতি গড়তে পারব না?
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার
হাতের কাছে যা আছে বিক্রি করে চাল, ডাল কিনছেন। এভাবে কত দিন পারা যায়? শেষ পর্যায়ে চেনা-জানাদের কাছে ভিক্ষা মাগতেন। কিন্তু তবুও বই পড়া থেকে বিরত থাকেননি। আমাদের অন্যতম গণিতবিদ রামানুজন যে, ম্যাট্রিক পাস করেননি। কিন্তু সেই পেয়েছিল ‘সিনোপসিস অব পিওর ম্যাথম্যাটিক্স’ নামে একটি বইয়ের সন্ধান যার থেকেই খুঁজে পেলেন বই পড়ার প্রেরণা। বই পড়েছিল বলেই তিনি আজ আমাদের শ্রেষ্ঠ ১০ জন গণিতবিদের একজন। মাইকেল ফ্যারাডেকে কে না চিনি!!! আনুষ্ঠানিক পড়ালেখা তো দূরের কথা, কাজ করত এক ছাপাখানায়। বিভিন্ন লেখক বই দিতেন ছাপানোর জন্য। ফ্যারাডে সাহেব তা পড়ে পড়ে হয়ে উঠলেন একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী।
বই আমাদের কী-ই বা দেয় না? দেখা যাচ্ছে বই আমাদের সব কিছুই দেয়। সভ্যতা, মননশীলতা। আমাদের আরো দেয় যশ-অর্থ। আরো কত কী? তাহলে কেন আমরা বই থেকে দূরে থাকি? কেন নিজেকে বিরত রাখি সুন্দর থেকে? কথায় বলে- ‘মানুষ সুন্দরের পূজারী’। কিন্তু কই? বইয়ের মতো সুন্দর তো আমি কিছু দেখি না। অথচ মানুষ কত মাইল দূরে থাকে এই সুন্দর থেকে। যেন পারমাণবিক বোমা! ফাটলেই মরে যাবে। আহা! বই না পড়ে পড়ে তারা যে নিজেরাই এক একটা পারমাণবিক বোমাতে পরিণত হয়েছে তা তারা জানে না। কারণ হাতির শরীর নাকি হাতি দেখে না। তাদের বিস্ফোরণে আজ কলুষিত দেশ। কলুষিত আমাদের সভ্যতা। আজ ম্রিয়মানে আমাদের সংস্কৃতি। বিপর্যস্ত আমাদের চিন্তা-চেতনা। আমরা না পারছি এগোতে, না পারছি নিজেদের বদলাতে। এখন আমাদের অবস্থা খুব সঙ্কটাপন্ন। তার একমাত্র কারণ আমরা বই পড়া থেকে বিরত, মুক্ত জ্ঞানচর্চা থেকে পিছিয়ে। আমাদের এসব কাটিয়ে উঠতে বই পড়া ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ নেই। বই-ই আমাদের উত্তরণের একমাত্র মাধ্যম।
অনেকেই বলে বই পড়ার সময় পায় না। সত্যি তাই! বই পড়ার সময় কেমনেই বা পাবে? আমাদের যে বাজারে বাজারে ঘুরতে হয়, বালিকা বিদ্যালয়ের গেট পাহারা দিতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশি দরদি। একটু বেশি বন্ধুভাবাপন্ন। রাত-দিন ফেসবুকে বন্ধুদের সময় দিতে হয়। তো এখানে আমাদের বই পড়ার সময় কোথায়? আর মেয়েরা? হঠাৎই বলে সমাজ তাদের বাধা দেয়। আমি তো আগেই বলেছি হাইপেশিয়ার কথা। এ রকম আরো আছে সোফিয়া কাভালভসকাইয়া, রোকেয়া, ডরোথি হজকিন। যারা মানেনি সমাজের ফালতু নিয়ম। যারা কাটায়নি সময় বর্তমান মেয়েদের মতো শপিংয়ে, মোবাইলে কথা বলে বলে, অপ্রয়োজনে পার্কে ঘুরে ঘুরে। আমরা বয় ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে পারি, কিন্তু কেন বই পড়ার সময় দিতে পারি না? তারা কি আমাকে মাদামকুরি, হাইপেশিয়ার মতো যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে? কোনো এক মনীষী বলেছেনÑ ‘মদ, রুটি পুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু বই অনন্ত যৌবনা’। পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সব চাওয়া-পাওয়াই হোক বই, বই, বই, বই আর বই। আচ্ছা আমরা কী কখনো সপ্তাহে দুটো করে বই কেনার একটা সংস্কৃতি গড়তে পারব না?
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার
No comments