সমাজে ঈর্ষা ও পরনিন্দা প্রসঙ্গে by এ কে এম শামছুল হক রেনু
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর আবির্ভাবের আগে আরবের মহাদুর্যোগ ও ঘোর অমানিশার যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ, অন্ধতার যুগ, অজ্ঞতার যুগ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেই সময় কন্যাসন্তান হলে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। রাসূল সা:-এর ওফাতের পর ইসলাম ধর্মের ওপর নেমে আসে চরম বিপত্তি, বিদ্রোহ, বিপর্যয়। এ প্রসঙ্গে প্রফেসর পিকে হিট্টি History of Arab-এর এক জায়গায় বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, Had there been no Abu Baker (R.) Islam would be melted way by compromise with the Bedween tribes। অর্থাৎ হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওফাতের পর হজরত আবু বকর রা: না থাকলে ইসলাম বেদুইনদের সাথে আপস করে ধ্বংস হয়ে যেত। সে সময় এর পেছনে ছিল গিবত, হিংসা, মুনাফেকির বিরাট ভূমিকা ছিল। সামনে চাটুকারিতা ও পেছনে মুনাফিকতা। এ অবস্থা রাজনীতি, সমাজ, প্রশাসনসহ সব জায়গায় দাবানলের আকার ধারণ করে রয়েছে। নিয়মনীতি, আদর্শের বালাই নেই। স্বার্থই তাদের নীতি ও আদর্শ। এ প্রবণতা সব সময় মতাসীন পরিমণ্ডলেই ব্যাপক আকার ও রূপ পরিগ্রহ করে থাকে।
মুনাফিক ও বেঈমানদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে অপো করেছে চরম ও কঠিন শাস্তি। তবে গিবতখোর, পরনিন্দুক ও হিংসুকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা আপন মৃত ভাইয়ের পচা মাংস চিবিয়ে খায় এবং তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বেহেস্তের দরজায় সিলগালা মেরে দিয়েছেন। পৃথিবীর কোনো প্রাণী তাদের স্বজাতির মাংস খায় না। ‘ইতিহাসের জনক’ হেরোডোটাস লিখেছেন, প্রাচীন বিশ্বের অনেক জায়গায় কারো বাবা-মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়েরা মহাধুমধামে তাদের বাবা-মায়ের মাংস রান্না করে খেয়ে ফেলত। গিবতযেমনি গিবতখোরদের সম্পর্কে আপন মৃত ভাইয়ের পচা মাংস খাওয়ার উল্লেখ রয়েছে সহি হাদিসে। হিরো ডেটাস বলেছেন, মানুষের রুচিবোধ নিয়ে যেমন ভালো ভালো উপমা রয়েছে, তেমনি নিচুতা নিয়েও নিকৃষ্টতম উদাহরণ, যার অন্ত নেই।
উপমাটি আরব্য উপন্যাস থেকে সংগৃহীত। এক মহিলা তার জীবদ্দশাতে গিবত বলে অনেক মানুষের তি করেছিল। সাজানো গোছানো সংস্কার থেকে আরম্ভ করে চাকরির বেলায়ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে দৃষ্টিতে এমন কিছু মিথ্যা ও সাজানো অপলাপ তুলে ধরত, যার ফলে অনেক ন্যায় নিষ্ঠাবান কর্মজীবীদের চাকরি হারাতে হতো। মহিলা বৃদ্ধ হওয়ার পর তার কাছে কেউ যেত না, এমনকি সেও বার্ধক্যের কারণে কোথায়ও যেতে পারত না। একদিন মহিলাকে রাস্তার চার মাথার মোড়ে রেখে আসা হলো। সেখানেও পথচারীদের ডেকে এনে চিরাচারিত গিবতই করত। বৃদ্ধ বয়সেও তার স্বভাবের পরিবর্তন না হওয়ায়, একদিন তার হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়া হলো। ডুবের যাওয়ার আগ মুহূর্তে সে চীৎকার করে বলছে হে দয়ালু আল্লাহ তুমি আমাকে রা করো। এ দৃশ্য দেখে তাকে নদী থেকে তোলা হলো এবং বাকি জীবনে গিবত করবে না বলে প্রতিশ্র“তি করলেও সে কিছু দিন পর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় গিয়ে গিবতের পথই অনুস্মরণ করল। পরশ্রীকাতরতা, হিংসা ও গিবতের বেড়াজালে নিজের থেকে এমন একটি ঘটনার কিঞ্চিত উল্লেখ করা হলো। এক-এগারোর সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারমান, সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, দুর্নীতি প্রতিরোধে সারা দেশের প্রায় জেলা উপজেলায় সেমিনার ও আলোচনা সভা করতে গিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণেও একটি সভার আয়োজন করেন। সভায় জেলা বারের সভাপতি এবং উপস্থিত সুধীজনদের মধ্যে হতে তার (দুদক চেয়ারম্যান) ইচ্ছায় একজনকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে বলে, তিনি আসার পাঁচ-ছয় দিন আগেই শোনা যাচ্ছিল। আমার একান্ত পরিচিত সরকারি-বেসরকারিপর্যায়ের কয়েকজন শুভার্থী বললেন, অনুষ্ঠানে আপনার বক্তব্য দিতে হবে। বলেছিলাম, আমার বক্তব্য দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুনেছি, বক্তাদের ব্যাপারে একটি নীতিমালা রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর আল্লাহ মেহেরবান, দুদক চেয়ারম্যানের আহ্বানেই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলাম। পরে জানতে পালাম পরশ্রীকাতর, পরনিন্দুক ও গিবত সাম্রাজ্যের এক-দুইজন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাইলেন, তাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ লোকদের বাদ দিয়ে আমাকে কিভাবে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হলো। পরে শুনেছি, দু’জনেই নাকি বলেছিলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। দুদক চেয়ারম্যান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন। আল্লাহর রহমত থাকলে গিবত বলে, কাউকেও খাটো করা যায় না। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসের ঘটনা, তখন দেশে সামরিক শাসন। ঢাকার হোটেল শেরাটনে কনফারেন্স রুমে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, মেজর জেনারেল আবদুর রহমান, প্রথিতযশা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে ‘অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ ঘটে। সেখানে বক্তব্যে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, ‘দেশের ভালো মানুষগুলো আজ বড় অসহায়, তবে খারাপ ও দুর্নীতিবাজরা মাথার ওপর চেপে বসেছে।’ মেজর জেনারেল আবদুর রহমান বলেছিলেন, ‘তোষামোদ ও অতি প্রশংসাকারী যেমন জাতির ক্যান্সার, তেমনি সমাজের গিবতখোর, পরশ্রীকাতর ও নিন্দুকেরাও দুর্নীতিবাজদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ এ দু’টি শ্রেণী পেশার লোকদের ব্যাপারে পদপে নেয়াটাও অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠারই নামান্তর। সম্ভাবনাময় ও উন্নয়নশীল স্বাধীন এ দেশটি পিছে থাকার এটিও কারণ বলা চলে।
মুনাফিক ও বেঈমানদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে অপো করেছে চরম ও কঠিন শাস্তি। তবে গিবতখোর, পরনিন্দুক ও হিংসুকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা আপন মৃত ভাইয়ের পচা মাংস চিবিয়ে খায় এবং তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বেহেস্তের দরজায় সিলগালা মেরে দিয়েছেন। পৃথিবীর কোনো প্রাণী তাদের স্বজাতির মাংস খায় না। ‘ইতিহাসের জনক’ হেরোডোটাস লিখেছেন, প্রাচীন বিশ্বের অনেক জায়গায় কারো বাবা-মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়েরা মহাধুমধামে তাদের বাবা-মায়ের মাংস রান্না করে খেয়ে ফেলত। গিবতযেমনি গিবতখোরদের সম্পর্কে আপন মৃত ভাইয়ের পচা মাংস খাওয়ার উল্লেখ রয়েছে সহি হাদিসে। হিরো ডেটাস বলেছেন, মানুষের রুচিবোধ নিয়ে যেমন ভালো ভালো উপমা রয়েছে, তেমনি নিচুতা নিয়েও নিকৃষ্টতম উদাহরণ, যার অন্ত নেই।
উপমাটি আরব্য উপন্যাস থেকে সংগৃহীত। এক মহিলা তার জীবদ্দশাতে গিবত বলে অনেক মানুষের তি করেছিল। সাজানো গোছানো সংস্কার থেকে আরম্ভ করে চাকরির বেলায়ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে দৃষ্টিতে এমন কিছু মিথ্যা ও সাজানো অপলাপ তুলে ধরত, যার ফলে অনেক ন্যায় নিষ্ঠাবান কর্মজীবীদের চাকরি হারাতে হতো। মহিলা বৃদ্ধ হওয়ার পর তার কাছে কেউ যেত না, এমনকি সেও বার্ধক্যের কারণে কোথায়ও যেতে পারত না। একদিন মহিলাকে রাস্তার চার মাথার মোড়ে রেখে আসা হলো। সেখানেও পথচারীদের ডেকে এনে চিরাচারিত গিবতই করত। বৃদ্ধ বয়সেও তার স্বভাবের পরিবর্তন না হওয়ায়, একদিন তার হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়া হলো। ডুবের যাওয়ার আগ মুহূর্তে সে চীৎকার করে বলছে হে দয়ালু আল্লাহ তুমি আমাকে রা করো। এ দৃশ্য দেখে তাকে নদী থেকে তোলা হলো এবং বাকি জীবনে গিবত করবে না বলে প্রতিশ্র“তি করলেও সে কিছু দিন পর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় গিয়ে গিবতের পথই অনুস্মরণ করল। পরশ্রীকাতরতা, হিংসা ও গিবতের বেড়াজালে নিজের থেকে এমন একটি ঘটনার কিঞ্চিত উল্লেখ করা হলো। এক-এগারোর সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারমান, সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, দুর্নীতি প্রতিরোধে সারা দেশের প্রায় জেলা উপজেলায় সেমিনার ও আলোচনা সভা করতে গিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণেও একটি সভার আয়োজন করেন। সভায় জেলা বারের সভাপতি এবং উপস্থিত সুধীজনদের মধ্যে হতে তার (দুদক চেয়ারম্যান) ইচ্ছায় একজনকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে বলে, তিনি আসার পাঁচ-ছয় দিন আগেই শোনা যাচ্ছিল। আমার একান্ত পরিচিত সরকারি-বেসরকারিপর্যায়ের কয়েকজন শুভার্থী বললেন, অনুষ্ঠানে আপনার বক্তব্য দিতে হবে। বলেছিলাম, আমার বক্তব্য দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুনেছি, বক্তাদের ব্যাপারে একটি নীতিমালা রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর আল্লাহ মেহেরবান, দুদক চেয়ারম্যানের আহ্বানেই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলাম। পরে জানতে পালাম পরশ্রীকাতর, পরনিন্দুক ও গিবত সাম্রাজ্যের এক-দুইজন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাইলেন, তাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ লোকদের বাদ দিয়ে আমাকে কিভাবে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হলো। পরে শুনেছি, দু’জনেই নাকি বলেছিলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। দুদক চেয়ারম্যান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন। আল্লাহর রহমত থাকলে গিবত বলে, কাউকেও খাটো করা যায় না। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসের ঘটনা, তখন দেশে সামরিক শাসন। ঢাকার হোটেল শেরাটনে কনফারেন্স রুমে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, মেজর জেনারেল আবদুর রহমান, প্রথিতযশা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে ‘অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ ঘটে। সেখানে বক্তব্যে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, ‘দেশের ভালো মানুষগুলো আজ বড় অসহায়, তবে খারাপ ও দুর্নীতিবাজরা মাথার ওপর চেপে বসেছে।’ মেজর জেনারেল আবদুর রহমান বলেছিলেন, ‘তোষামোদ ও অতি প্রশংসাকারী যেমন জাতির ক্যান্সার, তেমনি সমাজের গিবতখোর, পরশ্রীকাতর ও নিন্দুকেরাও দুর্নীতিবাজদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ এ দু’টি শ্রেণী পেশার লোকদের ব্যাপারে পদপে নেয়াটাও অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠারই নামান্তর। সম্ভাবনাময় ও উন্নয়নশীল স্বাধীন এ দেশটি পিছে থাকার এটিও কারণ বলা চলে।
No comments