বিশ্ব খাদ্য দিবস- ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় by হোসে গ্রাজিয়ানো দা সিলভা
ক্ষুধার বিরুদ্ধে অভিযানে সারা বিশ্ব এখন অগ্রগামী, তার পরও বিশ্বের ৮০ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৩টি দেশ সহস্রাব্দ উন্নয়নের আওতায় ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে।ÿ ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সবার অংশগ্রহণ ও পারিবারিক কৃষিব্যবস্থার অবদানের ফলে তা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বজুড়ে পারিবারিক কৃষি নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আর্থসামাজিক, পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, যা উদ্ভাবনের মাধ্যমে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
পারিবারিক কৃষির এ গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘ ২০১৪ সালকে ‘আন্তর্জাতিক পারিবারিক কৃষি বছর’ হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস পৃথিবীর ধারাবাহিক খাদ্যনিরাপত্তা, স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পারিবারিক কৃষির অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এফএওর বার্ষিক ‘কৃষি ও খাদ্য অবস্থা’ দলিলে পারিবারিক কৃষির যথার্থতা প্রণীত হয়েছে। বিশ্বের ৫৭ কোটি খামারের মধ্যে ৫০ কোটি খামার পরিবারকেন্দ্রিক। তারাই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষাকারী। পারিবারিক কৃষি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। মূল্যের দিক বিবেচনায় পারিবারিক কৃষি ৮০ ভাগের বেশি খাদ্যের জোগান দেয় এবং তাজা ফল, শাকসবজি, দুধ ও পুষ্টিকর পণ্যের প্রধান উৎপাদক। বাংলাদেশের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ৪৮ শতাংশ কর্মসংস্থান কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যেখানে গড়ে জমির পরিমাণ ১ হেক্টরের বেশি নয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং খাদ্য গ্রহণে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। কৃষি উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের তুলনায় বর্তমানে বাড়ন্ত ও শহরের জনগণকে স্বল্পসংখ্যক খামারের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কৃষি ও খাদ্যপণ্যের বাজারের স্থানগুলো বিশ্বায়ন হচ্ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য শুধু চারটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পারিবারিক কৃষির এসব পরিবর্তনে সাড়া দেওয়ার এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এবং তা ঘটানোর চাবিকাঠি হচ্ছে উদ্ভাবন—পারিবারিক কৃষকের দরকার তাদের পদ্ধতির উদ্ভাবন, সরকারের প্রয়োজন পারিবারিক কৃষি বাস্তবায়নে নীতি উদ্ভাবন, উৎপাদনকারী সংগঠনের প্রয়োজন খামারির চাহিদা মোতাবেক উদ্ভাবন, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সংস্থার প্রয়োজন কৃষকের কাছে পৌঁছানোর প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন।
পরিবারকেন্দ্রিক প্রজন্মের সবার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবন হওয়া প্রয়োজন। যেখানে জ্ঞানের ব্যবহার ও আদানপ্রদান করে এসব উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া ও স্বকীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয় এবং এর লাভ ও ঝুঁকি মাথায় রেখে স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। পারিবারিক কৃষিব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু নিজস্ব প্রয়োজন ছাড়াও যাঁরা কৃষিতে জড়িত নন এবং যাঁরা শহরে বাস করেন, তাঁদের প্রয়োজনেও পণ্য ব্যবহার করা সম্ভব হয়। পারিবারিক কৃষির মাধ্যমে আয় করে এবং সে আয় দ্বারা কৃষি উপকরণ যেমন সার ও বীজ কেনা ছাড়াও সন্তানদের লেখাপড়া ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। পারিবারিক কৃষিব্যবস্থা শক্তিশালী হলে সবার জন্য তা মঙ্গলজনক। একদিকে খাদ্যনিরাপত্তার লক্ষ্যে অধিক খাদ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্রয়ের জন্য খাদ্য বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর অর্থ হচ্ছে স্থানীয় লোকাচার ও মূল্যবোধসম্পন্ন সতেজ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যপ্রাপ্তি ঘটে, পুষ্টির সমৃদ্ধি ঘটে এবং স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হয়।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমগ্র এলাকায় স্থায়িত্বশীল গ্রামীণ উন্নয়ন ঘটায়, এ কারণেই কৃষক, জনগণ এবং সরকারের পারিবারিক কৃষিতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। যদি আমরা উৎপাদন, সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য সহায়তা (যেমন: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন) একত্রে প্রদান করতে পারি, তাহলে আমরা সত্যিকার অর্থে একটি স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করতে পারব। মহিলা ও যুব সম্প্রদায় স্থায়িত্বশীল পরিবেশ উন্নয়ন ও সম্মিলিত সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। আমাদের খাদ্য উৎপাদনে মহিলাদের ভূমিকা জোরালো হওয়া সত্ত্বেও বাজারজাতকরণ ও পরিবারের পুষ্টি জোগানের বিষয়ে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। অন্যদিকে উন্নত জীবন, প্রয়াসী গ্রামীণ যুব সম্প্রদায় গ্রাম ছাড়ার প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। সে কারণে গ্রামের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। যেমন: প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়। আমরা উন্নয়ন সহস্রাব্দের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি, এখন আমরা একত্রে স্থায়িত্বশীল ও ÿক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি এবং পারিবারিক কৃষি এ প্রচেষ্টার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবি।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
হোসে গ্রাজিয়ানো দা সিলভা: মহাপরিচালক, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও)।
পারিবারিক কৃষির এ গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘ ২০১৪ সালকে ‘আন্তর্জাতিক পারিবারিক কৃষি বছর’ হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস পৃথিবীর ধারাবাহিক খাদ্যনিরাপত্তা, স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পারিবারিক কৃষির অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এফএওর বার্ষিক ‘কৃষি ও খাদ্য অবস্থা’ দলিলে পারিবারিক কৃষির যথার্থতা প্রণীত হয়েছে। বিশ্বের ৫৭ কোটি খামারের মধ্যে ৫০ কোটি খামার পরিবারকেন্দ্রিক। তারাই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষাকারী। পারিবারিক কৃষি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। মূল্যের দিক বিবেচনায় পারিবারিক কৃষি ৮০ ভাগের বেশি খাদ্যের জোগান দেয় এবং তাজা ফল, শাকসবজি, দুধ ও পুষ্টিকর পণ্যের প্রধান উৎপাদক। বাংলাদেশের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ৪৮ শতাংশ কর্মসংস্থান কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যেখানে গড়ে জমির পরিমাণ ১ হেক্টরের বেশি নয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং খাদ্য গ্রহণে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। কৃষি উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের তুলনায় বর্তমানে বাড়ন্ত ও শহরের জনগণকে স্বল্পসংখ্যক খামারের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কৃষি ও খাদ্যপণ্যের বাজারের স্থানগুলো বিশ্বায়ন হচ্ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য শুধু চারটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পারিবারিক কৃষির এসব পরিবর্তনে সাড়া দেওয়ার এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এবং তা ঘটানোর চাবিকাঠি হচ্ছে উদ্ভাবন—পারিবারিক কৃষকের দরকার তাদের পদ্ধতির উদ্ভাবন, সরকারের প্রয়োজন পারিবারিক কৃষি বাস্তবায়নে নীতি উদ্ভাবন, উৎপাদনকারী সংগঠনের প্রয়োজন খামারির চাহিদা মোতাবেক উদ্ভাবন, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সংস্থার প্রয়োজন কৃষকের কাছে পৌঁছানোর প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন।
পরিবারকেন্দ্রিক প্রজন্মের সবার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবন হওয়া প্রয়োজন। যেখানে জ্ঞানের ব্যবহার ও আদানপ্রদান করে এসব উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া ও স্বকীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয় এবং এর লাভ ও ঝুঁকি মাথায় রেখে স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। পারিবারিক কৃষিব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু নিজস্ব প্রয়োজন ছাড়াও যাঁরা কৃষিতে জড়িত নন এবং যাঁরা শহরে বাস করেন, তাঁদের প্রয়োজনেও পণ্য ব্যবহার করা সম্ভব হয়। পারিবারিক কৃষির মাধ্যমে আয় করে এবং সে আয় দ্বারা কৃষি উপকরণ যেমন সার ও বীজ কেনা ছাড়াও সন্তানদের লেখাপড়া ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। পারিবারিক কৃষিব্যবস্থা শক্তিশালী হলে সবার জন্য তা মঙ্গলজনক। একদিকে খাদ্যনিরাপত্তার লক্ষ্যে অধিক খাদ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্রয়ের জন্য খাদ্য বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর অর্থ হচ্ছে স্থানীয় লোকাচার ও মূল্যবোধসম্পন্ন সতেজ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যপ্রাপ্তি ঘটে, পুষ্টির সমৃদ্ধি ঘটে এবং স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হয়।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমগ্র এলাকায় স্থায়িত্বশীল গ্রামীণ উন্নয়ন ঘটায়, এ কারণেই কৃষক, জনগণ এবং সরকারের পারিবারিক কৃষিতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। যদি আমরা উৎপাদন, সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য সহায়তা (যেমন: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন) একত্রে প্রদান করতে পারি, তাহলে আমরা সত্যিকার অর্থে একটি স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করতে পারব। মহিলা ও যুব সম্প্রদায় স্থায়িত্বশীল পরিবেশ উন্নয়ন ও সম্মিলিত সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। আমাদের খাদ্য উৎপাদনে মহিলাদের ভূমিকা জোরালো হওয়া সত্ত্বেও বাজারজাতকরণ ও পরিবারের পুষ্টি জোগানের বিষয়ে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। অন্যদিকে উন্নত জীবন, প্রয়াসী গ্রামীণ যুব সম্প্রদায় গ্রাম ছাড়ার প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। সে কারণে গ্রামের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। যেমন: প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়। আমরা উন্নয়ন সহস্রাব্দের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি, এখন আমরা একত্রে স্থায়িত্বশীল ও ÿক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি এবং পারিবারিক কৃষি এ প্রচেষ্টার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবি।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
হোসে গ্রাজিয়ানো দা সিলভা: মহাপরিচালক, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও)।
No comments