দণ্ড আমিরাতে ভোগ বাংলাদেশে by দীন ইসলাম
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা দণ্ড ভোগ করবে নিজ দেশে। বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ে এসব বন্দিকে ফিরিয়ে আনা হবে। ওই দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও এর বাইরে থাকবেন না। এমন বিধান যোগ করে আগামী ২৫শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর ইউএই সফরকালে ‘দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর’ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোন নাগরিকের ক্ষেত্রে এর ভিন্নতা ঘটবে। ইতিমধ্যে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সংশোধনী নিয়ে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে মতদ্বৈততা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের তৈরি করা খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছে, এক দেশের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত অপর দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে দণ্ড ভোগ করতে পারবে। বাংলাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও হস্তান্তরযোগ্য হবে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের খসড়ায় এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের বিনিময়-সংক্রান্ত ব্যয় হস্তান্তর গ্রহণকারী রাষ্ট্র বহন করবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রেরক রাষ্ট্র কর্তৃক বহনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। আরব আমিরাতের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানালেন, একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এটা নিশ্চিত। দ্বিতীয়টি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। কারণ দেশের স্বার্থের বাইরে কিছু করবো না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে। এদের মধ্যে কারাগারে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি বাংলাদেশী দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে। এ সব বন্দির মধ্যে ১৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ১০৪ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে। ওই দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ বাংলাদেশী। এদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মামলায় বাংলাদেশীরা জড়িত। বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত অপরাধপ্রবণতা, কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, শ্রমিক নিয়োগ বা পাঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তাদের ক্রমবর্ধমান হারে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় ওই দেশে শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমিরাত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশীদের জন্য তাদের ভিসা পদ্ধতি কঠোর করেছে। এ কারণে আরব আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের প্রথম দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘এগ্রিমেন্ট অব কো-অপারেশন বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দি ইউনাইটেড আরব আমিরাত অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল’স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ এবং ‘এগ্রিমেন্ট অন ট্রান্সফার অব সেন্টেনসড প্রিজনস’ স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করে। এর মধ্যে প্রথম চুক্তিটি হলে দুই দেশ পরস্পরকে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, অপরাধ দমন, মরণাস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের অবৈধ পাচার রোধ, মানব পাচার, আর্থিক ও অর্থনৈতিক অপরাধ ইত্যাদি রোধে পরস্পরকে সহায়তা করতে পারবে। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তারা জানায়, চুক্তি দু’টি স্বাক্ষরিত হলে ওই দেশে আবার বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ শুরু করা সম্ভব হবে। এর ভিত্তিতে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমবাজার ফের উন্মুক্ত করতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাবিত দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রক্রিয়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে একই বিষয়ে ৩রা এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চুক্তি দু’টিতে বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাবসহ দু’টি প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সংশোধনীসহ খসড়া দু’টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে পাঠানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন পর সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সংশোধনী শেষে খসড়া দু’টি পাঠায়। এর মধ্যে আমিরাত ‘এগ্রিমেন্ট অব কো-অপারেশন বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দি ইউনাইটেড আরব আমিরাত অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল’স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’- এ চুক্তিতে সংশোধনীগুলো ঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে দ্বিতীয় চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি দু’টির বিষয়ে নেগোসিয়েশন ও দলিল চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে ওই দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু ঈদের ছুটিসহসহ নানা কারণে আরব আমিরাতের কাছ থেকে তারিখ পায়নি সরকার। ইতিমধ্যে ২০-২১শে অক্টোবর ওই দেশের কর্তৃপক্ষ খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের নেতৃত্বে একটি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আরব আমিরাত সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।
No comments