যে ফোন পাল্টে দিয়েছিল মেসির জীবন
১ মে ২০০৯। শুক্রবার। ছুটির দিনেও পেপ
গার্দিওলা বার্সেলোনার অনুশীলন মাঠে তাঁর অফিসে। রাত হয়ে গেছে। পরদিন ভীষণ
গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ। এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি
বার্সা। কিন্তু গার্দিওলার অফিস ছাড়ার কোনো তাড়া নেই। তিনি যেন কিছুটা
উদ্বিগ্ন। তার চেয়েও বেশি রোমাঞ্চিত। ঘরে মৃদু আলো। মৃদু একটা বাজনাও
বাজছে। এমন পরিবেশই গার্দিওলার পছন্দ। ভাবতে ভীষণ সুবিধা হয়।
অবশেষে সিদ্ধান্তটা তিনি চূড়ান্ত করেই ফেললেন। ফোন তুলে ডায়াল করলেন। এক-দুবার রিং হতেই ওপ্রান্তে চেনা কণ্ঠস্বর ‘হ্যালো’ বলে উঠল। গার্দিওলা উত্তর দিলেন, ‘লিও, পেপ বলছি। আমি গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস দেখেছি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমাকেও দেখাতে চাই। এখানে চলে আসবে একটু, প্লিজ, এখনই!’
গার্দিওলার কণ্ঠে ছিল রোমাঞ্চ। কিছু একটা আবিষ্কারের। মেসি ছুটে এলেন। রাত সাড়ে ১০টায় গার্দিওলার দরজায় মৃদু কড়া নাড়লেন। ভেতরে ঢুকলেন ২১ বছর বয়সী মেসি। মেসি তখনো জানতেন না, গার্দিওলার কক্ষে নয়, তিনি পা দিতে চলেছেন তাঁর জীবনেরই নতুন এক অধ্যায়ে। যে অধ্যায় পুরোপুরি পাল্টে দেবে তাঁর জীবন। শুধু মেসি? পাল্টে দেবে ফুটবলের মানচিত্রও!
কোনো ভণিতা না করে খোলাখুলি গার্দিওলা মেসিকে তাঁর নতুন আবিষ্কার বুিঝয়ে বললেন, ‘কালকে মাদ্রিদের ম্যাচে তুমি বরাবরের মতো উইংয়েই শুরু করবে। কিন্তু যে মুহূর্তে আমি তোমাকে ইশারা করব, তুমি মাঝমাঠের ওপরের দিকে সরে আসবে...।’
গুরু-শিষ্যের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ বাতচিত চলল। তৈরি হলো ফুটবলের নতুন পজিশন ‘ফলস নাইন’। এর আগে উইংয়ে খেলে আসা মেসি এখন থেকে খেলবেন ছদ্ম-স্ট্রাইকার হিসেবে। পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার না হলেও মেসিই এখন থেকে দলের আসল স্ট্রাইকার!
২ মে মাঠে বাস্তবায়িত হয়েছিল গার্দিওলার এই রণকৌশলের। যে আবিষ্কার প্রতিপক্ষের জন্য ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আকস্মিক। সেদিন যে িরয়ালের মাঠে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল কে। হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল। নিজেদের মাঠে বার্সেলোনার কাছে হেরে গিয়েছিল ৬-২ গোলে!
ম্যাচের দশম মিনিটে গার্দিওলা তাঁর সেই বিশেষ ‘ইশারা’টি করেন। ফরোয়ার্ড থেকে ডান উইংয়ে সরে আসেন স্যামুয়ের ইতো। আর ইতোর জায়গা নেন মেসি। এই পরিবর্তন একেবারেই প্রত্যাশা করেনি রিয়াল রক্ষণ। ফ্যাবিও ক্যানাভারোর মতো অভিজ্ঞ রক্ষণসেনা পর্যন্ত থ মেরে গিয়েছিলেন। সে সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে ক্যানাভারোর রক্ষণ-সঙ্গী ক্রিস্তোফ মেৎজেলদার বলেছিলেন, ‘ফ্যাবিও আর আমি কেবল মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলাম। আমরা এখন কী করব? আমরা কি এগিয়ে গিয়ে ওকে মাঝমাঠে সামলাব, নাকি নিচেই অপেক্ষা করব মেসির উঠে আসার? আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’
শুধু ক্যানাভারো না, মেসিকে হুট করে ফলস নাইন পজিশনে তুলে নিয়ে আসা গার্দিওলার এই টোটকা আর কেউই সামলাতে পারেনি। বদলে গিয়েছিলেন মেসি নিজেও। একের পর এক গোলবন্যায় স্নাত করেছেন একেকটি মৌসুম।
১ মে রাতের সেই ফোন কলটাই এভাবে বদলে দিয়েছিল মেসির জীবন। ফুটবলকেও! সূত্র: টেলিগ্রাফ।
No comments