অবশেষে চৈতন্যোদয়!
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত দুই এমপির
বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না
মর্মে নির্বাচন কমিশনের কারণ দর্শাও নোটিশকে আমরা স্বাগত জানাই। এও
প্রত্যাশা করি যে, যশোর-১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত শেখ আফিল
উদ্দিন এবং যশোর-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী মনিরুল ইসলামের
ব্যাপারে নেওয়া এই পদক্ষেপ নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হবে না। বস্তুত এই
দুই সংসদ সদস্য যা করেছেন, তা নেহাত 'আচরণবিধি লঙ্ঘনের' চেয়েও গুরুতর। নবম
জাতীয় সংসদের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন দশম সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পার হওয়ার পর পাশের আসনে তার বেয়াই মনিরুল ইসলামের পক্ষে
প্রচারে নামেন। এভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামা অবশ্য কোনো অপরাধ হতে পারে
না। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলাকালেও কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অপর
প্রার্থীর পক্ষে জনসভায় অংশ নেওয়ার নজির অনেক রয়েছে। কিন্তু তিনি যেভাবে
প্রকাশ্য ভোট জালিয়াতির 'ফর্মুলা' ব্যাখ্যা করেছেন, তা অভূতপূর্ব। সামাজিক
মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, তিনি কর্মিসভায় বলছেন,
প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে একশ'জন আওয়ামী লীগ কর্মী মিলে পালাক্রমে জাল ভোট দিতে
থাকলে দুপুরের মধ্যে 'বিজয়' নিশ্চিত হবে। আমরা মনে করি, কেবল আচরণবিধি বা
রীতিনীতির লঙ্ঘন নয়; এমন ঘোষণা দুঃসাহসিকও বটে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য
নির্বাচনের প্রয়োজনেই কেবল নয়, আইনের শাসনের স্বার্থেই এই অঘটনের প্রতিকার
করতে হবে। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, যশোরের নির্বাচনী তদন্ত
কমিটির পক্ষ থেকে আলোচ্য আসনের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই করে সিল
মারার সত্যতা পাওয়া গেছে। বেয়াইদ্বয় এখন কীভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দেন,
সেদিকে আমরা নজর রাখব। আমরা দেখতে চাই, বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো
ছাড় দেয়নি। প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
নিয়ে দেশে-বিদেশে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, দুই বেয়াই ছাড় বা লঘুদণ্ড পেলে তা
আরও ঘনীভূতই হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য আসনে ওঠা অভিযোগও স্বচ্ছতার সঙ্গে
খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই আমরা। এতে করে ভোট গ্রহণের দিন এবং তার আগে
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, তা বিলম্বে হলেও কমে
আসবে।
No comments