'নিজেই খবরের শিরোনাম হবো কখনও ভাবিনি' by ইন্দ্রজিৎ সরকার
রাজধানীর পরীবাগে বাসে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ শাহীনা আক্তার মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মারা যান (ইনসেটে)।বুধবার তার লাশ নিতে এসে মর্গের সামনে স্বামী জামানের আহাজারি কাজল হাজরা |
'সারাজীবন
মানুষকে নিয়ে খবর লিখেছি। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরেছি। আমি বা আমার
পরিবারের কেউ খবরের শিরোনাম হবো_ এ কথা কখনও ভাবিনি। হায় আল্লাহ, তুমি
আমাকে এভাবে নিঃস্ব করে দিলে কেন!' স্ত্রী শাহীনা আক্তারকে হারিয়ে এভাবেই
বিলাপ করছিলেন দৈনিক নতুন সময় পত্রিকার খুলনা ব্যুরোপ্রধান এফ জামান।
আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা ৪৫ বছর বয়সী শাহীনা গত ৩
জানুয়ারি পরীবাগে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় গুরুতর দগ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত পৌনে ২টার
দিকে তার মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় দগ্ধ ফল ব্যবসায়ী ফরিদ মিয়াও গতকাল বুধবার
সকালে মারা যান। এ নিয়ে অবরোধ-হরতালে দগ্ধ ২৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন
ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন। আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল
সমকালকে বলেন, ২৬ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অবরোধ-হরতালে নাশকতার আগুনে দগ্ধ
অন্তত ১৪০ জন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে ৯৮ জন ইনডোরে
(হাসপাতালে ভর্তি হয়ে) চিকিৎসা নেন। ৩৬ জন এখনও চিকিৎসাধীন। আশঙ্কাজনক
অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন শফিকুল নামের একজন।
শাহীনা আক্তারের স্বামী এফ জামান সমকালকে জানান, খুলনা শহরের টুটপাড়ায় তাদের বাড়ি। তবে চাকরির প্রয়োজনে শাহীনা তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়ী এলাকায় বিমান বাহিনীর কোয়ার্টারে বোনের সঙ্গে থাকতেন। এফ জামান বেশ কিছুদিন ধরে হাইপার টেনশনে ভুগছেন। মাঝে ১৮ দিন তিনি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সম্প্রতি খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরেন শাহীনা। এরপর জামান ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে শাহীনা উতলা হয়ে পড়েন। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে তিনি বাড়িতে যেতে পারছিলেন না। ৩ জানুয়ারি শুক্রবার থাকায় সে দিন পথে কোনো নাশকতার মুখে পড়তে হবে না ভেবে বাসা থেকে বের হন। বাসে গুলিস্তানের দিকে যাওয়ার সময় পরীবাগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় শাহীনার শরীরের ৬৪ শতাংশ পুড়ে যায়। দগ্ধ হন আরও তিনজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে গতকাল দুপুরে কথা হয় এফ জামানের সঙ্গে। শোকে বিহ্বল জামান বলেন, এভাবে আর কতদিন? আর কত মানুষ মরবে এভাবে? প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার কাছে আমি জানতে চাই, কবে এসব বন্ধ হবে?
তিনি জানান, তাদের একমাত্র সন্তান আসিফুজ্জামান পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পেশাগত কাজে তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর খবর তাকে জানানো হয়েছে। ১২ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরবেন। এই ক'দিন ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিমঘরে থাকবে শাহীনার লাশ। ১৩ জানুয়ারি খুলনায় তাকে দাফন করা হবে।
শাহীনা দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে যায় বলে জানান তার স্বজনরা। সে সঙ্গে সাড়ে আট হাজার টাকা, তার মোবাইল ফোন ও একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি আংশিক পুড়ে যায়। সে ছবিটি হাতে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জামান বলেন, ঘটনার আগের রাতেও মোবাইল ফোনে শাহীনার সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি যেতে নিষেধ করি। কিন্তু আমার অসুস্থতার কথা শুনে ও স্থির থাকতে পারছিল না।
স্বামী ছাড়াও শাহীনার বোন ও অন্য আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত হয়েছিলেন ঢামেক মর্গে। দুপুর দেড়টার দিকে শাহীনাকে গোসল করানোর সময় কান্নার রোল পড়ে। বোন নাইস, বিপু ও রিপা ফটোসাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন। তারা বলেন, ছবি পত্রিকায় ছেপে কোনো তো লাভ হচ্ছে না। কারও তো কোনো শাস্তি হচ্ছে না।
এদিকে সেদিনের ঘটনায় অগি্নদগ্ধ হন ৫০ বছর বয়সী ফরিদ মিয়া। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৪৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ফরিদ মিয়ার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর বেলাবোর হোসেননগর গ্রামে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি রাজধানীর মানিকদি বালুর ঘাট এলাকায় থাকতেন। ওই এলাকায়ই তিনি ফলের ব্যবসা করতেন।
গতকাল তার লাশ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, দোকানের মালপত্র (ফল) কেনার জন্য বাদামতলী যাচ্ছিলেন ফরিদ মিয়া। ছুটির দিন শুক্রবার কোনো নাশকতা হবে না বলেই তার ধারণা ছিল। তিনি বলেন, 'শুক্রবারও এইভাবে মানুষ পুড়ায়া মারব, এইডা কেমুন কথা? আমি ছোট পোলাপাইন লইয়া কই যামু? কেমনে সংসার চলব?'
ফরিদ মিয়ার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় স্বপন একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তার ছোট দুই ভাই সুজন পঞ্চম এবং লিটন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। বোন সালমার বিয়ে হয়েছে। সবার ছোট ৯ বছরের লিটন জানায়, মারা যাওয়ার আগে (মঙ্গলবার) বাবার সঙ্গে তার কথা হয়। ফরিদ মিয়া তাকে বলেন, 'তোমরা ঠিকমতো পড়ালেখা করবা। কোনো দুষ্টামি করবা না। আমি মনে হয় আর বাঁচব না।' তখন ছোট্ট লিটন বাবাকে আশ্বাস দিয়েছিল, 'তোমার কিছুই হইব না আব্বা।'
ফরিদের বোন রেণু আরা অসহায় পরিবারটিকে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
শাহীনা আক্তারের স্বামী এফ জামান সমকালকে জানান, খুলনা শহরের টুটপাড়ায় তাদের বাড়ি। তবে চাকরির প্রয়োজনে শাহীনা তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়ী এলাকায় বিমান বাহিনীর কোয়ার্টারে বোনের সঙ্গে থাকতেন। এফ জামান বেশ কিছুদিন ধরে হাইপার টেনশনে ভুগছেন। মাঝে ১৮ দিন তিনি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সম্প্রতি খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরেন শাহীনা। এরপর জামান ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে শাহীনা উতলা হয়ে পড়েন। কিন্তু টানা অবরোধের কারণে তিনি বাড়িতে যেতে পারছিলেন না। ৩ জানুয়ারি শুক্রবার থাকায় সে দিন পথে কোনো নাশকতার মুখে পড়তে হবে না ভেবে বাসা থেকে বের হন। বাসে গুলিস্তানের দিকে যাওয়ার সময় পরীবাগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় শাহীনার শরীরের ৬৪ শতাংশ পুড়ে যায়। দগ্ধ হন আরও তিনজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে গতকাল দুপুরে কথা হয় এফ জামানের সঙ্গে। শোকে বিহ্বল জামান বলেন, এভাবে আর কতদিন? আর কত মানুষ মরবে এভাবে? প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার কাছে আমি জানতে চাই, কবে এসব বন্ধ হবে?
তিনি জানান, তাদের একমাত্র সন্তান আসিফুজ্জামান পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পেশাগত কাজে তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর খবর তাকে জানানো হয়েছে। ১২ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরবেন। এই ক'দিন ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিমঘরে থাকবে শাহীনার লাশ। ১৩ জানুয়ারি খুলনায় তাকে দাফন করা হবে।
শাহীনা দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে যায় বলে জানান তার স্বজনরা। সে সঙ্গে সাড়ে আট হাজার টাকা, তার মোবাইল ফোন ও একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি আংশিক পুড়ে যায়। সে ছবিটি হাতে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জামান বলেন, ঘটনার আগের রাতেও মোবাইল ফোনে শাহীনার সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি যেতে নিষেধ করি। কিন্তু আমার অসুস্থতার কথা শুনে ও স্থির থাকতে পারছিল না।
স্বামী ছাড়াও শাহীনার বোন ও অন্য আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত হয়েছিলেন ঢামেক মর্গে। দুপুর দেড়টার দিকে শাহীনাকে গোসল করানোর সময় কান্নার রোল পড়ে। বোন নাইস, বিপু ও রিপা ফটোসাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন। তারা বলেন, ছবি পত্রিকায় ছেপে কোনো তো লাভ হচ্ছে না। কারও তো কোনো শাস্তি হচ্ছে না।
এদিকে সেদিনের ঘটনায় অগি্নদগ্ধ হন ৫০ বছর বয়সী ফরিদ মিয়া। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৪৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ফরিদ মিয়ার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর বেলাবোর হোসেননগর গ্রামে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি রাজধানীর মানিকদি বালুর ঘাট এলাকায় থাকতেন। ওই এলাকায়ই তিনি ফলের ব্যবসা করতেন।
গতকাল তার লাশ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, দোকানের মালপত্র (ফল) কেনার জন্য বাদামতলী যাচ্ছিলেন ফরিদ মিয়া। ছুটির দিন শুক্রবার কোনো নাশকতা হবে না বলেই তার ধারণা ছিল। তিনি বলেন, 'শুক্রবারও এইভাবে মানুষ পুড়ায়া মারব, এইডা কেমুন কথা? আমি ছোট পোলাপাইন লইয়া কই যামু? কেমনে সংসার চলব?'
ফরিদ মিয়ার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় স্বপন একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তার ছোট দুই ভাই সুজন পঞ্চম এবং লিটন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। বোন সালমার বিয়ে হয়েছে। সবার ছোট ৯ বছরের লিটন জানায়, মারা যাওয়ার আগে (মঙ্গলবার) বাবার সঙ্গে তার কথা হয়। ফরিদ মিয়া তাকে বলেন, 'তোমরা ঠিকমতো পড়ালেখা করবা। কোনো দুষ্টামি করবা না। আমি মনে হয় আর বাঁচব না।' তখন ছোট্ট লিটন বাবাকে আশ্বাস দিয়েছিল, 'তোমার কিছুই হইব না আব্বা।'
ফরিদের বোন রেণু আরা অসহায় পরিবারটিকে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
No comments