সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ইসির মনেও প্রশ্ন by মসিউর রহমান খান
জটিলতার আশঙ্কা সত্ত্বেও গতকাল বুধবার দশম
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট
প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংসদ
বহাল রেখে শপথ হলে একটি আসনে একই সময়ে দু'জন সংসদ সদস্য থাকার জটিলতা দেখছে
ইসি।
ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি ফলাফলের গেজেট কত দিনের মধ্যে করতে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বা প্রচলিত আইনের কোথাও সরাসরি তা বলা নেই। তাই গতকাল গেজেট করা ইসির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। এ ব্যাপারে সংবিধানেও কোনো অস্পষ্টতা নেই। যে কারণে তফসিল ঘোষণার আগে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের বাসায় সরকারের পদস্থ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংসদ রেখে সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নবনির্বাচিতরা ২৪ জানুয়ারির পরে শপথ নেওয়াই সঙ্গত বলে মত দিয়েছিলন ওই বৈঠকে। তড়িঘড়ি গেজেট প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে দেওয়া ব্যাখ্যায় অবশ্য বলা হয়েছে, সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় থাকলেও সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শপথ নেওয়ার পরপরই এমপিরা কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। নবম সংসদের এমপিরা শপথ নিয়েছিলেন ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি। তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন এমপিদের শপথ নিতে কোনো আইনি বাধা নেই। নবম সংসদের প্রথম বৈঠক বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি; মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সরকারের এহেন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে কমিশনের পক্ষে সরকারের পদস্থ ব্যক্তিবর্গসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়েও যোগাযোগ করা হয় বলে জানিয়েছে কমিশনের একটি সূত্র। তাতে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের অন্য চার সদস্যের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেন। তারা সরকারের যুক্তির আইনি দিক বিশ্লেষণ করে সন্তোষজনক কোনো সমাধানে পেঁৗছাতে ব্যর্থ হলেও সরকারের ইচ্ছার বিপরীতে কোনো অবস্থান নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তফসিল ঘোষণার আগেই কমিশনের সদস্যরা এমন জটিলতার আশঙ্কা করছিলেন। তখন তারা ১৮ জানুয়ারির পরে ভোট গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিলেও নানামুখী চাপে অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হন।
একজন নির্বাচন কমিশনার সরকারের পক্ষ থেকে পীড়াপীড়ির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সমকালকে বলেন, অবশেষে তারা গেজেট প্রকাশে রাজি হয়েছেন। গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। এরপর কোনো আইনি জটিলতা তৈরি হলে তার দায় কমিশনের ঘাড়ে পড়বে না। এ বিবেচনায় তারা গেজেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, আইনি জটিলতার দিকটি সরকার দেখবে। আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসি গতকাল সরকারি বিজ্ঞপ্তি দ্বারা ফল প্রকাশ করে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন দফার শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সরকার এ শর্ত সংবিধানে সংযোজন করেছিল। সংবিধানের ওই বিধানে বলা আছে, '(৩) সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে :এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে :তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উলি্লখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ-সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।' চলতি নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ২(ক) দফা স্পষ্ট করে বলেছে, '১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে' শপথ পড়াতে হবে। এ অনুচ্ছেদেরই ৩ উপদফা বলেছে, শপথ গ্রহণমাত্রই তারা কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ ইসির প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে ১১ জানুয়ারির মধ্যে শপথ গ্রহণ আর শপথমাত্রই কার্যভার গ্রহণ। যদিও সংবিধান নির্দিষ্টভাবে এই 'নির্বাচিত ব্যক্তিগণের' কার্যভার গ্রহণকেই ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে রেখেছে। সংবিধানের ১২৩(৩)-এর শর্তাংশ এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দশম সংসদ গড়তে হলে এখন আর সংসদ ভেঙে দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তারা নির্বাচন করে ওই (ক) উপ-দফার শর্ত পূরণ করেছে।
গতকাল দিনভর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সংসদ ভেঙে দিয়ে না বহাল রেখেই নতুন এমপিরা শপথ নেবেন, তা-ও নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। প্রশ্ন করা হলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ একই সঙ্গে দেখতে হবে। মেয়াদপূর্তির কথা যেমন বলা আছে, তেমনি গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক ডাকার বিষয়টিও বলা আছে। অতএব, সব দিক বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সংবিধানের ১২৩ ও ১৪৮ অনুচ্ছেদের কারণে কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাব দিতে স্পিকার রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, এর ব্যাখ্যা সরকারের আইন বিশেষজ্ঞরাই দিতে পারেন। আজকের শপথ গ্রহণের আগে নবম সংসদের বিলুপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা রাষ্ট্রপতির বিষয়। সংসদ বহাল অবস্থায় শপথ করানো হচ্ছে কি-না, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মতো নিশ্চুপ সরকারও। যদিও নির্বাচনকালীন সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এ নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা দেখছেন না। তিনি বলেন, তার মনে হয় না, কোনো জটিলতা থাকবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার তার নয়। তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি নির্বাচন কমিশন অথবা সংসদ সচিবালয়ের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দেন।
গেজেট প্রকাশের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে সমকালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, বিষয়টি দিন-রাতের মতো পরিষ্কার বিষয়। এখানে মন্তব্য করার কিছুই নেই। সংবিধানেই সবকিছুই স্পষ্ট করা আছে। অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন দেশের বাইরে থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, শুক্রবার তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরেই এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী ২৪ জানুয়ারি নবম সংসদ আপনাআপনি লুপ্ত হবে। কোনো ঘোষণা লাগবে না। এর আগে নবম সংসদকে নেই করে দিতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে হবে। সরকার এ পরামর্শ দেবে না। আবার ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষাও করবে না। এর ফলে দশম সংসদ ডাকা নিয়েও সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ভারতে এ পর্যন্ত আটটি সংসদ রেখে সংসদ নির্বাচন হলেও সেখানে নির্বাচনের পরপরই লোকসভা ভেঙে দেওয়া হয়। নতুন সরকার গঠনের শপথ গ্রহণের সময় পুরনো সংসদ থাকে না। ভারতের সংবিধানে বাংলাদেশের সংবিধানের মতো ১২৩(৩) অনুচ্ছেদের মতো মেয়াদ পুরো না হলে কার্যভার গ্রহণ না করার শর্ত নেই। ভারতে তাই আক্ষরিক অর্থে কখনও মেয়াদ পুরো করা নিয়ে বিতর্ক হয়নি।
ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি ফলাফলের গেজেট কত দিনের মধ্যে করতে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বা প্রচলিত আইনের কোথাও সরাসরি তা বলা নেই। তাই গতকাল গেজেট করা ইসির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। এ ব্যাপারে সংবিধানেও কোনো অস্পষ্টতা নেই। যে কারণে তফসিল ঘোষণার আগে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের বাসায় সরকারের পদস্থ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংসদ রেখে সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নবনির্বাচিতরা ২৪ জানুয়ারির পরে শপথ নেওয়াই সঙ্গত বলে মত দিয়েছিলন ওই বৈঠকে। তড়িঘড়ি গেজেট প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে দেওয়া ব্যাখ্যায় অবশ্য বলা হয়েছে, সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় থাকলেও সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শপথ নেওয়ার পরপরই এমপিরা কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। নবম সংসদের এমপিরা শপথ নিয়েছিলেন ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি। তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন এমপিদের শপথ নিতে কোনো আইনি বাধা নেই। নবম সংসদের প্রথম বৈঠক বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি; মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সরকারের এহেন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে কমিশনের পক্ষে সরকারের পদস্থ ব্যক্তিবর্গসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়েও যোগাযোগ করা হয় বলে জানিয়েছে কমিশনের একটি সূত্র। তাতে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের অন্য চার সদস্যের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেন। তারা সরকারের যুক্তির আইনি দিক বিশ্লেষণ করে সন্তোষজনক কোনো সমাধানে পেঁৗছাতে ব্যর্থ হলেও সরকারের ইচ্ছার বিপরীতে কোনো অবস্থান নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তফসিল ঘোষণার আগেই কমিশনের সদস্যরা এমন জটিলতার আশঙ্কা করছিলেন। তখন তারা ১৮ জানুয়ারির পরে ভোট গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিলেও নানামুখী চাপে অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হন।
একজন নির্বাচন কমিশনার সরকারের পক্ষ থেকে পীড়াপীড়ির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সমকালকে বলেন, অবশেষে তারা গেজেট প্রকাশে রাজি হয়েছেন। গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। এরপর কোনো আইনি জটিলতা তৈরি হলে তার দায় কমিশনের ঘাড়ে পড়বে না। এ বিবেচনায় তারা গেজেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, আইনি জটিলতার দিকটি সরকার দেখবে। আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসি গতকাল সরকারি বিজ্ঞপ্তি দ্বারা ফল প্রকাশ করে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন দফার শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সরকার এ শর্ত সংবিধানে সংযোজন করেছিল। সংবিধানের ওই বিধানে বলা আছে, '(৩) সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে :এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে :তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উলি্লখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ-সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।' চলতি নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ২(ক) দফা স্পষ্ট করে বলেছে, '১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে' শপথ পড়াতে হবে। এ অনুচ্ছেদেরই ৩ উপদফা বলেছে, শপথ গ্রহণমাত্রই তারা কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ ইসির প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে ১১ জানুয়ারির মধ্যে শপথ গ্রহণ আর শপথমাত্রই কার্যভার গ্রহণ। যদিও সংবিধান নির্দিষ্টভাবে এই 'নির্বাচিত ব্যক্তিগণের' কার্যভার গ্রহণকেই ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে রেখেছে। সংবিধানের ১২৩(৩)-এর শর্তাংশ এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দশম সংসদ গড়তে হলে এখন আর সংসদ ভেঙে দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তারা নির্বাচন করে ওই (ক) উপ-দফার শর্ত পূরণ করেছে।
গতকাল দিনভর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সংসদ ভেঙে দিয়ে না বহাল রেখেই নতুন এমপিরা শপথ নেবেন, তা-ও নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। প্রশ্ন করা হলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ একই সঙ্গে দেখতে হবে। মেয়াদপূর্তির কথা যেমন বলা আছে, তেমনি গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক ডাকার বিষয়টিও বলা আছে। অতএব, সব দিক বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সংবিধানের ১২৩ ও ১৪৮ অনুচ্ছেদের কারণে কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাব দিতে স্পিকার রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, এর ব্যাখ্যা সরকারের আইন বিশেষজ্ঞরাই দিতে পারেন। আজকের শপথ গ্রহণের আগে নবম সংসদের বিলুপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা রাষ্ট্রপতির বিষয়। সংসদ বহাল অবস্থায় শপথ করানো হচ্ছে কি-না, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মতো নিশ্চুপ সরকারও। যদিও নির্বাচনকালীন সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এ নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা দেখছেন না। তিনি বলেন, তার মনে হয় না, কোনো জটিলতা থাকবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার তার নয়। তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি নির্বাচন কমিশন অথবা সংসদ সচিবালয়ের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দেন।
গেজেট প্রকাশের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে সমকালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, বিষয়টি দিন-রাতের মতো পরিষ্কার বিষয়। এখানে মন্তব্য করার কিছুই নেই। সংবিধানেই সবকিছুই স্পষ্ট করা আছে। অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন দেশের বাইরে থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, শুক্রবার তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরেই এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী ২৪ জানুয়ারি নবম সংসদ আপনাআপনি লুপ্ত হবে। কোনো ঘোষণা লাগবে না। এর আগে নবম সংসদকে নেই করে দিতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে হবে। সরকার এ পরামর্শ দেবে না। আবার ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষাও করবে না। এর ফলে দশম সংসদ ডাকা নিয়েও সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ভারতে এ পর্যন্ত আটটি সংসদ রেখে সংসদ নির্বাচন হলেও সেখানে নির্বাচনের পরপরই লোকসভা ভেঙে দেওয়া হয়। নতুন সরকার গঠনের শপথ গ্রহণের সময় পুরনো সংসদ থাকে না। ভারতের সংবিধানে বাংলাদেশের সংবিধানের মতো ১২৩(৩) অনুচ্ছেদের মতো মেয়াদ পুরো না হলে কার্যভার গ্রহণ না করার শর্ত নেই। ভারতে তাই আক্ষরিক অর্থে কখনও মেয়াদ পুরো করা নিয়ে বিতর্ক হয়নি।
No comments