এটা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদে বিরোধীদলীয়
নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেওয়ার খবরকে দেশবাসী স্বাগত জানাবে। কেন এমন
কঠোর অবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, সেটা অনেকেরই বোধগম্য ছিল না। একইভাবে
বোধগম্য নয় বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের অনেকটা ঢালাও ধরনের অভিযান। মঙ্গলবার
এই দলের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের
ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান
সেলিমা রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে আটক করেছে পুলিশ। অপর এক
নেতাকে কিছুক্ষণ আটক রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খন্দকার মাহবুবের বিরুদ্ধে
উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ আনা হয় এবং গতকাল তাকে আদালতে হাজির
করে দু'দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও বিএনপি এবং ১৮
দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মীকে
নির্বাচনের আগে ও পরে গ্রেফতার করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। অনেকে গ্রেফতারের
ভয়ে রয়েছেন আত্মগোপনে। এটা ঠিক যে, এই জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে
রয়েছে এবং তাদের লাগাতার অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির প্রতি জনগণের তেমন সমর্থন
নেই। কর্মসূচি সফল করায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে জোটের
নেতাকর্মীদের সামান্যই সক্রিয় দেখা যায়। তারা নাশকতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের
প্রতিই এখন পর্যন্ত মনোযোগ নিবদ্ধ রেখেছে। তদুপরি দেশের অনেক স্থানে যে
ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে তার সঙ্গেও জড়িত এ জোটের একটি অংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদের প্রতি সহিংসতা বর্জনের আহ্বান
জানিয়েছেন এবং এ ধরনের নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে
কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার এ অবস্থানের সঙ্গে দেশবাসী একমত।
জনজীবন ও অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করার পদক্ষেপ কেউ সমর্থন করতে পারে না।
কিন্তু একইভাবে বিরোধীদের ঢালাও গ্রেফতারের পদক্ষেপও গ্রহণযোগ্য হতে পারে
না। এটা গণতন্ত্রের ভাষা নয় এবং এর অবসান ঘটাতেই হবে। বিএনপির শীর্ষ
পর্যায়ের অনেক নেতাকে আগেই আটক করা হয়েছে। রাজপথে তারা সক্রিয় হতে পারছে
না। এমনকি সংবাদ সম্মেলন কিংবা ঘরোয়া সভা-সেমিনারে যোগদান করলেও রয়েছে
গ্রেফতারের আতঙ্ক। দলের প্রধান নেতার বাসভবনের সামনে থেকে নিরাপত্তা
বাহিনীর সদস্য কমিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের
নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে দেখা করতে পারছেন না। দলটির কেন্দ্রীয় এবং
বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয়ও কার্যত পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সরকারকে
অবশ্যই এ পথ থেকে সরে আসতে হবে। বিরোধীদেরও শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনায়
সচেষ্ট হতে হবে। যেভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে, সেটা বেশিরভাগ মানুষের
কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক সমাজের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি
ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কিন্তু তার প্রতিবাদের একমাত্র উপায় অব্যাহত সহিংসতা কেন
হবে? বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে যত প্রতিকূল
পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, তাদের জন্য গণমাধ্যমের দুয়ার কখনও রুদ্ধ হয়ে
যায়নি। বরং এটাই লক্ষণীয় যে, বেশিরভাগ সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বিরোধীদের
বক্তব্য-বিবৃতি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ ও প্রচার করে। এ সুযোগ তাদের
আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এটা অবশ্যই মনে রাখতে
হবে, আধুনিক বিশ্বে সরকার চাইলেই কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে সাধারণ মানুষের কাছ
থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু বিরোধীদেরও মনে রাখা চাই, তারা যে
ধরনের কর্মপন্থা গ্রহণ করছে সেটা কিন্তু তাদেরই জনগণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে
দিচ্ছে।
No comments