ঘর গেছে, প্রাণ থাকবে তো? by আমিনুল হক ও বিপুল সরকার সানি
'বাড়িঘর
গেছে, এবার যাবে জানটা'_ এই হুমকিতে ভীত হয়ে উঠেছে দিনাজপুর সদরের
চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারগুলো। নির্বাচনের দিন
গত রোববার ভোট গ্রহণ শেষে দু'দফায় কর্ণাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের
গ্রামগুলোর সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ভাংচুর,
লুটপাট করাসহ পুড়িয়ে দেয় তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। ওই গ্রামে গতকাল বুধবার
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামজুড়ে থমথমে ভাব। লোক দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে
উঠছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। বাড়িঘরসহ এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের বই
পুড়ে যাওয়ায় কেঁদে কেঁদে ফণী বালা রায় আকুতি করে বললেন, 'মোর কী হইবে, মোর
বেটির কী হইবে। হামার যে সব সউক শ্যাস হয়া গ্যালো।' পল্লী চিকিৎসক
রাজকুমার রায়, সন্তোষ চন্দ্র রায়, গণেশ চন্দ্র রায়, রাজবালা, জয়ন্ত,
রামবাবু রায়, তরণী কান্ত রায়, চয়ন বালা, চম্পলা রায়, লতা রানী রায়সহ অনেকে
বলেন, তারা প্রায় সবাই অন্যত্র রাত কাটাচ্ছেন। তবে কোথায় তারা থাকছেন তা
বলতে চান না। চয়ন বালা বলেন, 'ভয়ে পালায়ে থাকি, বাড়িত থাকি না। পল্লী
চিকিৎসক রাজকুমার রায় কেঁদে কেঁদে বললেন, আমার সর্বস্ব গেছে। পুড়ে গেছে
আমার দোকানের সব ওষুধ। ঋণে এসব ওষুধ ক্রয় করেছি, কীভাবে ঋণ শোধ করব?'
মনোহার চন্দ্র রায় বলেন, 'আমার আয়ের একমাত্র অবলম্বন ভটভটি। সেটিও পুড়িয়ে
দিয়েছে। আগুন লাগানোর সময় আমি পালিয়ে কেন্দ্রে অবস্থানরত পুলিশের কাছে যাই
এবং তাদের সাহায্য প্রার্থনা করি। তবে তারা এগিয়ে আসেনি।' চেহেলগাজী
ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামের বৈধ্যনাথপাড়া, স্কুলপাড়া, তেলীপাড়া, হাজিপাড়া ও
প্রিতমপাড়ার অবস্থান ভোটকেন্দ্র কর্ণাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন।
এসব পাড়ার সংখ্যালঘু পরিবারগুলো ভোট দিতে আসায় তাদের জন্য হয়েছিল কাল। এ
অপরাধেই তাদের ওপর হামলা ও অত্যাচার চালায় দুর্বৃত্তরা। সেখানকার ভটিভটি
চালক মনোহর চন্দ্র রায় ও মুকুল রায়কে গত মঙ্গলবার রাতেও মোবাইল ফোনে হুমকি
দেওয়া হয়েছে_ 'বাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে, এবার জান নেব।' বিষয়টি তারা
কোতোয়ালি থানার ওসিকে জানিয়েছেন। তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার উত্তর পেয়েছেন_
'এ রকম ভয় দেখাতে পারে, এসব ভুয়া, তোমরা নিশ্চিন্তে থাকো।'
তবে পুলিশের কথায় তারা শান্ত হতে পারেননি, সব সময় প্রাণনাশের ভয়ে রয়েছেন। কর্ণাই গ্রামের মেয়ে দিনাজপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আরা জোসনা জানান, 'ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটার দিকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানতে পারি। ছুটে যাই সদর ইউএনও, কোতোয়ালি থানা ও সর্বশেষ জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু কোনো সাহায্য না পেয়ে রিকশা-ভ্যানে রওনা দিই কর্ণাই গ্রামের দিকে। পথে বাঁশের হাটে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। অনুরোধ করে তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাই। ততক্ষণে সব শেষ। ভাংচুর, লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট। পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলে চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্নাই এলাকার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য অপর্ণা রানী রায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের ভোট দেওয়াই যেন পাপ হয়েছে। এ অপরাধে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবিনা আখতার বলেন, নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ দুঃখজনক। ভোট দেওয়া মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, আমরা এর নিন্দা জানাই।
চেহেলগাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান শরিফ বলেন, 'পুলিশের সামনেই সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হলো। বারবার পুলিশকে অনুরোধ করেও তারা আসেনি।' তিনি বলেন, 'এই অভিযোগ আমরা এমপি ইকবালুর রহিমকেও বলেছি। অবশ্য এ অভিযোগ এমপি ইকবালুর রহিমেরও। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি, এটা বড়ই দুঃখজনক। কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন জানান, ঘটনার সময় আমরা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাই কর্ণাই গ্রামে ঠিকমতো পুলিশের সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল বুধবার দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, 'এ হামলার সঙ্গে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই জড়িত নয়। বরং ছাত্রলীগের কর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত বলেই সেনাবাহিনীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে এবং তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়। পরের দিন স্থানীয় এমপি প্রভাব খাটিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেন।'
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল বলেন, 'ভোট দেওয়ার কারণেই ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা হিন্দু পরিবারগুলোর আক্রমণ, ভাংচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। মানবাধিকার কাউন্সিলের দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনই কাউকে দোষারোপ করতে চাই না, বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে হবে।'
দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈকত পাল জানান, ওই সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যারা আক্রমণ করেছিল, সেইসব 'মালদইয়া'র দোকানপাটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করার চেষ্টা করে। এদিকে এ ঘটনায় দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় ৬০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭০০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। বুধবার সকালে কর্ণাই গ্রামে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএসআই সোহেল রানা বলেন, '১৫ জন সদস্য নিয়ে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। এলাকায় এখনও আতঙ্ক রয়েছে।'
তবে পুলিশের কথায় তারা শান্ত হতে পারেননি, সব সময় প্রাণনাশের ভয়ে রয়েছেন। কর্ণাই গ্রামের মেয়ে দিনাজপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আরা জোসনা জানান, 'ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটার দিকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানতে পারি। ছুটে যাই সদর ইউএনও, কোতোয়ালি থানা ও সর্বশেষ জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু কোনো সাহায্য না পেয়ে রিকশা-ভ্যানে রওনা দিই কর্ণাই গ্রামের দিকে। পথে বাঁশের হাটে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। অনুরোধ করে তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাই। ততক্ষণে সব শেষ। ভাংচুর, লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট। পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলে চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্নাই এলাকার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য অপর্ণা রানী রায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের ভোট দেওয়াই যেন পাপ হয়েছে। এ অপরাধে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবিনা আখতার বলেন, নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ দুঃখজনক। ভোট দেওয়া মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, আমরা এর নিন্দা জানাই।
চেহেলগাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান শরিফ বলেন, 'পুলিশের সামনেই সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি লুটপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হলো। বারবার পুলিশকে অনুরোধ করেও তারা আসেনি।' তিনি বলেন, 'এই অভিযোগ আমরা এমপি ইকবালুর রহিমকেও বলেছি। অবশ্য এ অভিযোগ এমপি ইকবালুর রহিমেরও। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি, এটা বড়ই দুঃখজনক। কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন জানান, ঘটনার সময় আমরা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাই কর্ণাই গ্রামে ঠিকমতো পুলিশের সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল বুধবার দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, 'এ হামলার সঙ্গে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই জড়িত নয়। বরং ছাত্রলীগের কর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত বলেই সেনাবাহিনীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে এবং তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়। পরের দিন স্থানীয় এমপি প্রভাব খাটিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেন।'
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল বলেন, 'ভোট দেওয়ার কারণেই ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা হিন্দু পরিবারগুলোর আক্রমণ, ভাংচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। মানবাধিকার কাউন্সিলের দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনই কাউকে দোষারোপ করতে চাই না, বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে হবে।'
দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈকত পাল জানান, ওই সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যারা আক্রমণ করেছিল, সেইসব 'মালদইয়া'র দোকানপাটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করার চেষ্টা করে। এদিকে এ ঘটনায় দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় ৬০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭০০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। বুধবার সকালে কর্ণাই গ্রামে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএসআই সোহেল রানা বলেন, '১৫ জন সদস্য নিয়ে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। এলাকায় এখনও আতঙ্ক রয়েছে।'
No comments