হরতাল-অবরোধ বন্ধ হোক
নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন আছে, কিন্তু তার পরও এটা বাস্তব যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় জোট এবং জামায়াত-শিবির চক্র এই নির্বাচন বন্ধের জন্য কয়েক মাস ধরে হরতাল-অবরোধ থেকে শুরু করে পেট্রলবোমা-ককটেল ছুড়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্রাকে আগুন দেওয়ার মতো চরম সহিংস আন্দোলন—কোনোটাই বাদ রাখেনি। অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু তার পরও যখন সেই নির্বাচন হয়েই গেল, এখন বিরোধী দলের একটু থেমে তাদের আন্দোলনের কৌশল পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এটা এখন স্পষ্ট যে সহিংস আন্দোলন কোনো ফল দেবে না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এর প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা কী হবে, বিশেষত নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর, সে বিষয়ে বিএনপির কাছে মানুষ দায়িত্বশীল অবস্থানই আশা করে।
কিন্তু এটা দুঃখজনক যে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না নিয়েই বিএনপি-জামায়াত জোট একাদিক্রমে হরতাল-অবরোধ ডেকে চলেছে। নির্বাচনের আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য যে অবরোধ ডাকা হয়েছিল, সেটা তো আছেই, উপরন্তু হরতালও ডাকা হচ্ছে। এর পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এখনো বিচ্ছিন্ন বোমা হামলায় মানুষের শরীর ঝলসে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের হিংসাত্মক কর্মসূচি এখনই বন্ধ করা দরকার। লক্ষণীয় যে বিরোধী দল হরতাল-অবরোধ আহ্বান করলেও রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ শহরে তা কেউ মানছে না। এভাবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল ভেঙে বেরিয়ে পড়তে থাকলে কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির মতো একটি দলের সেই কর্মসূচি দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। সরকারেরও দায়িত্ব কম নয়। বাছবিচারহীনভাবে বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার করে সরকার কার্যত আরও হরতাল-অবরোধ ডেকে আনার পথ প্রশস্ত করছে। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরও মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের কী এমন প্রয়োজন ছিল?
এসব রাজনৈতিক গ্রেপ্তার বন্ধ করে অবিলম্বে বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তি দেওয়া দরকার। অন্যথায় বিরোধী দলের লাগাতার হরতাল-অবরোধের দায় সরকারের ওপরও বর্তাবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের প্রধান দায়িত্ব কিন্তু তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। নির্বাচন প্রতিরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত শতাধিক স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে চরম নিরাপত্তাহীন অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি আগেই প্রস্তুত থাকত, তাহলে কীভাবে দুর্বৃত্তরা সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত কয়েকটি জেলায় বারবার হামলা চালায়? ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো তো সরকার আগে থেকেই জানত। সেখানে যতটা নিরাপত্তা দেওয়া দরকার ছিল, তা কেন দেওয়া হয়নি? এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত এবং কারও অবহেলা থাকলে সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান, অবরোধ-হরতাল বন্ধ করুন। সরকারকে বলি, আর কোনো রাজনৈতিক গ্রেপ্তার ঠিক হবে না।
No comments