যুক্তরাষ্ট্রে এখন মঙ্গল গ্রহের চেয়ে বেশি শীত
ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার অধিকাংশ অঞ্চলে গত মঙ্গলবার জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এই তাপমাত্রা মঙ্গলপৃষ্ঠের চেয়েও কম বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে এবারের এই আবহাওয়া এতটাই শীতল যে সেখানে এক কাপ ফুটন্ত পানি শূন্যে উড়িয়ে দিলে তা মাটিতে নেমে আসার আগেই বরফে পরিণত হয়। মঙ্গলপৃষ্ঠ পরিভ্রমণকারী রোবটযান সেখানকার দৈনিক তাপমাত্রার যে তথ্য-উপাত্ত পাঠাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, লাল গ্রহটির তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ থেকে মাইনাস ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, কিছু অঞ্চলে এখন তাপমাত্রা যে পর্যায়ে নেমেছে, তা মঙ্গলের তাপমাত্রার চেয়েও কম। আরেকটি বাস্তবসম্মত তুলনা হচ্ছে, দক্ষিণ মেরুর অ্যামুন্ডসেন-স্কট নামের একটি স্টেশনে গত মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর একই দিনে শৈত্যপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি। শিকাগোর তাপমাত্রা এতটাই নেমে গিয়েছিল, সেখানকার লিংকন পার্ক চিড়িয়াখানার মেরুভালুকটি বিশেষ ব্যবস্থায় উষ্ণতা নিতে বাধ্য হয়। আর কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে একজন পলাতক কয়েদি একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে অসহনীয় ঠান্ডায় রাত যাপনের পর আবারও কারাগারের উষ্ণতর পরিবেশে ফেরার চেষ্টা করেন।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সব এলাকায় তাপমাত্রা ছিল শূন্যের নিচে। আর ক্রান্তীয় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জেও গতকাল তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। সচরাচর রৌদ্রজ্জ্বল ও উষ্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায়ও ছিল একই অবস্থা। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক শীত পড়েছে মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে। বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বন্ধ রাখা হয়। উড়োজাহাজ, ট্রেন, সড়কসহ প্রায় সব পথেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে গতকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মনটানায় মাইনাস ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, আইওয়া, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, মিনেসোটা, নেব্রাসকা, নর্থ ডাকোটা, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, সাউথ ডাকোটা, ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন অংশের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪০ থেকে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই কমবেশি প্রভাব পড়েছে এই শৈত্যপ্রবাহের। আর এতে ওই এলাকায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ কোটি। এএফপি ও বিবিসি।
No comments