সংখ্যালঘুর নিরাপত্তাহীনতা ও রাষ্ট্রীয় দায় by শরীফ আহমেদ
১৯৭১
সালে এ দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল ২ কোটি ১০ লাখ (প্রায়), আর ২০১৩
সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখে (প্রায়)। স্বাধীনতার ৪৩ বছর
পর এ দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে গেছে প্রায় ২০ শতাংশ। '১৯৫১ সালে এ অঞ্চলে
মোট জনসংখ্যার হিন্দু ছিল ২২ শতাংশ, ২০০১ সালে ৯.২ শতাংশ আর ২০১১ সালে এ
সংখ্যা কমে হয়েছে ৮.৫ শতাংশ (আদমশুমারি রিপোর্ট)।' এখনও বাংলাদেশের অনেক
এলাকার হিন্দুদের জীবন কাটে উচ্ছেদ-উৎকণ্ঠা আর জীবনের নিরাপত্তাহীনতার
আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। এখন ভিন্নমতাদর্শের কারণে ধর্মীয় প্রতিহিংসার শিকার
হওয়ার ভয় তাদের অন্তরাত্মাকে ধাওয়া করে প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত। কী এমন মতাদর্শ
যা একজন মানুষকে অন্যের ঘরে আগুন দিয়ে সোনার সংসারটাকে ভেঙে চুরমার করে
দিতে প্ররোচিত করতে পারে! কী এমন মাইনাস ফর্মুলা যা ভিন্নমতাদর্শীকে মাইনাস
করে একক বিশ্বাসীর রাজত্ব কায়েমের প্রচেষ্টায় কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে এমন
উন্মাদ করে তুলতে পারে!
আজ রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের ব্যর্থতার প্রতিফলন ঘটছে নিত্যনতুন আঙ্গিকে। এ দেশে দিন-দুপুরে, রাতের আঁধারে একদল লোক আরেক গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালায়, বিধ্বস্ত করে বসতভিটা, উপাসনালয়! আর আগুনের দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা লেলিহান শিখা দেখে উন্মত্ত জয়োল্লাস করে একদল মধ্যযুগীয় বর্বররা। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি_ একই ইস্যু, একই ধরনের হামলাকারী, পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ আর শিকার শুধু এই অসহায় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। আমাদের প্রশাসনও বরাবরের মতোই নির্বিকার, কখনও দর্শকের ভূমিকায়, কখনও ওপরঅলাদের নির্দেশে লোক দেখানো ব্যস্ততার ভূমিকায় অবতীর্ণ। কিন্তু সেই রামু থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, পাবনার সাঁথিয়া, বরিশালের চরকাউয়া এবং সর্বশেষ যশোরের অভয়নগরে হিন্দুদের ১২ বাড়িতে আগুন। সব জায়গায় যেন সংখ্যালঘুদের একই পরিণতি। এসব হামলার আক্রমণকারীদের খুঁজে বের করে আজ পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি আমাদের কোনো প্রশাসন।
আমরা আর পত্রিকার পাতায় দেখতে চাই না_ ঘরদুয়ার পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া বাড়ির উঠানে বসা কোনো গৃহকর্ত্রীর করুণ আর্তনাদ আর আরাধনার দেবালয়ের এমন বেদনাঘন দৃশ্য। যে পোড়ায় তার যে দেবতা, আর যার পোড়ে তার যে দেবতা এক ও অভিন্ন সত্তা_ এই বোধ যতদিন না মানবের হৃদয়ে জাগ্রত হবে, ততদিন মানবতার এমন করুণ পরিণতি দেখে ভেতরটা হুহু করে কেঁদে উঠবে। আর নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অক্ষমতা দেখতে দেখতে ১৬ কোটি জনগণ দিনে দিনে হয়ে উঠবে আরও শঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত।
ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে, উচ্ছেদ করে ভিটেমাটি-সম্পত্তি দখলের অভিপ্রায়ে ও রাজনীতির মাঠে ভোটব্যাংকের হিসাব করে এমন বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেসব সংখ্যালঘু বসতি এলাকায় তাদের রক্ষায় পূর্ব নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্বাচনী সহিংসতা এড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ সংখ্যালঘু মনে মনে দৃঢ় প্রশাসনিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করছে সরকারের কাছে। তবে তাদের নিরাপত্তাহীনতার দায় কিংবা এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্র তথা ক্ষমতাসীন সরকারকেই বহন করতে হবে। নতুবা বারংবার সংখ্যালঘুদের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলার প্রতিরোধ-প্রতিকার-প্রতিবাদহীনতার ব্যর্থতায় আরও বহুকাল আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে যাবে। কবি শামসুর রাহমানের সেই পঙ্ক্তিগুলো_ 'তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর, আর কতকাল ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়।'
শরীফ আহমেদ : শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আজ রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের ব্যর্থতার প্রতিফলন ঘটছে নিত্যনতুন আঙ্গিকে। এ দেশে দিন-দুপুরে, রাতের আঁধারে একদল লোক আরেক গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালায়, বিধ্বস্ত করে বসতভিটা, উপাসনালয়! আর আগুনের দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা লেলিহান শিখা দেখে উন্মত্ত জয়োল্লাস করে একদল মধ্যযুগীয় বর্বররা। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি_ একই ইস্যু, একই ধরনের হামলাকারী, পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ আর শিকার শুধু এই অসহায় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। আমাদের প্রশাসনও বরাবরের মতোই নির্বিকার, কখনও দর্শকের ভূমিকায়, কখনও ওপরঅলাদের নির্দেশে লোক দেখানো ব্যস্ততার ভূমিকায় অবতীর্ণ। কিন্তু সেই রামু থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, পাবনার সাঁথিয়া, বরিশালের চরকাউয়া এবং সর্বশেষ যশোরের অভয়নগরে হিন্দুদের ১২ বাড়িতে আগুন। সব জায়গায় যেন সংখ্যালঘুদের একই পরিণতি। এসব হামলার আক্রমণকারীদের খুঁজে বের করে আজ পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি আমাদের কোনো প্রশাসন।
আমরা আর পত্রিকার পাতায় দেখতে চাই না_ ঘরদুয়ার পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া বাড়ির উঠানে বসা কোনো গৃহকর্ত্রীর করুণ আর্তনাদ আর আরাধনার দেবালয়ের এমন বেদনাঘন দৃশ্য। যে পোড়ায় তার যে দেবতা, আর যার পোড়ে তার যে দেবতা এক ও অভিন্ন সত্তা_ এই বোধ যতদিন না মানবের হৃদয়ে জাগ্রত হবে, ততদিন মানবতার এমন করুণ পরিণতি দেখে ভেতরটা হুহু করে কেঁদে উঠবে। আর নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অক্ষমতা দেখতে দেখতে ১৬ কোটি জনগণ দিনে দিনে হয়ে উঠবে আরও শঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত।
ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে, উচ্ছেদ করে ভিটেমাটি-সম্পত্তি দখলের অভিপ্রায়ে ও রাজনীতির মাঠে ভোটব্যাংকের হিসাব করে এমন বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেসব সংখ্যালঘু বসতি এলাকায় তাদের রক্ষায় পূর্ব নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্বাচনী সহিংসতা এড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ সংখ্যালঘু মনে মনে দৃঢ় প্রশাসনিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করছে সরকারের কাছে। তবে তাদের নিরাপত্তাহীনতার দায় কিংবা এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্র তথা ক্ষমতাসীন সরকারকেই বহন করতে হবে। নতুবা বারংবার সংখ্যালঘুদের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলার প্রতিরোধ-প্রতিকার-প্রতিবাদহীনতার ব্যর্থতায় আরও বহুকাল আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে যাবে। কবি শামসুর রাহমানের সেই পঙ্ক্তিগুলো_ 'তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর, আর কতকাল ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়।'
শরীফ আহমেদ : শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments