'জাতীয় ঐকমত্যে'র সরকার রোববার by অমরেশ রায়
নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে সব দলের অংশগ্রহণে
'জাতীয় ঐকমত্যে'র সরকার গঠনের পথেই এগোচ্ছে দশম জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ। নতুন সরকারের শপথ হবে আগামী রোববার।
সরকারি দায়িত্বশীল সূত্র এ তারিখ নিশ্চিত না করলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নতুন
সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের সব আয়োজন নিয়ে রেখেছে। মন্ত্রিসভা গঠনের এ তারিখটি
বদলের সম্ভাবনা কম। নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী জাতীয়
পার্টি 'বিরোধী দলের' আসনে থাকলেও নতুন সরকারে দলটির কয়েকজন নেতা যোগ দিতে
পারেন। এই সরকারে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটবে। মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কত
হবে, তা জানা যায়নি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল বুধবার নির্বাচিত সংসদ
সদস্যদের গেজেট প্রকাশ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শপথ নিচ্ছেন
নবনির্বাচিত এমপিরা। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নবনির্বাচিত সাংসদদের
শপথ পড়াবেন। শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠক বসবে।
এদিকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদ বহাল থাকতেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, সংসদ সদস্যদের শপথ হলেও পুরনো সংসদের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত নতুন সংসদ বসলে তা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন। এ প্রসঙ্গে তারা সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন। তবে যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বিবিসিকে বলেছেন, নবম সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকলেও এ সময়ে শপথ গ্রহণ ও সরকার গঠনে কোনো বাধা নেই। এমপিদের শপথ গ্রহণ ও নতুন সরকার গঠন নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন।
চলমান রাজনৈতিক সংকট, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ও বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুততার সঙ্গেই সরকার গঠনের কাজ শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে গেজেট প্রকাশের একদিন পর আজ বৃহস্পতিবারই নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, নতুন এ সরকারে মহাজোট ও বিদায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রীরা থেকে যাচ্ছেন। তবে বাদ পড়তে যাচ্ছেন মহাজোট সরকারের বিতর্কিত কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এর পাশাপাশি কয়েকজন নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। আর এমন সব সম্ভাবনা ও নানা গুঞ্জন নিয়েই চলেছে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি। গতকাল রাতে রওশন এরশাদের গণভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাননি।
বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের পর সরকার গঠনের এ প্রস্তুতি আরও এক ধাপ এগিয়েছে। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ২(ক) ধারা অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে।
দল ও সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা ঠিক করা হবে। পরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার পর তিনি আহ্বান জানানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন সরকার শপথ নেবে।
রোববার সরকারের শপথ :জানা গেছে, সরকারের 'গ্রিন সিগন্যাল' পেয়ে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের সব রকম প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। রোববার বিকেলে বঙ্গভবনে এই শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নামের তালিকা পাওয়ামাত্র সম্ভাব্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সূত্রমতে, নতুন সরকারে প্রাথমিকভাবে ৪৫ থেকে ৪৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হতে পারে। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সরকারের পরিবহন পুলে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের পরই নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ বিষয়ে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলকে নিয়ে 'জাতীয় ঐকমত্যের সরকার'-এর আদলে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা। এ ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদের সরকারের উদাহরণ দিয়ে তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ওই ধরনের সরকারই করতে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সমকালকে বলেছেন, '১৯৯৬ সালে আমরা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও আ স ম আবদুর রবকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করেছিলাম। এবারও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সব দলকে নিয়েই নতুন সরকার হচ্ছে। আবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসলেও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে তারাও সরকারে যোগ দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এটি তো জাতীয় ঐকমত্যের সরকারই হবে।
কারা থাকছেন, কারা থাকছেন না :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ওই সরকার হবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তার প্রথম সরকারের আদলে 'জাতীয় ঐকমত্যের সরকার'। আর নতুন সরকারে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে দল ও সরকারের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী নতুন কয়েকজনকেও অন্তর্ভুর্ক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
সূত্রমতে, বিদায়ী মহাজোট ও নির্বাচনকালীন সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রীদের প্রায় সবাই থেকে যাচ্ছেন নতুন এ মন্ত্রিসভায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নুুরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখ।
হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নতুন করে মন্ত্রিসভায় আসছেন। তবে নিজ এপিএসের আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে মহাজোট সরকারের রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নতুন মন্ত্রিসভায় থাকার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
শরিক দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নতুন সরকারে থেকে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি_জেপির চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬-এর ঐকমত্যের সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নতুন সরকারের মন্ত্রী করা হচ্ছে_ এটা নিশ্চিত হয়ে আছে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়াকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে এনে টেকনোক্র্যাট কোটায় আবারও মন্ত্রী করা হতে পারে। আর জাতীয় পার্টি এলে দলটি থেকে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে নতুন সরকারেও নেওয়া হতে পারে।
তবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন মন্ত্রিসভায় নাও থাকতে পারেন। তার স্থলে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতের নাম তালিকায় রয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি হওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হককে আইনমন্ত্রী করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ উপদেষ্টা হিসেবেই থাকছেন।
এর বাইরে বিদায়ী মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ডা. দীপু মনি, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ড. হাছান মাহমুদ, শাজাহান খান, মুজিবুল হক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু প্রমুখ আবারও মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পেতে পারেন। তাদের সঙ্গে নতুন করে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মাহবুবউল আলম হানিফ ও আসাদুজ্জামান নূর। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শোনা যাচ্ছে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বীর বাহাদুর, আবদুর রহমান ও অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের নাম।
পুরনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন আবদুল লতিফ বিশ্বাস, রেজাউল করিম হীরা, রমেশ চন্দ্র সেন, আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, আহাদ আলী সরকার ও মোতাহার হোসেন।
এদিকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদ বহাল থাকতেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, সংসদ সদস্যদের শপথ হলেও পুরনো সংসদের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত নতুন সংসদ বসলে তা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন। এ প্রসঙ্গে তারা সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন। তবে যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বিবিসিকে বলেছেন, নবম সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকলেও এ সময়ে শপথ গ্রহণ ও সরকার গঠনে কোনো বাধা নেই। এমপিদের শপথ গ্রহণ ও নতুন সরকার গঠন নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন।
চলমান রাজনৈতিক সংকট, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ও বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুততার সঙ্গেই সরকার গঠনের কাজ শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে গেজেট প্রকাশের একদিন পর আজ বৃহস্পতিবারই নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, নতুন এ সরকারে মহাজোট ও বিদায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রীরা থেকে যাচ্ছেন। তবে বাদ পড়তে যাচ্ছেন মহাজোট সরকারের বিতর্কিত কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এর পাশাপাশি কয়েকজন নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। আর এমন সব সম্ভাবনা ও নানা গুঞ্জন নিয়েই চলেছে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি। গতকাল রাতে রওশন এরশাদের গণভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাননি।
বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের পর সরকার গঠনের এ প্রস্তুতি আরও এক ধাপ এগিয়েছে। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ২(ক) ধারা অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে।
দল ও সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা ঠিক করা হবে। পরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার পর তিনি আহ্বান জানানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন সরকার শপথ নেবে।
রোববার সরকারের শপথ :জানা গেছে, সরকারের 'গ্রিন সিগন্যাল' পেয়ে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের সব রকম প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। রোববার বিকেলে বঙ্গভবনে এই শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নামের তালিকা পাওয়ামাত্র সম্ভাব্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সূত্রমতে, নতুন সরকারে প্রাথমিকভাবে ৪৫ থেকে ৪৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হতে পারে। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সরকারের পরিবহন পুলে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের পরই নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ বিষয়ে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলকে নিয়ে 'জাতীয় ঐকমত্যের সরকার'-এর আদলে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা। এ ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদের সরকারের উদাহরণ দিয়ে তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ওই ধরনের সরকারই করতে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সমকালকে বলেছেন, '১৯৯৬ সালে আমরা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও আ স ম আবদুর রবকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করেছিলাম। এবারও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সব দলকে নিয়েই নতুন সরকার হচ্ছে। আবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসলেও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে তারাও সরকারে যোগ দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এটি তো জাতীয় ঐকমত্যের সরকারই হবে।
কারা থাকছেন, কারা থাকছেন না :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ওই সরকার হবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তার প্রথম সরকারের আদলে 'জাতীয় ঐকমত্যের সরকার'। আর নতুন সরকারে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে দল ও সরকারের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী নতুন কয়েকজনকেও অন্তর্ভুর্ক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
সূত্রমতে, বিদায়ী মহাজোট ও নির্বাচনকালীন সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রীদের প্রায় সবাই থেকে যাচ্ছেন নতুন এ মন্ত্রিসভায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নুুরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখ।
হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নতুন করে মন্ত্রিসভায় আসছেন। তবে নিজ এপিএসের আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে মহাজোট সরকারের রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নতুন মন্ত্রিসভায় থাকার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
শরিক দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নতুন সরকারে থেকে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি_জেপির চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬-এর ঐকমত্যের সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নতুন সরকারের মন্ত্রী করা হচ্ছে_ এটা নিশ্চিত হয়ে আছে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়াকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে এনে টেকনোক্র্যাট কোটায় আবারও মন্ত্রী করা হতে পারে। আর জাতীয় পার্টি এলে দলটি থেকে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে নতুন সরকারেও নেওয়া হতে পারে।
তবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন মন্ত্রিসভায় নাও থাকতে পারেন। তার স্থলে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতের নাম তালিকায় রয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি হওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হককে আইনমন্ত্রী করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ উপদেষ্টা হিসেবেই থাকছেন।
এর বাইরে বিদায়ী মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ডা. দীপু মনি, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ড. হাছান মাহমুদ, শাজাহান খান, মুজিবুল হক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু প্রমুখ আবারও মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পেতে পারেন। তাদের সঙ্গে নতুন করে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মাহবুবউল আলম হানিফ ও আসাদুজ্জামান নূর। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শোনা যাচ্ছে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বীর বাহাদুর, আবদুর রহমান ও অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের নাম।
পুরনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন আবদুল লতিফ বিশ্বাস, রেজাউল করিম হীরা, রমেশ চন্দ্র সেন, আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, আহাদ আলী সরকার ও মোতাহার হোসেন।
No comments