মহাখলনায়ক এরশাদ
রাজনীতির
মঞ্চে একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। নায়ক-প্রতিনায়ক অনেকেই। সবাইকে
ছাড়িয়ে এরশাদই আজ মহাখলনায়ক। দফায় দফায় ইউটার্ন নিয়ে রাজনীতির নাটকের নটরাজ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেন এভারেস্ট বিজয়ী। তবে
সাবেক এ রাষ্ট্রপতির দাবি, বড় দুই দল তাকে মুক্তভাবে রাজনীতি করতে দেয়নি।
সে কারণেই বারবার মন বদল করতে হয়েছে। তবে এরশাদ-ঘনিষ্ঠরা বলেন, জেল এড়াতেই
তাকে ক্ষমতাসীনদের মন জুগিয়ে চলতে হচ্ছে। টানা দুই মাস 'অংশ নেবো না নেবো
না' করেও নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। এরপর টানা দুই সপ্তাহ 'অংশ
নেবো নেবো' করেও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। 'বর্জন' করলেও নির্বাচনে জয়ী
হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গোপনে শপথও নিলেন। এরশাদের নির্বাচন
বর্জন-অংশগ্রহণ-বর্জন পরিক্রমাকে নাটক হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন লোকজন। এ
নাটকের নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক স্বয়ং এরশাদ। এরশাদ কি আদৌ
নির্বাচন বর্জন করেছিলেন? নাকি সব ছিল তার নাটক? এ প্রশ্ন করছেন সবাই। গত
২৩ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের নাটকের শেষ পর্ব
দেখতে শপথ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,
'এরশাদ যদি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেন, তাহলে বলা যাবে_ তিনি আসলেই
নির্বাচন বর্জন করেছেন। কারও সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন থেকে সরে গেছেন।
এরশাদ শপথ নিলে বলতেই হবে_ এখন যা চলছে, তা সবই নাটক। রওশনকে সামনে রেখে
এরশাদ নিজেই এগুলো করিয়েছেন।'
এরশাদ সকালে যা বলেন, বিকেলে তা বদলে ফেলেন। রাতে শোনা যায় নতুন কথা। ১৯৮২ সালে তৎকালীন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুুস সাত্তারের সঙ্গে 'অভিনয়' করে খলনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু তার। রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন মাস পর ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বরর ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েও পরের ছয় দিন পর্দার আড়াল থেকে সব ধরনের চেষ্টা করেন ক্ষমতায় টিকে থাকতে। পতনের পর ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে কারাগার থেকে মুক্তির পর গত ১৭ বছরে বড় দুই দলের সঙ্গে মন বদলের নাটক করে চলেছেন। কখনও ছিলেন বিএনপির সঙ্গী, কখনও আওয়ামী লীগের।
'৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে ক্ষমতার শরিক হয় জাতীয় পার্টি। তিন বছরেই ভেঙে যায় সখ্য। আওয়ামী লীগকে ছেড়ে বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট করেন এরশাদ। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় হওয়ায় সেখান থেকেও মাত্র এক বছরের মাথায় পিঠটান দেন। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতায় বিএনপির সঙ্গে মিত্রতা ভেঙে মুক্তি পান।
২০০১ থেকে ২০০৬_ চারদলীয় জোটের শাসনামলের পুরো সময় 'গৃহপালিত' বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলেন এরশাদ। সরকারের সমালোচনা কিংবা প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সখ্য_ কোনোটিই করেননি। ২০০৭ সালের নির্বাচনের আগে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে আবার স্বরূপে আবির্ভূত হন তিনি। বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের আশ্বাস দিয়েও যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে।
নির্বাচন বাতিল হয়ে জরুরি অবস্থা জারি হলো। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার শীর্ষ নেতারা কারাগারে গেলেও বাইরে রইলেন এরশাদ। গা বাঁচাতে রাজনীতি থেকে অবসরেরও ঘোষণা দেন। দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়েন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আবারও ফিরে আসেন। মহাজোটের শরিক হয়ে ২৭ আসন পেয়ে এরশাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
ব্যাংক-বীমা, ঠিকাদারি, টেলিভিশন লাইসেন্স পেলেও রাষ্ট্রপতি পদ এবং মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় এরশাদের মনে ক্ষোভ জমা ছিল। ক্ষমতার শরিক হলেও জাতীয় পার্টিকে মূল্যায়ন করা হয়নি_ এ অভিযোগ তুলে সরকারের কড়া সমলোচনায় মুখর হন। সরকারে অংশীদারিত্ব না ছাড়লেও পদ্মা সেতু, হলমার্ক, রামপাল ও হেফাজত ইস্যুতে রীতিমতো দাপুটে অভিনয় করেন।
গত জুন-জুলাইয়ে পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর দলটির সঙ্গে জোটের চেষ্টা করেন এরশাদ। প্রত্যাশা অনুযায়ী ৬০ আসন এবং রাষ্ট্রপতি পদ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি না পেয়ে ১৮ দলে যাওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবকে 'যথেষ্ট' ও 'স্পষ্ট' বললেও ২৯ দিন পর জাতীয় পার্টির সাত নেতা সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা হন।
এর আগের এক সপ্তাহে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ৯ নভেম্বর বলেন, 'আওয়ামী লীগের অধীনে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে অংশ নিলে মানুষ থুতু দেবে।' পরদিন বলেন, 'জেলে মারা গেলেও আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে জাতীয় বেঈমান হবো না।' ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে হেফাজত আমির শাহ্ আহমদ শফীর দোয়া নিতে যান। সেখানেও একই কথা বলেন। ২৩ ঘণ্টার ব্যবধানে অবস্থান বদলে ফেলেন এরশাদ। ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ঘোষণা দেন_ কে নির্বাচনে এলো, কে এলো না; তা দেখার সময় নেই। নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি।
এরশাদ নাটক এখানেই শেষ নয়। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪৮ আসনে জাতীয় পার্টির ২৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৩ ডিসেম্বর এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২৭ ঘণ্টার অজ্ঞাতবাসে থেকে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
এ পর্যায়ে নাটকের দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও রওশনের নেতৃত্বে দলটির ৮৫ প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যান। বিনা বাধায় এমপি হতে ভোল পাল্টে নির্বাচনে অংশ নেন। নাটকের বড় চমক ছিল এরশাদের 'আটক' আতঙ্ক। ১২ ডিসেম্বর এরশাদকে তার বারিধারার বাসভবন থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমইচে নিয়ে যায় র্যাব। গতকাল সিএমএইচ থেকে এসে শপথ নিয়ে আবার হাসপাতালে ফিরে যান। এসব ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নিন্দুকেরা বলেছেন_ বেঁচে থাকুন এরশাদ। তার মতো খলনায়ক আর হবে না।
এরশাদ সকালে যা বলেন, বিকেলে তা বদলে ফেলেন। রাতে শোনা যায় নতুন কথা। ১৯৮২ সালে তৎকালীন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুুস সাত্তারের সঙ্গে 'অভিনয়' করে খলনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু তার। রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন মাস পর ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বরর ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েও পরের ছয় দিন পর্দার আড়াল থেকে সব ধরনের চেষ্টা করেন ক্ষমতায় টিকে থাকতে। পতনের পর ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে কারাগার থেকে মুক্তির পর গত ১৭ বছরে বড় দুই দলের সঙ্গে মন বদলের নাটক করে চলেছেন। কখনও ছিলেন বিএনপির সঙ্গী, কখনও আওয়ামী লীগের।
'৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে ক্ষমতার শরিক হয় জাতীয় পার্টি। তিন বছরেই ভেঙে যায় সখ্য। আওয়ামী লীগকে ছেড়ে বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট করেন এরশাদ। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় হওয়ায় সেখান থেকেও মাত্র এক বছরের মাথায় পিঠটান দেন। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতায় বিএনপির সঙ্গে মিত্রতা ভেঙে মুক্তি পান।
২০০১ থেকে ২০০৬_ চারদলীয় জোটের শাসনামলের পুরো সময় 'গৃহপালিত' বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলেন এরশাদ। সরকারের সমালোচনা কিংবা প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সখ্য_ কোনোটিই করেননি। ২০০৭ সালের নির্বাচনের আগে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে আবার স্বরূপে আবির্ভূত হন তিনি। বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের আশ্বাস দিয়েও যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে।
নির্বাচন বাতিল হয়ে জরুরি অবস্থা জারি হলো। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার শীর্ষ নেতারা কারাগারে গেলেও বাইরে রইলেন এরশাদ। গা বাঁচাতে রাজনীতি থেকে অবসরেরও ঘোষণা দেন। দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়েন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আবারও ফিরে আসেন। মহাজোটের শরিক হয়ে ২৭ আসন পেয়ে এরশাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
ব্যাংক-বীমা, ঠিকাদারি, টেলিভিশন লাইসেন্স পেলেও রাষ্ট্রপতি পদ এবং মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় এরশাদের মনে ক্ষোভ জমা ছিল। ক্ষমতার শরিক হলেও জাতীয় পার্টিকে মূল্যায়ন করা হয়নি_ এ অভিযোগ তুলে সরকারের কড়া সমলোচনায় মুখর হন। সরকারে অংশীদারিত্ব না ছাড়লেও পদ্মা সেতু, হলমার্ক, রামপাল ও হেফাজত ইস্যুতে রীতিমতো দাপুটে অভিনয় করেন।
গত জুন-জুলাইয়ে পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর দলটির সঙ্গে জোটের চেষ্টা করেন এরশাদ। প্রত্যাশা অনুযায়ী ৬০ আসন এবং রাষ্ট্রপতি পদ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি না পেয়ে ১৮ দলে যাওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবকে 'যথেষ্ট' ও 'স্পষ্ট' বললেও ২৯ দিন পর জাতীয় পার্টির সাত নেতা সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা হন।
এর আগের এক সপ্তাহে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ৯ নভেম্বর বলেন, 'আওয়ামী লীগের অধীনে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে অংশ নিলে মানুষ থুতু দেবে।' পরদিন বলেন, 'জেলে মারা গেলেও আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে জাতীয় বেঈমান হবো না।' ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে হেফাজত আমির শাহ্ আহমদ শফীর দোয়া নিতে যান। সেখানেও একই কথা বলেন। ২৩ ঘণ্টার ব্যবধানে অবস্থান বদলে ফেলেন এরশাদ। ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ঘোষণা দেন_ কে নির্বাচনে এলো, কে এলো না; তা দেখার সময় নেই। নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি।
এরশাদ নাটক এখানেই শেষ নয়। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪৮ আসনে জাতীয় পার্টির ২৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৩ ডিসেম্বর এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২৭ ঘণ্টার অজ্ঞাতবাসে থেকে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
এ পর্যায়ে নাটকের দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও রওশনের নেতৃত্বে দলটির ৮৫ প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যান। বিনা বাধায় এমপি হতে ভোল পাল্টে নির্বাচনে অংশ নেন। নাটকের বড় চমক ছিল এরশাদের 'আটক' আতঙ্ক। ১২ ডিসেম্বর এরশাদকে তার বারিধারার বাসভবন থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমইচে নিয়ে যায় র্যাব। গতকাল সিএমএইচ থেকে এসে শপথ নিয়ে আবার হাসপাতালে ফিরে যান। এসব ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নিন্দুকেরা বলেছেন_ বেঁচে থাকুন এরশাদ। তার মতো খলনায়ক আর হবে না।
No comments