তুরস্কের দুই নেতার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে
দুর্নীতির কেলেঙ্কারি নাড়িয়ে দিয়েছে তুরস্কের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে। বিশেষ করে ওই ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা এমনটাই দেখতে পাচ্ছেন। এই দুই নেতা কখনোই প্রকাশ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলেও তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য অনেক দূর গড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে তুরস্কের বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়ে এরদোয়ান ও গুলের মধ্যে মতপার্থক্য হলেও বিষয়টি তাঁরা চেপে রাখার চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়েছে। এরদোয়ানের ১১ বছরের শাসনকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে ওই দুর্নীতি তদন্তের ঘটনা। উদারপন্থী দৈনিক র্যাডিকাল-এর কলামলেখক ওরাল কালিসলার বলেন, গুল বর্তমানে এমন একটি অবস্থান নেওয়ার পক্ষে, যাতে চলমান বিরোধ রক্তক্ষয়ী রূপ না নেয়। এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় হবে না, যদি তিনি এই বিষয়টির ব্যাপারে আরও বেশি জোর দেন। এরদোয়ানের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ওই কেলেঙ্কারি গত মাসে প্রকাশ্যে আসে। দুর্নীতির ঘটনায় তদন্তের কারণে বিপদে পড়া এরদোয়ান বর্তমানে দেশটির বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। এরদোয়ান এই তদন্তের ঘটনাকে তুরস্কের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করার একটি ‘কলঙ্কময় অপপ্রচার’ মনে করেন। তিনি এটাকে ‘বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান’ বলেও আখ্যা দেন। তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান অব্যাহতভাবে তুরস্কের মুয়াম্মার আক্কাস নামের একজন সরকারি কৌঁসুলিকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন।
আক্কাস জানান, তাঁকে ওই দুর্নীতির তদন্তে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া-সংক্রান্ত একটি নতুন পুলিশ বিধিকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেন তিনি। অবশ্য পরে ওই বিধি বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট গুল প্রথম থেকেই এ বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত রয়েছেন। তবে প্রথমবারের মতো তিনি নীরবতা ভেঙে দেশের বিচার বিভাগের পক্ষে সাফাই গান। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে অবশ্যই সরকারের হস্তক্ষেপের আওতামুক্ত রাখতে হবে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামনে রেখে তুরস্কের নেতৃত্বের মধ্যে এই উত্তেজনা শুরু হলো। আগামী মার্চে দেশটিতে স্থানীয় এবং আগস্ট মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ২০০২ সাল থেকে টানা তিনটি নির্বাচনে জয়ী প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান চতুর্থ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। দলের বিধিতে এ ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের দিকে দৃষ্টি দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। আঙ্কারার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিওবিবির গবেষক নিহাত আলি ওজকান মনে করেন, যদি এরদোয়ান ও গুলের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তাহলে দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে সৃষ্ট সংকট গুলকে সুবিধা দেবে। তিনি বলেন, ‘এই নতুন পরিস্থিতি গুলের জন্য একটা সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য, এরদোয়ানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অভিলাষ আরেকটি কথা চাউর হচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে, গুল প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে প্রেসিডেন্ট গুল এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
No comments