জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
উচ্চ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি রাজনৈতিক বিবেচনা অগ্রাধিকার পায়, নিম্ন পদেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার উপায় নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যিনি আসীন আছেন, তিনি নিজে ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকলে সেটি পদায়নের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের উপাচার্যের আমলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতির ব্যাপক অভিযোগ ছিল। আশা করা গিয়েছিল যে নতুন উপাচার্যের আমলে সে রকম কিছু হবে না। কিন্তু গতকাল প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী সেকশন অফিসার পদে যে ১০ জন এবং স্টোরকিপার পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে নয়জনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। ছাত্রলীগের ৫০ জন নেতা-কর্মীসহ ৪৭০ জন আবেদন করলেও ছাত্রলীগের বাইরের প্রায় সবাই বঞ্চিত হয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নাম শুনলেই বিশ্বজিতের রক্তাপ্লুত চেহারা ভেসে ওঠে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মীরাই তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন। সম্প্রতি বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায়ে আটজনকে ফাঁসি এবং ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই দণ্ডিত আসামিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্ক কী ছিল, সেটাও তদন্ত করা দরকার। আরও উদ্বেগজনক হলো, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এই নিয়োগের পেছনেও উৎ কোচ-বাণিজ্য কাজ করেছে। নিয়োগবঞ্চিত ছাত্রলীগের নেতাদের অভিযোগ, অর্থ দিতে না পারার কারণে তাঁদের চাকরি হয়নি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি অতি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিমাত্রিক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও উৎ কোচ দিয়ে চাকরি নেন, তাঁরা কখনোই অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন না। যেখানে চারজনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১০ জনের নিয়োগকে উপাচার্য মহোদয় দোষের মনে করেন না; তাঁর কাছে ন্যায়বিচার আশা করাও বৃথা। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক নিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করা এবং স্থগিত রাখার দাবি জানাচ্ছি। তবে সেই তদন্ত হতে হবে বাইরের কাউকে দিয়ে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
No comments