দেবযানী বিতর্কের অবসান
মধুরেন সমাপয়েত বলা হয়তো ঠিক হবে না। তবে এটুকু অবশ্যই বলা যেতে পারে, কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ের ঘরে ফেরার মধ্য দিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা টানাপোড়েনের অবসান ঘটেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক স্তরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের দরুন সেটি সম্ভব হলো। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ গতকাল শনিবার বলেন, ‘সম্পর্কহানি বা জেদাজেদির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যেমন এগিয়ে চলেছে, তেমনই চলবে।’ আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেন পিসাকি বলেন, ‘আশা করি বিতর্কের অবসান ঘটল। আশা করব, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ভারত আরও ইতিবাচক করে তুলবে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রে দেবযানীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা প্রত্যাহার হচ্ছে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, তিনি আর কূটনৈতিক দায়মুক্তি পাবেন না এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। দেবযানীর যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগে তাঁকে ও ভারত সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মার্কিন আদালতে কাগজপত্র দাখিল করা ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার অনুমতি পাবেন না। অভিভাসন ব্যবস্থায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে তিনি আর ভিসা না পান। এদিকে ভিসা জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে দেবযানীর আইনজীবী নিউইয়র্কের আদালতে একটি আবেদন করেছেন। দুই দেশের মধ্যে শেষ পর্যন্ত যা হলো, তা নিতান্তই রাজনৈতিক-কূটনৈতিক বোঝাপড়া। লক্ষণীয়, এই সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শিষ্টাচার ও শালীনতার বেড়া কোনো দেশই লঙ্ঘন করেনি। দুই দেশই ঠিক করেছে, এ নিয়ে কেউই আর জল ঘোলা করবে না। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম আইন অত্যন্ত কঠোর। বিচার বিভাগীয় সেই এখতিয়ারে সরকারি হস্তক্ষেপ সম্ভব নয়। কাজেই দেবযানী গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহারের সম্ভাবনা যে কম, ভারত তা বুঝেছিল। কিন্তু যেভাবে দেবযানীকে গ্রেপ্তার ও তল্লাশি করা হয় এবং হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হয়,
তা নিয়ে ভারতের ক্ষোভ ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র গত শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও দুই দেশের সম্পর্কের খাতিরে এক কূটনীতিকের সঙ্গে এই আচরণ আমাদের পক্ষে মানা অসম্ভব ছিল। বিশেষ করে ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র।’ আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এবং বিরূপ জনমতের দরুন রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা যে ভারতকে অনমনীয় হতে বাধ্য করেছে, মার্কিন প্রশাসন শেষ পর্যন্ত তা অনুধাবন করে। ফলে ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না’ গোছের এই সমঝোতা সূত্রে দুই দেশই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়। দেবযানী নতুন পাসপোর্ট ও জি-১ ভিসা নিয়ে শুক্রবার রাতে ভারতে ফেরেন। দিল্লিতে নিযুক্ত দেবযানীরই মতো কনসাল পদমর্যাদার ওয়েন মে-কে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে কাউকেই ‘পারসন নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়নি। তবে ওয়েনের ক্ষেত্রে দেশে ফেরার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে ওয়েনের নাম সরকারিভাবে ভারত ঘোষণা করবে না। ওয়েনকে ফেরত পাঠানোর কারণ, দেবযানীকে গ্রেপ্তারের আগে তাঁর পরিচারিকার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে এই ওয়েনই সহায়তা করেছিলেন। এই তৎপরতাকেই ভারত চক্রান্ত বলে মনে করছে। দেবযানী ভারতে ফিরে কোনো বিবৃতি দেননি। তিনি ও তাঁর পরিবার শুধু সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। দেবযানী দেশে ফিরলেও তাঁর পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই থাকছে।
No comments