সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে!
২৯
ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘাত ও
নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিএনপি, সুশীল সমাজ ও
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। সময় যত যাচ্ছে উত্তেজনা ও উদ্বেগ ততই বাড়ছে। সেই
সঙ্গে বাড়ছে উৎকণ্ঠাও। দুই পক্ষেও মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ব্যাপক সংঘাতের
আশঙ্কায় সরকার ও বিএনপি বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার জানমালের
নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিবে।
কোনো ধরনের ছাড় দিবে না। এই জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যতটা কঠোর হওয়া সম্ভব
তা হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা ২৯ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে
প্রস্তুতিও সম্পন্ন করছে। অবস্থা বুঝে আরো ব্যবস্থা নিবে। সরকারি দলের
একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে ঢাকায় নয়াপল্টনের সামনে
দাঁড়ানে না পারেন ও যেতে না পারেন এই জন্য সব ব্যবস্থা করতে হলেও তারা তা
করবে। রক্ত দিয়ে হলেও কর্মসূচি ব্যর্থ করে দিবেন।
অন্য দিকে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকেও সংঘাতের আশঙ্কায় ও সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করতে না দিতে নয়াপল্টনে তাকে যেতে দিবে না। ওই দিন তাকে বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না। নয়াপল্টনে গেলে ও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে আসলে তিনি উস্কে দিলে সেখানে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন বানচাল করার জন্য ওই সমাবেশ থেকে যে কোনো ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা হতে পারে। তাদের টার্গেট করেও নাশকতার ঘটনা ঘটানো হতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়, সরকারি অফিসেও হামলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার আশঙ্কা করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সরকারের কাছে এই ধরনের আশঙ্কার কথাই জানিয়েছে। সরকারের কাছে ওই দিনের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলেও তথ্য রয়েছে। তারা জানতে পেরেছে বিএনপি ওই দিন মরণ কামড় দিবে। এই কারণে সরকার কোনোভাবেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতোমধ্যে ডিএমপি কমিশনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপিকে নয়াপল্টনে ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশ করার অনুমতি দিবেন না। ওই দিন কর্মসূচি পালন করতে দিলে নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে মনে করে তারা বিভিন্ন নাশকতার আশঙ্কায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে এরপরও তাদের কাছে খবর রয়েছে বিএনপি ও ১৮ দলের নেতাকর্মীরা এবং সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকায় আসার চেষ্টা করবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন। তারা সকল বাধা উপেক্ষা করে সেখানে যাবেন। গতকাল পর্যন্ত নেতাদের প্রতি সুস্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা বেগম খালেদা জিয়ার দিক থেকে ছিল না। গতকাল তিনি এক ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে সেই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দেড় মিনিটের ওই ভিডিও বার্তাতে বেগম খালেদা জিয়া সকল বাধা উপেক্ষা করে ২৯ ডিসেম্বর রোববার গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান। গতকাল বিকেলে ভিডিও বার্তায় খালেদা জিয়া আরো বলেছেন, আমি আপনাদের পাশে আছি, থাকব সব সময়। যদি আমি আপনাদের পাশে থাকতে না পারি, তাহলেও আপনারা আপনাদের এই কর্মসূচি, এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দেশে আমরা গণতন্ত্র এনেছি, আবারও গণতন্ত্র আনব। আরো বলেছেন, সেদিন আর বেশি দূরে নেই, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। তিনি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মুবীন চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখন কার্যত অন্তরীণ রয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে আমাদের কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। তার বাসায় তার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দিচ্ছেন না। এতে বোঝা যায় সরকার কি করতে চাইছে। তবে এইভাবে আন্দোলন থামানো যাবে না। এদিকে সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়াও আশঙ্কা করছেন সরকার তাকে নয়াপল্টনে যেতে দিবেন না। এই কারণেই তিনি আগাম বার্তা পাঠান। তার বার্তা পাওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো উৎসাহ নিয়ে ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সফল করার জন্য বলেছেন। এতে করে এখন ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, যেখানেই তারা বাধার মুখে পড়বেন। সেখানেই অবস্থান নিবেন। কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করবেন। যে কোনো মূল্যেই কর্মসূচি তাদেরকে সফল করতে হবে। এটাই নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় সমাবেশ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে সবার কাছে প্রমাণ করতে হবে বিএনপির চেয়ে সরকারি দলের চেয়ে অনেক জনপ্রিয়। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন চাইছে সেটা এই দেশের মানুষও চাইছে। সরকারের কথাকে মিথ্যে প্রমাণ করতে হবে এই সব বিষয়সহ তারা নির্বাচন প্রতিহত করার ও এই নির্বাচন যে জনগণ মানে না সেই জন্য তারা প্রমাণ দিতে চাইছেন। বিএনপির এক নেতা বলেন, এই কর্মসূচি সফল করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রাখবো। সরকার যদি আমাদেরকে নির্যাতন করে ও বাধা দেয় আমরাও ছাড়বো না। আশা করি সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিবে। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণেই সবাই মনে করছে সংঘাত এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দল যে অবস্থানে রয়েছে দুই দল দুই দলকে প্রতিহত করার মতো মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। একদল আরেক দলের কর্মসূচি ও উদ্দেশ্য সফল হতে দিবে না। এই কারণে দুই দলের মধ্যে এনিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হতে পারে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে থাকা লাঠিও তারা মারপিঠের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
বেগম খালেদা জিয়া ভিডিও বার্তাতে আরো বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা হাতে আমি আপনাদের প্রতি ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে অনুরোধ করছি। আশা করি, সব প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ওই দিন ঢাকায় গণতন্ত্র রক্ষার সমাবেশে শরিক হবেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের প্রহসনের নির্বাচনে শরিক হতে না বলতে হবে। তা বলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে গণতন্ত্রকে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকে হ্যাঁ বলার জন্যও আহ্বান জানাই।
এদিকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ম্যাডাম কোনো কারণে সমাবেশে নাও থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। এই কারণে বলেছেন তিনি না থাকলেও এই কর্মসূচিতে শরিক হয়ে আন্দোলন সফল করতে নির্দেশ দেন।
এর আগে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, জন নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি এই কথার বলার পর বিকেলেই বেগম খালেদা জিয়া ভিডিও বার্তা পাঠান। গতকাল দুপুরের আগে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার গণমাধ্যমকে জানান, সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সময়মতো বিএনপিকে জানানো হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করছে। সময়মতো জানানো হবে। ওই দিন পুলিশের ভূমিকা কি হবে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ জনস্বার্থকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছে এই বিষয়ে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। জনস্বার্থ সমুন্নত রেখেই পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সারা দেশে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বলেছেন, পুলিশ বিধি অনুসারেই অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার করছে। কেউ বিধি না মানে, তাহলে সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই একটি চক্র দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে।
উল্লেখ, বিএনপি চেয়ারপারন বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর বিএনপির চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি, সহযোগিতা ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদনও করেন। ওই সময়ে কমিশনার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কিন্তু ওই কর্মসূচির পরই সরকারের বিভিন্ন নেতারা স্পষ্ট করেই বলে দেন বিএনপির কর্মসূচি সফল করতে না দেওয়ার।
এদিকে বিএনপির সূত্র জানায়, সরকার বিএনপিকে বাধা দিবে সমাবেশ করতে দিবে না এটা আমরা জেনেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। বিএনপিরসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। ঢাকায় অনে্েক আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বিএনপির নেতারা যদিও অভিযোগ করছেন বিভিন্ন স্থানে বাস-লঞ্চ বন্ধ রেখে নেতাকর্মীদের ঢাকা আসার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এরপর বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সমাবেশ করতে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না। কঠোর কর্মসূচি হবেই। বেগম খালেদা জিয়া তার ভিডিও বার্তায় স্বাধীনতার যুদ্ধের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়র মাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা হাতে আমি আপনাদের প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সমবেত হতে অনুরোধ করছি। তিনি সরকার পতনেরও ডাক দিয়েছেন বলেছেন, আমি আপনাদের পাশে থাকতে না পারি, তাহলেও আপনারা এই কর্মসূচি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বর্তমান সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, কোনো শক্তিই ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে বাধা দিতে পারবে না। গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য এই কর্মসূচি অবশ্যই পালন করা হবে। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ডিএমপির কাছে লিখিতভাবে অনুমতি চেয়েছি। এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো উত্তর পাইনি। তবে আশা করছি, পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি পাব।
সূত্র জানায়, বিএনপির নেতারা এখন যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করার জন্য কাজ করছেন। তারা মাঠে না থাকলেও গোপনে থেকেই কাজ করছেন। আর এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারাও বসে নেই। তারাও সমাবেশ ঠেকানোর জন্য সব ব্যবস্থা করছেন। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত ও বন্ধ করার ক্ষমতা বিরোধী দলের নেই। এত অবরোধ দিলেন, এত কর্মসূচি দিলেন, নির্বাচন কি বন্ধ করতে পেরেছেন? রোববারের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৭১ সালের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সময় প্রস্তাব দিয়েছিলাম তফসিল ১০ দিন পিছিয়ে দেব। নির্বাচনে আসুন। রাজি হলেন না। বললেন, তফসিল স্থগিত করতে হবে। বলা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে আসুন। তাতেও তাদের না। বললেন, শেখ হাসিনার অধীন ছাড়া ক, খ যে কারও অধীনে নির্বাচনে যাব। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই শেখ হাসিনার অধীনে তিনি নির্বাচনে আসেননি। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এসব নৈরাজ্য সহিংসতা বন্ধ করুন। পরিণতি ভালো হবে না।
সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচি সফল করার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তা ব্যর্থ করার সব উদ্যোগ নেওয়াতেই এখন উদ্বেগ আরো বাড়ছে। (আমাদের সময়.কম)
অন্য দিকে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকেও সংঘাতের আশঙ্কায় ও সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করতে না দিতে নয়াপল্টনে তাকে যেতে দিবে না। ওই দিন তাকে বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না। নয়াপল্টনে গেলে ও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে আসলে তিনি উস্কে দিলে সেখানে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন বানচাল করার জন্য ওই সমাবেশ থেকে যে কোনো ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা হতে পারে। তাদের টার্গেট করেও নাশকতার ঘটনা ঘটানো হতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়, সরকারি অফিসেও হামলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার আশঙ্কা করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সরকারের কাছে এই ধরনের আশঙ্কার কথাই জানিয়েছে। সরকারের কাছে ওই দিনের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলেও তথ্য রয়েছে। তারা জানতে পেরেছে বিএনপি ওই দিন মরণ কামড় দিবে। এই কারণে সরকার কোনোভাবেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতোমধ্যে ডিএমপি কমিশনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপিকে নয়াপল্টনে ২৯ ডিসেম্বর সমাবেশ করার অনুমতি দিবেন না। ওই দিন কর্মসূচি পালন করতে দিলে নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে মনে করে তারা বিভিন্ন নাশকতার আশঙ্কায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে এরপরও তাদের কাছে খবর রয়েছে বিএনপি ও ১৮ দলের নেতাকর্মীরা এবং সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকায় আসার চেষ্টা করবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন। তারা সকল বাধা উপেক্ষা করে সেখানে যাবেন। গতকাল পর্যন্ত নেতাদের প্রতি সুস্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা বেগম খালেদা জিয়ার দিক থেকে ছিল না। গতকাল তিনি এক ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে সেই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দেড় মিনিটের ওই ভিডিও বার্তাতে বেগম খালেদা জিয়া সকল বাধা উপেক্ষা করে ২৯ ডিসেম্বর রোববার গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান। গতকাল বিকেলে ভিডিও বার্তায় খালেদা জিয়া আরো বলেছেন, আমি আপনাদের পাশে আছি, থাকব সব সময়। যদি আমি আপনাদের পাশে থাকতে না পারি, তাহলেও আপনারা আপনাদের এই কর্মসূচি, এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দেশে আমরা গণতন্ত্র এনেছি, আবারও গণতন্ত্র আনব। আরো বলেছেন, সেদিন আর বেশি দূরে নেই, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। তিনি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মুবীন চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখন কার্যত অন্তরীণ রয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে আমাদের কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। তার বাসায় তার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দিচ্ছেন না। এতে বোঝা যায় সরকার কি করতে চাইছে। তবে এইভাবে আন্দোলন থামানো যাবে না। এদিকে সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়াও আশঙ্কা করছেন সরকার তাকে নয়াপল্টনে যেতে দিবেন না। এই কারণেই তিনি আগাম বার্তা পাঠান। তার বার্তা পাওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো উৎসাহ নিয়ে ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সফল করার জন্য বলেছেন। এতে করে এখন ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, যেখানেই তারা বাধার মুখে পড়বেন। সেখানেই অবস্থান নিবেন। কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করবেন। যে কোনো মূল্যেই কর্মসূচি তাদেরকে সফল করতে হবে। এটাই নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় সমাবেশ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে সবার কাছে প্রমাণ করতে হবে বিএনপির চেয়ে সরকারি দলের চেয়ে অনেক জনপ্রিয়। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন চাইছে সেটা এই দেশের মানুষও চাইছে। সরকারের কথাকে মিথ্যে প্রমাণ করতে হবে এই সব বিষয়সহ তারা নির্বাচন প্রতিহত করার ও এই নির্বাচন যে জনগণ মানে না সেই জন্য তারা প্রমাণ দিতে চাইছেন। বিএনপির এক নেতা বলেন, এই কর্মসূচি সফল করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রাখবো। সরকার যদি আমাদেরকে নির্যাতন করে ও বাধা দেয় আমরাও ছাড়বো না। আশা করি সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিবে। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণেই সবাই মনে করছে সংঘাত এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দল যে অবস্থানে রয়েছে দুই দল দুই দলকে প্রতিহত করার মতো মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। একদল আরেক দলের কর্মসূচি ও উদ্দেশ্য সফল হতে দিবে না। এই কারণে দুই দলের মধ্যে এনিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হতে পারে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে থাকা লাঠিও তারা মারপিঠের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
বেগম খালেদা জিয়া ভিডিও বার্তাতে আরো বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা হাতে আমি আপনাদের প্রতি ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে অনুরোধ করছি। আশা করি, সব প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ওই দিন ঢাকায় গণতন্ত্র রক্ষার সমাবেশে শরিক হবেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের প্রহসনের নির্বাচনে শরিক হতে না বলতে হবে। তা বলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে গণতন্ত্রকে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকে হ্যাঁ বলার জন্যও আহ্বান জানাই।
এদিকে বিএনপির এক নেতা বলেন, ম্যাডাম কোনো কারণে সমাবেশে নাও থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। এই কারণে বলেছেন তিনি না থাকলেও এই কর্মসূচিতে শরিক হয়ে আন্দোলন সফল করতে নির্দেশ দেন।
এর আগে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, জন নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি এই কথার বলার পর বিকেলেই বেগম খালেদা জিয়া ভিডিও বার্তা পাঠান। গতকাল দুপুরের আগে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার গণমাধ্যমকে জানান, সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সময়মতো বিএনপিকে জানানো হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করছে। সময়মতো জানানো হবে। ওই দিন পুলিশের ভূমিকা কি হবে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ জনস্বার্থকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছে এই বিষয়ে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। জনস্বার্থ সমুন্নত রেখেই পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সারা দেশে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বলেছেন, পুলিশ বিধি অনুসারেই অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার করছে। কেউ বিধি না মানে, তাহলে সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই একটি চক্র দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে।
উল্লেখ, বিএনপি চেয়ারপারন বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর বিএনপির চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি, সহযোগিতা ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদনও করেন। ওই সময়ে কমিশনার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কিন্তু ওই কর্মসূচির পরই সরকারের বিভিন্ন নেতারা স্পষ্ট করেই বলে দেন বিএনপির কর্মসূচি সফল করতে না দেওয়ার।
এদিকে বিএনপির সূত্র জানায়, সরকার বিএনপিকে বাধা দিবে সমাবেশ করতে দিবে না এটা আমরা জেনেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। বিএনপিরসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। ঢাকায় অনে্েক আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বিএনপির নেতারা যদিও অভিযোগ করছেন বিভিন্ন স্থানে বাস-লঞ্চ বন্ধ রেখে নেতাকর্মীদের ঢাকা আসার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এরপর বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সমাবেশ করতে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না। কঠোর কর্মসূচি হবেই। বেগম খালেদা জিয়া তার ভিডিও বার্তায় স্বাধীনতার যুদ্ধের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়র মাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা হাতে আমি আপনাদের প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সমবেত হতে অনুরোধ করছি। তিনি সরকার পতনেরও ডাক দিয়েছেন বলেছেন, আমি আপনাদের পাশে থাকতে না পারি, তাহলেও আপনারা এই কর্মসূচি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বর্তমান সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, কোনো শক্তিই ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে বাধা দিতে পারবে না। গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য এই কর্মসূচি অবশ্যই পালন করা হবে। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ডিএমপির কাছে লিখিতভাবে অনুমতি চেয়েছি। এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো উত্তর পাইনি। তবে আশা করছি, পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি পাব।
সূত্র জানায়, বিএনপির নেতারা এখন যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করার জন্য কাজ করছেন। তারা মাঠে না থাকলেও গোপনে থেকেই কাজ করছেন। আর এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারাও বসে নেই। তারাও সমাবেশ ঠেকানোর জন্য সব ব্যবস্থা করছেন। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত ও বন্ধ করার ক্ষমতা বিরোধী দলের নেই। এত অবরোধ দিলেন, এত কর্মসূচি দিলেন, নির্বাচন কি বন্ধ করতে পেরেছেন? রোববারের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৭১ সালের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সময় প্রস্তাব দিয়েছিলাম তফসিল ১০ দিন পিছিয়ে দেব। নির্বাচনে আসুন। রাজি হলেন না। বললেন, তফসিল স্থগিত করতে হবে। বলা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে আসুন। তাতেও তাদের না। বললেন, শেখ হাসিনার অধীন ছাড়া ক, খ যে কারও অধীনে নির্বাচনে যাব। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই শেখ হাসিনার অধীনে তিনি নির্বাচনে আসেননি। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এসব নৈরাজ্য সহিংসতা বন্ধ করুন। পরিণতি ভালো হবে না।
সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচি সফল করার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তা ব্যর্থ করার সব উদ্যোগ নেওয়াতেই এখন উদ্বেগ আরো বাড়ছে। (আমাদের সময়.কম)
No comments