দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি-অরবিন্দ
রামলীলা ময়দানে শনিবার দিল্লির সপ্তম এবং কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন আম-আদমি পার্টির (এএপি) অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন আম-আদমির আরও ছ’জন- মণীশ সিসোদিয়া, রাখী বিড়লা, সোমনাথ ভারতী, সৌরভ ভরদ্বাজ, সত্যেন্দ্রকুমার জৈন এবং গিরিশ সোনি। তারা কে কোন দফতরের দায়িত্ব পেলেন, দুপুরের পরপরই তাও জানিয়ে দেয়া হয় দলের তরফ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম ভাষণে অরবিন্দ বলেন, ‘মন্ত্রী হতে আসিনি। এসেছি সেবা করতে। দেশ থেকে দুর্নীতি বিদায় করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন।’ এই সরকার যে দিল্লির দেড় কোটি মানুষের সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার হাতে কোনো জাদুকাঠি নেই। দু’-একদিনে কোনোকিছু হওয়া সম্ভবও নয়।
তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতকে ‘সোনার পাখি’ হিসেবে গড়ার প্রত্যয়ে দিল্লি এসেছে আম-আদমি।পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাকি সদস্যদের নিয়ে মেট্রোতেই রামলীলা পৌঁছেছিলেন অরবিন্দ। সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ি থেকে কৌশাম্বী স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। বারাখাম্বা স্টেশনে নামতেই জনজোয়ারে আটকে পড়েন। গলায় মালা পরিয়ে তাদের নেতাকে বরণ করে নেয় দলীয় সমর্থকরা। ভিড় কাটিয়ে রামলীলা ময়দানে পৌঁছে বেলা ১২টায় মঞ্চে ওঠে টিম-কেজরিওয়াল। সঙ্গে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং। উচ্ছ্বসিত জনতার অভিনন্দন-চিৎকারের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অরবিন্দ। একে একে আরও ছ’জনকে শপথবাক্য পাঠ করান নাজিব। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেননি কেজরিওয়ালের ‘গুরু’ আন্না হাজারে। এদিন সকালে চিঠি দিয়ে তিনি সেকথা জানিয়েও দিয়েছিলেন। এএপির প্রশাসনিক যাত্রা শুরুর দিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে আন্না বলেছেন, ‘অরবিন্দ যেভাবে কাজ করছে সেটাই সঠিক পথ। আমার বিশ্বাস ও আরও ভালো কাজ করবে।’ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দিল্লির কোনও মুখ্যমন্ত্রী রামলীলা ময়দানে শপথ নিলেন। অরবিন্দের আগে ১৯৯৬ সালে বিজেপির সাহিব সিংহ বর্মা ঐতিহাসিক এই ময়দানে শপথ নিয়েছিলেন। তবে এ দিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিজেপির হর্ষবর্ধন ছাড়া আর কোনো হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতাকে রামলীলা ময়দানে দেখা যায়নি। এমনকি, যারা এএপিকে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে, সেই কংগ্রেসের কোনো নেতাও সেখানে ছিলেন না।
যাননি দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতও। তবে বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিংহ ‘এএপি’ সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম ভাষণ শেষে অরবিন্দ গেয়ে উঠলেন গান। ১৯৫৯ সালে একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে মান্না দে’র গাওয়া গানটি অরবিন্দ যখন মঞ্চে গাইছেন, তার সঙ্গে গলা মেলালেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যেরা। বোবা থাকেননি ময়দানে উপস্থিত সাধারণ মানুষও। তাদের মধ্যে ততক্ষণে যে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ’র উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছেন ‘আম-আদমি’র নতুন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, ‘প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি যদি ঘুষ চান, তাকে তা দিন। এবং আমাদের তা জানান। আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’ কীভাবে সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করবেন তার সঙ্গে? মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, কয়েক দিনের মধ্যেই যোগাযোগের সব নম্বর প্রকাশ করা হবে। দিনের শুরুটা দেখে অন্তত অনেকেরই মনে হচ্ছে, ‘ইমানদারি’র কথা বলে ভোট-পরবর্তী ‘আম-আদমি’র মন জয়ের প্রাথমিক কাজটা সেরে ফেলেছেন অরবিন্দ। বাকিটা এখন ইতিহাস! টাইম অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি।
No comments