সেনাবাহিনীর সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মিরর
সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী বৃটিশ সানডে মিররে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বলেছেন,
বিনয়ের সঙ্গে সকল মহলকে অনুরোধ করবো আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ফাউল খেলবেন না। অনেক সময় ফাউল খেললে আঘাত নিজের গায়ে এসে লাগার সম্ভাবনা আছে। গতকাল সচিবালয়ের তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ-উল আলম, ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এবং আইএসপিআরের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী বলেন, অনেক দিন পর আপনাদের সামনে হাজির হতে অনেকটা বাধ্য হয়েছি। ২৩শে জুন নিষিদ্ধ পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ তাদের অনলাইন সংস্করণে ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: রেশমা উদ্ধার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর গত ১লা জুলাই বৃটেনের ট্যাবলয়েড পত্রিকা সানডে মিরর রেশমা উদ্ধারের ঘটনা সাজানো বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এদেশের আটটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় রেশমা উদ্ধার ঘটনাকে সাজানো হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, সানডে মিররে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদনটি এদেশের জনগণের মর্যাদা, সম্মান, আবেগ এবং অনুভূতির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য, সম্মান ও পেশাগত দক্ষতা শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক বিশ্বে সর্বমহলে সুবিদিত। এদেশের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। জাতীয় আস্থার স্থল সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত (কন্ট্রোভার্সিয়াল) করার চেষ্টা চলছে। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য বিভিন্ন স্থান থেকে উত্থাপিত হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র শুধু রেশমা নয়, উদ্ধার অভিযান শুরুর পর থেকেই চলছে। বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযান থেকে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেয়ার জন্য। জিওসি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সেনবাহিনীকে আঘাত করা, সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য, চেইন অব কমান্ডকে নষ্ট করা। কচু পাতার পানির ওপর সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ভাসে না যে সামান্য ব্যক্তি, সংগঠন বা পত্রিকার কথায় তা ধ্বংস হবে। আমাদের রয়েছে ৪৮ বছরের অর্জিত সম্মান ও ইজ্জত। ১৯৭১ সালে আমার মতো হাজারো নিবেদিত কর্মী রক্ত দিয়ে এ ঐতিহ্যকে গঠন করেছে। সেই ঐতিহ্য কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা পত্রিকার কথায় শেষ হয় না। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির যে কোন প্রয়োজনে আমরা যে কোন সময় জনগণের পাশে ছুটে যাই। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যাই। কি দুর্যোগে, কি শান্তিতে আমরা জনগণের পাশে থাকলে তারা স্বস্তি পায়, শান্তি পায়। এমনকি নির্বাচনে যে কোন দল সেনাবাহিনীর প্রয়োজন বোধ করে। তাহলে সেনাবাহিনী এমন একটি ভাল কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে- তাদের কাজে সন্দেহ করার অবকাশ কোথায়? কেন করা হচ্ছে, আমি জানি না। চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী বলেন, আসুন আমরা দেশকে ভালবাসি। সকলে মিলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিদেশী যে কোন কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করি। সানডে মিরর পত্রিকা দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করেছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সেই ব্যক্তিদের বিচার দাবি করি যিনি বা যারা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। রেশমার বিষয়টিকে ঘিরে সেনাবাহিনীর সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে অভিযোগ করে জিওসি বলেন, গার্মেন্ট শিল্পেও হাত দেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতির ওপরও তারা হাত দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার পর থেকেই সেখানে মিডিয়া কর্মীদের অবাধ বিচরণ ছিল। তারা যেখানে যেখানে খুশি যেতে পেরেছেন। অনেক টিভি লাইভ করেছে। রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনাও লাইভ হয়েছে অনেক টিভিতে। উদ্ধারে স্বচ্ছতাই ছিল আমাদের মূল শক্তি। মনগড়া তথ্যকে পুঁজি করে সানডে মিরর মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করেছে মন্তব্য করে জিওসি বলেন, এটা উদ্ধারকর্মীদের পেশাগত দক্ষতাকে উপহাস করার নামান্তর। সানডে মিররের ওই সাংবাদিক এবং তাকে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান সরওয়ার্দী। তিনি বলেন, তারা আমাদের সম্মান নষ্ট করেছেন। এর সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদের সবার শাস্তি হওয়া উচিত। তদন্ত করে এদের বের করতে হবে। যার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অফেন্সে মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কোন কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করি না। এদেশের জনগণ সেনাবাহিনীকে চিনে। জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছে। ১৬ কোটি মানুষের আস্থা রয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। রেশমাকে আইএসপি নিয়ন্ত্রণ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সে এখন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। আপনারা চাইলে তার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে পারেন। এনাম, লিপি আক্তার ও রোজী আক্তারের বরাত দিয়ে ওই দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও এই তিনজন ওই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেননি। সরওয়ার্দী বলেন, সানডে মিররের সাংবাদিক সায়মন রাইট নিজ পরিচয় গোপন করে ভিজিটর পরিচয়ে বাংলাদেশে আসেন। তিনি তার প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ করেননি এবং রানা প্লাজা ধসে উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সেনাবাহিনী কারও সঙ্গেই তিনি কোন কথা বলেননি। ঢাকার নিউ নেশন পত্রিকার কামাল নামের একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে তিনি আইএসপিআরের সহকারী পরিচালকের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য চান। তখন তাকে ফিরতি একটি এসএমএসে এ বিষয়ে আইএসপিআরের পরিচালকের সঙ্গে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না করে মনগড়া প্রতিবেদন লিখেছেন যা ঢাকার একটি পত্রিকার (আমার দেশ) অনলাইন সংস্করণের প্রায় হুবহু ইংরেজি অনুবাদ। ওদিকে আমার দেশের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর তা নিয়ে ব্লগে ও ফেসবুকে লেখালেখি এসব বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নীরবতা ও প্রতিবাদ না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই তাদের বক্তব্য দেবেন।
‘সাবজেক্ট হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড’
সাভারে রানা প্লাজা ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার তৎপরতার প্রধান সমন্বয়ক নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী গত রাতে বিবিসিকে জানান, আমার যা মনে হয় রেশমাটা সাবজেক্ট না। সাবজেক্ট হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এই কৌশলগত ষড়যন্ত্রটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কোন ব্যক্তি করিয়েছে। যেটাকে বিদেশের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকাতে একই সঙ্গে ছাপানো হয়েছে। রিপোর্ট একটা পত্রিকা করতেই পারে। কিন্তু একই সঙ্গে সানডে মিররে রিপোর্ট এবং বাংলাদেশের সব পত্রিকায় রিপোর্ট একই সঙ্গে আসবে- এটা আমার কাছে কিছুটা রহস্যজনক মনে হয়। বিবিসি তার কাছে জানতে চায়- কিন্তু এসব পত্রপত্রিকায় যেটা লেখা হয়েছে যে রেশমাকে যখন বের করে আনা হয় ১৭ দিন আটক থাকার পর তার চেহারা যে রকম হওয়া বা চেহারা যেরকম হতে পারে বলে মানুষ ধারণা করে, তার পোশাক পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন ছিল। তার চেহারায় কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। সেগুলো তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার ভিত্তিতে তারা এ কথাগুলো বলছেন। জবাবে হাসান সরওয়ার্দী বলেন, কারও যদি কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকে তাহলে তাদের উচিত এটা প্রমাণ করা। একটি পত্রিকায়, একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকায় ছাপানো হলো যে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে অমুক একথা বলেছে। দিস ইজ নট অ্যান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট। ওই পত্রিকায় যে রিপোর্টটা আসছে তার যে সংবাদটা তা বাংলাদেশের একটি অনলাইন পত্রিকার হুবহু ইংরেজি সংস্করণ। তাতে বোঝা যায়, মি. সাইমন রাইট বাংলাদেশে এসে কোন ইনভেস্টিগেশন করেন নি। যেসব রেফারেন্স দিয়েছেন ওই সব ব্যক্তি আজকে প্রেস ক্লাবে এসে বলেছেন, তাদেরকে পয়সা দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি এসে বলানোর চেষ্টা করেছে। তাদের নিজেদের ইজ্জত, সম্মান এতে হানি হয়েছে। তাই তারাও তার বিচার চেয়েছে। রেশমার সেই সহকর্মী এনাম এবং লিপি আক্তার এবং যেখানে সাইমন রাইট গিয়েছিলেন, সে গ্রামের চেয়ারম্যান এই প্রেস ব্রিফিংয়ে এসেছিলেন। বিবিসি তার কাছে আরও জানতে চায়, রেশমার সঙ্গে কাজ করতেন এমন একজন গার্মেন্ট কর্মীর বক্তব্য তাদের কাছে আছে এমন দাবি তারা করেছেন। জবাবে হাসান সরওয়ার্দী বলেন, তারা যেটা দাবি করেছে সেটার ভিডিও তো আমার কাছেও আছে। যে গার্মেন্টকর্মীর কথা তারা প্রেফার করছে সে এখানে এসেছিল। অন্য গার্মেন্টকর্মী যার সঙ্গে তারা কথা বলেছে সেটারও ভিডিও চিত্র আছে। মানুষ এখন আর অত বোকা না। ওরা গাড়ি থেকে নামার পর থেকে তাদের যাত্রা, তাদের কথাবার্তা সবকিছু ভিডিও করা আছে। সেই ভিডিওর সিডি আজকে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে। আমাদের মিডিয়া সংবাদকর্মীরা অনেক সচেতন। তারা এই উদ্ধার অভিযানের প্রথম থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আর একজন বিদেশী সাংবাদিক বাংলাদেশ সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলে গেল এটা তারাও মেনে নেবে না। আশা করি, আপনি কালকে এর ফলাফল দেখতে পাবেন। বিবিসি আরও জানতে চায়, দেশী-বিদেশী পত্রিকাতে যে খবরটা বেরিয়েছে তাতে আরেকটা জিনিস বলা হয়েছে যে, যখনই উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছিল, সেই সময় যেদিন রেশমাকে উদ্ধার করা হয় তার আগে ওই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আপনারা উদ্ধার তৎপরতা রাতে চালিয়েছেন। সে জন্য মানুষের মনে একটা রহস্য তৈরি হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ডাঁহা মিথ্যা কথা। ওইখানে হাজার হাজার মানুষ তো ছিলই সমস্ত মিডিয়াকর্মী ছিল। লোকজন চারদিকে সারাক্ষণ জড়ো হয়ে পাহারা, পাহারা না, দেখছিল কি হচ্ছে। আর কাউকে বাড়িঘর থেকে বের করা হয়নি। কারণ, সেখানে এমন কোন কাজ করা হয় নি যাতে মানুষের কোন শারীরিক ক্ষতি হতে পারে বা কোন সমস্যা হতে পারে। এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। সম্পূর্ণ যে অপতথ্য দেয়া হয়েছে এ জন্য আমি সেটার প্রতিবাদ জানাই। আমরা সবাই মিলে একবাক্যে এই অপরাধীদের বিচার চাই এবং নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ সরকার প্রপার ইনভেস্টিগেশন করে এদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করি আদালতে।
এনামুলের না
কোন বিদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হয়নি এবং সাক্ষাৎকার দেননি বলে জানিয়েছেন সাভারের রানা প্লাজার আহত শ্রমিক এনামুল হক মিলন। একই সঙ্গে তিনি ওই বিদেশী সাংবাদিকদের বিচার দাবি করেছেন। বলেছেন, ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। এমনকি অনুদান হিসেবে কিছু টাকা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আমি তাদের সাক্ষাৎকার দেইনি। যারা আমার নাম দিয়ে এ ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট কথা লিখেছে তাদের আমি বিচার চাই। এদিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রানা প্লাজা ধসের দুই-তিন দিনের মধ্যে কোন রোগীর নাম রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে রেশমা বা জয়া (রেশমার অপর নাম) নামে কেউ ছিল কিনা তাদের জানা নেই। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ তথ্য জানান। সমপ্রতি এনামুল হক মিলনকে উদ্ধৃত করে বৃটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মিরর এবং ডেইলি মেইল রেশমাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। তবে মিররের প্রতিবেদনে এক সহকর্মীর বরাতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে তা দেশীয় কয়েকটি পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হয়। গত রোববার ‘বাংলাদেশ ক্লথস ফ্যাক্টরি ডিজাস্টার ইজ ব্র্যান্ডেড এ হোক্স বাই কলিগ অব উইম্যান রেসকিউড’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রেশমার সহকর্মী জানান, ভবন ধসের প্রথম দিনই বের হয়ে আসেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এনামুল বলেন, ভবন ধসের ৫-৭ মিনিট আগে রেশমা সর্বশেষ আমার মোবাইল ফোন থেকে তার বাড়িওয়ালি হাজেরা বেগমের সঙ্গে কথা বলে। এরপরই ভবন ধসে পড়লে আমি একাই সিঁড়ির পাশে থাকা জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বের হয়ে আসি। ওই সময় রেশমা আমার সঙ্গে বের হতে পারেনি। সর্বশেষ সে মোবাইলে কথা বলে তার সিটে গিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে। এটুকুই আমার শেষ দেখা। এরপর উদ্ধার হওয়ার ১৭ দিন পর তাকে টিভিতে দেখতে পাই। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা এনামুলের আইডি কার্ড দেখতে চান। তারা বলেন, আপনি কি সেই এনামুল কিনা। উত্তরে এনামুল জানান, তার কাছে আইডি কার্ড নেই। বেতন তোলার জন্য ওই কার্ড জমা দেয়া আছে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনামুলের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার ধোপাডাঙ্গার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম শাহীন ও ওই গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান আকন্দ। তারা দু’জনই এনামুলকে চিহ্নিত করে বলেন, উনিই সেই এনামুল যে রেশমার সহকর্মী ছিলেন। বিদেশী সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেয়া প্রসঙ্গে এনামুল বলেন, আমাদের গ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক শাহীন মিয়া তাকে টেলিফোন করে বলেন, আগামীকাল তুমি বাসায় থাকবা। কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক তোমার সঙ্গে কথা বলবে। অনুদান হিসেবে তোমাকে কিছু টাকাও দেয়া হবে। এরপরই ওই সাংবাদিক আমার কাছে বাড়ির ঠিকানা জেনে নেন। পরদিন আবারও তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর আগে সকালেই আমি ফেরি করতে গ্রামের বাইরে চলে যাই। তার ফোন পেয়ে সাইকেল নিয়ে আবার গ্রামের দিকে আসতে থাকি। কিছুদূর আসার পর আমার মা ও স্ত্রী আমাকে বলে, তুমি বাড়িতে যেও না। সেখানে অনেক সাংবাদিক ও বিদেশী লোক আছে। আমার মা ভয় দেখিয়ে বলে, হয়তো তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। এ কথা শোনার পরই আমি আর বাড়িতে না গিয়ে শোভাগঞ্জের ফুফুর বাড়ি যাই। তিনি বলেন, এরপর আর ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। এমনকি কোন অনুদানও আমি পাইনি। এদিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, রেশমার বাড়িওয়ালা (যাদের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন) মনসুর আহমেদ নুরু ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম। তারা বলেন, ভবন ধসের পরই আমরা প্রতিদিন হন্যে হয়ে রেশমার সন্ধান করেছি। পাইনি। এরপরও কারা লিখলো দু’দিন পরই আমাদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। যে এত বড় মিথ্যা কথা লিখেছে আমরা তাকে দেখতে চাই। এক প্রশ্নে তারা বলেন, রেশমা উদ্ধারের সময় যে পোশাক তার শরীরে ছিল এটা তার না। ওই পোশাক সে পরে পরেছিল। সংবাদ সম্মেলনে এনাম মেডিকেলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক জাহিদুর রহমান ও রওশন আক্তার চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আইএসপিআরের অনুরোধে তারা এখানে এসেছেন নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে। জাহিদুর রহমান বলেন, আমার দেশ সহ বিদেশী পত্রিকায় বলা হয়েছে, রেশমা বা জয়া দু’দিন এনাম মেডিকেলে ভর্তি ছিলেন। এটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ঘটনার দুই তিন দিনের মধ্যে আমরা কারও নাম রেজিস্ট্রেশন করিনি। এর মধ্যে ১৭ শ’ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। পরে যখন রেজিস্ট্রেশন করা হয় তখন রোগী ভর্তি ছিল ৭শ’ জন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আমরা রেজিস্ট্রেশন খাতা খুঁজে দেখেছি। ওই দুই নামের কোন রোগীর সন্ধান পাইনি। এক প্রশ্নে তিনি জানান, এখানে আইএসপিআর আমাদের কোন কিছু শিখিয়ে দেয়নি। তারা বলেছে, আমরা যতটুকু জানি ততটুকুই বলবেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও তারা প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেননি।
No comments