দেশের প্রথম জরিপ ১৪ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার শিকার by শিশির মোড়ল
দেশের শহরাঞ্চলের ১৪ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত
ওজন ও স্থূলতার শিকার। আর ঢাকা মহানগরে এই হার ২১ শতাংশ। এসব শিশুর শারীরিক
সক্রিয়তা কম। অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার অন্যতম কারণ স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস।
স্থূলতার (ওবেসিটি) বিষয়ে দেশের প্রথম জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আয়ের ওপর ভিত্তি করে জরিপে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের স্তরে থাকা ২০ শতাংশ পরিবারের ৪৪ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার শিকার। আর ২৩ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিক। অন্যদিকে সর্বনিম্ন আয়ের স্তরে থাকা ২০ শতাংশ পরিবারে ৪ শতাংশ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে। আর ১৭ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিক। শিক্ষিত পরিবারেও এই সমস্যা বেশি। জরিপের ফলে বলা হয়, বাংলাদেশের শিশুরা দুই ধরনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। ৩০ শতাংশের পুষ্টির অভাব আছে, আর ১৪ শতাংশ অতিপুষ্টির শিকার।
জাতীয় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) সাতটি সিটি করপোরেশন এলাকায় এই জরিপ করেছে।
গতকাল বুধবার আইসিডিডিআরবিতে ‘বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থূলতার প্রকোপ এবং খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক সক্রিয়তার ধরন’ শীর্ষক এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদেরা বলেন, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা দেশে নতুন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর কারণে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। হূদেরাগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে, স্ট্রোকও হতে পারে। হতে পারে হেপাটাইটিস ও বাতে।
জরিপের ফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ ও সেন্টার ফর কন্ট্রোল অব ক্রনিক ডিজিজের (সিসিসিডি) ব্যবস্থাপক নাজরাতুন নাঈম মোনালিসা। এতে সভাপতিত্ব করেন হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জাতীয় অধ্যাপক আবদুল মালিক।
জরিপের ফল
জরিপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০৭টি ওয়ার্ডের পাঁচ থেকে ১৮ বছর বয়সী চার হাজার ১০০ শিশু এবং তাদের মায়েদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপের কাজটি পরিচালিত হয় এ বছরের ১ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত।
জরিপে দেখা গেছে, শিশুরা দিনে বা সপ্তাহে ফুটবল বা ভলিবল খেলার মতো শারীরিক পরিশ্রম কম করে। ৭০ শতাংশ শিশুর স্কুলে বা বাড়ির আশপাশে খেলার মাঠে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ৪৫ শতাংশ শিশু খেলার মাঠে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৪ শতাংশ শিশুর শারীরিক প্রশিক্ষণের ক্লাস আছে। কিন্তু তাতে অংশ নেয় ৬২ শতাংশ শিশু।
জরিপে অন্তর্ভুক্ত অর্ধেকের বেশি শিশু সপ্তাহে তিন থেকে চারবার শিঙাড়া, সমুচা, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু খায়। ২০ শতাংশ শিশু সপ্তাহে গড়ে একবার পিৎজা, বারগার, ফ্রাইড চিকেন বা এ ধরনের ফাস্টফুড খায়।
জরিপে শিশু পুষ্টির পরিস্থিতিকে কম ওজন, স্বাভাবিক ওজন, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে ১০ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজনের শিকার এবং ৪ শতাংশ শিশু স্থূলতায় ভুগছে। ঢাকা মহানগরে তা যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ৭ শতাংশ। ঢাকাতেই এই হার সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম রংপুরে, সেখানে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশু যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ১ শতাংশ।
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশুদের ৭০ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। বাকি ৩০ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তবে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সমান।
শিক্ষিত পরিবারে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশুর সংখ্যা বেশি। এই সমস্যা মা-বাবা দশম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা করেছেন এমন পরিবারের চেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর কম পড়াশোনা করা পরিবারে কম।
এই জরিপে গ্রামের কোনো তথ্য নেই। তবে আলোচনায় অংশ নিয়ে আইসিডিডিআরবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. সোহরাব আলী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের ৩ শতাংশ শিশু স্থূলতায় ভুগছে।
করণীয়
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. এখলাসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার প্রকোপ বাড়ছে, এটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু নতুন এই জরিপে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তিনি বলেন, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ দিতে হবে। জীবনের প্রথম ছয় মাস শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য খাদ্য দেওয়া যাবে না। ছয় মাস পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়ির তৈরি পরিপূরক খাদ্য দিতে হবে।
শিশু বা সব বয়সী মানুষকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের স্কুলের মাঠে বা পার্কে নিয়মিত খেলায় নামাতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটাচলারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। শহরের পার্কগুলো সাধারণের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা এবং নতুন পার্ক ও খেলার জায়গা তৈরি করার কথাও তাঁরা বলেছেন। শিশুরা যেন বেশি সময় ধরে টেলিভিশন না দেখে অথবা ভিডিও গেমস না খেলে, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথাও বলেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। ফাস্টফুড থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
আয়ের ওপর ভিত্তি করে জরিপে অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের স্তরে থাকা ২০ শতাংশ পরিবারের ৪৪ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার শিকার। আর ২৩ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিক। অন্যদিকে সর্বনিম্ন আয়ের স্তরে থাকা ২০ শতাংশ পরিবারে ৪ শতাংশ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে। আর ১৭ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিক। শিক্ষিত পরিবারেও এই সমস্যা বেশি। জরিপের ফলে বলা হয়, বাংলাদেশের শিশুরা দুই ধরনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। ৩০ শতাংশের পুষ্টির অভাব আছে, আর ১৪ শতাংশ অতিপুষ্টির শিকার।
জাতীয় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) সাতটি সিটি করপোরেশন এলাকায় এই জরিপ করেছে।
গতকাল বুধবার আইসিডিডিআরবিতে ‘বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থূলতার প্রকোপ এবং খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক সক্রিয়তার ধরন’ শীর্ষক এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদেরা বলেন, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা দেশে নতুন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর কারণে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। হূদেরাগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে, স্ট্রোকও হতে পারে। হতে পারে হেপাটাইটিস ও বাতে।
জরিপের ফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ ও সেন্টার ফর কন্ট্রোল অব ক্রনিক ডিজিজের (সিসিসিডি) ব্যবস্থাপক নাজরাতুন নাঈম মোনালিসা। এতে সভাপতিত্ব করেন হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জাতীয় অধ্যাপক আবদুল মালিক।
জরিপের ফল
জরিপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০৭টি ওয়ার্ডের পাঁচ থেকে ১৮ বছর বয়সী চার হাজার ১০০ শিশু এবং তাদের মায়েদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপের কাজটি পরিচালিত হয় এ বছরের ১ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত।
জরিপে দেখা গেছে, শিশুরা দিনে বা সপ্তাহে ফুটবল বা ভলিবল খেলার মতো শারীরিক পরিশ্রম কম করে। ৭০ শতাংশ শিশুর স্কুলে বা বাড়ির আশপাশে খেলার মাঠে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ৪৫ শতাংশ শিশু খেলার মাঠে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৪ শতাংশ শিশুর শারীরিক প্রশিক্ষণের ক্লাস আছে। কিন্তু তাতে অংশ নেয় ৬২ শতাংশ শিশু।
জরিপে অন্তর্ভুক্ত অর্ধেকের বেশি শিশু সপ্তাহে তিন থেকে চারবার শিঙাড়া, সমুচা, চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু খায়। ২০ শতাংশ শিশু সপ্তাহে গড়ে একবার পিৎজা, বারগার, ফ্রাইড চিকেন বা এ ধরনের ফাস্টফুড খায়।
জরিপে শিশু পুষ্টির পরিস্থিতিকে কম ওজন, স্বাভাবিক ওজন, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে ১০ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজনের শিকার এবং ৪ শতাংশ শিশু স্থূলতায় ভুগছে। ঢাকা মহানগরে তা যথাক্রমে ১৪ শতাংশ ও ৭ শতাংশ। ঢাকাতেই এই হার সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে কম রংপুরে, সেখানে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশু যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ১ শতাংশ।
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশুদের ৭০ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। বাকি ৩০ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তবে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সমান।
শিক্ষিত পরিবারে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশুর সংখ্যা বেশি। এই সমস্যা মা-বাবা দশম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা করেছেন এমন পরিবারের চেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর কম পড়াশোনা করা পরিবারে কম।
এই জরিপে গ্রামের কোনো তথ্য নেই। তবে আলোচনায় অংশ নিয়ে আইসিডিডিআরবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. সোহরাব আলী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের ৩ শতাংশ শিশু স্থূলতায় ভুগছে।
করণীয়
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. এখলাসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার প্রকোপ বাড়ছে, এটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু নতুন এই জরিপে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তিনি বলেন, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ দিতে হবে। জীবনের প্রথম ছয় মাস শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য খাদ্য দেওয়া যাবে না। ছয় মাস পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়ির তৈরি পরিপূরক খাদ্য দিতে হবে।
শিশু বা সব বয়সী মানুষকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের স্কুলের মাঠে বা পার্কে নিয়মিত খেলায় নামাতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটাচলারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। শহরের পার্কগুলো সাধারণের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা এবং নতুন পার্ক ও খেলার জায়গা তৈরি করার কথাও তাঁরা বলেছেন। শিশুরা যেন বেশি সময় ধরে টেলিভিশন না দেখে অথবা ভিডিও গেমস না খেলে, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথাও বলেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। ফাস্টফুড থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
No comments