খালেদার নামে প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি
ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নামে প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
গতকাল
পৃথক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম
হানিফ ও বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ বিষয়ে নিজ নিজ দলের
অবস্থান তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে হানিফ ওই নিবন্ধ লেখার জন্য বিরোধী
দলের নেতাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান। তিনি দাবি করেন,
ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধটি খালেদা জিয়ার, এটি তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
এখন দায়িত্ব অস্বীকার করে বিরোধী নেত্রী দায় এড়াতে পারবেন না। এদিকে রুহুল
কবির রিজভী বলেন, প্রকাশিত নিবন্ধটি বিরোধী নেত্রীর নয়। আমরা শুরু থেকেই
লেখাটির প্রতিবাদ করে আসছি। এটি সরকারের কুশীলবদের ষড়যন্ত্র।
নিবন্ধের জন্য খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাইতে হবে: হানিফ
ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধটি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এ লেখার জন্য বিরোধী নেত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হানিফ বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা রাজনৈতিক। মহাজোট এখনও আছে। মহাজোট থাকবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, যখন খালেদা জিয়ার নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয় তখন তাদের দলের নেতারা অনেক গর্ব করে এর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। আজকে কোন মুখে তারা অস্বীকার করেন? তিনি বলেন, ওই নিবন্ধ খালেদা জিয়ার কিনা সেটা যাচাই করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন টাইমসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড এক্স জ্যাকসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আমাদের লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছেন ওই নিবন্ধ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার। এসময় তিনি ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার লেখা প্রদর্শন করেন। হানিফ বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যা-ই বলুন জিএসপি বাতিলের দায়ভার তার। হানিফ বলেন, ওয়াশিংটন টাইমসে যখন লেখাটি প্রকাশিত হয় তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এক সভায় বলেছিলেন, ওই লেখার কারণে সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে। বিএনপির অপর নেতা শমশের মবিন চৌধুরী বলেছিলেন, প্রয়োজনে এমন লেখা খালেদা জিয়া আরও লিখবেন। এসব মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা ওই লেখার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, লেখাটি খালেদা জিয়ার নিজের। ওনার যদি ন্যূনতম দায়বোধ থাকে, তাহলে তার ওই বক্র লেখার জন্য তাকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ শিগগিরই স্থগিত জিএসপি সুবিধা লাভে সক্ষম হবে। এ জন্য তিনি সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মহাজোট ছাড়ার হুমকির বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, প্রতিটি দলের নিজস্ব কিছু কৌশল থাকে। নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা ও দলকে সুসংগঠিত করতে তিনি (এরশাদ) এমন ঘোষণা দিয়েছেন। এতে মহাজোটের সঙ্গে টানাপড়েনের কোন সুযোগ নেই। মহাজোট আছে, মহাজোট ভবিষ্যতেও থাকবে। এরশাদের কাছে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীর দোয়া চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা (গাজীপুর) স্থানীয় নির্বাচন। যে কোন প্রার্থী তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে যে কারও কাছে দোয়া কিংবা সমর্থন চাইতেই পারেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে- বিএনপির এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হানিফ বলেন, চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও তারা এ ধরনের কাল্পনিক অভিযোগ করেছিল। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। জাতিকে বিভ্রান্ত করতেই তারা এ ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যাচার চালিয়েছে। তাদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। তিনি বলেন, গাজীপুরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। অথচ বিএনপি কেন্দ্র থেকে উত্তাপ ছড়িয়ে সেই পরিবেশ নষ্ট করছে। এ সময় তিনি ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে দোয়াত-কলম মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য গাজীপুরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সম্প্রতি সানডে মিররে প্রকাশিত রানা প্লাজা থেকে উদ্ধার হওয়া রেশমাকে নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, রেশমা উদ্ধারের সময় অনেকগুলো টেলিভিশন সরাসরি দেখিয়েছে। অথচ উদ্ধারের ঘটনাটিকে বিকৃত, বিভ্রান্তিকর, অমানবিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা জিএসপি সুবিধা বাতিলের ষড়যন্ত্রের একটি অংশবিশেষ। আমাদের দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের অনুকরণে যেভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা না করলেও শোভনীয় হতো। রেশমাকে উদ্ধার প্রক্রিয়া গণমাধ্যমের সামনেই হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমসের নিবন্ধ সরকারের কুশীলবদের ষড়যন্ত্র: বিএনপি
ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নামে প্রকাশিত নিবন্ধটি সরকারের কুশীলবদের ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল রাজধানী নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কারও কানকথা শোনে না। গার্মেন্ট শিল্পের দুরবস্থার জন্যই জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও জিএসপি সুবিধা স্থগিতের জন্য নিজেদের ব্যর্থতার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জিএসপি সুবিধা বাতিলে আমাদের নিজেদের কিছু ব্যর্থতা ছিল। আমরা শ্রম আইন অনেকটা বিলম্বে সংস্কার করেছি। এছাড়া সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, গার্মেন্ট সেক্টরে বিপর্যয়ের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করেছে। গত ৩০শে জানুয়ারি প্রকাশিত আলোচিত নিবন্ধটি খালেদা জিয়ার বলে নিশ্চিত হয়েই তা ছাপিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমসের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বলেন, এটা একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব। আমরা শুরু থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছি। এটা সরকারের কুশীলবদের ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়ার লেখার বিষয়ে ওয়াশিংটন টাইমসের নির্বাহী সম্পাদকের বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমি মনে করি, অবশ্যই প্রতিবাদ পাঠানো উচিত। রিজভী আহমেদ বলেন, বিদেশী পত্রিকায় দেশের বিরুদ্ধে লেখা পাঠানোর অভ্যাস বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নেই। খালেদা দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেত্রী। শ্রমিকদের বিপক্ষে অথবা তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোন কাজ তিনি করেননি, করবেন না- এটা দেশের জনগণ কখনও বিশ্বাস করবে না। বরং দেশের বিরুদ্ধে চিঠি লেখার অভ্যাস বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য তিনি বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব ব্যাংকসহ বিদেশীদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলেন, ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী ও সরকারি দলের লোকজন কোন আইন মানছে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করে নির্বাচন মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য কাজ করছে। আমরা এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, চার সিটি করপোরশেন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করলে গেজেট প্রকাশ হওয়ায় তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বরত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রিজভী আহমেদ বলেন, গাজীপুরে সরকারের বিশেষ সংস্থার লোকেরা ‘খালেদার হাত থেকে পোশাকশিল্পকে রক্ষা করুন’ এরকম বক্তব্য সংবলিত নানা লিফলেট বিতরণ করছে। এছাড়া এমএ মান্নানের সমর্থকদের নানা হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে গাজীপুরে আবারও সেনা মোতায়েনের দাবি জানান বিএনপির এ মুখপাত্র। তিনি বলেন, আমরা আশা করবো, সরকার এ পথ থেকে সরে আসবে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে যদি জনগণ সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে সরকারকে বড় খেসারত দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments